তারকেশ্বর, 19 জুলাই: শ্রাবণী মেলা উপলক্ষ্যে প্রস্তুতি তুঙ্গে তারকেশ্বরে ৷ মেলায় আগত ভক্তদের সমস্ত সুবিধা দিতে ইতিমধ্যে 6 জোড়া স্পেশাল ট্রেনের ব্যবস্থা করেছে পূর্ব রেল কর্তৃপক্ষ ৷ এবার রাজ্য ও জেলা প্রশাসনের তরফেও নেওয়া হল বিশেষ ব্যবস্থা ৷ পুজো দেওয়ার পর ভক্তরা যাতে নিশ্চিন্তে বাড়ি পৌঁছতে পারে, সে জন্য কলকাতা, বর্ধমান-সহ একাধিক জেলার জন্য বিশেষ বাসের ব্যবস্থা করা হয়েছে ৷
শ্রাবণ মাস শুরু হয়ে গেলেও এবছর 21 জুলাই থেকে শুরু হচ্ছে শ্রাবণী মেলা ৷ মেলা শেষ হবে আগামী 19 অগস্ট । অর্থাৎ, গুরু পূর্ণিমার দিন থেকে শুরু হয়ে মেলা শেষ হবে রাখি পূর্ণিমায় । প্রতিবছর রাজ্য তথা দেশের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে ভক্তের সমাগম ঘটে এই মেলায় ৷ তাই তাদের কথা মাথায় রেখে বিশেষ ব্যবস্থা করা হয়েছে ৷ বৈদ্যবাটি, নিমাই তীর্থ ঘাট-সহ বিভিন্ন ঘাট থেকে তারকেশ্বর মন্দির পর্যন্ত গোটা রাস্তা সিসিটিভি ক্যামেরা লাগানো হয়েছে ৷ এরই সঙ্গে মোতায়েন করা হয়েছে একাধিক পুলিশ কর্মী ৷ যাত্রীদের সুরক্ষা ও স্বাস্থ্যের কথা মাথায় রেখে জল ও স্বাস্থ্য পরিষেবার ব্যবস্থাও রাখা হচ্ছে । থাকছে 24 ঘণ্টা পানীয় জল ও আলোর ব্যবস্থা ৷ মেলায় কোনও বড় দুর্ঘটনা এড়াতে দমকল কর্মী এবং বিপর্যয় মোকাবিলা দলের ব্যবস্থা রাখা হচ্ছে ৷
বৃহস্পতিবার তারকেশ্বর মন্দির সংলগ্ন এলাকা পরিদর্শন করার পর হরিপালের বিশ্বনাথ সেবা সমিতি হলে বিশেষ বৈঠকের পর বৈদ্যবাটি ঘাট-সহ বাকি ঘাট গুলি পরিদর্শন করেন জেলা প্রশাসনের আধিকারিকরা । তারকেশ্বর মন্দির সংলগ্ন এলাকা পরিদর্শন করতে আসেন জেলা শাসক মুক্তা আর্য, হুগলি গ্রামীণ পুলিশের পুলিশ সুপার কামনাশীষ সেন এবং রাজ্যের দুই মন্ত্রী বেচারাম মান্না ও স্নেহাশীষ চক্রবর্তী ৷ এছাড়াও উপস্থিত ছিলেন জেলা ও তারকেশ্বর ব্লক প্রশাসনের কর্ম কর্তারা । শ্রম দফতরের প্রতিমন্ত্রী বেচারাম মান্না বলেন, "যাত্রীদের সুবিধার্থে সব রকম ব্যবস্থা গ্রহণ করা হয়েছে । গঙ্গাসাগরের মতো তারকেশ্বর শ্রাবণী মেলাকেও অন্য মাত্রায় নিয়ে যাওয়ার পরিকল্পনা করেছে রাজ্য সরকার । পুলিশ প্রশাসনের পরিসংখ্যান অনুযায়ী শনিবার থেকে রবিবার পর্যন্ত 1 ঘণ্টায় 15 হাজার মানুষ এসেছেন তারকেশ্বরে । ভক্তদের যাতে কোনও রকম অসুবিধা না হয় তার জন্য আলাদা রকম প্রস্তুতি নেওয়া হয়েছে । যাত্রীদের জন্য শেওড়াফুলির নিমাই তীর্থ ঘাট হয়ে তারকেশ্বর মন্দিরের থেকে বাড়ি যাওয়া পর্যন্ত সমস্ত রকম ব্যবস্থা করা হয়েছে রাজ্য প্রশাসনের পক্ষ থেকে ।"
সেইসঙ্গে মন্ত্রী আরও জানান, গঙ্গায় যাতে কোনরকম অপ্রীতিকর ঘটনা না ঘটে তার জন্য বৈদ্যবাটিতে থাকবে বিপর্যয় মোকাবিলা দল। রাস্তায় অ্যাম্বুলেন্সের অসুবিধা হলে অসুস্থ জলযাত্রীদের জন্য জলপথের মাধ্যমেও শ্রীরামপুর হাসপাতালে পাঠাবার ব্যবস্থা রাখা হয়েছে । তারকেশ্বর পর্যন্ত রাস্তাঘাট সারানো হয়েছে । বিদ্যুৎ দফতরের তরফেও বিশেষ ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে ৷ বৈদ্যবাটি পুরসভার একাধিক গ্রাম পঞ্চায়েতে ও তারকেশ্বর পুরসভা এলাকায় চন্দননগর কমিশনারেটের পুলিশ ও হুগলি গ্রামীণ পুলিশের একাধিক সিভিক ভলান্টিয়ার থাকবে ।
তিনি আরও জানান, রেলের সঙ্গেও আলোচনা হয়েছে যাতে মেন লাইন পারাপারের জন্য নির্দিষ্ট জিআরপি এবং আরপিএফ-এর পর্যাপ্ত পুলিশ মোতায়েন থাকে । সেইসঙ্গে রেলের তরফে 20 মিনিট পর পর ট্রেন চলাচলের অনুরোধ করা হয়েছে । এছাড়া রাজ্য পরিবহন দফতর থেকে 50 টি বাস দেওয়া হয়েছে । বাসগুলি তারকেশ্বর থেকে বালি হল্ট, সাঁতরাগাছি স্টেশন, বর্ধমান স্টেশন ও ধর্মতলা পর্যন্ত চলাচল করবে । ভোর পাঁচটা থেকে বিকেল তিনটে পর্যন্ত আধঘণ্টা অন্তর এই বাস পরিষেবা পাওয়া যাবে । মন্ত্রী বলেন, "আমরা একাধিক স্বেচ্ছাসেবী সংস্থার সঙ্গে বৈঠক করেছি । প্লাস্টিকের জিনিস যাতে বর্জন করা যায় তার ব্যবস্থা রাখার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে । মিশন নির্মল বাংলার মধ্যে পঞ্চায়েতগুলিকে যুক্ত করা হয়েছে । পচনশীল ও অপচনশীল বস্তুকে নির্দিষ্ট জায়গায় যাতে ফেলা যায় সেই ব্যবস্থাও নেওয়া হয়েছে ।"