কলকাতা, 2 অগস্ট : ভারতীয় জীবন বিমা নিগম-সহ (Life Insurance Corporation of India) একাধিক রাষ্ট্রায়ত্ত বিমা সংস্থার বেসরকারিকরণের যে সিদ্ধান্ত ভারত সরকার নিয়েছে, তা ‘‘প্য়ান্ডোরার বাক্স’’ খুলে দিতে পারে ৷ অনিশ্চিত হয়ে পড়তে পারে অসংখ্য ভারতীয়র ভবিষ্যৎ ৷ এমনই আশঙ্কা প্রকাশ করে কেন্দ্রীয় অর্থমন্ত্রী নির্মলা সীতারমনকে (Nirmala Sitharaman) চিঠি পাঠালেন পশ্চিমবঙ্গের অর্থমন্ত্রী অমিত মিত্র (Amit Mitra) ৷ দু’পাতার চিঠির ছত্রে ছত্রে কেন্দ্রীয় নীতির সমালোচনা করেছেন প্রবীণ এই অর্থনীতিবিদ ৷
চিঠিতে কেন্দ্রীয় অর্থমন্ত্রীকে উদ্দেশ্য করে অমিত লিখেছেন, রাষ্ট্রায়ত্ত বিমা সংস্থাগুলি ভারতীয় অর্থনীতির অন্যতম স্তম্ভ ৷ আমজনতা এই সংস্থাগুলির উপর ভরসা করেন ৷ এগুলি তাঁদের অন্যতম অবলম্বন ৷ কিন্তু, এই সংস্থাগুলিকেই যদি বেসরকারি হাতে তুলে দেওয়া হয়, তবে তা উপভোক্তাদের ভবিষ্যৎ অনিশ্চিত করে দেবে ৷ এতে মানুষ ক্ষুব্ধ ও হতাশ হবেন ৷
আরও পড়ুন : Bank Privatisation : চলতি অর্থবর্ষেই বেসরকারিকরণ হতে পারে 3 রাষ্ট্রায়ত্ত ব্যাঙ্ক
অমিত জানিয়েছেন, তাঁর কাছে যে খবর রয়েছে, সেই মোতাবেক সবার আগে ইউনাইটেড ইন্ডিয়া ইনসিওরেন্স কোম্পানির মালিকানা সবার আগে বেসরকারি হাতে তুলে দেওয়া হবে ৷ এছাড়া, সাধারণ বিমা ব্য়বসার ক্ষেত্রেও বেশ কিছু সংশোধন আনা হচ্ছে ৷ কেন্দ্রীয় মন্ত্রিসভা ইতিমধ্যেই বিষয়টি নিয়ে অনেকটা এগিয়েছে ৷ সরকারের এই পদক্ষেপে সিঁদুরে মেঘ দেখছেন অমিত ৷ নির্মলাকে পাঠানো চিঠিতে তিনি লিখেছেন, ইউনাইটেড ইন্ডিয়া ইনসিওরেন্স কোম্পানির হাতে খুচরো ব্যবসায়ীদের প্রায় 1.74 কোটি বিমা রয়েছে ৷ এই বিভাগে যাঁরা বিমা করিয়েছেন, তাঁরা একেবারেই নিম্নবিত্ত শ্রেণির ৷ তাছাড়া, এর ফলে কাজ পেয়েছেন 13 হাজার 961 জন ৷ এই বিভাগে কিস্তির যে টাকা সংগ্রহ করা হয়, তার গড় পরিমাণ 17 হাজার 515 কোটি ৷ যাঁরা এই টাকা দেন, তাঁরা একেবারেই সমাজের খেটে খাওয়া মানুষ ৷ কাজেই এই বিমা সংস্থা বেসরকারি হাতে চলে গেলে এই সমস্ত মানুষ আতান্তরে পড়ে যাবেন ৷
এছাড়াও, অমিতের যুক্তি, ইউনাইটেড ইন্ডিয়া ইনসিওরেন্স কোম্পানির হাতে 11 হাজার 396 কোটি টাকার সরকারি বন্ড ও সিকিউরিটি রয়েছে ৷ সংস্থার এই বিনিয়োগ সরকারেরও অন্যতম আর্থিক অবলম্বন ৷ সংস্থার বেসরকারিকরণ তাই সামগ্রিকভাবে দেশের অর্থনীতির পক্ষে অশনি সঙ্কেত ৷ অন্তত এমনই মত এ রাজ্যের অর্থমন্ত্রীর ৷
এই প্রসঙ্গে খুব স্বাভাবিকভাবেই উঠে এসেছে ভারতীয় জীবন বিমা নিগম বা এলআইসি-র কথা ৷ প্রসঙ্গত, এলআইসি-র বেসরকারিকরণের সিদ্ধান্তের বিরুদ্ধে ইতিমধ্যেই নানা স্তরে প্রতিবাদ দেখা গিয়েছে ৷ অমিত মিত্রও কেন্দ্রের এই সিদ্ধান্তের সমালোচনা করেছেন ৷ অমিত লিখেছেন, 1956 সালে এলআইসি গঠিত হওয়ার পর থেকেই দেশ গঠনের কাজে এই সংস্থার প্রচুর অবদান রয়েছে ৷ রাস্তা, রেললাইন, সেতু, বন্দর, সেচ, বিদ্যুৎকেন্দ্র-সহ বিভিন্ন ধরনের নির্মাণে এলআইসি সরাসরি অংশগ্রহণ করেছে ৷ পাশাপাশি, এলআইসি এজেন্ট হিসাবে কাজ করে 12 থেকে 15 লাখ মানুষ তাঁদের রুজিরুটি চালাচ্ছেন ৷ সংস্থার নিজস্ব কর্মী, আধিকারিকও রয়েছেন লক্ষাধিক ৷ ফলে এলআইসি-র বেসরকারিকরণের অর্থ হল, এই সমস্ত মানুষকে চরম অনিশ্চয়তার দিকে ঠেলে দেওয়া ৷ তাই সার্বিকভাবে তাঁর চিঠিতে সমস্ত রাষ্ট্রায়ত্ত সংস্থার বেসরকারিকরণের বিরুদ্ধে সরব হয়েছেন অমিত ৷
আরও পড়ুন : রাষ্ট্রায়ত্ত ব্যাঙ্কের বেসরকারিকরণ নিয়ে কেন্দ্রের সঙ্গে আলোচনায় আরবিআই
প্রসঙ্গত, কেন্দ্রের মোদি সরকারকে ইতিমধ্যেই ‘বেচুবাবুর সরকার’ বলে কটাক্ষ করতে শুরু করে দিয়েছেন বাংলার অবিজেপি রাজনীতিকরা ৷ তৃণমূল, সিপিএম, কংগ্রেস নির্বিশেষে সকলেরই অভিযোগ, মুষ্ঠিমেয় কিছু পুঁজিপতির ফায়দা করে দিতেই রাষ্ট্রায়ত্ত সংস্থাগুলিকে বিক্রি করে দেওয়ার ষড়যন্ত্র করেছে কেন্দ্র ৷ যদিও মোদি সরকারের যুক্তি, এইসব সংস্থাগুলিকে সচল রাখতে সংস্কার দরকার ৷ আর সেটা করার জন্যই বেসরকারিকরণের সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে ৷ এই নিয়ে বিজেপি ও বিজেপি-বিরোধীদের মধ্যে দড়ি টানাটানির মধ্যেই একাধিক রাজ্যে বিধানসভা ভোট অনুষ্ঠিত হতে চলেছে ৷ সেই লড়াইয়ে বিজেপিকে কিছুটা ব্যাকফুটে ঠেলতেই মমতা মন্ত্রিসভার অর্থমন্ত্রী কেন্দ্রীয় অর্থমন্ত্রীকে এই চিঠি পাঠিয়েছেন বলে মনে করা হচ্ছে ৷ বস্তুত, আসন্ন নির্বাচনগুলিতে মোদি সরকারের এই ‘বেচুবাবুর সরকার’ ভাবমূর্তিকেই হাতিয়ার করতে চাইছেন মোদি তথা বিজেপির বিরোধীরা ৷