দিল্লি, 18 নভেম্বর: বিষয়ে পরিষ্কার । 2020-2021 অর্থবর্ষের বাজেটে সরকার তার কথা রাখেনি । সেনাবাহিনীর জন্য অর্থের কোনও কথা বাজেটে বলা হয়নি।
ঠিক এক বছর আগের কথা । 27 ফেব্রুয়ারি 2019 পাকিস্তানের আকাশে ভারতীয় বায়ুসেনার একটি মিগ 21 ফাইটার প্লেন ধোঁয়ার কুণ্ডলী পাকিয়ে নিচের দিকে নেমে আসছিল । কিছুক্ষণের মধ্যেই তা ধ্বংস হয় । তবে তার আগে ওই যুদ্ধবিমানের পাইলট কোনও মতে রক্ষা পান । মিগ 21-এর ধ্বংস হওয়ার কারণ, পাকিস্তান বিমানবাহিনীর এফ-16 যুদ্ধবিমান । প্রযুক্তির দিক থেকে বিচার করলে এই দুই যুদ্ধবিমানের মধ্যে কোনও তুলনাই চলে না । মার্কিন এফ-16 যুদ্ধবিমান আর রাশিয়ায় তৈরি মিগ 21-এর মধ্যে পার্থক্যটা আক্ষরিক অর্থেই আকাশ আর পাতালের।
এই ঘটনার পরেই আমাদের বৃদ্ধ ও অপ্রতুল যুদ্ধবিমানের সম্ভার নিয়ে চর্চা শুরু হয়। এই ঘটনার এক বছর বাদে (বাজেট পেশের দিন) , এই বিষয় নিয়ে কোনও কথাই হল না।কথা হওয়া তো দূর, নতুন যন্ত্রপাতি এবং অস্ত্র কেনার জন্য ভারতীয় বিমানবাহিনী (IAF) গত বছরের চেয়েও কম টাকা পেল এ বার। চলতি বছর IAF পেয়েছে 43 হাজার 280 কোটি টাকা, যা গত বছরের সংশোধিত বরাদ্দের চেয়ে এক হাজার 588 কোটি টাকা কম।
শুধু তাই নয়। IAF-এর কাছে এই মুহূর্তে রয়েছে 31টি স্কোয়াড্রন। দ্বিমুখী যুদ্ধকালীন পরিস্থিতিতে পূর্ব, পশ্চিম ও উত্তর সীমান্ত বরাবর যুদ্ধবিমান মোতায়েন করতে প্রয়োজন অন্তত 43 স্কয়্যাড্রনের।2020-2021 অর্থবর্ষের বাজেটের কথায় ফিরে আসা যাক । প্রতিরক্ষা খাতে 2018-2019 অর্থবর্ষে যে বাজেট বরাদ্দের পরিমাণ ছিল দুই লাখ 95 হাজার কোটি টাকা, তা 2019-2020 অর্থবর্ষে বেড়ে দাঁড়ায় তিন লাখ 18 হাজার কোটি টাকা । অর্থমন্ত্রী সেই পরিমাণ এ বার মাত্র 5.97 শতাংশ বাড়িয়ে করেছেন তিন লাখ 37 হাজার কোটি টাকা । অর্থাৎ এই পরিমাণ টাকায় বাহিনীর আধুনিকীকরণ থেকে যাবতীয় কাজ করতে হবে, যেখানে আমাদের দুই প্রতিবেশী চিন ও পাকিস্তান বিদ্যুৎগতিতে বাহিনীর আধুনিকীকরণের কাজ করে চলেছে।
2020 অর্থবর্ষের বাজেটে নতুন অস্ত্র ও প্রযুক্তি কেনার জন্য রাখা হয়েছে 10 হাজার কোটি টাকার সামান্য বেশি। সেনাবাহিনীর জন্য যেখানে ফিউচার ইনফ্যান্ট্রি কমব্যাট ভেহিকল (FICV), আরও হাউয়িৎজার কামান, বিমানবাহিনীর জন্য আরও যুদ্ধবিমান, নৌবাহিনীর জন্য ডুবোজাহাজ, মাইনরোধী ভেসেল এবং হেলিকপ্টার প্রয়োজন, সেখানে এই বরাদ্দের পরিমাণ মাত্রাতিরিক্ত কম। এটা সত্যি যে, ইচ্ছার কোনও শেষ নেই। কিন্তু সেই বিশাল তালিকার দিকে না গেলেও একটা হৃদয়গ্রাহী সংকেত দেওয়াই যেত। কিন্তু সেই প্রচেষ্টাই যেন খুঁজে পাওয়া গেল না।
বরাদ্দ অর্থের পরিমাণ কম হওয়ায় সামরিক গবেষণা ও উন্নয়নের সঙ্গে সঙ্গে চরম সমস্যায় পড়বে সদ্য তৈরি হওয়া ডিফেন্স স্পেস এজেন্সি (DSA) এবং ডিফেন্স সাইবার এজেন্সি (DCA)। তাই এই মুহূর্তে স্টিলথ অস্ত্রসম্ভার, ড্রোন, সোয়ার্ম, হাইপারসনিক এবং তড়িত্চুম্বকীয় অস্ত্র, রেল গান প্রভৃতির স্বপ্ন না দেখাই ভালো। কিন্তু যে দেশ 2025 সালের মধ্যে বিশ্বের তৃতীয় বৃহত্তম অর্থনীতি (5 ট্রিলিয়ন অর্থনীতির দেশ) হওয়ার কথা ভাবছে, সেই দেশের পক্ষে এই ধরনের ভবিষ্যতের অস্ত্র থেকে মুখ ফিরিয়ে থাকা একেবারেই উচিত নয়।
তবে এ কথা স্বীকার না করে উপায় নেই যে, অর্থনীতির এই রকম কঠিন পরিস্থিতিতে আরও উন্নত অস্ত্রসম্ভার কেনার বিষয়ে সরকারকে একটু কঠিন সিদ্ধান্ত হয়ত নিতেই হত। অতএব, এই অবস্থায় প্রতিরক্ষা মন্ত্রকের কাছে অর্থ সংক্রান্ত সেই তিনটি মন্ত্র জপ করা ছাড়া আর কিছুই করার নেই—অল্প পরিমাণ অর্থে দক্ষতা ও ব্যবহারিক ক্ষেত্রের উন্নতি, আত্মনির্ভরতা বৃদ্ধি এবং প্রতিরক্ষা ক্ষেত্রে আরও বেশি বেসরকারিকরণকে স্বাগত জানানো ।