চণ্ডিগড়, 18 সেপ্টেম্বর : পঞ্জাবে কংগ্রেস এক দশক পর তাঁর নেতৃত্বেই ঘুরে দাঁড়িয়েছিল ৷ জোড়া প্রতিপক্ষকে মাত দিয়ে পঞ্জাবের সরকার গড়তে সমর্থ হয়েছিল রাহুল গান্ধির দল ৷ সেই ক্যাপ্টেন অমরিন্দর সিংই এবার বিকল্পের সন্ধানে ৷ শনিবার পঞ্জাবের মুখ্যমন্ত্রীর পদ থেকে ইস্তফা দিয়ে দিয়েছেন ৷ পঞ্জাবের রাজভবনের বাইরে দাঁড়িয়ে ঘোষণা করেছেন যে অনুগামীদের সঙ্গে আলোচনা করেই পরবর্তী সিদ্ধান্ত নেবেন ৷
আরও পড়ুন : Amarinder Singh Resigns : পঞ্জাবের মুখ্যমন্ত্রীর পদ থেকে ইস্তফা অমরিন্দর সিংয়ের
অথচ পাঁচ বছর আগে পরিস্থিতি এমন ছিল না ৷ বরং 2017 সালে অমরিন্দর সিংই ছিলেন কংগ্রেসের সব ৷ তাঁকে প্রদেশ সভাপতি করে বিধানসভা ভোটে লড়াই করেছিল কংগ্রেস ৷ ফলও মিলেছিল হাতেনাতে ৷ একদিকে শিরোমনি আকালি দলকে সরকার থেকে সরানো সম্ভব হয়েছিল ৷ অন্যদিকে আম আদমি পার্টির দিল্লির বাইরে ক্ষমতা বিস্তারের পরিকল্পনা ধাক্কা খেয়েছিল কংগ্রেসের জয়ে ৷
কিন্তু ওই নির্বাচনের সময়ই পঞ্জাবে বিদ্রোহের বীজ বপন হয়ে গিয়েছিল বলেই মনে করেন রাজনৈতিক পর্যবেক্ষকরা ৷ তাঁদের ব্যাখ্যা, ততদিনে কংগ্রেসে চলে এসেছেন নভজ্যোত সিং সিধু ৷ মনে করা হয়েছিল তাঁকে পঞ্জাবের উপমুখ্যমন্ত্রী করা হবে ৷ বদলে তাঁকে ক্যাবিনেট মন্ত্রী করা হয় ৷ এটা নিয়ে সিধু ও তাঁর অনুগামীদের মধ্যে ক্ষোভ ছিল ৷
আরও পড়ুন : Bhabanipur By-poll: দেশকে পাকিস্তান বা তালিবান শাসিত রাষ্ট্রে পরিণত হতে দেব না, বলছেন মমতা
আর সেটাই ক্রমশ বড় আকার ধারণ করে যখন 2019 সালে সিধু মন্ত্রিত্ব ছেড়ে বেরিয়ে আসেন ৷ কারণ, সেই সময় ক্যাপ্টেন তাঁর মন্ত্রিসভার রদবদল করেন ৷ আর তাতে সিধুর মন্ত্রিত্ব বদলে যায় ৷ মন্ত্রিত্ব ছেড়ে সিধু নাম না করে তোপ দাগেন ক্যাপ্টেনের বিরুদ্ধে ৷ বলেন, ‘‘রাহুল গান্ধি (তৎকালীন কংগ্রেস সভাপতি) আমার ক্যাপ্টেন ৷ তিনি ক্যাপ্টেনের (অমরিন্দর সিং) ক্যাপ্টেন ৷’’
সিধু ব্যাট হাতে পাকিস্তানের মোকাবিলা করেছেন বাইশ গজে ৷ কিন্তু ক্যাপ্টেন অমরিন্দর সিং তো যুদ্ধক্ষেত্রে পাকিস্তানের বিরুদ্ধে লড়েছেন 1965 সালে ৷ তাই তিনিও ছেড়ে দেওয়ার পাত্র ছিলেন না ৷ তাই সিধুকে পঞ্জাবের রাজনীতিতে অপ্রাসঙ্গিক করার তিনি বারবার চেষ্টা করেছেন বলে অভিযোগ ৷
আরও পড়ুন : Mamata in TIME : টাইম ম্যাগাজিনের প্রভাবশালী তালিকায় বাইডেন-মোদির সঙ্গে 'স্ট্রিট ফাইটার' মমতা
যদিও সেই চেষ্টা যে সফল হয়নি, তার প্রমাণ কংগ্রেসের 50 বিধায়ক সম্প্রতি হাই কমান্ডকে চিঠি দিয়েছেন ক্যাপ্টেনের বিরুদ্ধে ৷ যার ফলে আজ ইস্তফা দিতে হল তাঁকে ৷ একই সঙ্গে প্রকাশ্যে বলতে হল যে দলে অসম্মানিত হয়ে তিনি এই সিদ্ধান্ত নিয়েছেন ৷ অথচ পাতিয়ালার রাজ পরিবারের এই উত্তরাধিকারীর সঙ্গে কংগ্রেসের যোগ কিন্তু বহু পুরনো ৷
1980 সালে তিনি কংগ্রেসের সাংসদ হয়েছিলেন ৷ তাঁকে রাজীব গান্ধির ঘনিষ্ঠ নেতা বলেই মনে করা হত ৷ তবে 1984 সালে অমৃতসরে স্বর্ণ মন্দিরে অপারেশন ব্লু স্টারের প্রতিবাদে তিনি কংগ্রেস ছাড়েন ৷ পরে যোগদেন শিরোমনি আকালি দলে ৷ 1995 সালে বিধায়ক হন ৷ তার পর আবার তিনি কংগ্রেসে ফিরে যান ৷
আরও পড়ুন : 'নীচ আদমি'র পর 'ভিতু', ফের আইয়ারের নিশানায় মোদি
2002 সালে তিনি কংগ্রেসের টিকিটে জিতে মুখ্যমন্ত্রী হন পঞ্জাবের ৷ সেই সময় একাধিকবার বিতর্কে জড়িয়েছেন ৷ 2014 সালে তিনি অমৃতসরে বিজেপির অরুণ জেটলিকে হারিয়ে সাংসদ হয়েছিলেন ৷ পরে সুপ্রিম কোর্টের একটি রায়ের প্রতিবাদে সাংসদ পদ থেকে ইস্তফা দেন ৷
তার পর আজ, শনিবার আবার ইস্তফা দিলেন ৷ এবার মুখ্যমন্ত্রীর পদ থেকে ৷ এখন দেখার তাঁর এই পদত্যাগের তালিকা আরও বড় হয় কি না !
আরও পড়ুন : মোদির সঙ্গে বিবেকানন্দর তুলনা শুনে অধীর রেগে যা বললেন