দিল্লি, 6 অগাস্ট : লক্ষ্যটা ছিল বিরোধীদের মধ্যে ফাটল তৈরি করা ৷ আর সেই ফাটলকে কাজে লাগিয়েই সংসদে একের পর এক বিল পাশ করিয়ে নিয়েছেন নরেন্দ্র মোদি-অমিত শাহরা ৷ রাজ্যসভাতে কাশ্মীর পুনর্গঠন বিলের বিরোধিতা করেছিল কংগ্রেস ৷ কিন্তু, রাজ্যসভায় বিল পাশের পরই বিষয়টি নিয়ে কংগ্রেসের মধ্যেই বিভাজন স্পষ্ট হল ৷
রাজ্যসভায় গতকাল বিল পেশের মুহূর্তেই এর বিরোধিতা করেছিলেন গুলাম নবি আজাদ ৷ জম্মু-কাশ্মীরের প্রাক্তন মুখ্যমন্ত্রী তথা রাজ্যসভায় বর্তমানে কংগ্রেসের দলনেতা গুলাম নবি আজাদ বলেন, সংবিধানকে হত্যা করা হল । ভারতের মানচিত্র থেকে একটা রাজ্য আজ মুছে গেল, এমন মন্তব্যও করেন তিনি । প্রাক্তন স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী পি চিদম্বরম বলেন, "সাংবিধানিক ইতিহাসে আজ কালো দিন । সরকার যা করেছে, তা অভূতপূর্ব ।" চিদম্বরম গোটা দেশকে সতর্ক করে দেওয়া ঢঙে বলেছিলেন, "এটা যদি জম্মু-কাশ্মীরের সঙ্গে করা যায়, তা হলে দেশের অন্য রাজ্যগুলোর প্রত্যেকটার সঙ্গেই করা যেতে পারে ।" প্রবীণ কংগ্রেস নেতার ব্যাখ্যা, "প্রথমে রাজ্যের নির্বাচিত সরকারকে ফেলে দেওয়া হবে, রাষ্ট্রপতি শাসন জারি করা হবে, বিধানসভা ভেঙে দেওয়া হবে, বিধানসভার ক্ষমতা সংসদের হাতে যাবে, সরকার সংসদে একটা প্রস্তাব আনবে, সেটাতে সংসদ অনুমোদন দেবে এবং রাজ্যটা আর থাকবে না ।" এমন কী, কেন্দ্রীয় সরকারের এই পদক্ষেপের কড়া সমালোচনা করেন স্বয়ং রাহুল গান্ধিও ৷ সরকারের পদক্ষেপকে অসাংবিধানিক বলে কটাক্ষও করেন তিনি ৷
কংগ্রেসের প্রবীণ নেতারা যখন মোদি-শাহের মুণ্ডপাত করছেন, তখনই উলটো সুর দলের বেশ কিছু নেতার মুখে ৷ প্রবীণ কংগ্রেস নেতা জর্নাদন দ্বিবেদীর দাবি, একটা ঐতিহাসিক ভুলকে এতদিন পর সংশোধন করা হল ৷ তাঁর কথায়, "স্বাধীনতার পর থেকেই এই সমস্যা চলছিল ৷ অবশেষে বহু পুরনো একটা সমস্যার সামাধান করা হল ৷" বিষয়টিকে 'আদর্শের সংশোধন' বলে উল্লেখ করেন আর এক কংগ্রেস নেতা মিলিন্দ দেওরা ৷
আরও পড়ুন: গ্রেপ্তার হননি ফারুখ আবদু্ল্লা, বাড়িতেই আছেন : অমিত শাহ
আরও পড়ুন : জম্মু ও কাশ্মীর থেকে পৃথক লাদাখ, পুনর্গঠন বিল পাশ লোকসভায়
অন্যদিকে, আজই লোকসভায় বিলটি নিয়ে আলোচনার সময় অমিত শাহকে নিশানা করেছিলেন কংগ্রেস নেতা অধীররঞ্জন চৌধুরি৷ তিনি একাধিক প্রশ্ন ছুড়ে দেন কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর দিকে৷ তিনি জম্মু ও কাশ্মীরের বর্তমান পরিস্থিতির ব্যাখ্যা চান ৷ অভিযোগ তোলেন, "নিয়ম ভেঙে রাজ্যটিকে দু'ভাগ করা হচ্ছে ৷ জম্মু ও কাশ্মীর ইশু 1948 থেকে রাষ্ট্রসংঘের পর্যবেক্ষণে রয়েছে ৷ তাহলে একে আমরা কি বলব অভ্যন্তরীণ না আন্তর্জাতিক ? সিমলা চুক্তি ও লাহোর সমঝোতা দুটিই কি দ্বিপাক্ষিক না অভ্যন্তরীণ বিষয় ?" আর সে সময় তাঁর পাশে বসে থাকা সোনিয়া গান্ধির চোখমুখে বিরক্তির ছাপ ছিল স্পষ্ট ৷ এ দিকে আজ লোকসভায় বিলটিকে সমর্থন করেন জ্যোতিরাদিত্য সিন্ধিয়া ৷ এটা দেশের স্বার্থে গুরুত্বপূর্ণ বলেও উল্লেখ করেন তিনি ৷