জলপাইগুড়ি, 11 এপ্রিল: ভোট আসে ভোট যায় । কিন্তু অবস্থার কোনও উন্নতি হয় না চা-শ্রমিকদের । ন্য়ূনতম মজুরির দাবি এখনও তুলছেন চা-শ্রমিকরা । তাঁদের বক্তব্য, যেই জিতুন ন্য়ূনতম মজুরি বিষয়টি যেন গুরুত্ব দিয়ে বিবেচনা করা হয় ৷ আর এই দাবি পূরণ হবে, এই আশাতেই তাঁরা আবার দাঁড়াবেন ভোটের লাইনে ৷
উত্তরবঙ্গের সর্ববৃহৎ শিল্প হল চা-শিল্প । আর এই চা-শিল্পের সঙ্গে জড়িত রয়েছেন প্রায় সাড়ে তিন লক্ষ শ্রমিক । জলপাইগুড়ি ও আলিপুরদুয়ার লোকসভা কেন্দ্রে সবচেয়ে বেশি চা-বাগান রয়েছে । বিশেষ করে মালবাজার, বানারহাট, কালচিনি, মাদারিহাট-বীরপাড়া, নাগরাকাটা, কুমারগ্রাম-সহ একাধিক ব্লকে চা-শ্রমিকদের ভোটের উপর অনেকটাই নির্ভর করবে লোকসভা নির্বাচনের প্রার্থীদের ভাগ্য ।
2019 সালের লোকসভা ভোটে আলিপুরদুয়ার ও জলপাইগুড়ি চা-বলয়ের ভোটাররা বিজেপিকেই আশীর্বাদ করেছিলেন ৷ সেই সমর্থন 2021 সালের বিধানসভা ভোটেও অটুট ছিল ৷ এবারও কি বিজেপির মনোজ টিগ্গা (আলিপুরদুয়ারের প্রার্থী), জয়ন্তকুমার রায়ের (জলপাইগুড়ির প্রার্থী) দিকেই ভোট দেবেন চা-শ্রমিকরা ? নাকি তৃণমূলের প্রকাশ চিক বরাইক (আলিপুরদুয়ারের প্রার্থী) ও নির্মলচন্দ্র রায়ই (জলপাইগুড়ির প্রার্থী) হবেন তাঁদের প্রথম পছন্দ ?
এই দুই আসনে ভোট আগামী 19 এপ্রিল ৷ তবে ফল প্রকাশিত হবে আরও প্রায় মাস দেড়েক পর আগামী 4 জুন ৷ তাই চা-শ্রমিকরা কাকে সিদ্ধান্ত সমর্থনের সিদ্ধান্ত নিলেন, তা জানতে জুনের চার তারিখ পর্যন্ত অপেক্ষা করতেই হবে ৷ কিন্তু তার আগে ইটিভি ভারত জানার চেষ্টা করল চা-শ্রমিকদের মনের কথা ৷
চা-শ্রমিক জ্যোতি ওঁরাও বলেন, ‘‘আমাদের বাগানের বেতন সেরকম হয় না । রেশনের জন্য অনেকটা ভালো আছি ।বাচ্চাদের পড়াশোনা স্কুলে পড়লেও তাকে টিউশনে দিতে হয় । এই বেতনে চলে না আমাদের । পাট্টা সরকার দিচ্ছে । যে জমি দিচ্ছে, তাতে আমাদের হবে না । যে পরিমাণ জমি দিচ্ছে, তাতে একটা ঘর হবে । আমাদের বড় পরিবার ৷ আমরা থাকব কিভাবে । যে সরকার আমাদের চালাচ্ছে, তার নেতারা ভালো না ।’’
আরেকজন চা-শ্রমিক পাচোলা ওঁরাও বলেন, ‘‘যা দিচ্ছে সবাই মেনে নিচ্ছে, আমরাও মেনে নিচ্ছি । সংসার চালানো যাচ্ছে না । রেশন দিচ্ছে তাই ভালো আছি । যেই আসুক আমাদের দেখুক, আমাদের সাহায্য করুক ।’’ আশা মুন্ডা বলেন, ‘‘সামনে ভোট । আমরা চাই বাগানের ভালো হোক । আমাদের সুযোগ পেতে পারি এটাই চাই । যা বেতন পাই, তাতে সংসার চালানো খুব কুষ্টকর । শ্রমিকদের জন্য ভালো কিছু হোক এটাই চাই ৷ অনেকে প্রতিশ্রুতি দেয় কাজ হয় না ।’’
চা-শ্রমিক অসীম রায় বলেন, ‘‘আমি চা-বাগানে 41 বছর ধরে কাজ করি । কিন্তু এখনও ন্য়ূনতম মজুরি পাচ্ছি না । রাস্তাঘাটের অবস্থা খুব খারাপ । সামনে ভোট । ভোট হোক । আমরা চাই রাস্তাঘাট হোক । আমাদের বাগানের উন্নতি হোক । হাজিরা বাড়িয়ে দেওয়া হোক এটাই চাই ।