ETV Bharat / bharat

এক দেশ, দুই ব্যবস্থাকে শ্রদ্ধা করে না বেজিং : হংকংয়ের সাংসদ

author img

By

Published : Jun 3, 2020, 6:59 PM IST

জাতীয় নিরাপত্তা আইন নিয়ে সরব হংকংয়ের মানুষজন । কেউই এই আইন মানতে চাইছেন না । এনিয়ে হংকংয়ের সিভিক পার্টির নেতা ও সাংসদ আলভিন ইয়ুংয়ের একান্ত সাক্ষাৎকার ।

ছবি
ছবি

দিল্লি, 3 জুন : বেজিংয়ের তরফে গত মাসে প্রস্তাবিত জাতীয় নিরাপত্তা আইনকে কেন্দ্র করে হংকংয়ের রাস্তায় এখনও বিক্ষোভ চলছে ৷ গতবছর জুন মাস থেকে শুরু হওয়া এই বিক্ষোভকে বেজিং ‘রাষ্ট্র থেকে সরে যাওয়ার জন্য ধ্বংসাত্মক কাজের চেষ্টা’ বলেই জানাচ্ছে ৷ এই অভিযোগ খারিজ করে দিচ্ছেন হংকংয়ের আন্দোলনকারী এবং গণতন্ত্র-প্রিয় রাজনৈতিক নেতারা ৷

আগে হংকং একটি ব্রিটিশ কলোনি ছিল ৷ ১৯৯৭ সালে হংকংকে চিনের হাতে ফিরিয়ে দেওয়া হয় ৷ ‘এক দেশ, দুই ব্যবস্থা’য় বিশেষ অধিকার ও স্বায়ত্বশাসন বজায় রাখার প্রেক্ষিতেই হস্তান্তর হয় ৷ হংকংয়ের নিজস্ব বিচার ব্যবস্থা রয়েছে ৷ আর চিনের থেকে আলাদা একটি আইনি ব্যবস্থা রয়েছে ৷ এই ব্যবস্থাই তাদের সমাবেশ করা ও মত প্রকাশের স্বাধীনতা দেয় ৷

প্রত্যর্পণ বিলের বিরুদ্ধে গতবছর জুন মাসে নজিরবিহীন বিক্ষোভ শুরু হয় ৷ প্রায় দশ লাখ মানুষ স্বতঃস্ফূর্তভাবে এই বিক্ষোভে সামিল হন ৷ সেপ্টেম্বের বিলটি প্রত্যাহার করে নেওয়া হয় ৷ ওই বিলে বলা হয়েছিল যে, স্থানীয় অপরাধীদের চিনের মূল ভূখণ্ডে প্রত্যর্পণ করে নেওয়া যাবে ৷ এর জেরে বিচারবিভাগীয় স্বাধীনতা খর্ব হবে এবং চিনের কর্তৃত্বের বিরুদ্ধে আওয়াজ তোলা ব্যক্তিদের জীবন ঝুঁকিপূর্ণ হয়ে হয়ে যাবে বলেই ভয় ছিল সমালোচকদের ৷ তারপর থেকে হংকংয়ে বিক্ষোভ চলছে ৷ বিক্ষোভকারীদের দাবি, পূর্ণ গণতন্ত্র দিতে হবে এবং পুলিশি বাড়াবাড়ির বিরুদ্ধে তদন্ত করতে হবে ৷ মে মাসে নতুন জাতীয় নিরাপত্তা আইন সেই আগুনে ঘি ঢেলেছে ৷ বিশেষজ্ঞরা মনে করেন যে, এই বিক্ষোভের জেরে শি জিনপিংয়ের অবস্থান প্রশ্নের মুখে পড়েছে এবং দুর্বল হয়ে গিয়েছে ৷ একাধিক ভারতীয় পর্যবেক্ষক মনে করেন যে, প্রেসিডেন্ট শি জিনপিং এবং চিনের কমিউনিস্ট পার্টির বিরুদ্ধে হংকং ও তাইওয়ানের এই নজিরবিহীন সমালোচনাই প্রকৃত নিয়ন্ত্রণ রেখায় চিনা আগ্রাসনের কারণ ৷

হংকংয়ের সাংসদ আলভিন ইয়ুংয়ের সাক্ষাৎকার

সাংবাদিক স্মিতা শর্মা কথা বলেছেন হংকংয়ের সিভিক পার্টির নেতা ও সাংসদ আলভিন ইয়ুংয়ের সঙ্গে ৷ তাঁর সঙ্গে বিক্ষোভের বাস্তব পরিস্থিতি, দাবি এবং আন্তর্জাতিক প্রেক্ষাপট নিয়ে আলোচনা করেছেন ৷ গত নভেম্বরে হংকংয়ে কাউন্সিল নির্বাচন হয় ৷ সেখানে ১৮টি আসনের মধ্যে ১৭টিতে জয় পেয়ে গণতন্ত্র-প্রিয়দের ব্যাপক জয় হয় ৷ এখন তাঁরা পূর্ণ স্বাধীনতার দাবিতে লড়াই শুরু করেছেন৷ আলভিন ইয়ুং জানিয়েছেন যে হংকংয়ের মানুষ তাঁদের অধিকার কেড়ে নেওয়া জাতীয় সুরক্ষা আইনকে মানতে চাইছেন না এবং মূল আইনের ভিত্তিতে বাস্তবসম্মত দাবি জানাচ্ছেন ৷ তিনি জানান যে বিচ্ছিন্নতার দাবি অধিকাংশ মানুষের মুখে প্রতিধ্বনিত হচ্ছে না । এবং বেজিং ‘এক দেশ, দুই ব্যবস্থা’কে বা স্বায়ত্বশাসনের প্রতিশ্রুতিকেও শ্রদ্ধা করে না ৷ আলভিন আরও জানান, হংকংয়ের যে সমস্ত মানুষরা মুখ খুলেছেন, তাঁরা দমন এবং ভয়ানক বিপদের ভয় পাচ্ছেন ৷ কিন্তু এই ‘নেতাহীন’ বিক্ষোভ চলতেই থাকবে ৷ প্রশ্নোত্তরের মাধ্যমে উঠে এল নানা প্রসঙ্গ ।

প্রশ্ন : বেজিং বলছে এই নতুন আইন জাতীয় সুরক্ষার জন্য প্রয়োজনীয় এবং সন্ত্রাসবাদ দমনের জন্যও ৷ এটাকে আপনি কীভাবে দেখছেন ?

আলভিন ইয়ুং : ‘এক দেশ, দুই ব্যবস্থা’র মাধ্যমে হংকংয়ে নিজস্ব কিছু আইন আছে ৷ আমাদের শাসন ব্যবস্থা চলে মূল আইনের উপর ভিত্তি করে ৷ যা একটা সংবিধানের ক্ষুদ্র সংস্করণ বলা চলে ৷ ওই আইনের মধ্যেই একটি অনুচ্ছেদে স্পষ্টভাবে জাতীয় নিরাপত্তার বিষয়টি নিয়ে উল্লেখ করা আছে ৷ আর তা হল, হংকং সরকার নিজেদের সাংসদদের দ্বারা জাতীয় সুরক্ষা আইন তৈরি করতে পারে ৷ এটা দেশীয় ইশু এবং এটা ঠিক করার দায়িত্ব হংকংয়ের মানুষেরই ৷ ২০০৩ সালে হংকং সরকার একটি বিতর্কিত জাতীয় সুরক্ষা বিল নিয়ে এসেছিল ৷ যার প্রতিবাদে প্রায় পাঁচ লাখ মানুষ রাস্তায় নেমে প্রতিবাদে সামিল হন ৷ এরপর থেকে কোনও প্রশাসক এই ধরনের কোনও পদক্ষেপ করতে সাহস করেননি ৷ কারণ, আমরা জানি, এটা এতটাই বিতর্কিত যে আমাদের আগে মানুষের অধিকার রক্ষা করতে হবে ৷ যেহেতু হংকংয়ে পূর্ণ স্বাধীনতা নেই, তাই আমরা আমাদের নিজেদের চিফ এগজ়িকিউটিভ বেছে নিতে পারি না ৷ এখানে মানুষ অর্ধেক সাংসদকে নির্বাচিত করতে পারেন ৷ তাহলে আপনি নিশ্চয় বুঝতে পারছেন যে হংকংয়ের মানুষ পুরোপুরি সুরক্ষিত নন ৷ তাই মানুষ জাতীয় নিরাপত্তা আইনকে না বলছেন ৷ কারণ, এটা আমাদের অধিকার কেড়ে নেবে ৷ গত বছর থেকে রাস্তায় প্রতিবাদ হচ্ছে ৷ কারণ, মানুষ প্রত্যর্পণ বিলের বিরুদ্ধে লড়াই করছে ৷ সেই সময় থেকেই আমরা পুলিশি অত্যাচারের সম্মুখীন হচ্ছি এবং এই সরকার পুলিশি অত্যাচারের দিকে তাকাতেই চাইছে না ৷ তারা যে কোনও পরিস্থিতিতেই পুলিশকে সমর্থনের সিদ্ধান্ত নিয়েছে ৷ তাই বেজিং এখন বলছে যে আমরা মূল আইন মানি না ৷ প্রতিশ্রুতিকেও আমরা গুরুত্ব দিচ্ছি না ৷ আমরা এই জাতীয় নিরাপত্তা আইন হংকংয়ের মানুষের সঙ্গে আলোচনা না করেই আরোপ করব ৷ আমাদের আইনসভার প্রক্রিয়ার মধ্য দিয়ে না গিয়ে এবং মানুষকে না বলার সুযোগ না দিয়ে তারা এটা করতে চাইছে ৷

প্রশ্ন : চিন বলছে হংকংয়ের গোলামালে বিদেশি শক্তির হাত রয়েছে ৷ গণতন্ত্রের পক্ষে যাঁরা লড়াই করছেন তাঁদের জঙ্গি, হিংসাকারী বলে বেজিং দাগিয়ে দিচ্ছে ৷ কী বলবেন ?

সমস্ত সরকারই এক ৷ সকলকে দোষারোপ করে ৷ বিরোধী, বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র এসব বলায় তাঁদের সঙ্গে বিদেশির যোগের কথা বলা হচ্ছে ৷ কিন্তু এর কোনও প্রমাণ দিতে পারে না ৷ তারা কী করেছে, সেটা উপলব্ধি করার মতো সাহস তাদের নেই ৷ এই সরকার হংকংয়ের মানুষের সঙ্গে চোখে চোখ রেখে কথা বলতে পারেনি ৷ বলতে পারেনি যে, আমি ভুল ৷ আমার শাসনে কিছু ভুলত্রুটি থেকে গিয়েছে, আমি তা শুধরে নেব ৷ তারা যেটা করছে, তা হল নিজেদের দিকে না দেখে অন্যদের প্রত্যেকের দিকে দোষারোপের আঙুল তুলছে ৷ এই সমস্ত পরিস্থিতির জন্যই গত বছর তারা একটি বিতর্কিত বিল পাস করাতে পারেনি ৷ এবছর তারা পরিস্থিতি সামলাতে গিয়ে আরও খারাপ একটি আইন আনার কথা বলছে ৷

প্রশ্ন : প্রতিবাদীদের দাবি কী ? রাষ্ট্র থেকে সরে যাওয়ার দাবি কি তোলা হয়েছে ?

কয়েকজন মানুষ এটা চাইছেন ৷ কিন্তু এটা অধিকাংশের চাহিদা নয় ৷ গত বছর থেকে হংকংয়ের মানুষেরা পাঁচটি দাবি জানাচ্ছেন ৷ সর্বজনীন ভোটাধিকার যা নিজেদের সরকার বেছে নেওয়ার ক্ষমতা দেবে ৷ যা মূল আইনেই বলা রয়েছে ৷ আমরা তো চাঁদ চাইছি না ৷ আমরা পুলিশি অত্যাচারের ঘটনায় নিরেপক্ষ তদন্ত চাইছি ৷ পুলিশি অত্যাচারের ঘটনার তদন্তে এই সরকার কোনও রকম কমিটি তৈরির পক্ষপাতী নয় ৷ এটা খুবই দুর্ভাগ্যজনক ৷ আমরা চাইছি এই সরকার রাজনৈতিক অভিযোগ দিয়ে মানুষকে অভিযুক্ত করা বন্ধ করুক ৷ এটা একেবারেই ঠিক নয় ৷ এই দাবিগুলি কি কারও কাছে যুক্তিহীন মনে হচ্ছে ? না ৷ একটি সাধারণ মুক্ত পৃথিবীতে সাধারণ মানুষের দাবি জানানোর আগেই সরকারের এটা করা উচিত ৷

প্রশ্ন : অ্যামেরিকা এখন বিশ্বব্যাপী বিভিন্ন দায়িত্ব থেকে সরে যাচ্ছে ৷ বহুপাক্ষিক সংগঠনগুলি থেকে নিজেদের সরিয়ে নিচ্ছে ৷ এই পরিস্থিতিতে অ্যামেরিকার বিবৃতি কি আপনাদের সাহায্য করবে ? নাকি এতে পরিস্থিতি আরও জটিল হবে ?

হংকং একটি আন্তর্জাতিক শহর ৷ ভারত-সহ অন্য অনেক দেশেরই হংকং সম্বন্ধে আগ্রহ রয়েছে ৷ আপনারা এখানে বিনিয়োগ করেছেন ৷ অনেক ভারতীয় নাগরিক এখানে থাকেন ৷ তেমনই মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র ও বিশ্বের অন্য দেশের লোকজনও থাকেন ৷ গত দেড় শতাব্দী ধরে হংকংয়ের সঙ্গে বিশ্বের বিভিন্ন বিনিয়োগকারী দেশের ঘনিষ্ঠ সম্পর্ক রয়েছে ৷ অ্যামেরিকা তাদের মধ্যে একজন ৷ ১৯৯২ সালে তারা হংকংকে বিশেষ মর্যাদা দিয়েছিল হংকং পলিসি অ্যাক্টের মাধ্যমে ৷ অ্যামেরিকায় আইন পাস করানো হয়েছিল, যে হংকং যদি আলাদা থাকতে চায়, তাহলে তাদের চিনের বাইরে আলাদা হিসেবে গণ্য করা হবে ৷ কিন্তু হস্তান্তর প্রক্রিয়ার পর একাধিক ঘটনায় আমরা দেখেছি যে, চিন এক দেশ, দুই ব্যবস্থাকে সম্মান করে না ৷ বেজিং স্বায়ত্তশাসনকেও সম্মান করে না ৷ ফলে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র যা বলছে, সেটাকে আমরা উপহার হিসেবে মনে করতেই পারি ৷ যদি বেজিং হংকংয়ের কথা ভাবত এবং তাদের আলাদা আর বিশেষ বলে মনে করত, তাহলে অনেক জিনিস আছে যা বেজিং ও হংকং সরকার করতে পারত ৷ প্রথমত, জাতীয় নিরাপত্তা আইন তুলে নিতে পারত এবং সারা বিশ্বের কাছে দেখাতে পারত যে, তারা হংকংকে বিশেষভাবেই দেখে ৷

প্রশ্ন : মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের একাধিক শহরে বর্ণবৈষম্য এবং মিনাপোলিসে জর্জ ফ্লয়েডের ঘটনায় পুলিশি অত্যাচার নিয়ে বিক্ষোভ চলছে ৷ চিনের মুখপাত্র এবং সরকারি মিডিয়া অ্যামেরিকার বিরুদ্ধে আক্রমণ শানিয়েছে ৷ ন্যাশনালিস্ট গ্লোবাল টাইমসের সম্পাদক হু জিজিন দিন কয়েক আগে লিখেছেন, ‘‘এটা দেখে মনে হচ্ছে যে হংকংয়ের মৌলবাদী হিংসার একটি অংশ মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে ঢুকে পড়েছে এবং গত বছরের মতো খারাপ পরিস্থিতি তৈরি করছে ৷’’ চিন অ্যামেরিকাকে বোঝাতে চাইছে যে হংকংয়ের পুলিশ এর থেকে ভালো ৷ এই বিষয়টিকে কীভাবে দেখবেন ?

কোনও কর্তৃত্বশালী রাজ্যের কেউ, এমন কেউ যিনি কখনও বাক-স্বাধীনতা পাননি, এমন কেউ যিনি কখনও কোনও সঠিক প্রতিবাদে অংশ নেননি, তাঁরা কোনওদিনই কোনও বিষয় নিয়ে সঠিক হতে পারেন না ৷ গ্লোবাল টাইমসের সম্পাদক হু কি কোনওদিনও কোনও প্রতিবাদে অংশ নিয়েছেন ? কখনও কি কোনওরকম পুলিশি অত্যাচারের সাক্ষী থেকেছেন ? তাঁর মতো মানুষেরা কোনও কিছু বলার অবস্থাতেই নেই ৷ মুক্ত বিশ্বে কী হচ্ছে, তার সমালোচনা করার পরিস্থিতিতেই তাঁরা নেই ৷

প্রশ্ন : আপনাদের সবচেয়ে বেশি ভয় কোন ক্ষেত্রে ? আপনারা কি মুখ খোলার জন্য ভয়ঙ্কর অত্যাচারের ভয় পাচ্ছেন ?

যদি বলি যে আমি ভয়ে নেই, তাহলে সেটা একেবারে মিথ্যে বলা হবে । কিন্তু হংকংকে আমি আমার বাড়ি বলি ৷ আমি খুবই গর্বিত যে গত কয়েক বছর ধরে আমি মানুষের জন্য কাজ করছি ৷ যদি তাঁদের হয়ে কাজ করার সুযোগ থাকে, তাহলে আমি এটা চালিয়ে যেতে চাই ৷ অতীতে হংকংয়ের মানুষ অনেকটাই নির্ভীক মনোভাবের পরিচয় দিয়েছেন । আগামী দিনগুলি খুবই ভয়ঙ্কর হতে চলেছে ৷ এটা একটি বড় লড়াই ৷ কিন্তু হংকংয়ের মানুষ সহজে হাল ছাড়বে না ৷

প্রশ্ন : বিক্ষোভকে শান্তিপূর্ণ রাখতে এবং কোনও অস্ত্র যাতে ব্যবহার করা না হয়, এই বিষয়টি নিশ্চিত করতে আপনি কী করছেন ?

এই মুহূর্তে হংকংয়ের প্রতিবাদের কোনও নেপথ্য মঞ্চ নেই ৷ কোনও নেতা নেই ৷ নেতাহীন লড়াই চলছে ৷ যখন দশ বা কুড়ি লাখ মানুষ রাস্তায় নেমেছিলেন, তখন থেকেই এটা শান্তিপূর্ণভাবে চলছে ৷ কিন্তু যখন মানুষের দাবিকে সরকার অগ্রাহ্য করতে শুরু করল, তখন অনেকেই হতাশ হয়ে পড়েছিলেন ৷ আর পুলিশ আধিকারিকরা সাধারণ নাগরিকদের উপর কাঁদানে গ্যাস, রবার বুলেট ছুঁড়ছিলেন ৷ তখন মানুষ রেগে যায় ৷ গত এক বছর ধরে আমরা একাধিক পুলিশি নির্যাতনের ঘটনা প্রত্যক্ষ করেছি ৷ এর ফলে মানুষ সত্যিই ক্ষেপে উঠেছে ৷ আমি তো চাই শান্তিপূর্ণ থাকতে ৷ কিন্তু মানুষ কেন ক্ষেপে উঠেছে ৷ রাস্তায় ক্ষোভ প্রকাশ করছে, সেটাও বুঝতে পারছি ৷

প্রশ্ন : চিনের মূল ভূখণ্ডের সাধারণ মানুষের কাছ থেকে কি আপনারা কোনও সহানুভূতি বা সংহতির বার্তা পাচ্ছেন ৷ কারণ, এখন দেশের মধ্যেই প্রেসিডেন্ট শি জিনপিংকে কড়া সমালোচনার মুখে পড়তে হচ্ছে ৷

কোনও রকম নজরদারির ভয় ছাড়া সরাসরি চিনের সঙ্গে যোগাযোগ করা খুব সহজ নয় ৷ কিন্তু আমি জানি যে সীমান্তের ওপারের বহু মানুষ হংকংয়ের স্বাধীনতা সংগ্রামকে সমর্থন করে ৷ কিন্তু তাদের অবস্থা হংকংয়ের থেকে আরও খারাপ ৷ আমরা এখনও মুক্তভাবে ইন্টারনেট ব্যবহার করতে পারি ৷ কিন্তু চিনে ফায়ারওয়াল আছে ৷ তা টপকানোর জন্য তাঁদের VPN বা অন্য উপায় খুঁজতে হয় ৷ এটা সত্যিই তাঁদের জন্য খুব কঠিন ৷ আমরা তাঁদের শুভেচ্ছা জানাই ৷

প্রশ্ন : LAC বরাবর ভারত ও চিনের মধ্যে উত্তেজনা তৈরি হয়েছে ৷ শি জিনপিং চিনের স্বপ্নপূরণে ব্যর্থ এবং দেশের মধ্যে কর্তৃত্ব ফিরে পাওয়ার জন্যই কি এই আগ্রাসন ?

বিভিন্ন পক্ষের সঙ্গ সৎভাবে সততার সঙ্গে সংযোগ রক্ষা করা হোক ৷ আজকের এই পৃথিবীতে যাঁরা ক্ষমতায় রয়েছেন, তাঁরা যেই হোন, তাঁদের কাছে এইটুকুই তো দাবি ৷ বিশেষ করে এই ইন্টারনেটের যুগে, যখন মানুষ দ্রুত অনেক কিছুর হদিস পেয়ে যায়৷ যদি কোনও নেতা, অন্য কোনও নেতা এবং নাগরিকের সঙ্গে যোগাযোগ স্থাপন করতে ব্যর্থ হয়, তাহলে এটা কারও জন্য শান্তি আনবে না ৷ আর এতে কারও ভালো হবে না ৷

দিল্লি, 3 জুন : বেজিংয়ের তরফে গত মাসে প্রস্তাবিত জাতীয় নিরাপত্তা আইনকে কেন্দ্র করে হংকংয়ের রাস্তায় এখনও বিক্ষোভ চলছে ৷ গতবছর জুন মাস থেকে শুরু হওয়া এই বিক্ষোভকে বেজিং ‘রাষ্ট্র থেকে সরে যাওয়ার জন্য ধ্বংসাত্মক কাজের চেষ্টা’ বলেই জানাচ্ছে ৷ এই অভিযোগ খারিজ করে দিচ্ছেন হংকংয়ের আন্দোলনকারী এবং গণতন্ত্র-প্রিয় রাজনৈতিক নেতারা ৷

আগে হংকং একটি ব্রিটিশ কলোনি ছিল ৷ ১৯৯৭ সালে হংকংকে চিনের হাতে ফিরিয়ে দেওয়া হয় ৷ ‘এক দেশ, দুই ব্যবস্থা’য় বিশেষ অধিকার ও স্বায়ত্বশাসন বজায় রাখার প্রেক্ষিতেই হস্তান্তর হয় ৷ হংকংয়ের নিজস্ব বিচার ব্যবস্থা রয়েছে ৷ আর চিনের থেকে আলাদা একটি আইনি ব্যবস্থা রয়েছে ৷ এই ব্যবস্থাই তাদের সমাবেশ করা ও মত প্রকাশের স্বাধীনতা দেয় ৷

প্রত্যর্পণ বিলের বিরুদ্ধে গতবছর জুন মাসে নজিরবিহীন বিক্ষোভ শুরু হয় ৷ প্রায় দশ লাখ মানুষ স্বতঃস্ফূর্তভাবে এই বিক্ষোভে সামিল হন ৷ সেপ্টেম্বের বিলটি প্রত্যাহার করে নেওয়া হয় ৷ ওই বিলে বলা হয়েছিল যে, স্থানীয় অপরাধীদের চিনের মূল ভূখণ্ডে প্রত্যর্পণ করে নেওয়া যাবে ৷ এর জেরে বিচারবিভাগীয় স্বাধীনতা খর্ব হবে এবং চিনের কর্তৃত্বের বিরুদ্ধে আওয়াজ তোলা ব্যক্তিদের জীবন ঝুঁকিপূর্ণ হয়ে হয়ে যাবে বলেই ভয় ছিল সমালোচকদের ৷ তারপর থেকে হংকংয়ে বিক্ষোভ চলছে ৷ বিক্ষোভকারীদের দাবি, পূর্ণ গণতন্ত্র দিতে হবে এবং পুলিশি বাড়াবাড়ির বিরুদ্ধে তদন্ত করতে হবে ৷ মে মাসে নতুন জাতীয় নিরাপত্তা আইন সেই আগুনে ঘি ঢেলেছে ৷ বিশেষজ্ঞরা মনে করেন যে, এই বিক্ষোভের জেরে শি জিনপিংয়ের অবস্থান প্রশ্নের মুখে পড়েছে এবং দুর্বল হয়ে গিয়েছে ৷ একাধিক ভারতীয় পর্যবেক্ষক মনে করেন যে, প্রেসিডেন্ট শি জিনপিং এবং চিনের কমিউনিস্ট পার্টির বিরুদ্ধে হংকং ও তাইওয়ানের এই নজিরবিহীন সমালোচনাই প্রকৃত নিয়ন্ত্রণ রেখায় চিনা আগ্রাসনের কারণ ৷

হংকংয়ের সাংসদ আলভিন ইয়ুংয়ের সাক্ষাৎকার

সাংবাদিক স্মিতা শর্মা কথা বলেছেন হংকংয়ের সিভিক পার্টির নেতা ও সাংসদ আলভিন ইয়ুংয়ের সঙ্গে ৷ তাঁর সঙ্গে বিক্ষোভের বাস্তব পরিস্থিতি, দাবি এবং আন্তর্জাতিক প্রেক্ষাপট নিয়ে আলোচনা করেছেন ৷ গত নভেম্বরে হংকংয়ে কাউন্সিল নির্বাচন হয় ৷ সেখানে ১৮টি আসনের মধ্যে ১৭টিতে জয় পেয়ে গণতন্ত্র-প্রিয়দের ব্যাপক জয় হয় ৷ এখন তাঁরা পূর্ণ স্বাধীনতার দাবিতে লড়াই শুরু করেছেন৷ আলভিন ইয়ুং জানিয়েছেন যে হংকংয়ের মানুষ তাঁদের অধিকার কেড়ে নেওয়া জাতীয় সুরক্ষা আইনকে মানতে চাইছেন না এবং মূল আইনের ভিত্তিতে বাস্তবসম্মত দাবি জানাচ্ছেন ৷ তিনি জানান যে বিচ্ছিন্নতার দাবি অধিকাংশ মানুষের মুখে প্রতিধ্বনিত হচ্ছে না । এবং বেজিং ‘এক দেশ, দুই ব্যবস্থা’কে বা স্বায়ত্বশাসনের প্রতিশ্রুতিকেও শ্রদ্ধা করে না ৷ আলভিন আরও জানান, হংকংয়ের যে সমস্ত মানুষরা মুখ খুলেছেন, তাঁরা দমন এবং ভয়ানক বিপদের ভয় পাচ্ছেন ৷ কিন্তু এই ‘নেতাহীন’ বিক্ষোভ চলতেই থাকবে ৷ প্রশ্নোত্তরের মাধ্যমে উঠে এল নানা প্রসঙ্গ ।

প্রশ্ন : বেজিং বলছে এই নতুন আইন জাতীয় সুরক্ষার জন্য প্রয়োজনীয় এবং সন্ত্রাসবাদ দমনের জন্যও ৷ এটাকে আপনি কীভাবে দেখছেন ?

আলভিন ইয়ুং : ‘এক দেশ, দুই ব্যবস্থা’র মাধ্যমে হংকংয়ে নিজস্ব কিছু আইন আছে ৷ আমাদের শাসন ব্যবস্থা চলে মূল আইনের উপর ভিত্তি করে ৷ যা একটা সংবিধানের ক্ষুদ্র সংস্করণ বলা চলে ৷ ওই আইনের মধ্যেই একটি অনুচ্ছেদে স্পষ্টভাবে জাতীয় নিরাপত্তার বিষয়টি নিয়ে উল্লেখ করা আছে ৷ আর তা হল, হংকং সরকার নিজেদের সাংসদদের দ্বারা জাতীয় সুরক্ষা আইন তৈরি করতে পারে ৷ এটা দেশীয় ইশু এবং এটা ঠিক করার দায়িত্ব হংকংয়ের মানুষেরই ৷ ২০০৩ সালে হংকং সরকার একটি বিতর্কিত জাতীয় সুরক্ষা বিল নিয়ে এসেছিল ৷ যার প্রতিবাদে প্রায় পাঁচ লাখ মানুষ রাস্তায় নেমে প্রতিবাদে সামিল হন ৷ এরপর থেকে কোনও প্রশাসক এই ধরনের কোনও পদক্ষেপ করতে সাহস করেননি ৷ কারণ, আমরা জানি, এটা এতটাই বিতর্কিত যে আমাদের আগে মানুষের অধিকার রক্ষা করতে হবে ৷ যেহেতু হংকংয়ে পূর্ণ স্বাধীনতা নেই, তাই আমরা আমাদের নিজেদের চিফ এগজ়িকিউটিভ বেছে নিতে পারি না ৷ এখানে মানুষ অর্ধেক সাংসদকে নির্বাচিত করতে পারেন ৷ তাহলে আপনি নিশ্চয় বুঝতে পারছেন যে হংকংয়ের মানুষ পুরোপুরি সুরক্ষিত নন ৷ তাই মানুষ জাতীয় নিরাপত্তা আইনকে না বলছেন ৷ কারণ, এটা আমাদের অধিকার কেড়ে নেবে ৷ গত বছর থেকে রাস্তায় প্রতিবাদ হচ্ছে ৷ কারণ, মানুষ প্রত্যর্পণ বিলের বিরুদ্ধে লড়াই করছে ৷ সেই সময় থেকেই আমরা পুলিশি অত্যাচারের সম্মুখীন হচ্ছি এবং এই সরকার পুলিশি অত্যাচারের দিকে তাকাতেই চাইছে না ৷ তারা যে কোনও পরিস্থিতিতেই পুলিশকে সমর্থনের সিদ্ধান্ত নিয়েছে ৷ তাই বেজিং এখন বলছে যে আমরা মূল আইন মানি না ৷ প্রতিশ্রুতিকেও আমরা গুরুত্ব দিচ্ছি না ৷ আমরা এই জাতীয় নিরাপত্তা আইন হংকংয়ের মানুষের সঙ্গে আলোচনা না করেই আরোপ করব ৷ আমাদের আইনসভার প্রক্রিয়ার মধ্য দিয়ে না গিয়ে এবং মানুষকে না বলার সুযোগ না দিয়ে তারা এটা করতে চাইছে ৷

প্রশ্ন : চিন বলছে হংকংয়ের গোলামালে বিদেশি শক্তির হাত রয়েছে ৷ গণতন্ত্রের পক্ষে যাঁরা লড়াই করছেন তাঁদের জঙ্গি, হিংসাকারী বলে বেজিং দাগিয়ে দিচ্ছে ৷ কী বলবেন ?

সমস্ত সরকারই এক ৷ সকলকে দোষারোপ করে ৷ বিরোধী, বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র এসব বলায় তাঁদের সঙ্গে বিদেশির যোগের কথা বলা হচ্ছে ৷ কিন্তু এর কোনও প্রমাণ দিতে পারে না ৷ তারা কী করেছে, সেটা উপলব্ধি করার মতো সাহস তাদের নেই ৷ এই সরকার হংকংয়ের মানুষের সঙ্গে চোখে চোখ রেখে কথা বলতে পারেনি ৷ বলতে পারেনি যে, আমি ভুল ৷ আমার শাসনে কিছু ভুলত্রুটি থেকে গিয়েছে, আমি তা শুধরে নেব ৷ তারা যেটা করছে, তা হল নিজেদের দিকে না দেখে অন্যদের প্রত্যেকের দিকে দোষারোপের আঙুল তুলছে ৷ এই সমস্ত পরিস্থিতির জন্যই গত বছর তারা একটি বিতর্কিত বিল পাস করাতে পারেনি ৷ এবছর তারা পরিস্থিতি সামলাতে গিয়ে আরও খারাপ একটি আইন আনার কথা বলছে ৷

প্রশ্ন : প্রতিবাদীদের দাবি কী ? রাষ্ট্র থেকে সরে যাওয়ার দাবি কি তোলা হয়েছে ?

কয়েকজন মানুষ এটা চাইছেন ৷ কিন্তু এটা অধিকাংশের চাহিদা নয় ৷ গত বছর থেকে হংকংয়ের মানুষেরা পাঁচটি দাবি জানাচ্ছেন ৷ সর্বজনীন ভোটাধিকার যা নিজেদের সরকার বেছে নেওয়ার ক্ষমতা দেবে ৷ যা মূল আইনেই বলা রয়েছে ৷ আমরা তো চাঁদ চাইছি না ৷ আমরা পুলিশি অত্যাচারের ঘটনায় নিরেপক্ষ তদন্ত চাইছি ৷ পুলিশি অত্যাচারের ঘটনার তদন্তে এই সরকার কোনও রকম কমিটি তৈরির পক্ষপাতী নয় ৷ এটা খুবই দুর্ভাগ্যজনক ৷ আমরা চাইছি এই সরকার রাজনৈতিক অভিযোগ দিয়ে মানুষকে অভিযুক্ত করা বন্ধ করুক ৷ এটা একেবারেই ঠিক নয় ৷ এই দাবিগুলি কি কারও কাছে যুক্তিহীন মনে হচ্ছে ? না ৷ একটি সাধারণ মুক্ত পৃথিবীতে সাধারণ মানুষের দাবি জানানোর আগেই সরকারের এটা করা উচিত ৷

প্রশ্ন : অ্যামেরিকা এখন বিশ্বব্যাপী বিভিন্ন দায়িত্ব থেকে সরে যাচ্ছে ৷ বহুপাক্ষিক সংগঠনগুলি থেকে নিজেদের সরিয়ে নিচ্ছে ৷ এই পরিস্থিতিতে অ্যামেরিকার বিবৃতি কি আপনাদের সাহায্য করবে ? নাকি এতে পরিস্থিতি আরও জটিল হবে ?

হংকং একটি আন্তর্জাতিক শহর ৷ ভারত-সহ অন্য অনেক দেশেরই হংকং সম্বন্ধে আগ্রহ রয়েছে ৷ আপনারা এখানে বিনিয়োগ করেছেন ৷ অনেক ভারতীয় নাগরিক এখানে থাকেন ৷ তেমনই মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র ও বিশ্বের অন্য দেশের লোকজনও থাকেন ৷ গত দেড় শতাব্দী ধরে হংকংয়ের সঙ্গে বিশ্বের বিভিন্ন বিনিয়োগকারী দেশের ঘনিষ্ঠ সম্পর্ক রয়েছে ৷ অ্যামেরিকা তাদের মধ্যে একজন ৷ ১৯৯২ সালে তারা হংকংকে বিশেষ মর্যাদা দিয়েছিল হংকং পলিসি অ্যাক্টের মাধ্যমে ৷ অ্যামেরিকায় আইন পাস করানো হয়েছিল, যে হংকং যদি আলাদা থাকতে চায়, তাহলে তাদের চিনের বাইরে আলাদা হিসেবে গণ্য করা হবে ৷ কিন্তু হস্তান্তর প্রক্রিয়ার পর একাধিক ঘটনায় আমরা দেখেছি যে, চিন এক দেশ, দুই ব্যবস্থাকে সম্মান করে না ৷ বেজিং স্বায়ত্তশাসনকেও সম্মান করে না ৷ ফলে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র যা বলছে, সেটাকে আমরা উপহার হিসেবে মনে করতেই পারি ৷ যদি বেজিং হংকংয়ের কথা ভাবত এবং তাদের আলাদা আর বিশেষ বলে মনে করত, তাহলে অনেক জিনিস আছে যা বেজিং ও হংকং সরকার করতে পারত ৷ প্রথমত, জাতীয় নিরাপত্তা আইন তুলে নিতে পারত এবং সারা বিশ্বের কাছে দেখাতে পারত যে, তারা হংকংকে বিশেষভাবেই দেখে ৷

প্রশ্ন : মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের একাধিক শহরে বর্ণবৈষম্য এবং মিনাপোলিসে জর্জ ফ্লয়েডের ঘটনায় পুলিশি অত্যাচার নিয়ে বিক্ষোভ চলছে ৷ চিনের মুখপাত্র এবং সরকারি মিডিয়া অ্যামেরিকার বিরুদ্ধে আক্রমণ শানিয়েছে ৷ ন্যাশনালিস্ট গ্লোবাল টাইমসের সম্পাদক হু জিজিন দিন কয়েক আগে লিখেছেন, ‘‘এটা দেখে মনে হচ্ছে যে হংকংয়ের মৌলবাদী হিংসার একটি অংশ মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে ঢুকে পড়েছে এবং গত বছরের মতো খারাপ পরিস্থিতি তৈরি করছে ৷’’ চিন অ্যামেরিকাকে বোঝাতে চাইছে যে হংকংয়ের পুলিশ এর থেকে ভালো ৷ এই বিষয়টিকে কীভাবে দেখবেন ?

কোনও কর্তৃত্বশালী রাজ্যের কেউ, এমন কেউ যিনি কখনও বাক-স্বাধীনতা পাননি, এমন কেউ যিনি কখনও কোনও সঠিক প্রতিবাদে অংশ নেননি, তাঁরা কোনওদিনই কোনও বিষয় নিয়ে সঠিক হতে পারেন না ৷ গ্লোবাল টাইমসের সম্পাদক হু কি কোনওদিনও কোনও প্রতিবাদে অংশ নিয়েছেন ? কখনও কি কোনওরকম পুলিশি অত্যাচারের সাক্ষী থেকেছেন ? তাঁর মতো মানুষেরা কোনও কিছু বলার অবস্থাতেই নেই ৷ মুক্ত বিশ্বে কী হচ্ছে, তার সমালোচনা করার পরিস্থিতিতেই তাঁরা নেই ৷

প্রশ্ন : আপনাদের সবচেয়ে বেশি ভয় কোন ক্ষেত্রে ? আপনারা কি মুখ খোলার জন্য ভয়ঙ্কর অত্যাচারের ভয় পাচ্ছেন ?

যদি বলি যে আমি ভয়ে নেই, তাহলে সেটা একেবারে মিথ্যে বলা হবে । কিন্তু হংকংকে আমি আমার বাড়ি বলি ৷ আমি খুবই গর্বিত যে গত কয়েক বছর ধরে আমি মানুষের জন্য কাজ করছি ৷ যদি তাঁদের হয়ে কাজ করার সুযোগ থাকে, তাহলে আমি এটা চালিয়ে যেতে চাই ৷ অতীতে হংকংয়ের মানুষ অনেকটাই নির্ভীক মনোভাবের পরিচয় দিয়েছেন । আগামী দিনগুলি খুবই ভয়ঙ্কর হতে চলেছে ৷ এটা একটি বড় লড়াই ৷ কিন্তু হংকংয়ের মানুষ সহজে হাল ছাড়বে না ৷

প্রশ্ন : বিক্ষোভকে শান্তিপূর্ণ রাখতে এবং কোনও অস্ত্র যাতে ব্যবহার করা না হয়, এই বিষয়টি নিশ্চিত করতে আপনি কী করছেন ?

এই মুহূর্তে হংকংয়ের প্রতিবাদের কোনও নেপথ্য মঞ্চ নেই ৷ কোনও নেতা নেই ৷ নেতাহীন লড়াই চলছে ৷ যখন দশ বা কুড়ি লাখ মানুষ রাস্তায় নেমেছিলেন, তখন থেকেই এটা শান্তিপূর্ণভাবে চলছে ৷ কিন্তু যখন মানুষের দাবিকে সরকার অগ্রাহ্য করতে শুরু করল, তখন অনেকেই হতাশ হয়ে পড়েছিলেন ৷ আর পুলিশ আধিকারিকরা সাধারণ নাগরিকদের উপর কাঁদানে গ্যাস, রবার বুলেট ছুঁড়ছিলেন ৷ তখন মানুষ রেগে যায় ৷ গত এক বছর ধরে আমরা একাধিক পুলিশি নির্যাতনের ঘটনা প্রত্যক্ষ করেছি ৷ এর ফলে মানুষ সত্যিই ক্ষেপে উঠেছে ৷ আমি তো চাই শান্তিপূর্ণ থাকতে ৷ কিন্তু মানুষ কেন ক্ষেপে উঠেছে ৷ রাস্তায় ক্ষোভ প্রকাশ করছে, সেটাও বুঝতে পারছি ৷

প্রশ্ন : চিনের মূল ভূখণ্ডের সাধারণ মানুষের কাছ থেকে কি আপনারা কোনও সহানুভূতি বা সংহতির বার্তা পাচ্ছেন ৷ কারণ, এখন দেশের মধ্যেই প্রেসিডেন্ট শি জিনপিংকে কড়া সমালোচনার মুখে পড়তে হচ্ছে ৷

কোনও রকম নজরদারির ভয় ছাড়া সরাসরি চিনের সঙ্গে যোগাযোগ করা খুব সহজ নয় ৷ কিন্তু আমি জানি যে সীমান্তের ওপারের বহু মানুষ হংকংয়ের স্বাধীনতা সংগ্রামকে সমর্থন করে ৷ কিন্তু তাদের অবস্থা হংকংয়ের থেকে আরও খারাপ ৷ আমরা এখনও মুক্তভাবে ইন্টারনেট ব্যবহার করতে পারি ৷ কিন্তু চিনে ফায়ারওয়াল আছে ৷ তা টপকানোর জন্য তাঁদের VPN বা অন্য উপায় খুঁজতে হয় ৷ এটা সত্যিই তাঁদের জন্য খুব কঠিন ৷ আমরা তাঁদের শুভেচ্ছা জানাই ৷

প্রশ্ন : LAC বরাবর ভারত ও চিনের মধ্যে উত্তেজনা তৈরি হয়েছে ৷ শি জিনপিং চিনের স্বপ্নপূরণে ব্যর্থ এবং দেশের মধ্যে কর্তৃত্ব ফিরে পাওয়ার জন্যই কি এই আগ্রাসন ?

বিভিন্ন পক্ষের সঙ্গ সৎভাবে সততার সঙ্গে সংযোগ রক্ষা করা হোক ৷ আজকের এই পৃথিবীতে যাঁরা ক্ষমতায় রয়েছেন, তাঁরা যেই হোন, তাঁদের কাছে এইটুকুই তো দাবি ৷ বিশেষ করে এই ইন্টারনেটের যুগে, যখন মানুষ দ্রুত অনেক কিছুর হদিস পেয়ে যায়৷ যদি কোনও নেতা, অন্য কোনও নেতা এবং নাগরিকের সঙ্গে যোগাযোগ স্থাপন করতে ব্যর্থ হয়, তাহলে এটা কারও জন্য শান্তি আনবে না ৷ আর এতে কারও ভালো হবে না ৷

ETV Bharat Logo

Copyright © 2024 Ushodaya Enterprises Pvt. Ltd., All Rights Reserved.