কলকাতা, ২৪ মার্চ : সরগরম পশ্চিমবঙ্গ বিধানসভা নির্বাচন, মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের বিরুদ্ধে আগ্রাসী প্রচারে নেমেছে বিজেপি । মমতার তৃতীয়বার জয় তাঁকে জাতীয় স্তরে আরও বৃহত্তর ভূমিকা দিতে পারে ।
জাতীয় স্তরে বিজেপি বিরোধী জোট তৈরিতে মমতার তৎপরতা কোনও গোপন বিষয় নয়, এবং সেই ভূমিকার দাবিদার হিসেবে তিনি লাগাতার নরেন্দ্র মোদি ও তাঁর নীতিগুলোকে আক্রমণ করে আসছেন – তা সে ২০১৬ সালের বিতর্কিত নোটবন্দি হোক, জিএসটি হোক, জিএসটি বাবদ পাওয়া রাজস্বের ভাগাভাগি হোক, আইএএস ও আইপিএসদের ডেপুটেশন হোক, অথবা কেন্দ্রীয় প্রকল্পসমূহ ।
জাতীয় স্তরে তৃণমূল নেত্রীর বৃহত্তর ভূমিকা নেওয়ার স্বপ্নের পিছনে রয়েছে, বিজেপির একমাত্র বিকল্প হিসেবে দেশজুড়ে কংগ্রেসের সঙ্কুচিত হয়ে যাওয়া ।
কংগ্রেস পশ্চিমবঙ্গে ভোটে লড়ছে তাদের দীর্ঘদিনের প্রতিপক্ষ বামেদের সঙ্গে হাত মিলিয়ে । এতে শাসক-বিরোধী দু'পক্ষই উপলব্ধি করছে যে তারা শুধু বিজেপি-বিরোধী ভোটটাই ভাগাভাগি করে দিচ্ছে ।
বিগত দিনগুলোতে হিন্দুত্ব ও জাতীয়তাবাদের তাস খেলে বিজেপি নিশ্চিতভাবেই লাভবান হয়েছে । তার প্রমাণ হিসেবে বলা যায়, ২০১৯ সালে রাজ্যের ৪২টি আসনের মধ্যে ১৯টিতে বিজেপির জয়লাভ ।
আরও পড়ুন :বাংলা জিতেই দিল্লিতে ঝাঁপাব, হুঙ্কার মমতার
তখন থেকেই নরেন্দ্র মোদি এবং কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহের নেতৃত্বে বিজেপির আগ্রাসী প্রচারে হিন্দু দেবতা রামের নামে স্লোগান এবং রাজ্যে দু্র্নীতি এবং দুর্বল আইন-শৃঙ্খলা পরিস্থিতিকে হাতিয়ার করা হচ্ছে ।
মমতার ‘স্থানীয় বনাম বহিরাগত’ প্রচারে তাঁকে বাংলার ঘরের মেয়ে হিসেবে তুলে ধরা হচ্ছে । এর লক্ষ্য হল সেই বিজেপির মোকাবিলা করা, যারা বিগত দিনগুলোতে তৃণমূলের বহু নেতাকে দলে টেনে পূর্বের এই রাজ্যে এক শক্তিশালী প্রতিদ্বন্দ্বী হিসেবে উঠে এসেছে ।
রাস্তায় নেমে লড়াই করার জন্য পরিচিত মমতা সর্বশক্তি দিয়ে বিজেপির সঙ্গে সংঘাতে নেমেছেন এবং গেরুয়া শিবিরের প্রচারকে খণ্ডন করতে হুইলচেয়ারে বসেই রাজ্যজুড়ে প্রচারের সিদ্ধান্ত নিয়েছেন । মুখ্যমন্ত্রী দাবি করছেন, যে নির্বাচন কমিশনের নজরদারির মধ্যেই তাঁর ওপর হামলা চালানো হয় । কমিশন এবং বিজেপি দু’পক্ষই এই অভিযোগ নাকচ করেছে ।
কিন্তু পায়ে ব্যান্ডেজ বাঁধা মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের ছবি তাঁর অনুগামীদের কাছে প্রতিরোধের জোরালো ছবি হিসেবে উঠে এসেছে, যা তৃণমূলের পক্ষে অতিরিক্ত কয়েক শতাংশ ভোট টেনে আনতে পারে ।
আরও পড়ুন : বিজেপি হাইলোডেড ভাইরাস : মমতা
আগ্রাসী প্রচার সত্ত্বেও, পশ্চিমবঙ্গে বিজেপির শক্তিশালী সংগঠনের অভাব রয়েছে, এবং নেতাদের অভাব ঢাকতে বড় সংখ্যায় তৃণমূল নেতাদের দলে টানার মধ্যে দিয়ে তারই ইঙ্গিত মিলছে ।
যদি মমতা তৃতীয়বারের জন্য মুখ্যমন্ত্রী হন, তাহলে প্রমাণ হবে যে তিনি বিজেপির বিজয়রথ থামিয়ে দিতে সক্ষম, সুতরাং তিনি জাতীয় স্তরে বিরোধী ফ্রন্টের নেতৃত্ব দেওয়ার যোগ্য ।
কংগ্রেসের শীর্ষ নেতৃত্বের পছন্দ নাও হতে পারে, কিন্তু মমতা এর মধ্যেই এনসিপি প্রধান শরদ পওয়ার, দিল্লির মুখ্যমন্ত্রী অরবিন্দ কেজরিওয়াল এবং ডিএমকে প্রধান এমকে স্টালিনের মতো বিরোধী নেতাদের পাশে পেয়ে গেছেন ।