ETV Bharat / bharat

ওয়ার্ল্ড ট্রেড সেন্টারে নতুন ডিরেক্টর জেনেরাল : ভারতের স্বার্থ - রবার্তো আজেভেদো

WTO-র ডিরেক্টর জেনেরাল ব্রাজিলের রবার্তো আজেভেদো নিজের পদ থেকে ইস্তফা দেওয়ার কথা ঘোষণা করেন ৷ সেক্ষেত্রে নতুন DG বেছে নেওয়া হল ওয়ার্ল্ড ট্রেড সেন্টারের সামনে নতুন চ্যালেঞ্জ ৷ এই বিষয়ে লিখছেন অশোক মুখ্যোপাধ্যায় ৷ যিনি 1995-1998 সাল পর্যন্ত বিশ্ব বাণিজ্য সংস্থায় ভারতের নেগোশিয়েটর ছিলেন ৷

ছবি
ছবি
author img

By

Published : Jul 13, 2020, 11:29 AM IST

2020-র মে মাসের মাঝামাঝি, ওয়ার্ল্ড ট্রেড সেন্টারের (WTO) ডিরেক্টর জেনেরাল, ব্রাজিলের রবার্তো আজেভেদো হঠাৎই অগাস্টের শেষের মধ্যে পদ ছাড়ার ইচ্ছার কথা ঘোষণা করেন ৷ তখন তাঁর দ্বিতীয় দফার চার বছরের কার্যকালের একবছর বাকি ছিল । আন্তর্জাতিক সম্পর্কের ক্ষেত্রে বড়সড় বিঘ্নের সময়ে, নতুন DG বেছে নেওয়ার ক্ষেত্রে WTO-র সামনে চ্যালেঞ্জ এবং সুযোগ দুই-ই রয়েছে ।

WTO সর্বসম্মতির ভিত্তিতে এই সিদ্ধান্ত নেওয়া হয় । DG-ই দৃশ্যে আড়ালে থেকে সদস্যদের ঐকমত্যের লক্ষ্যে কাজ করতে থাকেন, বহু পরিচিত ‘গ্রিন রুম’ প্রক্রিয়ার পৌরহিত্য করেন । এই প্রক্রিয়া বিবদমান ইস্যুগুলির ক্ষেত্রে ঐকমত্যের লক্ষ্যে, প্রতিনিধি দলের নির্বাচিত প্রধানদের একজোট করে, যার মধ্যে WTO-র সদস্যদের সবকটি প্রধান গোষ্ঠী থাকে । প্রায় চল্লিশটি প্রতিনিধি দল সাধারণভাবে এই প্রক্রিয়ায় যুক্ত থাকে, যার ফলে প্রায়ই জটিল সমস্যাগুলি সামলাতে নতুন পথ খুঁজে পাওয়া যায় । এইসব ঘরোয়া আলোচনায় যখন প্রতিনিধি দলের নেতৃত্বে থাকে বাণিজ্যমন্ত্রীরা WTO-র রাজনৈতিকভাবে গুরুত্বপূর্ণ ইস্যুগুলি নিয়ে আলোচনা করেন, তখন ডিরেক্টর জেনারেলকে প্রায়ই ডাকা হয় বিভিন্ন দেশের তোলা টেকনিক্যাল বিষয়গুলি সমাধানের জন্য । গ্রিন রুম প্রক্রিয়ার মুখ্য কাজটাই হল, ‘সবকিছুতে সম্মতির আগে কোনওকিছুতেই সম্মতি নয় ।’

বাণিজ্যে আলাপ-আলোচনা নিয়ে দোহা ডেভেলপমেন্ট রাউন্ডে বর্তমান অচলাবস্থা তৈরির আগে পর্যন্ত, গ্রিন রুম প্রক্রিয়া সাধারণভাবে সেই ফলই দিয়েছে, যা WTO-র মন্ত্রী সম্মেলনের সমর্থন পেয়েছে । যেমন, সিঙ্গাপুরে প্রথম WTO মন্ত্রী সম্মেলনে বিনিয়োগ এবং প্রতিযোগিতার বিষয় নিয়ে আলোচনা ততক্ষণ পর্যন্ত, যতক্ষণ না উরুগুয়ে রাউন্ডে ভিত্তিমূলক WTO চুক্তিগুলো সম্পন্ন না হয় । একইরকমভাবে, বাণিজ্য শুরুর নিয়ম নিয়ে WTO-র একমত হওয়াটা হল, 1996 থেকে 2003 সালের মধ্যে মন্ত্রী সম্মেলনে হওয়া দীর্ঘ ঘরোয়া আলোচনার ফল । ভারত সবসময়ই গ্রিন রুম প্রক্রিয়ার সক্রিয় সদস্য । WTO সাধারণ পরিষদ, জানুয়ারি 2003-এ গৃহীত হওয়া পদ্ধতি অনুসারে দ্রুত পদক্ষেপ নেয়, যাতে সদস্য দেশগুলোর থেকে DG পদের মনোনয়ন বাছতে ৮ জুন থেকে ৮ জুলাই পর্যন্ত সময় পাওয়া যায়। 9 জুলাইয়ের মধ্যে 8টি মনোনয়ন জমা পড়েছে, যার মধ্যে রয়েছেন তিন মহিলা প্রার্থী (কেনিয়া, নাইজেরিয়া ও দক্ষিণ কোরিয়া)। মিশর, মেক্সিকো, মলডোভা, সৌদি আরব এবং ব্রিটেন তাদের প্রার্থী দিয়েছে ।15 থেকে 17জুলাইয়ের মধ্যে, WTO সাধারণ পরিষদ আট প্রার্থীর প্রত্যেকের সঙ্গে বৈঠক করবে, যাতে পরের ডিজিকে নিয়ে একটা সর্বসম্মত সিদ্ধান্তে পৌঁছনোর চেষ্টা করা যায়। ব্যাখ্যাতীতভাবে ভারত কোনও প্রার্থী দেয়নি, যদিও তার সামনে বেনজির সুযোগ ছিল WTO সচিবালয়ের নেতৃত্বে থেকে বহুপাক্ষিকতার সংস্কারসাধনের ।

পরের ডিজির ব্যাপারে ঐকমত্যে পৌঁছনো নির্ভর করবে, সদস্যরা বর্তমান আন্তর্জাতিক পরিস্থিতিতে সংস্থার কাছ থেকে কোন পদক্ষেপ আশা করেন, তার ওপর । এটা নির্ভর করবে WTO-তে থাকা প্রধান বাণিজ্যকারী দেশগুলোর সংকীর্ণ জাতীয় স্বার্থের ওপরেও । WTO-তে থাকার তাৎপর্যপব নির্ভর করে যে এর ১৬৪ সদস্যই আটানব্বই শতাংশ আন্তর্জাতিক বাণিজ্য করে থাকে। WTO তার সদস্যদের বাণিজ্যনীতির ক্ষেত্রে মূলত দুটি বিষয় তুলে ধরতে চালিত করে । এগুলি হল ‘মোস্ট ফেভার্ড নেশন ট্রিটমেন্ট’ এবং ‘ন্যাশনাল ট্রিটমেন্ট’, যার আওতায় WTO সদস্যরা তাদের বাণিজ্য সহযোগীদের মধ্যে বৈষম্য করবে না এবং তাদের বাজারে স্থানীয় এবং আমদানি করা পণ্য ও পরিষেবাকে একই গুরুত্ব দিতে হবে । ভারতের মতো উন্নয়নশীল দেশের পক্ষে, যখন বড় বাজারগুলোতে সংরক্ষণবাদী মনোভাব ক্রমশ বাড়ছে, তখন পরের DG-র এই দুই নীতির প্রতি দায়বদ্ধতা গুরুত্বপূর্ণ হয়ে দাঁড়াবে । ডব্লিউটিও-র পরের DG-র ব্যাপারে একমত হওয়ার ক্ষেত্রে, বাণিজ্যকারী বড় দেশগুলির হিসেব-নিকেশে প্রাধান্য পাবে দুটি ইস্যু । একটি হল, WTO-র দোহা রাউন্ডে বাজার ধরা নিয়ে যে দরকষাকষি হয়েছে, পরের ডিজি তার সিদ্ধান্তগ্রহণের সূত্রপাত করতে পারেন কিনা, যা নিয়ে এক দশকেরও বেশি সময় ধরে অচলাবস্থা চলছে। এর মধ্যে রয়েছে কৃষিক্ষেত্রের বাজারও, যেখানে ভারতের গুরুত্বপূর্ণ স্বার্থ রয়েছে তা খাদ্য নিরাপত্তা এবং কর্মসংস্থানের দিক থেকে।

আরেকটি হল, WTO-র বিবাদ মেটানোর প্রক্রিয়া (DSM) পুনরায় চালু করতে ডিজির সক্ষমতা। “রাজনৈতিক নমনীয়তা এবং আইনি বিশুদ্ধতা”র মিশ্রনকে কাজে লাগিয়ে, 1995 সাল থেকে এই প্রক্রিয়ার মাধ্যমেই 500টিরও বেশি আন্তর্জাতিক বাণিজ্য-বিবাদ মেটানো গেছে। এই প্রক্রিয়ার অন্যতম সক্রিয় ব্যবহারকারীদের মধ্যে ভারতও রয়েছে, যে দ্বিপাক্ষিক চাপের সামনে নতিস্বীকার না করেই আমেরিকা ও ইউরোপীয় ইউনিয়নের মতো বড় অর্থনৈতিক শক্তিগুলোর সঙ্গে বাণিজ্য বিবাদে সদর্থক ফল পেয়েছে । দুই ধাপের DSM প্রক্রিয়ার স্বাভাবিক কাজকর্ম আটকে রেখেছে অ্যামেরিকা । অ্যাপেলেট বডিতে (AB) নতুন বিচারক নিয়োগে নিজের সম্মতি আটকে রেখে, অ্যামেরিকা বিচারকের অভাব নিশ্চিত করেছে । এর ফলে AB-র সিদ্ধান্তের ক্ষেত্রে যা বাধ্যতামূলক, সেই তিন বিচারকের বেঞ্চ থাকছে না । নিজের এই অবস্থানের পিছনে আমেরিকা যে দু'টি কারণ দেখাচ্ছে, তা হল কয়েকজন এবি বিচারকের ‘সক্রিয়তা’, যার জেরে তাঁদের রায় ডব্লিউটিও চুক্তিকে অতিক্রম করে গেছে, এবং কয়েকজন বিচারকের সুবিধার্থে AB-র কার্যপদ্ধতির অনুচিত ব্যবহার । এর মধ্যেই আমেরিকা তার WTO পূর্ববর্তী অভ্যন্তরীণ আইন, যেমন 1974 সালের বাণিজ্য আইনের 301 নম্বর ধারায় ফিরতে শুরু করেছে, যাতে ভারত সহ WTO সদস্যদের বিরুদ্ধে একপাক্ষিকভাবে বাণিজ্য বিবাদগুলিকে দেখা যায় । ইউরোপীয় ইউনিয়ন জানুয়ারি 2020-তে একটি ইন্টেরিম অ্যাপিল আর্বিট্রেশন অ্যারেঞ্জমেন্ট তৈরির প্রক্রিয়া শুরু করেছে, যাতে আমেরিকা তার আপত্তি প্রত্যাহার করা পর্যন্ত এবি-র কাজকর্ম চলতে থাকে । ভারতের বেশিরভাগ বাণিজ্য পার্টনার, যেমন ইইউ, চিন, দক্ষিণ কোরিয়া, ব্রাজিল, অস্ট্রেলিয়া, নিউজিল্যান্ড এবং সিঙ্গাপুর এই অন্তর্বর্তী ব্যবস্থায় অংশ নিয়েছে , ভারত নেয়নি । এর ফলে ভারত ও অন্তর্বর্তী ব্যবস্থায় WTO সদস্যদের মধ্যে বাণিজ্য নিয়ে বিরোধ তৈরি হবে, যদি না এবি আবার সক্রিয় হয় ।

ডব্লিউটিও-র ডিসপিউট সেটলমেন্ট আন্ডারস্ট্যান্ডিংয়ের আওতায় এবি-র কার্যপদ্ধতির দেখাশোনা করার ভূমিকা রয়েছে DG-র । পরের DG-র ব্যাপারে সহমত হওয়ার আগে ভারতের অগ্রাধিকার থাকা উচিত, আমেরিকার আপত্তি মিটিয়ে এবি-র বিশুদ্ধতা এবং কার্যকারিতাকে পুনরুদ্ধার করায় । 2001 সালের ডিসেম্বরে চিনের উত্থানের পর, পরের DG-র ব্যাপারে একমত হওয়ার প্রক্রিয়া বড়সড় পরিবর্তনের মধ্যে দিয়ে গেছে। ডব্লিউটিও-র চলতি দর কষাকষি প্রক্রিয়ায় যুক্ত সদস্যদের বাণিজ্যিক স্বার্থের আন্তঃক্রিয়াও সার্বিক গ্রিন রুম প্রক্রিয়াকে প্রভাবিত করবে । WTO সদস্যরা ভারতের ধাপে ধাপে অর্থনৈতিক সংস্কারকে সমর্থন করছে 1995 সাল থেকেই, বিশেষ করে আর্থিক, টেলিকম ও বাণিজ্যের ক্ষেত্রে। এইসব ক্ষেত্রই 2024 সালের মধ্যে পাঁচ ট্রিলিয়ন ডলার অর্থনীতিতে পৌঁছতে ভারতের স্বপ্নের ভিত্তিস্থাপন করেছে । বিশ্বব্যাঙ্কের তথ্য অনুযায়ী, 2018 সালে ভারতের DGP-র 40 শতাংশ আসে আন্তর্জাতিক বাণিজ্য থেকে । যুক্তিপূর্ণভাবে, ডব্লিউটিও-র পরের DG-র নির্বাচন প্রক্রিয়ায় ভারতকে আরও দৃশ্যমান এবং সক্রিয়ভাবে অংশ নিতে হবে । এত গঠনমূলকভাবে অংশ নেওয়ার মধ্যে দিয়ে ‘সংশোধিত বহুপাক্ষিকতায়’ পৌঁছতে তার দক্ষতা প্রমাণ হবে ।

2020-র মে মাসের মাঝামাঝি, ওয়ার্ল্ড ট্রেড সেন্টারের (WTO) ডিরেক্টর জেনেরাল, ব্রাজিলের রবার্তো আজেভেদো হঠাৎই অগাস্টের শেষের মধ্যে পদ ছাড়ার ইচ্ছার কথা ঘোষণা করেন ৷ তখন তাঁর দ্বিতীয় দফার চার বছরের কার্যকালের একবছর বাকি ছিল । আন্তর্জাতিক সম্পর্কের ক্ষেত্রে বড়সড় বিঘ্নের সময়ে, নতুন DG বেছে নেওয়ার ক্ষেত্রে WTO-র সামনে চ্যালেঞ্জ এবং সুযোগ দুই-ই রয়েছে ।

WTO সর্বসম্মতির ভিত্তিতে এই সিদ্ধান্ত নেওয়া হয় । DG-ই দৃশ্যে আড়ালে থেকে সদস্যদের ঐকমত্যের লক্ষ্যে কাজ করতে থাকেন, বহু পরিচিত ‘গ্রিন রুম’ প্রক্রিয়ার পৌরহিত্য করেন । এই প্রক্রিয়া বিবদমান ইস্যুগুলির ক্ষেত্রে ঐকমত্যের লক্ষ্যে, প্রতিনিধি দলের নির্বাচিত প্রধানদের একজোট করে, যার মধ্যে WTO-র সদস্যদের সবকটি প্রধান গোষ্ঠী থাকে । প্রায় চল্লিশটি প্রতিনিধি দল সাধারণভাবে এই প্রক্রিয়ায় যুক্ত থাকে, যার ফলে প্রায়ই জটিল সমস্যাগুলি সামলাতে নতুন পথ খুঁজে পাওয়া যায় । এইসব ঘরোয়া আলোচনায় যখন প্রতিনিধি দলের নেতৃত্বে থাকে বাণিজ্যমন্ত্রীরা WTO-র রাজনৈতিকভাবে গুরুত্বপূর্ণ ইস্যুগুলি নিয়ে আলোচনা করেন, তখন ডিরেক্টর জেনারেলকে প্রায়ই ডাকা হয় বিভিন্ন দেশের তোলা টেকনিক্যাল বিষয়গুলি সমাধানের জন্য । গ্রিন রুম প্রক্রিয়ার মুখ্য কাজটাই হল, ‘সবকিছুতে সম্মতির আগে কোনওকিছুতেই সম্মতি নয় ।’

বাণিজ্যে আলাপ-আলোচনা নিয়ে দোহা ডেভেলপমেন্ট রাউন্ডে বর্তমান অচলাবস্থা তৈরির আগে পর্যন্ত, গ্রিন রুম প্রক্রিয়া সাধারণভাবে সেই ফলই দিয়েছে, যা WTO-র মন্ত্রী সম্মেলনের সমর্থন পেয়েছে । যেমন, সিঙ্গাপুরে প্রথম WTO মন্ত্রী সম্মেলনে বিনিয়োগ এবং প্রতিযোগিতার বিষয় নিয়ে আলোচনা ততক্ষণ পর্যন্ত, যতক্ষণ না উরুগুয়ে রাউন্ডে ভিত্তিমূলক WTO চুক্তিগুলো সম্পন্ন না হয় । একইরকমভাবে, বাণিজ্য শুরুর নিয়ম নিয়ে WTO-র একমত হওয়াটা হল, 1996 থেকে 2003 সালের মধ্যে মন্ত্রী সম্মেলনে হওয়া দীর্ঘ ঘরোয়া আলোচনার ফল । ভারত সবসময়ই গ্রিন রুম প্রক্রিয়ার সক্রিয় সদস্য । WTO সাধারণ পরিষদ, জানুয়ারি 2003-এ গৃহীত হওয়া পদ্ধতি অনুসারে দ্রুত পদক্ষেপ নেয়, যাতে সদস্য দেশগুলোর থেকে DG পদের মনোনয়ন বাছতে ৮ জুন থেকে ৮ জুলাই পর্যন্ত সময় পাওয়া যায়। 9 জুলাইয়ের মধ্যে 8টি মনোনয়ন জমা পড়েছে, যার মধ্যে রয়েছেন তিন মহিলা প্রার্থী (কেনিয়া, নাইজেরিয়া ও দক্ষিণ কোরিয়া)। মিশর, মেক্সিকো, মলডোভা, সৌদি আরব এবং ব্রিটেন তাদের প্রার্থী দিয়েছে ।15 থেকে 17জুলাইয়ের মধ্যে, WTO সাধারণ পরিষদ আট প্রার্থীর প্রত্যেকের সঙ্গে বৈঠক করবে, যাতে পরের ডিজিকে নিয়ে একটা সর্বসম্মত সিদ্ধান্তে পৌঁছনোর চেষ্টা করা যায়। ব্যাখ্যাতীতভাবে ভারত কোনও প্রার্থী দেয়নি, যদিও তার সামনে বেনজির সুযোগ ছিল WTO সচিবালয়ের নেতৃত্বে থেকে বহুপাক্ষিকতার সংস্কারসাধনের ।

পরের ডিজির ব্যাপারে ঐকমত্যে পৌঁছনো নির্ভর করবে, সদস্যরা বর্তমান আন্তর্জাতিক পরিস্থিতিতে সংস্থার কাছ থেকে কোন পদক্ষেপ আশা করেন, তার ওপর । এটা নির্ভর করবে WTO-তে থাকা প্রধান বাণিজ্যকারী দেশগুলোর সংকীর্ণ জাতীয় স্বার্থের ওপরেও । WTO-তে থাকার তাৎপর্যপব নির্ভর করে যে এর ১৬৪ সদস্যই আটানব্বই শতাংশ আন্তর্জাতিক বাণিজ্য করে থাকে। WTO তার সদস্যদের বাণিজ্যনীতির ক্ষেত্রে মূলত দুটি বিষয় তুলে ধরতে চালিত করে । এগুলি হল ‘মোস্ট ফেভার্ড নেশন ট্রিটমেন্ট’ এবং ‘ন্যাশনাল ট্রিটমেন্ট’, যার আওতায় WTO সদস্যরা তাদের বাণিজ্য সহযোগীদের মধ্যে বৈষম্য করবে না এবং তাদের বাজারে স্থানীয় এবং আমদানি করা পণ্য ও পরিষেবাকে একই গুরুত্ব দিতে হবে । ভারতের মতো উন্নয়নশীল দেশের পক্ষে, যখন বড় বাজারগুলোতে সংরক্ষণবাদী মনোভাব ক্রমশ বাড়ছে, তখন পরের DG-র এই দুই নীতির প্রতি দায়বদ্ধতা গুরুত্বপূর্ণ হয়ে দাঁড়াবে । ডব্লিউটিও-র পরের DG-র ব্যাপারে একমত হওয়ার ক্ষেত্রে, বাণিজ্যকারী বড় দেশগুলির হিসেব-নিকেশে প্রাধান্য পাবে দুটি ইস্যু । একটি হল, WTO-র দোহা রাউন্ডে বাজার ধরা নিয়ে যে দরকষাকষি হয়েছে, পরের ডিজি তার সিদ্ধান্তগ্রহণের সূত্রপাত করতে পারেন কিনা, যা নিয়ে এক দশকেরও বেশি সময় ধরে অচলাবস্থা চলছে। এর মধ্যে রয়েছে কৃষিক্ষেত্রের বাজারও, যেখানে ভারতের গুরুত্বপূর্ণ স্বার্থ রয়েছে তা খাদ্য নিরাপত্তা এবং কর্মসংস্থানের দিক থেকে।

আরেকটি হল, WTO-র বিবাদ মেটানোর প্রক্রিয়া (DSM) পুনরায় চালু করতে ডিজির সক্ষমতা। “রাজনৈতিক নমনীয়তা এবং আইনি বিশুদ্ধতা”র মিশ্রনকে কাজে লাগিয়ে, 1995 সাল থেকে এই প্রক্রিয়ার মাধ্যমেই 500টিরও বেশি আন্তর্জাতিক বাণিজ্য-বিবাদ মেটানো গেছে। এই প্রক্রিয়ার অন্যতম সক্রিয় ব্যবহারকারীদের মধ্যে ভারতও রয়েছে, যে দ্বিপাক্ষিক চাপের সামনে নতিস্বীকার না করেই আমেরিকা ও ইউরোপীয় ইউনিয়নের মতো বড় অর্থনৈতিক শক্তিগুলোর সঙ্গে বাণিজ্য বিবাদে সদর্থক ফল পেয়েছে । দুই ধাপের DSM প্রক্রিয়ার স্বাভাবিক কাজকর্ম আটকে রেখেছে অ্যামেরিকা । অ্যাপেলেট বডিতে (AB) নতুন বিচারক নিয়োগে নিজের সম্মতি আটকে রেখে, অ্যামেরিকা বিচারকের অভাব নিশ্চিত করেছে । এর ফলে AB-র সিদ্ধান্তের ক্ষেত্রে যা বাধ্যতামূলক, সেই তিন বিচারকের বেঞ্চ থাকছে না । নিজের এই অবস্থানের পিছনে আমেরিকা যে দু'টি কারণ দেখাচ্ছে, তা হল কয়েকজন এবি বিচারকের ‘সক্রিয়তা’, যার জেরে তাঁদের রায় ডব্লিউটিও চুক্তিকে অতিক্রম করে গেছে, এবং কয়েকজন বিচারকের সুবিধার্থে AB-র কার্যপদ্ধতির অনুচিত ব্যবহার । এর মধ্যেই আমেরিকা তার WTO পূর্ববর্তী অভ্যন্তরীণ আইন, যেমন 1974 সালের বাণিজ্য আইনের 301 নম্বর ধারায় ফিরতে শুরু করেছে, যাতে ভারত সহ WTO সদস্যদের বিরুদ্ধে একপাক্ষিকভাবে বাণিজ্য বিবাদগুলিকে দেখা যায় । ইউরোপীয় ইউনিয়ন জানুয়ারি 2020-তে একটি ইন্টেরিম অ্যাপিল আর্বিট্রেশন অ্যারেঞ্জমেন্ট তৈরির প্রক্রিয়া শুরু করেছে, যাতে আমেরিকা তার আপত্তি প্রত্যাহার করা পর্যন্ত এবি-র কাজকর্ম চলতে থাকে । ভারতের বেশিরভাগ বাণিজ্য পার্টনার, যেমন ইইউ, চিন, দক্ষিণ কোরিয়া, ব্রাজিল, অস্ট্রেলিয়া, নিউজিল্যান্ড এবং সিঙ্গাপুর এই অন্তর্বর্তী ব্যবস্থায় অংশ নিয়েছে , ভারত নেয়নি । এর ফলে ভারত ও অন্তর্বর্তী ব্যবস্থায় WTO সদস্যদের মধ্যে বাণিজ্য নিয়ে বিরোধ তৈরি হবে, যদি না এবি আবার সক্রিয় হয় ।

ডব্লিউটিও-র ডিসপিউট সেটলমেন্ট আন্ডারস্ট্যান্ডিংয়ের আওতায় এবি-র কার্যপদ্ধতির দেখাশোনা করার ভূমিকা রয়েছে DG-র । পরের DG-র ব্যাপারে সহমত হওয়ার আগে ভারতের অগ্রাধিকার থাকা উচিত, আমেরিকার আপত্তি মিটিয়ে এবি-র বিশুদ্ধতা এবং কার্যকারিতাকে পুনরুদ্ধার করায় । 2001 সালের ডিসেম্বরে চিনের উত্থানের পর, পরের DG-র ব্যাপারে একমত হওয়ার প্রক্রিয়া বড়সড় পরিবর্তনের মধ্যে দিয়ে গেছে। ডব্লিউটিও-র চলতি দর কষাকষি প্রক্রিয়ায় যুক্ত সদস্যদের বাণিজ্যিক স্বার্থের আন্তঃক্রিয়াও সার্বিক গ্রিন রুম প্রক্রিয়াকে প্রভাবিত করবে । WTO সদস্যরা ভারতের ধাপে ধাপে অর্থনৈতিক সংস্কারকে সমর্থন করছে 1995 সাল থেকেই, বিশেষ করে আর্থিক, টেলিকম ও বাণিজ্যের ক্ষেত্রে। এইসব ক্ষেত্রই 2024 সালের মধ্যে পাঁচ ট্রিলিয়ন ডলার অর্থনীতিতে পৌঁছতে ভারতের স্বপ্নের ভিত্তিস্থাপন করেছে । বিশ্বব্যাঙ্কের তথ্য অনুযায়ী, 2018 সালে ভারতের DGP-র 40 শতাংশ আসে আন্তর্জাতিক বাণিজ্য থেকে । যুক্তিপূর্ণভাবে, ডব্লিউটিও-র পরের DG-র নির্বাচন প্রক্রিয়ায় ভারতকে আরও দৃশ্যমান এবং সক্রিয়ভাবে অংশ নিতে হবে । এত গঠনমূলকভাবে অংশ নেওয়ার মধ্যে দিয়ে ‘সংশোধিত বহুপাক্ষিকতায়’ পৌঁছতে তার দক্ষতা প্রমাণ হবে ।

ETV Bharat Logo

Copyright © 2025 Ushodaya Enterprises Pvt. Ltd., All Rights Reserved.