অমরাবতী, 19 অক্টোবর: মার্গদর্শী চিট ফান্ড প্রাইভেট লিমিটেড (এমসিএফপিএল)-এর চেয়ারম্যান রামোজি রাও এবং ম্যানেজিং ডিরেক্টর শৈলজা কিরণের বিরুদ্ধে সিআইডি তদন্তের এক্তিয়ার নিয়ে কড়া আপত্তি জানাল অন্ধ্রপ্রদেশ হাইকোর্ট ৷ আদালত সিআইডি তদন্তের উপর আট সপ্তাহের স্থগিতাদেশও দিয়েছে ৷ জনৈক জি ইউরি রেড্ডি শেয়ার হস্তান্তর নিয়ে জালিয়াতির অভিযোগ দায়ের করেন ৷ সেই নিয়েই তদন্ত শুরু করে অন্ধ্রপ্রদেশ সিআইডি ৷
বুধবার আদালত এই নিয়ে সিআইডি ও অভিযোগকারী রেড্ডিকে নোটিশ দিয়েছে ৷ আগামী 6 ডিসেম্বর এই মামলার পরবর্তী শুনানি ৷ তার আগে সিআইডি ও অভিযোগকারীকে এই নিয়ে জবাব দিতে বলেছে আদালত ৷ শুনানিতে আদালত সিআইডি তদন্ত নিয়ে একাধিক প্রশ্ন তোলে ৷ সিআইডির এক্তিয়ার নিয়েও কড়া আপত্তি জানায় আদালত ৷
আদালতের প্রশ্ন, অভিযোগকারী যখন বলছেন যে ঘটনাটি হায়দরাবাদে ঘটেছে, তাহলে এই অভিযোগ নেওয়ার এক্তিয়ার কি আছে অন্ধ্রপ্রদেশের সিআইডির ? ইউরি রেড্ডি সিআইডির কাছে অভিযোগে জানিয়েছেন যে তিনি শেয়ার হস্তান্তরে স্বাক্ষর করেছিলেন ।
হাইকোর্ট অন্ধ্রপ্রদেশ সিআইডি-কে প্রশ্ন করে, "উদাহরণস্বরূপ, যদি হায়দরাবাদে গয়না কেনা হয় এবং সেখানে চুরি হয়ে যায়.. তাহলে বিজয়ওয়াড়ায় মামলা করা কীভাবে বৈধ যে বিজয়ওয়াড়ায় রোজগার করা অর্থ দিয়ে গয়না কেনা হয়েছে ?"
এই বিষয়গুলি বিবেচনা করে হাইকোর্টের বিচারপতি বিভিএলএন চক্রবর্তী বুধবার অন্তর্বর্তী নির্দেশে জানান যে আগামী আট সপ্তাহের জন্য সিআইডি এই নিয়ে কোনও তদন্ত করতে পারবে না ৷
গত 13 অক্টোবর মঙ্গলাগিরি সিআইডি পুলিশ ইউরি রেড্ডির দেওয়া অভিযোগের ভিত্তিতে মার্গদর্শী চিট ফান্ডের চেয়ারম্যান রামোজি রাও এবং এমডি শৈলজা কিরণের বিরুদ্ধে একটি মামলা নথিভুক্ত করে ৷ সেখানে ইউরি রেড্ডি অভিযোগ করেন, সই জাল করে 288টি শেয়ার তাঁর বাবা জি জগন্নাথ রেড্ডির (জিজে রেড্ডি) থেকে মার্গদর্শীর এমডির কাছে স্থানান্তর করা হয় ৷
তাঁদের বিরুদ্ধে দায়ের করা মামলা খারিজ করতে হাইকোর্টে আবেদন করেন তাঁরা দু’জনই । সিনিয়র আইনজীবী সিদ্ধার্থ লুথরা, নাগামুথু এবং পোসানি ভেঙ্কটেশ্বরলু আবেদনকারীদের পক্ষে আদালতে উপস্থিত ছিলেন ।
যে আইনজীবীরা মার্গদর্শী চিট ফান্ডের হয়ে উপস্থিত ছিলেন, তাঁরা প্রশ্ন করেন, "ইউরি রেড্ডির শেয়ার কেনার জন্য, মার্গদর্শী কোম্পানি তাঁকে একটি চেকের আকারে অর্থ প্রদান করেছিল । অভিযোগকারী সেই শেয়ারগুলি মার্গদর্শী কোম্পানিতে স্থানান্তরের জন্য স্বাক্ষর করেছিলেন । ইউরি রেড্ডি রেজিস্ট্রার অফ কোম্পানিজের কাছে অভিযোগ করেছিলেন যে তিনি চেকটি নগদ করেননি এবং দুর্ঘটনাক্রমে একটি ফাঁকা ফর্মে স্বাক্ষর করেছেন । এটি এখনও মুলতুবি রয়েছে । ছয় বছর পর, তিনি হঠাৎ করে অন্ধ্রপ্রদেশ সিআইডি-তে একটি অভিযোগ দায়ের করেন । হুমকির মুখে তিনি স্বাক্ষর করেছিলেন, এমন একটি নতুন অভিযোগ সামনে আনা হয় । এর আগে তাঁদের শেয়ার কেনার জন্য আবেদনকারীকে (রামোজি রাও) ধন্যবাদ জানিয়ে অভিযোগকারী 15 জুন 2016-তে একটি ই-মেইল পাঠিয়েছিলেন । মার্গদর্শী কোম্পানি হায়দরাবাদে নিবন্ধিত । সেখানে শেয়ার হস্তান্তর হয়েছিল । অভিযোগকারীর অভিযোগ অনুযায়ী ঘটনাটি ঘটেছে হায়দরাবাদে । এই পরিপ্রেক্ষিতে সিআইডির এই মামলা নথিভুক্ত করার এবং তদন্ত করার কোনও এক্তিয়ার নেই ৷"
আইনজীবীরা আরও উল্লেখ করেন, "যদি সিআইডি একটি মামলা নথিভুক্ত করে, তবে এটি তেলঙ্গানায় স্থানান্তর করা উচিত ৷ কারণ, এটি তাদের আওতার মধ্যে নয় । শেয়ার হস্তান্তরের সঙ্গে মার্গদর্শীর এমডি শৈলজা কিরণের কোনও সম্পর্ক নেই । প্রক্রিয়াটি হওয়ার সময় তিনি সেখানে ছিলেন না । ইউরি রেড্ডির থেকে শেয়ার কোম্পানিতে স্থানান্তর হওয়ার পর, আইন মেনে শেয়ারগুলি শৈলজা কিরণের নামে স্থানান্তরিত করা হয়েছিল । এফআইআরেও তাঁর বিরুদ্ধে কোনও অভিযোগ নেই । অভিযোগ দায়ের করতে চরম বিলম্বের কারণ অভিযোগকারী উল্লেখ করেননি ।"
তাঁরা আদালতের কাছে আবেদন করেন, এসব বিষয় বিবেচনা করে সিআইডির দায়ের করা মামলার তদন্ত বন্ধ করতে হবে । সিআইডির পক্ষে কথা বলতে গিয়ে, শিবকল্পনা রেড্ডি জানান যে আবেদনকারীরা অভিযোগ নথিভুক্ত হওয়ার তিনদিনের মধ্যে এফআইআর বাতিল করার জন্য হাইকোর্টের কাছে গিয়েছিলেন ।
তিনি আদালতকে জানান, এই পর্যায়ে কোনও অন্তর্বর্তী আদেশ দেওয়া উচিত নয় । তিনি জানান, সুপ্রিম কোর্ট রায় দিয়েছে যে আদালত যান্ত্রিকভাবে অন্তর্বর্তীকালীন আদেশ জারি করতে পারে না । পালটা আবেদন করার জন্যও সময় দিতে বলেন তিনি ৷ তিনি বলেন, "যদি সিআইডি সিদ্ধান্ত নেয় যে মামলাটি তাদের এক্তিয়ারে আসে না, তবে এটি তেলঙ্গানায় স্থানান্তর করা হবে ৷"
বিচারপতি চক্রবর্তী জানান যে সুপ্রিম কোর্টের দেওয়া রায় সম্পর্কে আদালত অবগত । শুনানির পরে সিআইডি দ্বারা নথিভুক্ত এফআইআর-এর উপর একটি অন্তর্বর্তী নির্দেশ দেওয়া হয় এবং তদন্ত-সহ পরবর্তী সমস্ত প্রক্রিয়া আট সপ্তাহের জন্য স্থগিত করা হয় ।
আরও পড়ুন: ‘সমস্ত মিথ্যে’, ইউরি রেড্ডির অভিযোগ উড়িয়ে দিল রামোজি গ্রুপ