গত কয়েক দশক ধরেই ভারতে কৃষির ধারাবাহিক উন্নতি হয়েছে । এ দেশে জাতীয় সড়ক তৈরির আগে থেকে মৎস্য চাষ হয়ে আসছে । মাছ চাষি, শিল্পপতি, বিজ্ঞানী এবং সর্বোপরি সরকারের সাহায্যে মাছ চাষে প্রভূত উন্নতি হয়েছে । দেশে স্বাদু জলের মাছ চাষের সবচেয়ে বড় ক্ষেত্রটি রয়েছে অন্ধ্রপ্রদেশের কোলেরু নদীর অববাহিকায় । মাছ চাষই হল একমাত্র শিল্পক্ষেত্র, যেখানে হেক্টর পিছু 25 জন কাজ করতে পারেন, যা কৃষি এবং ওই সংক্রান্ত শিল্পের তুলনায় বেশি । এই শিল্পক্ষেত্রের দ্রুত উন্নতি ঘটলেও বাকি সব শিল্পের মতো এখানেও দৈনন্দিন বিভিন্ন চ্যালেঞ্জের মুখোমুখি হতে হচ্ছে । মাছের দামের তারতম্য, পর্যাপ্ত বরফ ও হিমঘরের অভাবে প্রতিনিয়ত ভুগতে হচ্ছে এই শিল্পকে । যার ফলে 10 শতাংশ পর্যন্ত ক্ষতির মুখোমুখি হচ্ছে এই শিল্প ।
মাছ ও চিংড়ি চাষের সবচেয়ে প্রয়োজনীয় বিষয়টি হল উন্নত বীজ (ছোট মাছ) । এই বিষয়ে (উন্নত বীজ বপন) একাধিক নির্দেশিকা, প্রশিক্ষণ থাকলেও প্রয়োগের ক্ষেত্রে কিছু সমস্যা রয়েই গেছে । মৎস্য দফতরের তত্ত্বাবধানে গুন্টুর জেলার তেনালিতে একটি ফিস ফ্রাই ( চারা) তৈরির কেন্দ্র রয়েছে । বিভিন্ন সূত্রে খবর, শুধুমাত্র এই কেন্দ্রের আয় থেকেই গোটা দপ্তরের বেতন হয়ে যায় । বেসরকারি উদ্যোগের প্রবেশের পর এই কেন্দ্র পশ্চিমবঙ্গকেও টপকে গেছে । তুঙ্গভদ্রার অববাহিকায় কর্নাটক সরকার ও মৎস্য দফতরের যৌথ মৎস্য চাষ কেন্দ্রে খুব উন্নত জাতের বীজ তৈরি হচ্ছে । কিন্তু কর্নাটকের কেন্দ্রে যেখানে এক লক্ষ মাছের ডিমের দাম এক হাজার টাকা, সেখানে অন্ধ্রপ্রদেশে ওই একই পরিমাণ মাছের ডিমের দাম মাত্র 200 টাকা । শুধুমাত্র তুঙ্গভদ্রার এই কেন্দ্র থেকেই কর্নাটক সরকার 40 লক্ষ টাকা আয় করে ।
দেশে মাছ চাষ এই মুহূর্তে দুই জায়গায় খুব বেশি পরিমাণে হয় । পশ্চিমবঙ্গের গঙ্গা অববাহিকা এবং দ্বিতীয়টি হল অন্ধ্রপ্রদেশের কোলেরুর কৃষ্ণা-গোদাবরী অববাহিকা । এই দুই রাজ্যের মোট উৎপাদনের 40 থেকে 80 শতাংশ অন্য রাজ্যে রপ্তানি করা হয় । তবে এ ক্ষেত্রে রপ্তানির পথ মাধ্যম বেশ লম্বা এবং মাছ রপ্তানির ক্ষেত্রে বেশ কিছু সমস্যাও আছে । প্রাদেশিক মাছ, যেমন কাতলা, রুই, কার্প জাতীয় মাছ বছরে দু’বার প্রজননে সক্ষম । উন্নত ডিম ও চারাপোনার জন্য সঠিক পরিবেশেরও প্রয়োজন । 2007 সালে জাতীয় মৎস্য উন্নয়ন পর্ষদ (NFDB) 100 মিলিমিটার চারাপোনার দাম 1 টাকা ধার্য করেছে । ইন্ডিয়ান কাউন্সিল ফর এগ্রিকালচারাল রিসার্চ (ICAR) এবং সেন্ট্রাল ইনস্টিটিউট অব ফ্রেশওয়াটার এগ্রিকালচার (CIFA)-এর সুপারিশ অনুযায়ী 2014 সালে দাম বেড়ে হয় 2 টাকা 50 পয়সা । চাষে খরচ বাড়লেও অন্ধ্রপ্রদেশের মৎস্য দফতর কিন্তু এখনও 1999 সালের দামই বজায় রেখেছে ।
এ বিষয়ে জরুরিভিত্তিতে পদক্ষেপ করা প্রয়োজন । গোদাবরী নদীতে ধারাবাহিকভাবে মাছ ছাড়া হচ্ছে, একই কাজ করা হচ্ছে ছোট নদীতেও । এই পদ্ধতি অবলম্বন করে পশ্চিমবঙ্গ মৎস্য উৎপাদনের ব্যাপক সাফল্য পেয়েছে । যদিও মৎস্য উৎপাদনে অন্ধ্রপ্রদেশ এক নম্বর, কিন্তু পশ্চিমবঙ্গ দ্রুত গতিতে উপরে উঠে আসছে । উৎপাদিত মৎস্য মজুতের ব্যবস্থা না থাকায়, উত্পাদনকারীরা কম দামে তা বিক্রি করে দিতে বাধ্য হচ্ছেন । সরকারকে এ বিষয়ে কার্যকর পদক্ষেপ করতে হবে, নজর দিতে হবে দামের দিকটিতেও । পঞ্চায়েত দপ্তরকে মত্স্য দপ্তরের সঙ্গে সংযুক্ত করতে হবে, এবং মত্স্যজীবীদের উত্কৃষ্টমানের ছোট মাছ (চারা মাছ ) প্রদান করতে হবে । ছোট মাছ দেওয়ার সময় মৎস্য দপ্তরকে সার্টিফিকেট এবং রশিদ দেওয়ার ব্যবস্থা চালু করতে হবে । ইন্টারনেটে সর্বশেষ তথ্য প্রদানের মাধ্যমে মৎস্যজীবীদের জ্ঞান বৃদ্ধির ব্যবস্থা করতে হবে । তথ্য-প্রযুক্তিগত ত্রুটি, বিশেষ করে আমদানি-রপ্তানির ক্ষেত্রে বড় চ্যালেঞ্জ তৈরি করতে পারে । রপ্তানির ক্ষেত্রে মৎস্যজীবীদের ছাড় দেওয়ার বিষয়টি ভাবতে হবে । ফিশারির ছাত্রদের উপযুক্ত প্রশিক্ষণের মাধ্যমে এই চ্যালেঞ্জকে খুব সহজেই মোকাবিলা করা সম্ভব ।
অন্ধ্রপ্রদেশে উৎপাদিত মৎস্যের 90 শতাংশ ভিন রাজ্যে রপ্তানি করা হয় । সদ্য ভূমিষ্ট তেলাঙ্গানা রাষ্ট্র এ বিষয়ে 'নীল' বিপ্লব এনেছে । কিন্তু, এই তেলুগু রাষ্ট্রে মাছের জন্য মাথাপিছু খরচ করা হয় খুবই কম, যার মূল কারণ মাছের বাজারের অস্বাস্থ্যকর পরিবেশ, যা এখানকার মানুষের মনে বদ্ধমূল হয়ে গেছে । বড় শহরে পরিচ্ছন্ন মাছের বাজার বিক্রয় বৃদ্ধির অন্যতম কারণ । স্থানীয় বাজারে এটাই সব থেকে বড় সমস্যা । পরিপাটি ব্যবস্থা, একটি নির্দিষ্ট জায়গায় আবর্জনা ফেলা ক্রেতা বৃদ্ধির অন্যতম কারণ । বড় বড় শহরে সাধারণ মানুষ প্রধানত গুরুত্ব দেন বাইরের খাবার বা অনলাইন খাবার অর্ডারের উপর । স্থানীয় মৎস্যজীবীরা এই বিষয়টিকে কাজে লাগিয়ে মাছ রান্না করে সরবরাহ করেন । সি-ফুড উৎসব আয়োজনের মাধ্যমে মাছ বিক্রির বিষয়টিকে আরও বাড়ানো যেতে পারে ।
ভারতীয় মৎস্যজীবীরা প্রাদেশিক মাছ যেমন রুই, কাতলা, সাদা কার্প জাতীয় মাছের উৎপাদন বাড়াচ্ছেন তেলাপিয়ার মতো মাছের পাশাপাশি । ইনসেনটিভ এবং ভরতুকি চিংড়ি এবং মাছ রপ্তানির ক্ষেত্রে অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ । মাছের চারা এবং হ্যাচারির চিংড়ির ক্ষেত্রে এই পদক্ষেপ মৎস্যজীবীদের আর্থিক দিক থেকে সাহায্য করবে । স্বচ্ছ জলের সংরক্ষণ এ বিষয়ে বিশেষ গুরুত্বপূর্ণ । মাছ চাষের ক্ষেত্রে এই জল বিশেষ প্রয়োজনীয় । এই পদক্ষেপ ব্যবসা বৃদ্ধির ক্ষেত্রেও কার্যকর ভূমিকা নেবে । এর মাধ্যমে তেলুগু রাষ্ট্রে কর্মসংস্থান বাড়বে এবং আয় বৃদ্ধি হবে ।