দিল্লি, 28 মার্চ : লকডাউন ঘোষণা হওয়ার পর দিন যত বাড়ছে ততই যেন ছবিটা স্পষ্ট হয়ে উঠছে । এক সুস্থ সকালের ছবি দেখার জন্য প্রতিশ্রুতি ছিল দিন কয়েকের এক গৃহবন্দী পৃথিবীর । প্রতিশ্রুতি ছিল এই 21 দিনে যুদ্ধ জেতার । কিন্তু প্রতিদিন যে হারে বাড়ছে সংক্রমণ এবং নানা জায়গায় জনমানসে অসেচতনতার ছবি ধরা পড়ছে, কোথাও যেন তা অনেক প্রশ্ন তুলছে । প্রশ্ন তুলছে সাধারণের সচেতনতা নিয়ে । প্রশ্ন তুলছে সরকারের পদক্ষেপ নিয়ে । প্রশ্ন তুলছে প্রশাসনের নজরদারি নিয়ে। আজ দিল্লির আনন্দবিহারের ছবিটা যেন আরও উসকে দিল পুরো বিষয়কে ।
কোরোনায় কাঁপছে বিশ্ব । প্রায় 27 হাজার মানুষের মৃত্যু হয়েছে । পাঁচ লাখেরও বেশি ছাড়িয়েছে আক্রান্তের সংখ্যা । ইট্যালি, স্পেন, জার্মান একের পর এক ইউরোপের প্রায় প্রতিটি দেশ বিধ্বস্ত । এদেশেও থাবা বসিয়েছে কোরোনা । এপর্যন্ত ২০ জনের মৃত্যু হয়েছে । গত 24 ঘণ্টায় দেশে 194 জন আক্রান্ত হয়েছেন । মহারাষ্ট্র, তেলাঙ্গানা, কেরালা, পশ্চিমবঙ্গ, দিল্লি রাজ্যগুলিও কোরোনা মোকাবিলায় লড়ছে । ইতিমধ্যে মহারাষ্ট্রে ছজনের মৃত্যু হয়েছে। কেরালায় ১৮৪ জন আক্রান্ত । কর্নাটকে ৬০ জন আক্রান্ত । লড়াই জারি । কিন্তু দিন দিন যে ছবিগুলি সামনে আসছে, কোথাও যেন অনেক সংশয় দেখা দিচ্ছে । বর্তমানে একটা বড় মাথা ব্যথা ভিনরাজ্যে কর্মরত শ্রমিকরা । লকডাউনের জেরে কাজ করতে গিয়ে আটকে পড়েছেন ভিন রাজ্যের প্রচুর শ্রমিক। রীতিমতো দুশ্চিন্তা আর সমস্যার মধ্যে দিন কাটাচ্ছেন তাঁরা। অনেকেই দিন কাটাচ্ছেন অনাহারে।
ইতিমধ্যেই প্রধানমন্ত্রী গরিব কল্যাণ যোজনার কথা ঘোষণা হয়েছে। শ্রমিক, গরিবদের জন্য ১.৭ লাখ কোটি টকার প্যাকেজ । কেন্দ্রের তরফে চিঠি দিয়ে বিভিন্ন রাজ্যে আটকে পড়া অন্যান্য রাজ্যের শ্রমিকদের জন্য ত্রাণের ব্যবস্থা করতে রাজ্যগুলিকে নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। বিষয়টি নিয়ে সক্রিয় হয়েছে কেন্দ্রীয় সরকার। আজ সব রাজ্যের মুখ্যসচিবদের লেখা এক চিঠিতে বলা হয়েছে, কোরোনা পরিস্থিতি এবং লকডাউনের জেরে যেসব শ্রমিক ভিন রাজ্যে আটকে পড়েছেন তাঁদের খাবার, আশ্রয়, জামাকাপড় এবং ওষুধের ব্যবস্থা রাজ্য সরকারগুলিকে করতে হবে।
কিন্তু যা দেখা যাচ্ছে, তাতে কোথাও আটকে পড়া শ্রমিকরা সোশাল মিডিয়ার মাধ্যমে সাহায্য চাইছেন। কোথাও বা ভিডিয়ো কলে বাড়ি ফেরার আবেদন জানাচ্ছেন । আর আজ দিল্লির আনন্দ বিহারের ঘটনা কোথাও যেন বহু প্রশ্নের মুখে দাঁড় করাল প্রশাসনকে। কোথায় বজায় থাকছে সামাজিক দূরত্ব? প্রশাসনের চোখ এড়িয়ে এত বড় জমায়েত হলই বা কী করে? দিল্লিতে এই মুহূর্তে 40 -র বেশি আক্রান্ত । রাজধানী শহরে যে দেশের নানা রাজ্যের শ্রমিক কাজের সূত্রে রয়েছেন তা বলার অপেক্ষা রাখে না । বর্তমানে তাঁরা যেখানে রয়েছেন । তা হয় কোনও ছোটো জায়গার মধ্যে দলবদ্ধভাবে । নয়ত সরকারের প্রচেষ্টায় বাড়ি ফেরার তাগিদে কোনও জমায়েত বা ভিড়ের মধ্যে সময় কাটাচ্ছেন । তাহলে তাঁরা কতটা সুরক্ষিত ? তাহলে কি অদূর ভবিষ্যতে কোরোনার থার্ড স্টেজ, দ্বিগুণ, তিনগুণ সংক্রমণের আশঙ্কাই কি সত্যি হতে চলেছে ?
প্রধানমন্ত্রী জাতির উদ্দেশে ভাষণ দিতে গিয়ে বলেছিলেন এই 21 দিনে কোরোনার চেন ভাঙতে হবে । আটাকাতে হবে সংক্রমণকে । কিন্তু একের পর এক যে বিষয় প্রকাশ্যে আসছে তা কোথাও যেন চিন্তা বাড়াচ্ছে । বাড়াচ্ছে প্রবল হারে সংক্রমণের আশঙ্কাকে ।