পশ্চিমবঙ্গ

west bengal

ETV Bharat / state

চা-শ্রমিকরা সুদিনের আশায় আবার দাঁড়াবেন ভোটের লাইনে, ফিরবে কি তাঁদের অবস্থা ? - Lok Sabha Election 2024

Lok Sabha Election 2024: আগামী 19 এপ্রিল প্রথম দফায় আলিপুরদুয়ার ও জলপাইগুড়ির চা-শ্রমিকরা নিজেদের ভোটাধিকার প্রয়োগ করবেন ৷ এই দুই আসনে তাঁরাই অন্যতম নির্ণায়ক ৷ প্রতিবারই তাঁরা সুদিনের আশায় ভোট দেন ৷ এবারও দেবেন ৷ কিন্তু তাঁদের অবস্থা কি ফিরবে ? এটাই এখন বড় প্রশ্ন আলিপুরদুয়ার-জলপাইগুড়িতে ৷

Lok Sabha Election 2024
Lok Sabha Election 2024

By ETV Bharat Bangla Team

Published : Apr 11, 2024, 6:34 PM IST

চা-শ্রমিকরা সুদিনের আশায় আবার দাঁড়াবেন ভোটের লাইনে, ফিরবে কি তাঁদের অবস্থা ?

জলপাইগুড়ি, 11 এপ্রিল: ভোট আসে ভোট যায় । কিন্তু অবস্থার কোনও উন্নতি হয় না চা-শ্রমিকদের । ন্য়ূনতম মজুরির দাবি এখনও তুলছেন চা-শ্রমিকরা । তাঁদের বক্তব্য, যেই জিতুন ন্য়ূনতম মজুরি বিষয়টি যেন গুরুত্ব দিয়ে বিবেচনা করা হয় ৷ আর এই দাবি পূরণ হবে, এই আশাতেই তাঁরা আবার দাঁড়াবেন ভোটের লাইনে ৷

উত্তরবঙ্গের সর্ববৃহৎ শিল্প হল চা-শিল্প । আর এই চা-শিল্পের সঙ্গে জড়িত রয়েছেন প্রায় সাড়ে তিন লক্ষ শ্রমিক । জলপাইগুড়ি ও আলিপুরদুয়ার লোকসভা কেন্দ্রে সবচেয়ে বেশি চা-বাগান রয়েছে । বিশেষ করে মালবাজার, বানারহাট, কালচিনি, মাদারিহাট-বীরপাড়া, নাগরাকাটা, কুমারগ্রাম-সহ একাধিক ব্লকে চা-শ্রমিকদের ভোটের উপর অনেকটাই নির্ভর করবে লোকসভা নির্বাচনের প্রার্থীদের ভাগ্য ।

2019 সালের লোকসভা ভোটে আলিপুরদুয়ার ও জলপাইগুড়ি চা-বলয়ের ভোটাররা বিজেপিকেই আশীর্বাদ করেছিলেন ৷ সেই সমর্থন 2021 সালের বিধানসভা ভোটেও অটুট ছিল ৷ এবারও কি বিজেপির মনোজ টিগ্গা (আলিপুরদুয়ারের প্রার্থী), জয়ন্তকুমার রায়ের (জলপাইগুড়ির প্রার্থী) দিকেই ভোট দেবেন চা-শ্রমিকরা ? নাকি তৃণমূলের প্রকাশ চিক বরাইক (আলিপুরদুয়ারের প্রার্থী) ও নির্মলচন্দ্র রায়ই (জলপাইগুড়ির প্রার্থী) হবেন তাঁদের প্রথম পছন্দ ?

চা-বাগানে কর্মরত শ্রমিকরা

এই দুই আসনে ভোট আগামী 19 এপ্রিল ৷ তবে ফল প্রকাশিত হবে আরও প্রায় মাস দেড়েক পর আগামী 4 জুন ৷ তাই চা-শ্রমিকরা কাকে সিদ্ধান্ত সমর্থনের সিদ্ধান্ত নিলেন, তা জানতে জুনের চার তারিখ পর্যন্ত অপেক্ষা করতেই হবে ৷ কিন্তু তার আগে ইটিভি ভারত জানার চেষ্টা করল চা-শ্রমিকদের মনের কথা ৷

চা-শ্রমিক জ্যোতি ওঁরাও বলেন, ‘‘আমাদের বাগানের বেতন সেরকম হয় না । রেশনের জন্য অনেকটা ভালো আছি ।বাচ্চাদের পড়াশোনা স্কুলে পড়লেও তাকে টিউশনে দিতে হয় । এই বেতনে চলে না আমাদের । পাট্টা সরকার দিচ্ছে । যে জমি দিচ্ছে, তাতে আমাদের হবে না । যে পরিমাণ জমি দিচ্ছে, তাতে একটা ঘর হবে । আমাদের বড় পরিবার ৷ আমরা থাকব কিভাবে । যে সরকার আমাদের চালাচ্ছে, তার নেতারা ভালো না ।’’

আরেকজন চা-শ্রমিক পাচোলা ওঁরাও বলেন, ‘‘যা দিচ্ছে সবাই মেনে নিচ্ছে, আমরাও মেনে নিচ্ছি । সংসার চালানো যাচ্ছে না । রেশন দিচ্ছে তাই ভালো আছি । যেই আসুক আমাদের দেখুক, আমাদের সাহায্য করুক ।’’ আশা মুন্ডা বলেন, ‘‘সামনে ভোট । আমরা চাই বাগানের ভালো হোক । আমাদের সুযোগ পেতে পারি এটাই চাই । যা বেতন পাই, তাতে সংসার চালানো খুব কুষ্টকর । শ্রমিকদের জন্য ভালো কিছু হোক এটাই চাই ৷ অনেকে প্রতিশ্রুতি দেয় কাজ হয় না ।’’

চা-বাগানে কর্মরত শ্রমিকরা

চা-শ্রমিক অসীম রায় বলেন, ‘‘আমি চা-বাগানে 41 বছর ধরে কাজ করি । কিন্তু এখনও ন্য়ূনতম মজুরি পাচ্ছি না । রাস্তাঘাটের অবস্থা খুব খারাপ । সামনে ভোট । ভোট হোক । আমরা চাই রাস্তাঘাট হোক । আমাদের বাগানের উন্নতি হোক । হাজিরা বাড়িয়ে দেওয়া হোক এটাই চাই ।

মহেশ বর্মন বলেন, ‘‘চা-বাগানের শ্রমিকরা ভালো নেই । আমাদের ন্য়ূনতম মজুরি এখনও হল না । সরকারে যেই থাকুক, কোনও কাজই হচ্ছে না । ভবিষ্যতেও আমাদের ন্য়ূনতম মজুরি আদৌও হবে কি না জানি না । ন্য়ূনতম মজুরি হলে ভালো হত । রাজ্য সরকার যে জমির পাট্টা দিচ্ছে ৷ কিন্তু আমাদের বাগানে নেই । আমরা কয়েক পুরুষ ধরে চা-বাগানে আছি । বাড়ি বানানোর সরকার যে পাট্টা দিচ্ছে, তাতে সমস্যার সমাধান হবে না । আমাদের সমস্যার তেমন কোনও সমাধান হয় না । আমাদের ন্যূনতম মজুরি হোক । আমাদের কথা কেউ শোনেননি ।’’

ভোটের প্রচারে বেরিয়ে চা-শ্রমিকদের মনোভাব টেরও পাচ্ছেন রাজনৈতিক নেতারা ৷ ফলে তাঁরা কী বলছেন ? কী কৌশল নিচ্ছেন, চা-শ্রমিকদের সমর্থন পেতে ? এই নিয়ে কথা বলা হয় কেন্দ্রীয় মন্ত্রী জন বারলার সঙ্গে ৷ তিনি 2019 সালে আলিপুরদুয়ার থেকে জয়ী হয়ে কেন্দ্রীয় মন্ত্রী ৷ চা-শ্রমিকদের অভিযোগ নিয়ে তিনি অবশ্য আশাবাদী ৷ এবারও আলিপুরদুয়ারের চা-শ্রমিক বিজেপি প্রার্থী মনোজ টিগ্গাকেই সমর্থন করবেন বলে তিনি মনে করেন ৷

আর বিরোধীরা চা-শ্রমিকদের বঞ্চনার যে অভিযোগ বিজেপির বিরুদ্ধে তুলছে, তা নিয়ে জন বারলার বক্তব্য, ‘‘কে কী বলছে, তা দেখার প্রয়োজন নেই ৷ আমি কী করব, সেটাই লক্ষ্য রাখি ৷ মানুষ উন্নয়নের জন্য ভোট দেন ৷ তর্কবিতর্ক করার জন্য ভোট দেননি ৷ তাই তর্কবিতর্ক করে লাভ নেই ৷ তাই আমরা কাজের উপরই নজর দিই ৷’’

অন্যদিকে আলিপুরদুয়ারের তৃণমূল প্রার্থী প্রকাশ চিক বরাইক বলছেন, ‘‘আমরা চা-বাগানে যে যে কাজগুলি করানোর জন্য মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্য়ায় ও তৃণমূলের সর্বভারতীয় সাধারণ সম্পাদক অভিষেক বন্দ্যোপাধ্য়ায়কে বলেছিলাম, সেই কাজগুলি হয়েছে ৷’’ উদাহরণ হিসেবে তিনি মহিলা চা-শ্রমিকদের সন্তানদের রাখার জন্য ক্রেশ তৈরির কথা বলেছেন ৷ চা-বাগান এলাকাগুলিতে শ্রমিকদের চিকিৎসার পরিকাঠামো আগের তুলনায় আরও ভালো করা হয়েছে বলে তিনি জানিয়েছেন ৷

তাঁর আরও দাবি, জমির পাট্টা দেওয়ার দাবি 200 বছর ধরে চলে আসছে ৷ সেই দাবি পূরণ করেছে রাজ্য সরকার ৷ আগামিদিনে আরও কাজ করা হবে ৷ পাশাপাশি তিনি অভিযোগ করেন যে আলিপুরদুয়ারে ভোটে জিতেও কোনও কাজ করেননি বিজেপির জন বারলা ৷

এখন দেখার শেষপর্যন্ত চা-শ্রমিকরা শেষ পর্যন্ত কোন দিকে থাকেন !

আরও পড়ুন:

  1. মজুরিবৃদ্ধি ও অবসরের বয়স বাড়ানোর প্রতিশ্রুতি, বীরপাড়া চা বাগানে প্রচারে মনোজ টিগ্গা
  2. বন্ধ 16 চা বাগান ও 2 কারখানার 14 হাজার শ্রমিককে 'ফাওলাই' প্রকল্পে আর্থিক সাহায্য রাজ্যের
  3. বাধা এলেও পড়াশুনো চালাতেই হবে, বন্ধ চা-বাগানের পড়ুয়াদের পরামর্শ জেলাশাসকের

ABOUT THE AUTHOR

...view details