ETV Bharat / bharat

ভারতের সঙ্গে রাশিয়া, অ্যামেরিকার প্রতিরক্ষা সমঝোতা

বোঝা যাচ্ছে যে, ভারতীয় ভূখণ্ডে চিনা সেনার অনুপ্রবেশ হচ্ছে বেজিংয়ের সম্প্রসারণবাদী উচ্চাকাঙ্খার সর্বশেষ উদাহরণ । পর্যবেক্ষকদের মতে, ইউহান শহর থেকে শুরু হওয়া COVID-19 নিয়ে যথেষ্ট তথ্য প্রকাশ না করার জন্য যখন বেজিং বিশ্বজুড়ে সমালোচনার মুখে, তখন অভ্যন্তরীণ চারে নজর ঘোরাতেই চিনা প্রেসিডেন্ট শি জিংপিং এই কৌশল ব্যবহার করছেন ।

image
ভারত রাশিয়া ও অ্যামেরিকার প্রতিরক্ষা সমঝোতা
author img

By

Published : Jun 29, 2020, 3:05 AM IST

Updated : Jun 29, 2020, 8:00 AM IST

নয়াদিল্লি: সেদেশের একটা শহর থেকে বিশ্ব মহামারি তৈরি হওয়ার পর, লাদাখে চিনের যে সম্প্রসারণবাদী উচ্চাকাঙ্খা সামনে এসেছে ৷ তখন রাশিয়া এবং অ্যামেরিকার মতো বড় শক্তিগুলোর সঙ্গে ভারতের প্রতিরক্ষা সমঝোতা আরও গুরুত্বপূর্ণ হয়ে দাঁড়িয়েছে ।

যখন প্রতিরক্ষামন্ত্রী রাজনাথ সিং 75 তম দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধ বিজয় দিবসের কুচকাওয়াজে অংশ নিতে তিনদিনের সফরে রাশিয়ায় গেছেন ৷ তখন মার্কিন বিদেশসচিব মাইক পম্পিও বললেন, চিনের থেকে ভারত, মালয়েশিয়া, ইন্দোনেশিয়া এবং দক্ষিণ চিন সাগর এলাকায় বিপদ সামলাতে, ইউরোপের বিভিন্ন জায়গা থেকে সেনা পাঠানো হচ্ছে ।

22 থেকে 24 জুন তাঁর মস্কো সফরের সময় রাজনাথ বৈঠক করেন রাশিয়ার উপ প্রধানমন্ত্রী ইউরি বরিসভের সঙ্গে । তারপর তিনি টুইট করেন, “উপপ্রধানমন্ত্রী মিস্টার ইউরি বরিসভের সঙ্গে আমার আলোচনা খুবই সদর্থক এবং ফলপ্রসূ হয়েছে । আমি আশ্বাস পেয়েছি, যে বর্তমান চুক্তিগুলো বজায় রাখা হবে এবং শুধু তাই নয়, বেশ কয়েকটি বিষয়কে দ্রুততার সঙ্গে এগিয়ে নিয়ে যাওয়া হবে ।”

তিনি আরও বলেন যে, ভারতের সমস্ত প্রস্তাবই রাশিয়ার তরফে সদর্থক সাড়া পেয়েছে ।

রাজনাথ এবং বরিসভ হচ্ছেন বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিষয়ক ভারত-রাশিয়া উচ্চপর্যায়ের কমিটির যুগ্ম চেয়ারম্যান ।

যদিও ভারত কী কী চেয়েছে তার বিশদ বিবরণ এখনও সামনে রাখা হয়নি । তবে নিশ্চিতভাবেই ধরে নেওয়া যেতে পারে যে S-400 ট্রায়াম্ফ দূরপাল্লার ভূমি থেকে আকাশ ক্ষেপণাস্ত্র কেনার বিষয়টিও আলোচনায় উঠে এসেছে ।

2018 সালে নয়াদিল্লিতে প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি এবং রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিনের দ্বিপাক্ষিক সম্মেলনের সময় ভারত ও রাশিয়া 5.4 বিলিয়ন ডলারের ক্ষেপণাস্ত্র চুক্তি স্বাক্ষর করে ।

2018 সালের জানুয়ারিতে অ্যামেরিকান প্রশাসন ‘কাউন্টারিং অ্যামেরিকাজ অ্যাডভারসারিজ থ্রু স্যাংশনস’ আইন (CAATSA) কার্যকর করার পর থেকেই S-400 ক্ষেপণাস্ত্র চুক্তি আগ্রহের বিষয় হয়ে দাঁড়িয়েছে । রাশিয়া, ইরান ও উত্তর কোরিয়ার প্রতিরক্ষা সংস্থাগুলোর সঙ্গে যারা ব্যবসা করে, সেই দেশগুলোই CAATSA-র টার্গেট ।

ইউক্রেন ও সিরিয়ার যুদ্ধে রাশিয়ার যোগাযোগ এবং 2016-র অ্যামেরিকার প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে নাক গলানোর অভিযোগের প্রেক্ষিতে একদল অ্যামেরিকা সেনেটর রাশিয়ার ওপর নিষেধাজ্ঞা চাপান ।

গত বছরের জুনে, তৎকালীন দক্ষিণ ও মধ্য এশিয়া বিষয়ক প্রিন্সিপাল ডেপুটি অ্যাসিস্ট্যান্ট সেক্রেটারি অ্যালিস ওয়েলস, হাউজ অফ রিপ্রেজেন্টেটিভসের বিদেশ বিষয়ক সাব-কমিটির সামনে বলেন, যে S-400 ডিফেন্স সিস্টেম কেনার ফলে ভারত-অ্যামেরিকা সামরিক সম্পর্ক ধাক্কা খেতে পারে ।

ওয়েলসের বক্তব্য হিসেবে উদ্ধৃত করা হয়েছে, “একটা নির্দিষ্ট জায়গায় গিয়ে, অংশীদারিত্ব নিয়ে একটা কৌশলগত সিদ্ধান্ত নিতেই হবে ৷ যে কোন অস্ত্রব্যবস্থা দেশ গ্রহণ করতে চলেছে ।”

যদিও অ্যামেরিকা ভারতকে MIM-104F প্যাট্রিয়ট (PAC-3 ) ভূমি থেকে আকাশ ক্ষেপণাস্ত্র এবং টার্মিনাল হাই অলটিচিউড এরিয়া ডিফেন্স (THAAD) দেওয়ার প্রস্তাব দেন, কিন্তু ভারত রাশিয়ার সঙ্গে S-400 চুক্তি করারই সিদ্ধান্ত নেয় ।

বিশেষজ্ঞদের মতে, S-400 হল বিশ্বের আধুনিকতম আকাশ প্রতিরক্ষা ব্যবস্থার একটি । এর মধ্যে রয়েছে মাল্টিফাংশনাল রেডার, স্বয়ংক্রিয় লক্ষ্য নির্ধারণ ক্ষমতা, লঞ্চার এবং কমান্ড সেন্টার । বহুস্তরীয় প্রতিরক্ষা ব্যবস্থা গড়ে তুলতে, এটি তিন ধরণের ক্ষেপণাস্ত্র ছুঁড়তে সক্ষম ।

আর্মি-টেকনোলজি ডট কম ওয়েবসাইটে বলা হচ্ছে, “এই প্রতিরক্ষা ব্যবস্থা আকাশপথে তিন ধরণের টার্গেটকে মোকাবিলা করতে পারে, যার মধ্যে রয়েছে বিমান, চালকবিহীন ড্রোন এবং ব্যালিস্টিক ও ক্রুজ মিসাইল । 400 কিলোমিটার পাল্লায়, 30 কিলোমিটার উচ্চতা পর্যন্ত এটি আঘাত হানতে সক্ষম । এটি একসঙ্গে 36টি নিশানা করতে পারে।”

আরও বলা হয়েছে, যে ‘‘S-400 আগেকার রাশিয়ান আকাশ প্রতিরক্ষাব্যবস্থার থেকে দ্বিগুণ বেশি কার্যকর এবং পাঁচ মিনিটের মধ্যে একে ডিপ্লয় করা যায় । বায়ুসেনা, সেনাবাহিনী ও নৌবাহিনীর বর্তমান এবং ভবিষ্যতের ডিফেন্স ইউনিটের সঙ্গেও একে সংযুক্ত করা যেতে পারে ।”

গত বছর ওয়াশিটনে একটি অনুষ্ঠানে বিদেশমন্ত্রী এস জয়শঙ্কর বলেন, ভারত অ্যামেরিকার সঙ্গে এস-400-এর বিষয়টি নিয়ে কথা বলেছে এবং তাঁর বক্তব্য স্থাপিত করার ক্ষেত্রে তিনি আত্মবিশ্বাসী।

এক রাশিয়ান সাংবাদিকের প্রশ্নের উত্তরে জয়শঙ্কর বলেছিলেন, “আমি আশাবাদী যে মানুষ বুঝবেন যে এই বিশেষ লেনদেন আমাদের পক্ষে কতটা জরুরি, তাই আপনার প্রশ্নটা আমার কাছে প্রকল্পিত।”

তারপর গত বছরের নভেম্বরে অ্যামেরিকা ভারতের ওপর CAATSA না চাপানোর ইঙ্গিত দেয়, যখন বিদেশ দফতরের একজন সিনিয়র আধিকারিক সংবাদমাধ্যমে বলেন, যে “CAATSA প্রয়োগের সময়কাল নির্ধারিত এবং চূড়ান্ত নয় ।” পাশাপাশি সেই আধিকারিক আরও বলেন যে রাশিয়ার উঁকিঝুঁকি আটকাতে ভারতের উচিত প্রতিরক্ষা প্রযুক্তি আরও মজবুত করা ।

ইমেজইন্ডিয়া ইনস্টিটিউটের সভাপতি এবং ভারত-মার্কিন পলিটিক্যাল অ্যাকশন কমিটির প্রতিষ্ঠাতা-অধিকর্তা রবীন্দ্র সচদেবের মতে, ভারতের এস-400 চুক্তিতে অ্যামেরিকার ছাড়ের অর্থ “বলে বা না বলে সম্মতি দেওয়া এবং CAATSA নিষেধাজ্ঞার ক্ষেত্রে নজর ঘুরিয়ে রাখা । ”

রাজনাথ সিংয়ের রাশিয়া সফরের পর সচদেব ETV ভারতকে বলেন, “তবে এর সঙ্গে যে বার্তাটা দেওয়া হয়েছে, যে ভারত ভবিষ্যতে CAATSA-র সংস্থান মেনে রাশিয়া থেকে প্রতিরক্ষা সরঞ্জাম আমদানি কমিয়ে দিক ।”

তিনি আরও বলেন যে এই দরকষাকষির সময় অ্যামেরিকা এস-400 চুক্তি এগিয়ে নিয়ে যেতে সম্মতি দিয়েছে সেইসময়কার ভূ-রাজনৈতিক পরিস্থিতির কথা ভেবেই ।

সচদেব বলেন, “কিন্তু ওরা (অ্যামেরিকা) ভারতের থেকে এই সম্মতিও আদায় করে নিয়েছে যে ভারত ইরানের ওপর চাপানো ওয়াশিংটনের নিষেধাজ্ঞা পুরোপুরি মেনে চলবে ।”

2018 সালে অ্যামেরিকা সেই জয়েন্ট কমপ্রিহেন্সিভ প্ল্যান অফ অ্যাকশন থেকে বেরিয়ে আসে, যা রাষ্ট্রসঙ্ঘের নিরাপত্তা পরিষদের পাঁচ স্থায়ী সদস্যের সঙ্গে স্বাক্ষর করেছিল তেহরানও । ইরানের পরমাণু কর্মসূচির অভিযোগে জার্মানি এবং ইউরোপীয় ইউনিয়ন তাদের ওপর নতুন করে নিষেধাজ্ঞা চাপায় । এরপর, গত বছর থেকে ভারত ইরান থেকে তেল আমদানি বন্ধ করে দেয়, যারা ছিল তার দ্বিতীয় বৃহত্তম সরবরাহকারী । তবে, দক্ষিণ-পূর্ব ইরানের চাবাহার বন্দর উন্নয়নের যে কাজ ভারত করছে, তাতে অ্যামেরিকা আপত্তি জানায়নি । আফগানিস্তান ও ইরানের সঙ্গে যৌথভাবে এই বন্দর তৈরি করছে ভারত, যা আন্তর্জাতিক উত্তর-দক্ষিণ পরিবহণ করিডরে (INSTC) একটি গুরুত্বপূর্ণ যোগসূত্র হয়ে উঠবে । এটি হল 7200 কিলোমিটারের একটি বহুমাত্রিক নেটওয়ার্ক, যার মধ্যে রয়েছে জাহাজ, রেল ও সড়ক রুট । এর মাধ্যমে ভারত, ইরান, আফগানিস্তান, আর্মেনিয়া, আজারবাইজান, রাশিয়া, মধ্য এশিয়া ও ইউরোপের মধ্যে পণ্য পরিবহণ করা হবে । ভারত 500 মিলিয়ন ডলার বিনিয়োগ করেছে এই বন্দর নির্মাণে এবং সেখান থেকে আফগানিস্তান পর্যন্ত একটি সড়ক যোগাযোগ গড়ে তুলতে যা পাকিস্তানকে এড়িয়ে সেদেশে যাতায়াতের সুযোগ করে দেবে ।

এখন মধ্যযুগীয় ধাঁচে 15-16 জুন রাতে লাদাখে সংঘাতে 20 জন ভারতীয় সেনাকর্মীর মৃত্যুর পর, কৌশলগত গুরুত্বের দিক থেকে ভারতের সঙ্গে অ্যামেরিকা ও রাশিয়ার প্রতিরক্ষা সমঝোতাই এখন সবার নজরে।

বৃহস্পতিবার, রাজনাথের রাশিয়া সফরের ঠিক আগেই মার্কিন বিদেশ সচিব পম্পিও ট্রান্স-আটলান্টিক নীতি নির্ধারণের জন্য তৈরি ব্রাসেলস ফোরামে বলেন, চিন মুক্ত পৃথিবীর সমস্ত অগ্রগতিকে নষ্ট করতে চায়, তাই ওয়াশিংটন ইউরোপ থেকে সেনা সরিয়ে তাদের বিশ্বের অন্যান্য জায়গায় পুনঃ-মোতায়েন করছে ।

ভারতীয় জওয়ানদের মৃত্যুতে সমবেদনা জানিয়ে তিনি বলেন, “ PLA (পিপলস লিবারেশন আর্মি অফ চায়না) বিশ্বের সবথেকে জনবহুল গণতন্ত্র ভারতের সঙ্গে সীমান্ত উত্তেজনা বাড়িয়ে তুলেছে । তারা দক্ষিণ চিন সাগরে সামরিক প্রভাব বাড়াচ্ছে এবং অবৈধভাবে আরও এলাকা দাবি করছে । এর ফলে গুরুত্বপূর্ণ সমুদ্রপথগুলো বিপদের মুখে ।”

এতে বোঝা যাচ্ছে, যে ভারতীয় ভূখণ্ডে চিনা সেনার অনুপ্রবেশ হচ্ছে বেজিয়ের সম্প্রসারণবাদী উচ্চাকাঙ্খার সর্বশেষ উদাহরণ । পর্যবেক্ষকদের মতে, ইউহান শহর থেকে শুরু হওয়া COVID-19 মহামারি নিয়ে যথেষ্ট তথ্য প্রকাশ না করার জন্য যখন বেজিং বিশ্বজুড়ে সমালোচনার মুখে, তখন অভ্যন্তরীণ চারে নজর ঘোরাতেই চিনা প্রেসিডেন্ট শি জিংপিং এই কৌশল ব্যবহার করছেন ।

জাপান, অস্ট্রেলিয়ার সঙ্গে ভারত ও অ্যামেরিকা হল সেই চতুর্শক্তির অংশ, যারা ইন্দো-প্যাসিফিক অঞ্চলে শান্তি ও সমৃদ্ধি চায় । এই অঞ্চল জাপানের পূর্ব উপকূল থেকে আফ্রিকার পূর্ব উপকূল পর্যন্ত বিস্তৃত । দক্ষিণ চিন সাগরে চিনের ক্রমবর্দ্ধমান তৎপরতা এবং আগ্রাসী মনোভাবের দিকে তাকালে এটা গুরুত্বপূর্ণ।

দক্ষিণ চিন সাগরে স্প্র্যাটলি এবং প্যারাসেল দ্বীপপুঞ্জ নিয়ে চিনের সঙ্গে ওই অঞ্চলের অন্য দেশগুলির বিবাদ রয়েছে । স্প্র্যাটলি দ্বীপপুঞ্জের অন্যান্য দাবিদাররা হল ব্রুনেই, মালয়েশিয়া, ফিলিপিনস, তাইওয়ান এবং ভিয়েতনাম । আর প্যারাসেল দ্বীপপুঞ্জের ওপর ভিয়েতনাম এবং তাইওয়ানেরও দাবি রয়েছে ।

2016 সালে হেগের পার্মানেন্ট কোর্ট অফ আরবিট্রেশন রায় দেয়, যে চিন ফিলিপিন্সের অধিকার লঙ্ঘন করেছে দক্ষিণ চিন সাগরে, যা বিশ্বের ব্যস্ততম বাণিজ্যপথগুলোর মধ্যে একটা ।

ফিলিপিন্সের মাছ ধরা এবং পেট্রোলিয়াম খননে নাক গলানো, কৃত্রিম দ্বীপ তৈরি করা, এবং চিনা মৎস্যজীবীদের ওই এলাকায় যেতে বাধা না দেওয়ার জন্য চিনকে দোষী সাব্যস্ত করেছে আদালত ।

আবার এই সপ্তাহেই চিনের বার বার নৌ-চলাচল আইন ভঙ্গ করা নিয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করেছে ভিয়েতনাম ও ফিলিপিন্স ।

এশিয়ান নেতাদের ভার্চুয়াল বৈঠকে ভিয়েতনামের প্রধানমন্ত্রী নগুয়েন ফুয়ান ফুক বলেন, “যখন মহামারির বিরুদ্ধে গোটা পৃথিবী এক হয়ে লড়ছে, তখন দায়িত্বজ্ঞানহীনভাবে আন্তর্জাতিক আইন লঙ্ঘনের ঘটনা ঘটেই চলেছে । এতে আমাদের অঞ্চল সহ নির্দিষ্ট এলাকার নিরাপত্তা ও স্থিতিশীলতা প্রভাবিত হচ্ছে ।”

দক্ষিণ চিন সাগর ছাড়াও, চিন ইদানীং জাপান ও তাইওয়ানের সঙ্গেও আঞ্চলিক বিবাদে জড়িয়েছে।

এই মাসের শুরুর দিকেই জাপানের উপকূলরক্ষী বাহিনী রিপোর্ট দেয়, যে সেনকাকু দ্বীপপুঞ্জের কাছে 67টি চিনা সরকারি জাহাজ দেখা গেছে । পূর্ব চিন সাগরে এই দ্বীপপুঞ্জকে চিন ডিয়াইউ দ্বীপপুঞ্জ বলে ডাকে চিন । এর ওপর বেজিং এবং টোকিও উভয়েরউ দাবি রয়েছে ।

এরমধ্যেই, চিনা বিমানবাহিনীর বিমান এই মাসে অন্তত চার বার তাইওয়ানের আকাশসীমায় ঢুকে পড়ে যার জেরে পূর্ব এশিয়ার এই দেশকেও জবাবে তাদের বিমানবাহিনী মোতায়েন করতে হয় ।

চিন স্বশাসিত তাইওয়ানকে তাদের এলাকা মনে করে এবং অন্য দেশগুলোকে চাপ দেয়, যাতে তাইপেইকে কূটনৈতিক স্বীকৃতি না দেওয়া হয় ।

চিনের তৈরি এই ভূরাজনৈতিক অস্থিরতার মধ্যে, রাশিয়া এবং অ্যামেরিকার মতো প্রধান শক্তিগুলোর সঙ্গে ভারতের প্রতিরক্ষা সমঝোতা আরও গুরুত্বপূর্ণ হয়ে দাঁড়িয়েছে ।

যেখানে রাশিয়ার সঙ্গে ভারতের ‘বিশেষ কৌশলগত অংশীদারিত্ব’ রয়েছে, সেখানে অ্যামেরিকার সঙ্গে সম্পর্কও ‘সার্বিক আন্তর্জাতিক কৌশলগত সম্পর্কে’ উন্নিত হয়েছে।

2016 সালে অ্যামেরিকা ভারতকে ‘প্রতিরক্ষাক্ষেত্রে প্রধান সহযোগী’-র মর্যাদা দেয়, যা নয়াদিল্লিকে ওয়াশিংটনের ঘনিষ্ঠতম বন্ধু ও সহযোগীদের সমকক্ষ করে তোলে । এর ফলে অ্যামেরিকা ভারতের সঙ্গে প্রতিরক্ষা প্রযুক্তি আদানপ্রদানের প্রতিশ্রুতিও দেয় ।

নয়াদিল্লি: সেদেশের একটা শহর থেকে বিশ্ব মহামারি তৈরি হওয়ার পর, লাদাখে চিনের যে সম্প্রসারণবাদী উচ্চাকাঙ্খা সামনে এসেছে ৷ তখন রাশিয়া এবং অ্যামেরিকার মতো বড় শক্তিগুলোর সঙ্গে ভারতের প্রতিরক্ষা সমঝোতা আরও গুরুত্বপূর্ণ হয়ে দাঁড়িয়েছে ।

যখন প্রতিরক্ষামন্ত্রী রাজনাথ সিং 75 তম দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধ বিজয় দিবসের কুচকাওয়াজে অংশ নিতে তিনদিনের সফরে রাশিয়ায় গেছেন ৷ তখন মার্কিন বিদেশসচিব মাইক পম্পিও বললেন, চিনের থেকে ভারত, মালয়েশিয়া, ইন্দোনেশিয়া এবং দক্ষিণ চিন সাগর এলাকায় বিপদ সামলাতে, ইউরোপের বিভিন্ন জায়গা থেকে সেনা পাঠানো হচ্ছে ।

22 থেকে 24 জুন তাঁর মস্কো সফরের সময় রাজনাথ বৈঠক করেন রাশিয়ার উপ প্রধানমন্ত্রী ইউরি বরিসভের সঙ্গে । তারপর তিনি টুইট করেন, “উপপ্রধানমন্ত্রী মিস্টার ইউরি বরিসভের সঙ্গে আমার আলোচনা খুবই সদর্থক এবং ফলপ্রসূ হয়েছে । আমি আশ্বাস পেয়েছি, যে বর্তমান চুক্তিগুলো বজায় রাখা হবে এবং শুধু তাই নয়, বেশ কয়েকটি বিষয়কে দ্রুততার সঙ্গে এগিয়ে নিয়ে যাওয়া হবে ।”

তিনি আরও বলেন যে, ভারতের সমস্ত প্রস্তাবই রাশিয়ার তরফে সদর্থক সাড়া পেয়েছে ।

রাজনাথ এবং বরিসভ হচ্ছেন বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিষয়ক ভারত-রাশিয়া উচ্চপর্যায়ের কমিটির যুগ্ম চেয়ারম্যান ।

যদিও ভারত কী কী চেয়েছে তার বিশদ বিবরণ এখনও সামনে রাখা হয়নি । তবে নিশ্চিতভাবেই ধরে নেওয়া যেতে পারে যে S-400 ট্রায়াম্ফ দূরপাল্লার ভূমি থেকে আকাশ ক্ষেপণাস্ত্র কেনার বিষয়টিও আলোচনায় উঠে এসেছে ।

2018 সালে নয়াদিল্লিতে প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি এবং রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিনের দ্বিপাক্ষিক সম্মেলনের সময় ভারত ও রাশিয়া 5.4 বিলিয়ন ডলারের ক্ষেপণাস্ত্র চুক্তি স্বাক্ষর করে ।

2018 সালের জানুয়ারিতে অ্যামেরিকান প্রশাসন ‘কাউন্টারিং অ্যামেরিকাজ অ্যাডভারসারিজ থ্রু স্যাংশনস’ আইন (CAATSA) কার্যকর করার পর থেকেই S-400 ক্ষেপণাস্ত্র চুক্তি আগ্রহের বিষয় হয়ে দাঁড়িয়েছে । রাশিয়া, ইরান ও উত্তর কোরিয়ার প্রতিরক্ষা সংস্থাগুলোর সঙ্গে যারা ব্যবসা করে, সেই দেশগুলোই CAATSA-র টার্গেট ।

ইউক্রেন ও সিরিয়ার যুদ্ধে রাশিয়ার যোগাযোগ এবং 2016-র অ্যামেরিকার প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে নাক গলানোর অভিযোগের প্রেক্ষিতে একদল অ্যামেরিকা সেনেটর রাশিয়ার ওপর নিষেধাজ্ঞা চাপান ।

গত বছরের জুনে, তৎকালীন দক্ষিণ ও মধ্য এশিয়া বিষয়ক প্রিন্সিপাল ডেপুটি অ্যাসিস্ট্যান্ট সেক্রেটারি অ্যালিস ওয়েলস, হাউজ অফ রিপ্রেজেন্টেটিভসের বিদেশ বিষয়ক সাব-কমিটির সামনে বলেন, যে S-400 ডিফেন্স সিস্টেম কেনার ফলে ভারত-অ্যামেরিকা সামরিক সম্পর্ক ধাক্কা খেতে পারে ।

ওয়েলসের বক্তব্য হিসেবে উদ্ধৃত করা হয়েছে, “একটা নির্দিষ্ট জায়গায় গিয়ে, অংশীদারিত্ব নিয়ে একটা কৌশলগত সিদ্ধান্ত নিতেই হবে ৷ যে কোন অস্ত্রব্যবস্থা দেশ গ্রহণ করতে চলেছে ।”

যদিও অ্যামেরিকা ভারতকে MIM-104F প্যাট্রিয়ট (PAC-3 ) ভূমি থেকে আকাশ ক্ষেপণাস্ত্র এবং টার্মিনাল হাই অলটিচিউড এরিয়া ডিফেন্স (THAAD) দেওয়ার প্রস্তাব দেন, কিন্তু ভারত রাশিয়ার সঙ্গে S-400 চুক্তি করারই সিদ্ধান্ত নেয় ।

বিশেষজ্ঞদের মতে, S-400 হল বিশ্বের আধুনিকতম আকাশ প্রতিরক্ষা ব্যবস্থার একটি । এর মধ্যে রয়েছে মাল্টিফাংশনাল রেডার, স্বয়ংক্রিয় লক্ষ্য নির্ধারণ ক্ষমতা, লঞ্চার এবং কমান্ড সেন্টার । বহুস্তরীয় প্রতিরক্ষা ব্যবস্থা গড়ে তুলতে, এটি তিন ধরণের ক্ষেপণাস্ত্র ছুঁড়তে সক্ষম ।

আর্মি-টেকনোলজি ডট কম ওয়েবসাইটে বলা হচ্ছে, “এই প্রতিরক্ষা ব্যবস্থা আকাশপথে তিন ধরণের টার্গেটকে মোকাবিলা করতে পারে, যার মধ্যে রয়েছে বিমান, চালকবিহীন ড্রোন এবং ব্যালিস্টিক ও ক্রুজ মিসাইল । 400 কিলোমিটার পাল্লায়, 30 কিলোমিটার উচ্চতা পর্যন্ত এটি আঘাত হানতে সক্ষম । এটি একসঙ্গে 36টি নিশানা করতে পারে।”

আরও বলা হয়েছে, যে ‘‘S-400 আগেকার রাশিয়ান আকাশ প্রতিরক্ষাব্যবস্থার থেকে দ্বিগুণ বেশি কার্যকর এবং পাঁচ মিনিটের মধ্যে একে ডিপ্লয় করা যায় । বায়ুসেনা, সেনাবাহিনী ও নৌবাহিনীর বর্তমান এবং ভবিষ্যতের ডিফেন্স ইউনিটের সঙ্গেও একে সংযুক্ত করা যেতে পারে ।”

গত বছর ওয়াশিটনে একটি অনুষ্ঠানে বিদেশমন্ত্রী এস জয়শঙ্কর বলেন, ভারত অ্যামেরিকার সঙ্গে এস-400-এর বিষয়টি নিয়ে কথা বলেছে এবং তাঁর বক্তব্য স্থাপিত করার ক্ষেত্রে তিনি আত্মবিশ্বাসী।

এক রাশিয়ান সাংবাদিকের প্রশ্নের উত্তরে জয়শঙ্কর বলেছিলেন, “আমি আশাবাদী যে মানুষ বুঝবেন যে এই বিশেষ লেনদেন আমাদের পক্ষে কতটা জরুরি, তাই আপনার প্রশ্নটা আমার কাছে প্রকল্পিত।”

তারপর গত বছরের নভেম্বরে অ্যামেরিকা ভারতের ওপর CAATSA না চাপানোর ইঙ্গিত দেয়, যখন বিদেশ দফতরের একজন সিনিয়র আধিকারিক সংবাদমাধ্যমে বলেন, যে “CAATSA প্রয়োগের সময়কাল নির্ধারিত এবং চূড়ান্ত নয় ।” পাশাপাশি সেই আধিকারিক আরও বলেন যে রাশিয়ার উঁকিঝুঁকি আটকাতে ভারতের উচিত প্রতিরক্ষা প্রযুক্তি আরও মজবুত করা ।

ইমেজইন্ডিয়া ইনস্টিটিউটের সভাপতি এবং ভারত-মার্কিন পলিটিক্যাল অ্যাকশন কমিটির প্রতিষ্ঠাতা-অধিকর্তা রবীন্দ্র সচদেবের মতে, ভারতের এস-400 চুক্তিতে অ্যামেরিকার ছাড়ের অর্থ “বলে বা না বলে সম্মতি দেওয়া এবং CAATSA নিষেধাজ্ঞার ক্ষেত্রে নজর ঘুরিয়ে রাখা । ”

রাজনাথ সিংয়ের রাশিয়া সফরের পর সচদেব ETV ভারতকে বলেন, “তবে এর সঙ্গে যে বার্তাটা দেওয়া হয়েছে, যে ভারত ভবিষ্যতে CAATSA-র সংস্থান মেনে রাশিয়া থেকে প্রতিরক্ষা সরঞ্জাম আমদানি কমিয়ে দিক ।”

তিনি আরও বলেন যে এই দরকষাকষির সময় অ্যামেরিকা এস-400 চুক্তি এগিয়ে নিয়ে যেতে সম্মতি দিয়েছে সেইসময়কার ভূ-রাজনৈতিক পরিস্থিতির কথা ভেবেই ।

সচদেব বলেন, “কিন্তু ওরা (অ্যামেরিকা) ভারতের থেকে এই সম্মতিও আদায় করে নিয়েছে যে ভারত ইরানের ওপর চাপানো ওয়াশিংটনের নিষেধাজ্ঞা পুরোপুরি মেনে চলবে ।”

2018 সালে অ্যামেরিকা সেই জয়েন্ট কমপ্রিহেন্সিভ প্ল্যান অফ অ্যাকশন থেকে বেরিয়ে আসে, যা রাষ্ট্রসঙ্ঘের নিরাপত্তা পরিষদের পাঁচ স্থায়ী সদস্যের সঙ্গে স্বাক্ষর করেছিল তেহরানও । ইরানের পরমাণু কর্মসূচির অভিযোগে জার্মানি এবং ইউরোপীয় ইউনিয়ন তাদের ওপর নতুন করে নিষেধাজ্ঞা চাপায় । এরপর, গত বছর থেকে ভারত ইরান থেকে তেল আমদানি বন্ধ করে দেয়, যারা ছিল তার দ্বিতীয় বৃহত্তম সরবরাহকারী । তবে, দক্ষিণ-পূর্ব ইরানের চাবাহার বন্দর উন্নয়নের যে কাজ ভারত করছে, তাতে অ্যামেরিকা আপত্তি জানায়নি । আফগানিস্তান ও ইরানের সঙ্গে যৌথভাবে এই বন্দর তৈরি করছে ভারত, যা আন্তর্জাতিক উত্তর-দক্ষিণ পরিবহণ করিডরে (INSTC) একটি গুরুত্বপূর্ণ যোগসূত্র হয়ে উঠবে । এটি হল 7200 কিলোমিটারের একটি বহুমাত্রিক নেটওয়ার্ক, যার মধ্যে রয়েছে জাহাজ, রেল ও সড়ক রুট । এর মাধ্যমে ভারত, ইরান, আফগানিস্তান, আর্মেনিয়া, আজারবাইজান, রাশিয়া, মধ্য এশিয়া ও ইউরোপের মধ্যে পণ্য পরিবহণ করা হবে । ভারত 500 মিলিয়ন ডলার বিনিয়োগ করেছে এই বন্দর নির্মাণে এবং সেখান থেকে আফগানিস্তান পর্যন্ত একটি সড়ক যোগাযোগ গড়ে তুলতে যা পাকিস্তানকে এড়িয়ে সেদেশে যাতায়াতের সুযোগ করে দেবে ।

এখন মধ্যযুগীয় ধাঁচে 15-16 জুন রাতে লাদাখে সংঘাতে 20 জন ভারতীয় সেনাকর্মীর মৃত্যুর পর, কৌশলগত গুরুত্বের দিক থেকে ভারতের সঙ্গে অ্যামেরিকা ও রাশিয়ার প্রতিরক্ষা সমঝোতাই এখন সবার নজরে।

বৃহস্পতিবার, রাজনাথের রাশিয়া সফরের ঠিক আগেই মার্কিন বিদেশ সচিব পম্পিও ট্রান্স-আটলান্টিক নীতি নির্ধারণের জন্য তৈরি ব্রাসেলস ফোরামে বলেন, চিন মুক্ত পৃথিবীর সমস্ত অগ্রগতিকে নষ্ট করতে চায়, তাই ওয়াশিংটন ইউরোপ থেকে সেনা সরিয়ে তাদের বিশ্বের অন্যান্য জায়গায় পুনঃ-মোতায়েন করছে ।

ভারতীয় জওয়ানদের মৃত্যুতে সমবেদনা জানিয়ে তিনি বলেন, “ PLA (পিপলস লিবারেশন আর্মি অফ চায়না) বিশ্বের সবথেকে জনবহুল গণতন্ত্র ভারতের সঙ্গে সীমান্ত উত্তেজনা বাড়িয়ে তুলেছে । তারা দক্ষিণ চিন সাগরে সামরিক প্রভাব বাড়াচ্ছে এবং অবৈধভাবে আরও এলাকা দাবি করছে । এর ফলে গুরুত্বপূর্ণ সমুদ্রপথগুলো বিপদের মুখে ।”

এতে বোঝা যাচ্ছে, যে ভারতীয় ভূখণ্ডে চিনা সেনার অনুপ্রবেশ হচ্ছে বেজিয়ের সম্প্রসারণবাদী উচ্চাকাঙ্খার সর্বশেষ উদাহরণ । পর্যবেক্ষকদের মতে, ইউহান শহর থেকে শুরু হওয়া COVID-19 মহামারি নিয়ে যথেষ্ট তথ্য প্রকাশ না করার জন্য যখন বেজিং বিশ্বজুড়ে সমালোচনার মুখে, তখন অভ্যন্তরীণ চারে নজর ঘোরাতেই চিনা প্রেসিডেন্ট শি জিংপিং এই কৌশল ব্যবহার করছেন ।

জাপান, অস্ট্রেলিয়ার সঙ্গে ভারত ও অ্যামেরিকা হল সেই চতুর্শক্তির অংশ, যারা ইন্দো-প্যাসিফিক অঞ্চলে শান্তি ও সমৃদ্ধি চায় । এই অঞ্চল জাপানের পূর্ব উপকূল থেকে আফ্রিকার পূর্ব উপকূল পর্যন্ত বিস্তৃত । দক্ষিণ চিন সাগরে চিনের ক্রমবর্দ্ধমান তৎপরতা এবং আগ্রাসী মনোভাবের দিকে তাকালে এটা গুরুত্বপূর্ণ।

দক্ষিণ চিন সাগরে স্প্র্যাটলি এবং প্যারাসেল দ্বীপপুঞ্জ নিয়ে চিনের সঙ্গে ওই অঞ্চলের অন্য দেশগুলির বিবাদ রয়েছে । স্প্র্যাটলি দ্বীপপুঞ্জের অন্যান্য দাবিদাররা হল ব্রুনেই, মালয়েশিয়া, ফিলিপিনস, তাইওয়ান এবং ভিয়েতনাম । আর প্যারাসেল দ্বীপপুঞ্জের ওপর ভিয়েতনাম এবং তাইওয়ানেরও দাবি রয়েছে ।

2016 সালে হেগের পার্মানেন্ট কোর্ট অফ আরবিট্রেশন রায় দেয়, যে চিন ফিলিপিন্সের অধিকার লঙ্ঘন করেছে দক্ষিণ চিন সাগরে, যা বিশ্বের ব্যস্ততম বাণিজ্যপথগুলোর মধ্যে একটা ।

ফিলিপিন্সের মাছ ধরা এবং পেট্রোলিয়াম খননে নাক গলানো, কৃত্রিম দ্বীপ তৈরি করা, এবং চিনা মৎস্যজীবীদের ওই এলাকায় যেতে বাধা না দেওয়ার জন্য চিনকে দোষী সাব্যস্ত করেছে আদালত ।

আবার এই সপ্তাহেই চিনের বার বার নৌ-চলাচল আইন ভঙ্গ করা নিয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করেছে ভিয়েতনাম ও ফিলিপিন্স ।

এশিয়ান নেতাদের ভার্চুয়াল বৈঠকে ভিয়েতনামের প্রধানমন্ত্রী নগুয়েন ফুয়ান ফুক বলেন, “যখন মহামারির বিরুদ্ধে গোটা পৃথিবী এক হয়ে লড়ছে, তখন দায়িত্বজ্ঞানহীনভাবে আন্তর্জাতিক আইন লঙ্ঘনের ঘটনা ঘটেই চলেছে । এতে আমাদের অঞ্চল সহ নির্দিষ্ট এলাকার নিরাপত্তা ও স্থিতিশীলতা প্রভাবিত হচ্ছে ।”

দক্ষিণ চিন সাগর ছাড়াও, চিন ইদানীং জাপান ও তাইওয়ানের সঙ্গেও আঞ্চলিক বিবাদে জড়িয়েছে।

এই মাসের শুরুর দিকেই জাপানের উপকূলরক্ষী বাহিনী রিপোর্ট দেয়, যে সেনকাকু দ্বীপপুঞ্জের কাছে 67টি চিনা সরকারি জাহাজ দেখা গেছে । পূর্ব চিন সাগরে এই দ্বীপপুঞ্জকে চিন ডিয়াইউ দ্বীপপুঞ্জ বলে ডাকে চিন । এর ওপর বেজিং এবং টোকিও উভয়েরউ দাবি রয়েছে ।

এরমধ্যেই, চিনা বিমানবাহিনীর বিমান এই মাসে অন্তত চার বার তাইওয়ানের আকাশসীমায় ঢুকে পড়ে যার জেরে পূর্ব এশিয়ার এই দেশকেও জবাবে তাদের বিমানবাহিনী মোতায়েন করতে হয় ।

চিন স্বশাসিত তাইওয়ানকে তাদের এলাকা মনে করে এবং অন্য দেশগুলোকে চাপ দেয়, যাতে তাইপেইকে কূটনৈতিক স্বীকৃতি না দেওয়া হয় ।

চিনের তৈরি এই ভূরাজনৈতিক অস্থিরতার মধ্যে, রাশিয়া এবং অ্যামেরিকার মতো প্রধান শক্তিগুলোর সঙ্গে ভারতের প্রতিরক্ষা সমঝোতা আরও গুরুত্বপূর্ণ হয়ে দাঁড়িয়েছে ।

যেখানে রাশিয়ার সঙ্গে ভারতের ‘বিশেষ কৌশলগত অংশীদারিত্ব’ রয়েছে, সেখানে অ্যামেরিকার সঙ্গে সম্পর্কও ‘সার্বিক আন্তর্জাতিক কৌশলগত সম্পর্কে’ উন্নিত হয়েছে।

2016 সালে অ্যামেরিকা ভারতকে ‘প্রতিরক্ষাক্ষেত্রে প্রধান সহযোগী’-র মর্যাদা দেয়, যা নয়াদিল্লিকে ওয়াশিংটনের ঘনিষ্ঠতম বন্ধু ও সহযোগীদের সমকক্ষ করে তোলে । এর ফলে অ্যামেরিকা ভারতের সঙ্গে প্রতিরক্ষা প্রযুক্তি আদানপ্রদানের প্রতিশ্রুতিও দেয় ।

Last Updated : Jun 29, 2020, 8:00 AM IST
ETV Bharat Logo

Copyright © 2024 Ushodaya Enterprises Pvt. Ltd., All Rights Reserved.