ETV Bharat / bharat

বিহার নির্বাচন : JD(U)-র বিভাজনের রাজনীতির জেরে NDA-র সুবিধা

author img

By

Published : Oct 11, 2020, 7:31 AM IST

বিহারের বিধানসভা ভোটের আগে রাজনৈতিক দলগুলি জেতার জন্য তাদের প্রার্থীদের মাঠে নামিয়েছে । তবে NDA যেভাবে রাজনৈতিক কৌশল নিয়েছে , সেক্ষেত্রে মুসলিম বা যাদবদের পুরো ভোটটা NDA-র বিরুদ্ধে যাওয়ার সম্ভাবনা কার্যত অসম্ভব । প্রতিবেদনটি লিখেছেন ইটিভি ভারতের নিউজ় এডিটর বিলাল ভাট ।

Bihar election 2020
বিহার বিধানসভা নির্বাচন

বিহারের আসন্ন বিধানসভা ভোটের আগে NDA এমনভাবে রাজনীতির দাবার বোর্ডে ঘুঁটি সাজিয়েছে যে, যাদব বা মুসলিমরা যে পদক্ষেপই করুক না কেন, লাভ হবে BJP-র । বিহারে জাতপাতের রাজনীতি ও তার গতিপ্রকৃতি বহুমাত্রিক । আর তার জেরে আসন্ন বিধানসভা নির্বাচনে সেই রাজ্যে মুসলিম বা যাদবদের পুরো ভোটটা NDA-র বিরুদ্ধে যাওয়ার সম্ভাবনা কার্যত অসম্ভব ।

যদিও এটাও ঠিক, নীতীশ কুমার তাঁর দীর্ঘ কয়েক দশকের মুখ্যমন্ত্রিত্বকালে বিহারের মুসলিম ও অন্য পিছিয়ে থাকা সম্প্রদায়ের সামগ্রিক উন্নয়নের জন্য বহু কাজ করেছেন । নীতীশ কুমারের সরকারের সেই সমস্ত উন্নয়নমূলক কাজকর্ম মুসলিম ও পিছিয়ে থাকা জাতির মানুষ কিন্তু ভোলেনি । সাম্প্রতিককালে ভারতীয় জনতা পার্টির নেতৃত্বাধীন কেন্দ্রীয় সরকার যে সমস্ত সিদ্ধান্ত নিয়েছে , সরকার সংসদে যে সমস্ত বিল পাশ করেছে, তা তাদের পক্ষে যাবে না বলেই মনে করে মুসলিম সমাজের একটা বড় অংশ যেমন, নাগরিকত্ব সংশোধনী বিল ইত্যাদি । কিন্তু মুসলিম সমাজের একটা বড় অংশের এই বিরূপ মনোভাব সত্ত্বেও বিহারে নীতীশ কুমারের পক্ষে মুসলিম সমর্থন এখনও একেবারে কমে যায়নি । মুসলিম জনসমাজের এই সমর্থন কমে না যাওয়ার অন্যতম কারণ হল বিভিন্ন সরকারি প্রকল্পের মাধ্যমে দীর্ঘদিন ধরে নীতীশ কুমার সরকার মুসলিম সমাজের জন্য বিভিন্ন উন্নয়নমূলক কাজ করে চলেছে ।

মুসলিম সমাজের একটা অংশের সমর্থন এখনও অটুট থাকা সত্ত্বেও আসন্ন বিধানসভা ভোটে JD(U) কোনও ঝুঁকি নিতে চাইছে না । তাই তারা প্রার্থী বাছাইয়ের ক্ষেত্রে মুসলিম, যাদব, কুর্মি-সহ অন্যান্য পশ্চাৎপদ সম্প্রদায়ের প্রতিনিধিত্বর মধ্যে যাতে সমতা থাকে, সেই কথা বিশেষভাবে মাথায় রেখে সিদ্ধান্ত নিচ্ছে । উল্লেখ্য, নীতীশ কুমার নিজে পশ্চাৎপদ কুর্মি সম্প্রদায়ের নেতা ।

আসন্ন বিধানসভা ভোটে প্রার্থী বাছাইয়ের ক্ষেত্রে JD(U) যে যথেষ্ট পরিকল্পনা করে মাঠে নেমেছে, তা তাদের প্রার্থীদের পরিচিতি ও রাজনৈতিক ইতিহাস দেখলেই বোঝা যাচ্ছে । যেমন ধরা যাক দ্বারভাঙা বিধানসভা আসনটির কথা । এই আসনে জনতা দল (ইউনাইটেড)- এর প্রার্থী হলেন ফারাজ় ফাতমি । উল্লেখ্য, এই দ্বারভাঙা আসনে জনসংখ্যার 27 শতাংশ হল মুসলিম । ফারাজ় ফাতমিকে প্রার্থী হিসেবে দাঁড় করানোর পর সম্প্রতি বিধান পরিষদের সদস্য মৌলানা গুলাম রসুল বল্লভি প্রকাশ্যেই ভোটারদের কাছে আবেদন করেছেন যে, তাঁরা যেন ফারাজ় ফাতমিকে ভোট দেন । কিন্তু কে এই মৌলানা গুলাম রসুল বল্লভি ? এই ব্যক্তি বারেলভি চিন্তাধারার অন্যতম সুপরিচিত প্রবক্তা । বিহারে মুসলিম জনসংখ্যার একটা বড় অংশের উপর দীর্ঘদিন ধরে তাঁর যথেষ্ট প্রভাব রয়েছে ।

এবারের বিধানসভা ভোটে শুধু 18 জন যাদব প্রার্থীই নন, সেই সঙ্গে জনতা দল (ইউনাইটেড)-এর তালিকায় রয়েছে 11 জন মুসলিম প্রার্থীও । আর জনতা দল (ইউনাইটেড)- এর এই যাদব ও মুসলিম প্রার্থীরা আসন্ন বিধানসভা ভোটে যে রাষ্ট্রীয় জনতা দলকে যথেষ্ট বেগ দেবে , তা বলাই বাহুল্য ।

জনতা দল (ইউনাইটেড)-এর অন্যতম উল্লেখযোগ্য প্রার্থী হলেন চন্দ্রিকা রায় । একসময়ে চন্দ্রিকা রায়ের পরিবারের সঙ্গে রাষ্ট্রীয় জনতা দলের দীর্ঘদিন ওঠাবসা ছিল । চন্দ্রিকার পিতা দারোগা প্রসাদ বিশিষ্ট রাজনৈতিক ব্যক্তিত্ব । তিনি ছিলেন লালুপ্রসাদ যাদবের সরকারের অন্যতম মন্ত্রী । চন্দ্রিকা রায়ের আরও একটি পরিচয় রয়েছে, সেটা হল তিনি রাষ্ট্রীয় জনতা দলের নেতা তেজপ্রতাপ যাদবের প্রাক্তন শ্বশুর । চন্দ্রিকার মেয়ের সঙ্গে ছয় মাসের সম্পর্কের পর তেজপ্রতাপ যাদব তাঁকে ‘অপহরণ’ করেছিল । সেই বিষয়টি নিয়ে সেই সময় বিহারের রাজনীতিতে যথেষ্ট জলঘোলা হয়েছিল । চন্দ্রিকা রায় শেষ পর্যন্ত রাষ্ট্রীয় জনতা দলের সঙ্গে সম্পর্ক ছিন্ন করে এবার জনতা দল (ইউনাইটেড)-এর টিকিটে পার্সা বিধানসভা আসন থেকে লড়ছেন ।

শুধু চন্দ্রিকা রায় একা নন, রাষ্ট্রীয় জনতা দলের ক্ষেত্রে আরও একটি উদ্বেগজনক নাম হল জয়বর্ধন যাদব । জয়বর্ধন যাদব 2015 সালে পালিগঞ্জ বিধানসভা আসন থেকে রাষ্ট্রীয় জনতা দলের টিকিটে জিতেছিলেন । কিন্তু এবার এই প্রার্থী জনতা দল (ইউনাইটেড)-এর টিকিটে লড়ছেন । এইভাবে নীতীশ কুমার রাষ্ট্রীয় জনতা দলের বেশ কয়েকটি পরিচিত ও হেভিওয়েট প্রার্থীকে এবার বিধানসভা ভোটে নিজের দিকে টেনে নিয়েছেন । এই সমস্ত হেভিওয়েট প্রার্থীদের তাঁদের নিজের সম্প্রদায়ের উপর যথেষ্ট প্রভাব রয়েছে । তাই তাঁরা আসন্ন বিধানসভা ভোটে যে রাষ্ট্রীয় জনতা দলকে যথেষ্ট বেগ দেবেন, তা বলাই বাহুল্য ।

মুসলিম ও যাদব সম্প্রদায়ের একটা অংশের এভাবে আসন্ন বিধানসভা ভোটে নীতিশ কুমারের হয়ে লড়ার কারণ হল এই দুই সম্প্রদায় ভোট ব্যাঙ্ক মোটেই সংঘবদ্ধ নয় । আর সেই সুযোগ নিয়ে বিভাজনের রাজনীতির কার্ড খেলে নীতীশ কুমার এটাই চাইছেন যে, যাদব ও মুসলিম সম্প্রদায়ের ভোট ব্যাঙ্কের একটা বড় অংশ যেন জনতা দল (ইউনাইটেড) না পেলেও, তা যেন মহাগঠবন্ধন-এর ভোট ব্যাঙ্কে ধস নামাতে পারে ।

অন্যদিকে, কংগ্রেস ও BJP দুই দলই দাবি করছে যে, উচ্চবর্ণের ভোটব্যাঙ্কের উপর তাদের যথেষ্ট প্রভাব রয়েছে । কিন্তু বাস্তব হল এটাই যে, কংগ্রেসের উচ্চবর্ণের ভোট ব্যাঙ্কে সাম্প্রতিককালে অনেকটাই ধস নেমেছে আর তার অন্যতম কারণ হল BJP-র উগ্র হিন্দুত্ব রাজনীতি । 1947 সালের পর থেকে দীর্ঘ চার দশক কংগ্রেসের উদারপন্থী রাজনীতি দলকে নির্বাচনে সুবিধা দিলেও এখন বাস্তব পরিস্থিতি কিন্তু সম্পূর্ণ আলাদা । পরিস্থিতির পরিবর্তন হতে শুরু করেছিল সেই 1990 এর সময় থেকে, যখন উচ্চবর্ণের নেতাদের পাশাপাশি পশ্চাৎপদ সম্প্রদায়ের একাধিক নেতা যেমন, লালুপ্রসাদ যাদব, নীতিশ কুমার, রামবিলাস পাসোয়ানদের উত্থান দেখেছিল গো-বলয়ের রাজনীতি । তার আগে উচ্চবর্ণ ও পশ্চাৎপদ সম্প্রদায়ের ভোট ব্যাঙ্কের একটা বড় অংশ কংগ্রেসকে ভোট দিলেও ওই নিম্নবর্গের নেতাদের উত্থানের জেরে ভোট ব্যাঙ্কের সমীকরণে সুদূরপ্রসারী প্রভাব পড়ে আর তার জেরে কংগ্রেসের সংকট শুরু হয় ।

একটা সময়ে কংগ্রেসের প্রার্থীদের মধ্যে উচ্চবর্ণের প্রাধান্যই বেশি ছিল । কংগ্রেস নেতৃত্ব মনে করত যে, প্রার্থীরা উচ্চবর্ণের হলেও দলের প্রতি আনুগত্যের জেরে দলিত ও মুসলিম সম্প্রদায়ের ভোট তারাই পাবে এবং বাস্তবে সেটাই হত । তাই সেই আমলে যোগ্যতা থাকা সত্ত্বেও নিম্নবর্গের অনেক নেতা উচ্চবর্ণের কংগ্রেসি নেতাদের দাপটে বেশি উপরে উঠতে পারতেন না । এর অন্যতম উদাহরণ হল বিহারের দুই প্রাক্তন মুখ্যমন্ত্রী দুর্গাপ্রসাদ রাই এবং কার্পুরি ঠাকুর । কীভাবে তাঁরা দুইজন নিম্নবর্গের যোগ্য নেতাদের উন্নতির পথে বাঁধা হয়ে দাড়িয়েছিলেন, কীভাবে নিম্নবর্গের নেতারা তাঁদের সম্প্রদায়ের উন্নতির জন্য কাজ করতে গিয়ে ওই দুই মুখ্যমন্ত্রীর বাধার সম্মুখীন হয়েছিলেন, তা বিহারের রাজনীতিতে কান পাতলেই শোনা যায় ।

বিহারের রাজনীতিতে জাতপাতের এই বিভাজনের জেরে নির্বাচন মানুষের অংশগ্রহণ ক্রমশ বাড়ছে । বিহারের রাজনীতিতে আগে যখন উচ্চবর্ণের নেতাদের দাপট বেশি ছিল, তখন নির্বাচনে ভোটারদের অংশগ্রহণ কম হলেও আদতে লাভ হত কংগ্রেসের । কিন্তু পরবর্তীতে নিম্নবর্গের নেতাদের উত্থান, বিভিন্ন দল ও তাদের প্রার্থীদের সংখ্যা বৃদ্ধির জেরে ভোটের সমীকরণ যখন পালটাতে শুরু করে, তখন কংগ্রেসের প্রভাব রাজ্যের রাজনীতিতে ক্রমশ কমতে থাকে ।

যদি আমরা নির্বাচনী ফলাফল বিশ্লেষণ করি, তবে দেখব যে, বিধানসভা নির্বাচনে ভোটাররা কোনও দলকেই নিরঙ্কুশ সংখ্যা গরিষ্ঠতা দেয়নি । কিন্তু বাস্তব এটাই যে, নির্বাচনী ফলাফলে একক সংখ্যা গরিষ্ঠতা অর্জন করেছে যে দল তারা সর্বদা ভারতের সবচেয়ে পিছিয়ে থাকা রাজ্য বিহারের মানুষকে শোষণ করেছে ।

বিহারের আসন্ন বিধানসভা ভোটের আগে NDA এমনভাবে রাজনীতির দাবার বোর্ডে ঘুঁটি সাজিয়েছে যে, যাদব বা মুসলিমরা যে পদক্ষেপই করুক না কেন, লাভ হবে BJP-র । বিহারে জাতপাতের রাজনীতি ও তার গতিপ্রকৃতি বহুমাত্রিক । আর তার জেরে আসন্ন বিধানসভা নির্বাচনে সেই রাজ্যে মুসলিম বা যাদবদের পুরো ভোটটা NDA-র বিরুদ্ধে যাওয়ার সম্ভাবনা কার্যত অসম্ভব ।

যদিও এটাও ঠিক, নীতীশ কুমার তাঁর দীর্ঘ কয়েক দশকের মুখ্যমন্ত্রিত্বকালে বিহারের মুসলিম ও অন্য পিছিয়ে থাকা সম্প্রদায়ের সামগ্রিক উন্নয়নের জন্য বহু কাজ করেছেন । নীতীশ কুমারের সরকারের সেই সমস্ত উন্নয়নমূলক কাজকর্ম মুসলিম ও পিছিয়ে থাকা জাতির মানুষ কিন্তু ভোলেনি । সাম্প্রতিককালে ভারতীয় জনতা পার্টির নেতৃত্বাধীন কেন্দ্রীয় সরকার যে সমস্ত সিদ্ধান্ত নিয়েছে , সরকার সংসদে যে সমস্ত বিল পাশ করেছে, তা তাদের পক্ষে যাবে না বলেই মনে করে মুসলিম সমাজের একটা বড় অংশ যেমন, নাগরিকত্ব সংশোধনী বিল ইত্যাদি । কিন্তু মুসলিম সমাজের একটা বড় অংশের এই বিরূপ মনোভাব সত্ত্বেও বিহারে নীতীশ কুমারের পক্ষে মুসলিম সমর্থন এখনও একেবারে কমে যায়নি । মুসলিম জনসমাজের এই সমর্থন কমে না যাওয়ার অন্যতম কারণ হল বিভিন্ন সরকারি প্রকল্পের মাধ্যমে দীর্ঘদিন ধরে নীতীশ কুমার সরকার মুসলিম সমাজের জন্য বিভিন্ন উন্নয়নমূলক কাজ করে চলেছে ।

মুসলিম সমাজের একটা অংশের সমর্থন এখনও অটুট থাকা সত্ত্বেও আসন্ন বিধানসভা ভোটে JD(U) কোনও ঝুঁকি নিতে চাইছে না । তাই তারা প্রার্থী বাছাইয়ের ক্ষেত্রে মুসলিম, যাদব, কুর্মি-সহ অন্যান্য পশ্চাৎপদ সম্প্রদায়ের প্রতিনিধিত্বর মধ্যে যাতে সমতা থাকে, সেই কথা বিশেষভাবে মাথায় রেখে সিদ্ধান্ত নিচ্ছে । উল্লেখ্য, নীতীশ কুমার নিজে পশ্চাৎপদ কুর্মি সম্প্রদায়ের নেতা ।

আসন্ন বিধানসভা ভোটে প্রার্থী বাছাইয়ের ক্ষেত্রে JD(U) যে যথেষ্ট পরিকল্পনা করে মাঠে নেমেছে, তা তাদের প্রার্থীদের পরিচিতি ও রাজনৈতিক ইতিহাস দেখলেই বোঝা যাচ্ছে । যেমন ধরা যাক দ্বারভাঙা বিধানসভা আসনটির কথা । এই আসনে জনতা দল (ইউনাইটেড)- এর প্রার্থী হলেন ফারাজ় ফাতমি । উল্লেখ্য, এই দ্বারভাঙা আসনে জনসংখ্যার 27 শতাংশ হল মুসলিম । ফারাজ় ফাতমিকে প্রার্থী হিসেবে দাঁড় করানোর পর সম্প্রতি বিধান পরিষদের সদস্য মৌলানা গুলাম রসুল বল্লভি প্রকাশ্যেই ভোটারদের কাছে আবেদন করেছেন যে, তাঁরা যেন ফারাজ় ফাতমিকে ভোট দেন । কিন্তু কে এই মৌলানা গুলাম রসুল বল্লভি ? এই ব্যক্তি বারেলভি চিন্তাধারার অন্যতম সুপরিচিত প্রবক্তা । বিহারে মুসলিম জনসংখ্যার একটা বড় অংশের উপর দীর্ঘদিন ধরে তাঁর যথেষ্ট প্রভাব রয়েছে ।

এবারের বিধানসভা ভোটে শুধু 18 জন যাদব প্রার্থীই নন, সেই সঙ্গে জনতা দল (ইউনাইটেড)-এর তালিকায় রয়েছে 11 জন মুসলিম প্রার্থীও । আর জনতা দল (ইউনাইটেড)- এর এই যাদব ও মুসলিম প্রার্থীরা আসন্ন বিধানসভা ভোটে যে রাষ্ট্রীয় জনতা দলকে যথেষ্ট বেগ দেবে , তা বলাই বাহুল্য ।

জনতা দল (ইউনাইটেড)-এর অন্যতম উল্লেখযোগ্য প্রার্থী হলেন চন্দ্রিকা রায় । একসময়ে চন্দ্রিকা রায়ের পরিবারের সঙ্গে রাষ্ট্রীয় জনতা দলের দীর্ঘদিন ওঠাবসা ছিল । চন্দ্রিকার পিতা দারোগা প্রসাদ বিশিষ্ট রাজনৈতিক ব্যক্তিত্ব । তিনি ছিলেন লালুপ্রসাদ যাদবের সরকারের অন্যতম মন্ত্রী । চন্দ্রিকা রায়ের আরও একটি পরিচয় রয়েছে, সেটা হল তিনি রাষ্ট্রীয় জনতা দলের নেতা তেজপ্রতাপ যাদবের প্রাক্তন শ্বশুর । চন্দ্রিকার মেয়ের সঙ্গে ছয় মাসের সম্পর্কের পর তেজপ্রতাপ যাদব তাঁকে ‘অপহরণ’ করেছিল । সেই বিষয়টি নিয়ে সেই সময় বিহারের রাজনীতিতে যথেষ্ট জলঘোলা হয়েছিল । চন্দ্রিকা রায় শেষ পর্যন্ত রাষ্ট্রীয় জনতা দলের সঙ্গে সম্পর্ক ছিন্ন করে এবার জনতা দল (ইউনাইটেড)-এর টিকিটে পার্সা বিধানসভা আসন থেকে লড়ছেন ।

শুধু চন্দ্রিকা রায় একা নন, রাষ্ট্রীয় জনতা দলের ক্ষেত্রে আরও একটি উদ্বেগজনক নাম হল জয়বর্ধন যাদব । জয়বর্ধন যাদব 2015 সালে পালিগঞ্জ বিধানসভা আসন থেকে রাষ্ট্রীয় জনতা দলের টিকিটে জিতেছিলেন । কিন্তু এবার এই প্রার্থী জনতা দল (ইউনাইটেড)-এর টিকিটে লড়ছেন । এইভাবে নীতীশ কুমার রাষ্ট্রীয় জনতা দলের বেশ কয়েকটি পরিচিত ও হেভিওয়েট প্রার্থীকে এবার বিধানসভা ভোটে নিজের দিকে টেনে নিয়েছেন । এই সমস্ত হেভিওয়েট প্রার্থীদের তাঁদের নিজের সম্প্রদায়ের উপর যথেষ্ট প্রভাব রয়েছে । তাই তাঁরা আসন্ন বিধানসভা ভোটে যে রাষ্ট্রীয় জনতা দলকে যথেষ্ট বেগ দেবেন, তা বলাই বাহুল্য ।

মুসলিম ও যাদব সম্প্রদায়ের একটা অংশের এভাবে আসন্ন বিধানসভা ভোটে নীতিশ কুমারের হয়ে লড়ার কারণ হল এই দুই সম্প্রদায় ভোট ব্যাঙ্ক মোটেই সংঘবদ্ধ নয় । আর সেই সুযোগ নিয়ে বিভাজনের রাজনীতির কার্ড খেলে নীতীশ কুমার এটাই চাইছেন যে, যাদব ও মুসলিম সম্প্রদায়ের ভোট ব্যাঙ্কের একটা বড় অংশ যেন জনতা দল (ইউনাইটেড) না পেলেও, তা যেন মহাগঠবন্ধন-এর ভোট ব্যাঙ্কে ধস নামাতে পারে ।

অন্যদিকে, কংগ্রেস ও BJP দুই দলই দাবি করছে যে, উচ্চবর্ণের ভোটব্যাঙ্কের উপর তাদের যথেষ্ট প্রভাব রয়েছে । কিন্তু বাস্তব হল এটাই যে, কংগ্রেসের উচ্চবর্ণের ভোট ব্যাঙ্কে সাম্প্রতিককালে অনেকটাই ধস নেমেছে আর তার অন্যতম কারণ হল BJP-র উগ্র হিন্দুত্ব রাজনীতি । 1947 সালের পর থেকে দীর্ঘ চার দশক কংগ্রেসের উদারপন্থী রাজনীতি দলকে নির্বাচনে সুবিধা দিলেও এখন বাস্তব পরিস্থিতি কিন্তু সম্পূর্ণ আলাদা । পরিস্থিতির পরিবর্তন হতে শুরু করেছিল সেই 1990 এর সময় থেকে, যখন উচ্চবর্ণের নেতাদের পাশাপাশি পশ্চাৎপদ সম্প্রদায়ের একাধিক নেতা যেমন, লালুপ্রসাদ যাদব, নীতিশ কুমার, রামবিলাস পাসোয়ানদের উত্থান দেখেছিল গো-বলয়ের রাজনীতি । তার আগে উচ্চবর্ণ ও পশ্চাৎপদ সম্প্রদায়ের ভোট ব্যাঙ্কের একটা বড় অংশ কংগ্রেসকে ভোট দিলেও ওই নিম্নবর্গের নেতাদের উত্থানের জেরে ভোট ব্যাঙ্কের সমীকরণে সুদূরপ্রসারী প্রভাব পড়ে আর তার জেরে কংগ্রেসের সংকট শুরু হয় ।

একটা সময়ে কংগ্রেসের প্রার্থীদের মধ্যে উচ্চবর্ণের প্রাধান্যই বেশি ছিল । কংগ্রেস নেতৃত্ব মনে করত যে, প্রার্থীরা উচ্চবর্ণের হলেও দলের প্রতি আনুগত্যের জেরে দলিত ও মুসলিম সম্প্রদায়ের ভোট তারাই পাবে এবং বাস্তবে সেটাই হত । তাই সেই আমলে যোগ্যতা থাকা সত্ত্বেও নিম্নবর্গের অনেক নেতা উচ্চবর্ণের কংগ্রেসি নেতাদের দাপটে বেশি উপরে উঠতে পারতেন না । এর অন্যতম উদাহরণ হল বিহারের দুই প্রাক্তন মুখ্যমন্ত্রী দুর্গাপ্রসাদ রাই এবং কার্পুরি ঠাকুর । কীভাবে তাঁরা দুইজন নিম্নবর্গের যোগ্য নেতাদের উন্নতির পথে বাঁধা হয়ে দাড়িয়েছিলেন, কীভাবে নিম্নবর্গের নেতারা তাঁদের সম্প্রদায়ের উন্নতির জন্য কাজ করতে গিয়ে ওই দুই মুখ্যমন্ত্রীর বাধার সম্মুখীন হয়েছিলেন, তা বিহারের রাজনীতিতে কান পাতলেই শোনা যায় ।

বিহারের রাজনীতিতে জাতপাতের এই বিভাজনের জেরে নির্বাচন মানুষের অংশগ্রহণ ক্রমশ বাড়ছে । বিহারের রাজনীতিতে আগে যখন উচ্চবর্ণের নেতাদের দাপট বেশি ছিল, তখন নির্বাচনে ভোটারদের অংশগ্রহণ কম হলেও আদতে লাভ হত কংগ্রেসের । কিন্তু পরবর্তীতে নিম্নবর্গের নেতাদের উত্থান, বিভিন্ন দল ও তাদের প্রার্থীদের সংখ্যা বৃদ্ধির জেরে ভোটের সমীকরণ যখন পালটাতে শুরু করে, তখন কংগ্রেসের প্রভাব রাজ্যের রাজনীতিতে ক্রমশ কমতে থাকে ।

যদি আমরা নির্বাচনী ফলাফল বিশ্লেষণ করি, তবে দেখব যে, বিধানসভা নির্বাচনে ভোটাররা কোনও দলকেই নিরঙ্কুশ সংখ্যা গরিষ্ঠতা দেয়নি । কিন্তু বাস্তব এটাই যে, নির্বাচনী ফলাফলে একক সংখ্যা গরিষ্ঠতা অর্জন করেছে যে দল তারা সর্বদা ভারতের সবচেয়ে পিছিয়ে থাকা রাজ্য বিহারের মানুষকে শোষণ করেছে ।

ETV Bharat Logo

Copyright © 2024 Ushodaya Enterprises Pvt. Ltd., All Rights Reserved.