কলকাতা, 28 নভেম্বর: ওয়াকফ বিল নিয়ে কেন্দ্র রাজ্য সরকারের সঙ্গে কোনোভাবেই আলোচনা করেনি । বৃহস্পতিবার বিধানসভায় দাঁড়িয়ে এমনটাই দাবি করলেন রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় ।
এ দিন বিধানসভার প্রশ্নোত্তর পর্বে তৃণমূল বিধায়ক মোশারফ হোসেন কেন্দ্রের আনা ওয়াকফ বিল রাজ্যকে জানিয়ে করা হয়েছে কি না, তা নিয়ে প্রশ্ন তোলেন । এরই জবাব দিতে গিয়ে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় বলেন, "রাজ্য সরকারের সঙ্গে কেন্দ্রের ওয়াকফ বিল নিয়ে কোনও আলোচনা হয়নি ।"
মুখ্যমন্ত্রীর কথায়, "ওয়াকফ বোর্ড বা ওয়াকফ সম্পত্তি ব্রিটিশ আমল থেকে চলে আসছে । আমরা এগুলি তৈরি করিনি । মূল আইনটি 1935 সালের । তবে কেন্দ্রীয় সরকার 1995 সালের আইন সংশোধন করার জন্য গত 8 অগস্ট লোকসভায় একটি সংশোধনী বিল নিয়ে এসেছে । তা যদি আইনে পরিণত হয় তাহলে দেশের ওয়াকফ ব্যবস্থা ধ্বংস হয়ে যাবে । এটা আমাদের অভিমত ।"
তিনি আরও বলেন, "ওয়াকফ বিল নিয়ে আমাদের সঙ্গে কোনও আলোচনা হয়নি । 2024 সালে যে সংশোধনী আনা হচ্ছে, তা নিয়ে রাজ্যগুলির সঙ্গে আলোচনা করা দরকার ছিল । কারণ, কেন্দ্রে যেমন ওয়াকফ বোর্ড আছে, একইভাবে রাজ্যেও ওয়াকফ বোর্ড আছে । আর সবটাই কোয়াসি জুডিশিয়াল বডি । আমরা সংবাদমাধ্যম থেকে জেনেছি বিষয়টা ।"
মুখ্যমন্ত্রীর দাবি, "আমাদের সাংসদরা এই বিষয়টিকে নিয়ে প্রথমেই প্রতিবাদ করেছিলেন । তাঁদের প্রতিবাদের কারণেই সংসদে একটা জয়েন্ট পার্লামেন্টারি কমিটি হয়েছিল । পরবর্তীতে সকল বিরোধী দল মিলেই এটাকে বয়কট করে, সেখানে কিছু অপ্রীতিকর ঘটনাও ঘটে । সেই কারণে জেপিসির যে ভিজিট, তা বাতিল হয়ে গিয়েছে । বলা হয়েছে, এই বিষয়টি 2025 সালের মার্চ মাসে বাজেটে নিয়ে আসা হবে ।"
ওয়াকফ বিল নিয়ে রাজ্যকে উপেক্ষা করে শুধুমাত্র কাগজে বিজ্ঞাপনের মতো করে বিজ্ঞপ্তি দিয়ে দেওয়া হয়েছে ৷ এই দাবি করে ঘটনায় কিছুটা বিস্ময় প্রকাশ করেছেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোাপাধ্যায় । তিনি বলেন, "কেন্দ্রীয় সরকারের বিজ্ঞপ্তি দেখেছি । কোনোভাবেই রাজ্য সরকারের মতামত চাওয়া হয়নি । এটা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ তথা স্পর্শকাতর একটা বিষয় । সমাজের একটি নির্দিষ্ট অংশকে উদ্দেশ্যপ্রণোদিতভাবে অবমাননা করার চেষ্টা হচ্ছে ।"
মুখ্যমন্ত্রীর দাবি, এই বিলকে একটি অংশকে উপেক্ষা করার জন্য করা হয়েছে ৷ কেন এমনটা করা হচ্ছে তার ব্যাখ্যা দিয়ে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় বলেন, "এটা একটা ধর্মের বিরুদ্ধে বিল । ভারতীয় সংবিধানে 75 বছর পূর্তি হয়েছে গত 26 তারিখ । ভারতবর্ষ ধর্মনিরপেক্ষ ও গণতান্ত্রিক রাষ্ট্র । বৈচিত্রের মধ্যে ঐক্যই আমাদের প্রধান শক্তি ।"
মুখ্যমন্ত্রী বলেছেন, "এই বিলটি 26 নম্বর ধারায় প্রদত্ত ধর্মীয় স্বাধীনতার অধিকার এবং 14 নম্বর ধারায় বলা সাম্যের অধিকারকে লংঙ্ঘন করা হয়েছে । এছাড়াও সংবিধানের রাজ্য তালিকার 18 এবং 35 নম্বর ধারার বলা আছে, ভূমি সংক্রান্ত বিষয়ে আইন প্রণয়নের অধিকার রাজ্য সরকারের রয়েছে । এটা রাজ্যের একটি এক্তিয়ার ভুক্ত বিষয় । কেন্দ্র এমন কোনও আইন করতে পারে না, যা রাজ্যের অধিকারকে খর্ব করে । আমি বলতে পারি, এখানে রাজ্য বিধানসভার অধিকারও ক্ষুন্ন করা হয়েছে ।"