ETV Bharat / bharat

EU-র সঙ্গে দ্রুত বিচ্ছেদের পক্ষেই মত দিল ব্রিটেনের নির্বাচন - বরিস জনসন

প্রধানমন্ত্রী জনসনের উপর মানুষের প্রবল সমর্থন যেন বুঝিয়ে দিল ইউরোপিয়ান ইউনিয়নের সঙ্গে ব্রিটেনের বিচ্ছেদটা ঠিক কতটা চাইছেন সাধারণ মানুষ । বরিস জনসনের নেতৃত্বে ভোটে লড়া কনজ়ারভেটিভরা ব্রেক্সিটের ঢেউয়ে সওয়ার হয়ে ৬৫০টি আসনের মধ্যে ৩৬৫টি জিতল । প্রতিবেদনটি লিখেছেন বিদেশ বিষয়ক বিশ্লেষক ও লেখক বিষ্ণু প্রকাশ ৷ অবসরপ্রাপ্ত এই IFS অফিসার দক্ষিণ কোরিয়া ও কানাডায় ভারতীয় রাষ্ট্রদূত ছিলেন ৷ এবং তিনি বিদেশ মন্ত্রকের প্রাক্তন সরকারি মুখপাত্র ৷

britain election
ছবিটি প্রতীকী
author img

By

Published : Dec 29, 2019, 2:23 AM IST

২০১৭ সালের জুনের সাধারণ নির্বাচনের ঠিক ৩০ মাস পরে চলতি বছরের ১২ ডিসেম্বর ফের ভোট হল ব্রিটেনে । ভোটের মাঠে লড়াইটা ছিল কনজ়ারভেটিভ (টোরিয়েস), লেবার, লিবারাল ডেমোক্র্যাটস, স্কটিশ ন্যাশনাল এবং আরও কয়েকটি ছোটো দলের । আর এই লড়াইয়ে জিতল একটাই দল— ব্রেক্সিট! "ভারতের জামাই" বরিস জনসনের নেতৃত্বে ভোটে লড়া কনজ়ারভেটিভরা ব্রেক্সিটের ঢেউয়ে সওয়ার হয়ে ৬৫০টি আসনের মধ্যে ৩৬৫টি জিতল । এই আসন সংখ্যা গতবারের তুলনায় ৪৭টি বেশি । ব্রেক্সিট বিরোধী ৭০ বছরের জেরেমি করবিনের নেতৃত্বে লেবার পার্টি গতবারের তুলনায় ৫৯টি আসন কম পেয়ে থামল মাত্র ২০৩ আসনে ৷ যা ১৯৩৫ সালের পর থেকে সবচেয়ে খারাপ ফল ।

নির্বাচনী ফলাফল একেবারে সঠিক ভাবে ভবিষ্যদ্বাণী করেছিল জনমত সমীক্ষা । প্রধানমন্ত্রী জনসনের উপর মানুষের প্রবল সমর্থন যেন বুঝিয়ে দিল ইউরোপিয়ান ইউনিয়নের সঙ্গে ব্রিটেনের বিচ্ছেদটা ঠিক কতটা চাইছেন সাধারণ মানুষ । যে বিচ্ছেদের বিষয়টা ২০১৬ সালের জুন থেকে সিদ্ধান্তহীনতায় ভুগছিল এবং যার জন্য দু’জন প্রধানমন্ত্রী পদত্যাগ করেছেন । মনে করা হচ্ছে, ৩১ জানুয়ারির সর্বাধিক যে ডেডলাইন দেওয়া হয়েছে, তার মধ্যে এ বার চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নেওয়া সম্ভব হবে । সময় বলবে, এর ফলে EU-এর বাঁধন খুলতে শুরু করবে কি না ।

এ কথা স্বীকার করতে কোনও বাধা নেই যে এটা EU-এর ইতিহাসে একটা সন্ধিক্ষণ । এটা সেই EU, যা প্রাদেশিক দেশ নিয়ে গঠিত গোষ্ঠীগুলির মধ্যে সবচেয়ে শক্তিশালী । ১৯৫৭ সালে ছয়টি দেশ মিলে তৈরি করে ইউরোপিয়ান ইকনমিক কমিটি (EEC) । ব্রিটেন ১৯৭৩ সালে EEC-র সঙ্গে যুক্ত হয় । গত ছয় দশক ধরে বাড়তে বাড়তে EU পরিণত হয়েছিল ২৮টি দেশের একটি খ্রিস্টান প্রধান ক্লাব । EU-তে কিছুটা ধর্মনিরপেক্ষ এবং আধুনিকমনস্ক মুসলিম রাষ্ট্র টার্কির অন্তর্ভুক্তি নিয়ে বহু বার আলোচনা হলেও তা কোনওদিনই বাস্তবায়িত হয়নি।

ব্রাসেলসের থেকে সার্বভৌমত্ব পুনরুদ্ধারে ব্রেক্সিটপন্থীরা উল্লসিত হলেও এতে ব্রিটেনের আনন্দিত হওয়ার কিছু নেই । বস্তুত, এক প্রাক্তন প্রবীণ কূটনীতিকের মতে, এর ফলে ব্রিটেন ক্রমশ মধ্য শক্তিধর দেশে পরিণত হবে । সে দিক থেকে বরং স্কটল্যান্ডের অবস্থান অনকটাই বাস্তবসম্মত । ব্রেক্সিট বিরোধী এবং ইউরোপিয়ান ইউনিয়নপন্থী স্কটল্যান্ড এখন স্বাধীনতা পাওয়ার জন্য দ্বিতীয় বার গণভোটে যেতে চাইছে । স্কটিশ ন্যাশনাল পার্টি সেখানে ৪৮টি আসন পেয়েছে, যা গতবারের তুলনায় ১৩টি বেশি । টোরিয়েসরা পেয়েছে ছ’টি আসন, যা গতবারের তুলনায় সাতটি কম এবং লেবার পার্টি পেয়েছে মাত্র একটি আসন, যা গতবারের তুলনায় ছ’টি কম ।

২০১৪ সালে হওয়া প্রথম গণভোটে ৪৫ শতাংশ স্কটিশ স্বাধীনতার পক্ষে ভোট দিয়েছিলেন । লন্ডনের উপর বিরক্তি যেন তারপর থেকে আরও বেড়ে গেছে । একইভাবে, ব্রেক্সিটের ফলে নর্দার্ন আয়ারল্যান্ডের সঙ্গে সীমান্ত সমস্যা বেড়ে যেতে পারে, যদি জনসন সীমান্ত নিয়ে কড়াকড়ি আরও বাড়িয়ে দেন । জনসন কিন্তু প্রথম থেকেই আয়ারল্যান্ডের সঙ্গে একটা অদৃশ্য সীমান্ত বজায় রাখার পক্ষপাতী ।

এরপর আছে আর্থিক সমস্যা । বিশেষজ্ঞদের মতে, ব্রেক্সিট নিয়ে কিছু আধিকারিক রঙিন স্বপ্ন দেখালেও এর বিপরীত প্রভাব ব্রিটেনের অর্থনীতিতে পড়বেই । লন্ডনের ইনস্টিটিউট অব ফিসকাল স্টাডিজ়ের মতে, এর ফলে ব্রিটেনের GDP এক ধাক্কায় ৩ শতাংশ পর্যন্ত কমে যেতে পারে । অন্য বেশ কিছু অর্থনীতি বিষয়ক সংস্থা আবার GDP-র পতন আরও বেশি হওয়ার আশঙ্কা করছে ।

পাশাপাশি ব্রিটেনকে সুদৃঢ় অর্থনৈতিক পরিকল্পনা করতে হবে, যাতে ইউরোপীয় ইউনিয়ন, অ্যামেরিকা, চিন, ভারতের সঙ্গে সম্পর্ক আরও মজবুত হয় । বেশির ভাগ বিশেষজ্ঞের মতে, বিষয়টি একেবারেই সহজ হবে না । এই রকম একটি আত্মরক্ষামূলক পরিবেশে, যেখানে প্রয়োজনটা মূলত ব্রিটেনের, সেখানে মুক্ত বাণিজ্য চুক্তির মতো বিষয়গুলি হয় অতটা সহজে হবে না ৷ আর তা না হলে বিষয়গুলি ব্রিটেনের সুবিধামতো না হওয়াই স্বাভাবিক ।

EU-এর সঙ্গে সমস্ত সম্পর্ক ছিন্ন করতে লন্ডনের হাতে সময় আছে মাত্র ২০২০ সালের ৩১ ডিসেম্বর পর্যন্ত । ২০১৯ সালের ১৭ অক্টোবর প্রধানমন্ত্রী জনসন এবং EU একটি খসড়া চুক্তিতে সম্মত হলেও সেই খসড়া চুক্তি হাউজ় অব কমন্স খারিজ করে দেয় । এই হাউজ় অব কমন্সে টোরিয়েসরা সংখ্যালঘু । তবে এখন জনসনের পক্ষে জনমত হওয়ায় আলোচনা এগিয়ে নিয়ে যেতে সুবিধা হওয়ার কথা ।

ব্রেক্সিটের ফলে EU থেকে ইংল্যান্ডে সাধারণ মানুষের (প্রশিক্ষিত অথবা প্রশিক্ষণহীন) অবাধ যাতায়াত বন্ধ হয়ে যাবে । এই বিষয়টা নিয়ে বহু দিন মনে মনে গুমরেছে সাধারণ ব্রিটিশরা । ব্রেক্সিট পরবর্তী সময়ে সে দেশের অভিবাসন ব্যবস্থা হয়ে যাবে‌ যোগ্যতা কেন্দ্রিক । সেখানে দেশের বিচার না করে, যাঁর যোগ্যতা বেশি, তিনি বেশি সুবিধা পাবেন । ফলে ভারতীয় এবং ইউরোপীয় ইউনিয়নের কোনও দেশের বাসিন্দাদের মধ্যে কোনও বিভেদ থাকবে না । এতদিন পর্যন্ত ভারত এবং EU-এর বাইরের কোনও দেশের বাসিন্দাদের টিয়ার ২ ভিসা দেওয়া হত ।

ভোটে জেতার পরপরই বরিস জনসনকে অভিনন্দন জানিয়ে ভারতে আসার অনুরোধ করেছেন প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি । ১৩ ডিসেম্বর মোদি টুইট করেন, "বরিস জনসনকে অসংখ্য অভিনন্দন, যেভাবে তিনি একটি অসাধারণ জয় পেলেন । তাঁকে আমার হার্দিক অভিনন্দন । আমি আশা করি এরপর ভারত-ব্রিটেন সম্পর্ক আরও মজবুত হবে ।"

মেরিনা হুইলারের সঙ্গে জনসনের বিয়ে হয়েছিল ২৫ বছর আগে । মেরিনার মা একজন ভারতীয় শিখ । এর ফলে জনসন বহু বার বিভিন্ন কারণে ভারতে এসেছেন । মনে করা হচ্ছে, তিনি খুব শীঘ্রই সরকারি সফরে ভারতে আসবেন ।

এই প্রথম বার ব্রিটিশ কমন্সে ১৫ জন ভারতীয় বংশোদ্ভূত MP রয়েছেন । এর মধ্যে সাত জন কনজ়ারভেটিভ পার্টির সদস্য । ঐতিহাসিক ভাবেই ১৫ লাখ ভারতীয়র বেশিরভাগের সমর্থন থাকে লেবার পার্টির দিকে । কিন্তু কাশ্মীর নিয়ে করবিনের অবস্থানের ফলে এই অংশটা লেবার পার্টি থেকে মুখ ফিরিয়ে নিয়েছে । কনজ়ারভেটিভ ফ্রেন্ডস অব ইন্ডিয়ার চেয়ারম্যান টোরি পিয়ের এবং রামি রেঞ্জার বলেন, “এ বার ভারতীয়রা কনজ়ারভেটিভদের ভোট দিয়েছেন । কাশ্মীর নিয়ে লেবার পার্টির নীতি ভারতীয়দের একত্রিত হতে সাহায্য করেছে ।”

ভারতের বিদেশমন্ত্রক লেবার পার্টিকে নিয়ে বিরক্ত ছিল । ভারতীয় হাইকমিশন এবং সে দেশের বিশাল ভারতীয় জনগণ লেবার পার্টির থেকে মুখ ফিরিয়ে নেয় । এমনকী লেবার পার্টির MP এবং সমর্থকদের একটি সংগঠন লেবার ফ্রেন্ডস অব ইন্ডিয়ার দেওয়া নৈশভোজের আমন্ত্রণও গ্রহণ করেনি ভারতীয় হাইকমিশন । ২৯ সেপ্টেম্বর হাইকমিশনের পক্ষ থেকে আয়োজিত ভারতীয় দিবস উদযাপনেও ডাকা হয়নি লেবার পার্টির কোনও প্রতিনিধিকে । বিষয়টা তখনই পরিষ্কার হয়ে গেছিল । ভারতীয় বংশোদ্ভূত ভোটাররা যার পূর্ণ সদব্যবহার করেন ভোটের ময়দানে ।

তৎকালীন EEC, পরবর্তী সময়ে হওয়া ইউরোপিয়ান ইউনিয়নে অনেক পরে নাম লিখিয়েছিল ব্রিটেন । এবং তারাই সবার আগে প্রস্থান করছে । ব্রিটেনের প্রাক্তন প্রধানমন্ত্রী ডেভিড ক্যামেরন, যাঁর সময়ে ব্রেক্সিটের গণভোট হয়েছিল, তিনি ‘হ্যাঁ’ ভোট ঠেকাতে অক্ষম হয়েছিলেন । এই ঘটনা ব্রিটেনকে খুব খারাপভাবে বিভক্ত করেছে এবং সম্ভবত সে দেশকে বিভাজনের দিকে ঠেলে দিয়েছে । বিশেষজ্ঞরা বলছেন, এটা ব্রিটিশ ঔদ্ধত্যের অবধারিত ফল ।

২০১৭ সালের জুনের সাধারণ নির্বাচনের ঠিক ৩০ মাস পরে চলতি বছরের ১২ ডিসেম্বর ফের ভোট হল ব্রিটেনে । ভোটের মাঠে লড়াইটা ছিল কনজ়ারভেটিভ (টোরিয়েস), লেবার, লিবারাল ডেমোক্র্যাটস, স্কটিশ ন্যাশনাল এবং আরও কয়েকটি ছোটো দলের । আর এই লড়াইয়ে জিতল একটাই দল— ব্রেক্সিট! "ভারতের জামাই" বরিস জনসনের নেতৃত্বে ভোটে লড়া কনজ়ারভেটিভরা ব্রেক্সিটের ঢেউয়ে সওয়ার হয়ে ৬৫০টি আসনের মধ্যে ৩৬৫টি জিতল । এই আসন সংখ্যা গতবারের তুলনায় ৪৭টি বেশি । ব্রেক্সিট বিরোধী ৭০ বছরের জেরেমি করবিনের নেতৃত্বে লেবার পার্টি গতবারের তুলনায় ৫৯টি আসন কম পেয়ে থামল মাত্র ২০৩ আসনে ৷ যা ১৯৩৫ সালের পর থেকে সবচেয়ে খারাপ ফল ।

নির্বাচনী ফলাফল একেবারে সঠিক ভাবে ভবিষ্যদ্বাণী করেছিল জনমত সমীক্ষা । প্রধানমন্ত্রী জনসনের উপর মানুষের প্রবল সমর্থন যেন বুঝিয়ে দিল ইউরোপিয়ান ইউনিয়নের সঙ্গে ব্রিটেনের বিচ্ছেদটা ঠিক কতটা চাইছেন সাধারণ মানুষ । যে বিচ্ছেদের বিষয়টা ২০১৬ সালের জুন থেকে সিদ্ধান্তহীনতায় ভুগছিল এবং যার জন্য দু’জন প্রধানমন্ত্রী পদত্যাগ করেছেন । মনে করা হচ্ছে, ৩১ জানুয়ারির সর্বাধিক যে ডেডলাইন দেওয়া হয়েছে, তার মধ্যে এ বার চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নেওয়া সম্ভব হবে । সময় বলবে, এর ফলে EU-এর বাঁধন খুলতে শুরু করবে কি না ।

এ কথা স্বীকার করতে কোনও বাধা নেই যে এটা EU-এর ইতিহাসে একটা সন্ধিক্ষণ । এটা সেই EU, যা প্রাদেশিক দেশ নিয়ে গঠিত গোষ্ঠীগুলির মধ্যে সবচেয়ে শক্তিশালী । ১৯৫৭ সালে ছয়টি দেশ মিলে তৈরি করে ইউরোপিয়ান ইকনমিক কমিটি (EEC) । ব্রিটেন ১৯৭৩ সালে EEC-র সঙ্গে যুক্ত হয় । গত ছয় দশক ধরে বাড়তে বাড়তে EU পরিণত হয়েছিল ২৮টি দেশের একটি খ্রিস্টান প্রধান ক্লাব । EU-তে কিছুটা ধর্মনিরপেক্ষ এবং আধুনিকমনস্ক মুসলিম রাষ্ট্র টার্কির অন্তর্ভুক্তি নিয়ে বহু বার আলোচনা হলেও তা কোনওদিনই বাস্তবায়িত হয়নি।

ব্রাসেলসের থেকে সার্বভৌমত্ব পুনরুদ্ধারে ব্রেক্সিটপন্থীরা উল্লসিত হলেও এতে ব্রিটেনের আনন্দিত হওয়ার কিছু নেই । বস্তুত, এক প্রাক্তন প্রবীণ কূটনীতিকের মতে, এর ফলে ব্রিটেন ক্রমশ মধ্য শক্তিধর দেশে পরিণত হবে । সে দিক থেকে বরং স্কটল্যান্ডের অবস্থান অনকটাই বাস্তবসম্মত । ব্রেক্সিট বিরোধী এবং ইউরোপিয়ান ইউনিয়নপন্থী স্কটল্যান্ড এখন স্বাধীনতা পাওয়ার জন্য দ্বিতীয় বার গণভোটে যেতে চাইছে । স্কটিশ ন্যাশনাল পার্টি সেখানে ৪৮টি আসন পেয়েছে, যা গতবারের তুলনায় ১৩টি বেশি । টোরিয়েসরা পেয়েছে ছ’টি আসন, যা গতবারের তুলনায় সাতটি কম এবং লেবার পার্টি পেয়েছে মাত্র একটি আসন, যা গতবারের তুলনায় ছ’টি কম ।

২০১৪ সালে হওয়া প্রথম গণভোটে ৪৫ শতাংশ স্কটিশ স্বাধীনতার পক্ষে ভোট দিয়েছিলেন । লন্ডনের উপর বিরক্তি যেন তারপর থেকে আরও বেড়ে গেছে । একইভাবে, ব্রেক্সিটের ফলে নর্দার্ন আয়ারল্যান্ডের সঙ্গে সীমান্ত সমস্যা বেড়ে যেতে পারে, যদি জনসন সীমান্ত নিয়ে কড়াকড়ি আরও বাড়িয়ে দেন । জনসন কিন্তু প্রথম থেকেই আয়ারল্যান্ডের সঙ্গে একটা অদৃশ্য সীমান্ত বজায় রাখার পক্ষপাতী ।

এরপর আছে আর্থিক সমস্যা । বিশেষজ্ঞদের মতে, ব্রেক্সিট নিয়ে কিছু আধিকারিক রঙিন স্বপ্ন দেখালেও এর বিপরীত প্রভাব ব্রিটেনের অর্থনীতিতে পড়বেই । লন্ডনের ইনস্টিটিউট অব ফিসকাল স্টাডিজ়ের মতে, এর ফলে ব্রিটেনের GDP এক ধাক্কায় ৩ শতাংশ পর্যন্ত কমে যেতে পারে । অন্য বেশ কিছু অর্থনীতি বিষয়ক সংস্থা আবার GDP-র পতন আরও বেশি হওয়ার আশঙ্কা করছে ।

পাশাপাশি ব্রিটেনকে সুদৃঢ় অর্থনৈতিক পরিকল্পনা করতে হবে, যাতে ইউরোপীয় ইউনিয়ন, অ্যামেরিকা, চিন, ভারতের সঙ্গে সম্পর্ক আরও মজবুত হয় । বেশির ভাগ বিশেষজ্ঞের মতে, বিষয়টি একেবারেই সহজ হবে না । এই রকম একটি আত্মরক্ষামূলক পরিবেশে, যেখানে প্রয়োজনটা মূলত ব্রিটেনের, সেখানে মুক্ত বাণিজ্য চুক্তির মতো বিষয়গুলি হয় অতটা সহজে হবে না ৷ আর তা না হলে বিষয়গুলি ব্রিটেনের সুবিধামতো না হওয়াই স্বাভাবিক ।

EU-এর সঙ্গে সমস্ত সম্পর্ক ছিন্ন করতে লন্ডনের হাতে সময় আছে মাত্র ২০২০ সালের ৩১ ডিসেম্বর পর্যন্ত । ২০১৯ সালের ১৭ অক্টোবর প্রধানমন্ত্রী জনসন এবং EU একটি খসড়া চুক্তিতে সম্মত হলেও সেই খসড়া চুক্তি হাউজ় অব কমন্স খারিজ করে দেয় । এই হাউজ় অব কমন্সে টোরিয়েসরা সংখ্যালঘু । তবে এখন জনসনের পক্ষে জনমত হওয়ায় আলোচনা এগিয়ে নিয়ে যেতে সুবিধা হওয়ার কথা ।

ব্রেক্সিটের ফলে EU থেকে ইংল্যান্ডে সাধারণ মানুষের (প্রশিক্ষিত অথবা প্রশিক্ষণহীন) অবাধ যাতায়াত বন্ধ হয়ে যাবে । এই বিষয়টা নিয়ে বহু দিন মনে মনে গুমরেছে সাধারণ ব্রিটিশরা । ব্রেক্সিট পরবর্তী সময়ে সে দেশের অভিবাসন ব্যবস্থা হয়ে যাবে‌ যোগ্যতা কেন্দ্রিক । সেখানে দেশের বিচার না করে, যাঁর যোগ্যতা বেশি, তিনি বেশি সুবিধা পাবেন । ফলে ভারতীয় এবং ইউরোপীয় ইউনিয়নের কোনও দেশের বাসিন্দাদের মধ্যে কোনও বিভেদ থাকবে না । এতদিন পর্যন্ত ভারত এবং EU-এর বাইরের কোনও দেশের বাসিন্দাদের টিয়ার ২ ভিসা দেওয়া হত ।

ভোটে জেতার পরপরই বরিস জনসনকে অভিনন্দন জানিয়ে ভারতে আসার অনুরোধ করেছেন প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি । ১৩ ডিসেম্বর মোদি টুইট করেন, "বরিস জনসনকে অসংখ্য অভিনন্দন, যেভাবে তিনি একটি অসাধারণ জয় পেলেন । তাঁকে আমার হার্দিক অভিনন্দন । আমি আশা করি এরপর ভারত-ব্রিটেন সম্পর্ক আরও মজবুত হবে ।"

মেরিনা হুইলারের সঙ্গে জনসনের বিয়ে হয়েছিল ২৫ বছর আগে । মেরিনার মা একজন ভারতীয় শিখ । এর ফলে জনসন বহু বার বিভিন্ন কারণে ভারতে এসেছেন । মনে করা হচ্ছে, তিনি খুব শীঘ্রই সরকারি সফরে ভারতে আসবেন ।

এই প্রথম বার ব্রিটিশ কমন্সে ১৫ জন ভারতীয় বংশোদ্ভূত MP রয়েছেন । এর মধ্যে সাত জন কনজ়ারভেটিভ পার্টির সদস্য । ঐতিহাসিক ভাবেই ১৫ লাখ ভারতীয়র বেশিরভাগের সমর্থন থাকে লেবার পার্টির দিকে । কিন্তু কাশ্মীর নিয়ে করবিনের অবস্থানের ফলে এই অংশটা লেবার পার্টি থেকে মুখ ফিরিয়ে নিয়েছে । কনজ়ারভেটিভ ফ্রেন্ডস অব ইন্ডিয়ার চেয়ারম্যান টোরি পিয়ের এবং রামি রেঞ্জার বলেন, “এ বার ভারতীয়রা কনজ়ারভেটিভদের ভোট দিয়েছেন । কাশ্মীর নিয়ে লেবার পার্টির নীতি ভারতীয়দের একত্রিত হতে সাহায্য করেছে ।”

ভারতের বিদেশমন্ত্রক লেবার পার্টিকে নিয়ে বিরক্ত ছিল । ভারতীয় হাইকমিশন এবং সে দেশের বিশাল ভারতীয় জনগণ লেবার পার্টির থেকে মুখ ফিরিয়ে নেয় । এমনকী লেবার পার্টির MP এবং সমর্থকদের একটি সংগঠন লেবার ফ্রেন্ডস অব ইন্ডিয়ার দেওয়া নৈশভোজের আমন্ত্রণও গ্রহণ করেনি ভারতীয় হাইকমিশন । ২৯ সেপ্টেম্বর হাইকমিশনের পক্ষ থেকে আয়োজিত ভারতীয় দিবস উদযাপনেও ডাকা হয়নি লেবার পার্টির কোনও প্রতিনিধিকে । বিষয়টা তখনই পরিষ্কার হয়ে গেছিল । ভারতীয় বংশোদ্ভূত ভোটাররা যার পূর্ণ সদব্যবহার করেন ভোটের ময়দানে ।

তৎকালীন EEC, পরবর্তী সময়ে হওয়া ইউরোপিয়ান ইউনিয়নে অনেক পরে নাম লিখিয়েছিল ব্রিটেন । এবং তারাই সবার আগে প্রস্থান করছে । ব্রিটেনের প্রাক্তন প্রধানমন্ত্রী ডেভিড ক্যামেরন, যাঁর সময়ে ব্রেক্সিটের গণভোট হয়েছিল, তিনি ‘হ্যাঁ’ ভোট ঠেকাতে অক্ষম হয়েছিলেন । এই ঘটনা ব্রিটেনকে খুব খারাপভাবে বিভক্ত করেছে এবং সম্ভবত সে দেশকে বিভাজনের দিকে ঠেলে দিয়েছে । বিশেষজ্ঞরা বলছেন, এটা ব্রিটিশ ঔদ্ধত্যের অবধারিত ফল ।

Lucknow (UP), Dec 28 (ANI): While talking about the alleged manhandling of Congress general secretary Priyanka Gandhi Vadra by UP Police in Lucknow, SSP Kalanidhi Naithani said that the woman police officer has denied the allegation put against her by the Congress. He said, "Today, morning area incharge, Dr Archana Singh has presented a report to Additional Superintendent where she has mentioned that Priyanka Gandhi Vadra's car was not moving in the scheduled route rather a different route. Singh has also written that whatever rumours are doing rounds on social media of heckling and strangulating Priyanka Gandhi Vadra are wrong".
ETV Bharat Logo

Copyright © 2025 Ushodaya Enterprises Pvt. Ltd., All Rights Reserved.