চোখ আমাদের শরীরের অবিচ্ছেদ্য অঙ্গ, যা আমাদের দেখতে, প্রকৃতিকে উপভোগ করতে এবং চারপাশের সুন্দর রঙগুলি দেখে মুগ্ধ হতে সাহায্য করে । কিন্তু কিছু দুর্ভাগা মানুষ চোখে দেখতে পান না । এর পিছনে থাকতে পারে জন্মগত কোনও ত্রুটি, অথবা জীবনের কোনও দুর্ভাগ্যজনক ঘটনা । তাই আপনাদের সামান্য দানই এই মানুষগুলোর কাছে আশীর্বাদ হয়ে উঠতে পারে । প্রতিবছর 25 অগাস্ট থেকে 8 সেপ্টেম্বর জাতীয় চক্ষুদান পক্ষ পালন করা হয়, যাতে চক্ষুদানের ব্যাপারে সচেতনতা গড়ে ওঠে এবং মানুষ মৃত্যুর পর চক্ষুদান করতে অনুপ্রাণিত হন । বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার মতে, ছানি ও গ্লুকোমার পর কর্নিয়াল অসুখই (চোখের সামনের দিককে ঢেকে রাখা কর্নিয়া নামক টিস্যুর ক্ষতি) দৃষ্টিশক্তি হারানো, অন্ধত্বের প্রধান কারণ ।
ভারতের ন্যাশনাল হেলথ পোর্টাল (NHP)-এর মতে, বিভিন্ন কারণ রয়েছে যেজন্য মানুষ চক্ষুদানের জন্য এগিয়ে আসেন না । এর একটি হল সচেতনতার অভাব। অপরগুলি হল হাসপাতাল ও ইনস্টিটিউটগুলোতে পর্যাপ্ত সুযোগসুবিধার অভাব প্রশিক্ষিতদের মধ্যে তাগিদের অনুপস্থিতি
সামাজিক ও ধর্মীয় মিথ এমনই কয়েকটি মিথ ভাঙা হল নিচে:
আমার দৃষ্টিশক্তি দুর্বল, তাই চক্ষুদান করতে পারব না
দুর্বল দৃষ্টিশক্তি চক্ষুদানের প্রক্রিয়ায় কোনও বাধা হয়ে দাঁড়াবে না । যাঁরা চোখে ভাল দেখতে না পাওয়ার জন্য চশমা বা লেন্স পরেন, এমনকী যাঁদের চোখে অপারেশন হয়েছে, তাঁরাও চক্ষুদান করতে পারেন। যে কোনও বয়স, ব্লাডগ্রুপ, লিঙ্গের ক্ষেত্রেই এটা সম্ভব।
পরের জন্মে আমি অন্ধ হয়ে জন্মাব
না। এটা সম্পূর্ণ অন্ধবিশ্বাস। চোখ বা অন্য কোনও অঙ্গদান একটা মহান কাজ। পুনর্জন্মের ক্ষেত্রে আত্মা নতুন শরীরে পৌঁছায়, এধরনের কোনও শারীরিক খুঁত নয়।
চক্ষুদান করলে আমার মুখ বিকৃত হয়ে যাবে
এমন হবে না। সাধারণভাবে শুধু কর্নিয়াই নেওয়া হয়, পুরো চোখ নয়। নির্দিষ্ট কয়েকটি ক্ষেত্রে কৃত্রিম চোখ বসিয়ে দেওয়া হতে পারে। তাই চোখের জায়গায় কোনও গহ্বর থাকবে না।
আমি নিজে অঙ্গীকার না নিলে চক্ষুদান করা যাবে না
ভুল। যদি কেউ জীবদ্দশায় চক্ষুদানের অঙ্গীকার নাও করেন, সেক্ষেত্রে পরিবারের কোনও সদস্য চক্ষুদানের ব্যাপারে এগিয়ে আসতে পারেন।
চিকিৎসকরা আমার জীবনরক্ষা করতে কঠিন পরিশ্রম করবেন না
যাই হোক না কেন, ডাক্তারা যে কোনও মূল্যে একজন রোগীর জীবন বাঁচাতে প্রতিশ্রুতিবদ্ধ। একজন ব্যক্তির মৃত্যুর পরেই একমাত্র চক্ষুদান করা যেতে পারে।
পরিবারের কাজ থেকে টাকা নেওয়া হবে
এটা আরেকটা ভুল ধারণা। মৃত ব্যক্তির চক্ষুদানের জন্য কোনও টাকা নেওয়া হয় না। এটা একটা সেবামূলক কাজ।
আমি চক্ষুদান করলে ডাক্তাররা টাকা পাবেন
না। কোনও ব্যক্তির চোখ বা অন্য কোনও অঙ্গ কেনাবেচা করা শাস্তিযোগ্য অপরাধ। অঙ্গদানের প্রক্রিয়ায় কোনও টাকার খেলা থাকে না।
চক্ষুদান একটা দীর্ঘ প্রক্রিয়া
না। ব্যক্তির মৃত্যুর পর সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষকে জানানো হলে, প্রক্রিয়া শেষ হতে বড়জোড় ১৫-২০ মিনিট লাগে।
যখন আপনি পৃথিবীকে আর দেখতে পাবেন না, অন্য কেউ তা দেখতে পেতে পারে। তাই এটা একটা মহান কাজ যা আপনার মৃত্যুর পর আপনি করতে পারেন ৷ এবং প্রত্যেককেই একাজ করতে অনুপ্রাণিত করা উচিত।