মালদা, 5 অক্টোবর: গঙ্গা-ফুলহরের জল এখনও বিপদসীমার উপর দিয়ে বইলেও, দুই নদীরই জলস্তর ধীরে-ধীরে কমছে ৷ তবে এই মুহূর্তে মাথাব্যাথার কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে মহানন্দা ৷ তৃতীয়ার সকালেই মহানন্দার জলস্তর তার বিপদসীমা ছুঁয়ে ফেলেছে ৷ শুধু তাই নয়, বেশ ভালো গতিতেই বাড়ছে নদীর জল ৷ তার জেরে জল ঢুকতে শুরু করেছে ইংরেজবাজার পুরসভার অসংরক্ষিত ওয়ার্ডগুলিতে ৷
এই পরিস্থিতিতে পুজোর মুখে ঘর ছাড়তে শুরু করেছেন মানুষজন ৷ পরিস্থিতি খতিয়ে দেখতে নদী তীরবর্তী এলাকা পরিদর্শন করেছেন জেলাশাসক ৷ বাস্তবেই এবার পুজো ও উৎসব, কোনোটাই নেই ঘরছাড়া এই মানুষজনের ৷ আগমনীর আগমনের আগেই ঘরছাড়া মহানন্দা তীরের কয়েক হাজার মানুষ ৷ শুধু ইংরেজবাজারেই নয়, পুরাতন মালদা পুর এলাকাতেও বানভাসি অনেকে ৷
বন্যায় বাড়ি ছেড়ে অস্থায়ী আস্তানায় মালদা শহরের বহু মানুষ ৷ (ইটিভি ভারত) মহানন্দা নদীর জল কবে নামবে, কেউ জানেন না ৷ এই মুহূর্তে উৎসব নয়, আমোদ আহ্লাদ নয়, নতুন জামাকাপড়ও নয়, বানভাসীদের মাথায় দু’বেলা দু’মুঠো খাবার এবং ছেলেমেয়ে ও নিজেরা বাঁচার চিন্তা ৷
ছোট ছেলেকে কোলে নিয়ে ঝুমকি বসু বলছিলেন, "এখনও ঘরে জল ঢোকেনি ৷ তবে, দুয়ারে দাঁড়িয়ে রয়েছে ৷ যেকোনও মুহূর্তে ঘরে ঢুকে পড়বে ৷ তাহলে আর ঘরে থাকত পারব না ৷ মায়ের বাড়িতে নদীর জল ঢুকে গিয়েছে ৷ তাঁরা রাস্তার ধারে ত্রিপল টাঙিয়ে থাকছেন ৷ স্বামী কাঠমিস্ত্রি হলেও, কাজ এখন বন্ধ রয়েছে ৷ আমাদের কাছে আবার পুজো ! মেয়েটা বড় হয়েছে ৷ ক্লাস টু-এ পড়ছে ৷ মাঝেমধ্যেই বায়না ধরছে, পুজোর জামা কিনে দিতে হবে ৷ কোনোরকমে ওকে সান্তনা দিয়ে রেখেছি ৷ এখন পেট ভরার ব্যবস্থা করব, নাকি পুজোর জামাকাপড় কিনব !"
বন্যায় বাড়ি ছেড়ে অস্থায়ী আস্তানায় মালদা শহরের বহু মানুষ ৷ (নিজস্ব চিত্র) আরও আতান্তরে পড়েছেন পুতুল চৌধুরী ৷ বয়স হয়েছে তাঁর ৷ প্রথমবার যখন নদীর জল বেড়েছিল, সব নিয়ে প্লাস্টিকের আচ্ছাদনের নীচে এসে উঠেছিলেন ৷ মহানন্দার জল কমলে ঘরে ফিরেছিলেন ৷ কিন্তু, জল আবারও বাড়তে শুরু করেছে ৷ ফের ত্রিপলের নীচে এসে দাঁড়িয়েছেন তিনি ৷
পুতুল চৌধুরী বলেন, "এবার 15 দিন ধরে এখানে আছি ৷ পরিবারে তিন ছেলে, তাঁদের বউ-বাচ্চা, মেয়ে আর ওর দুই ছেলে রয়েছে ৷ নিজে লোকের ঘরে কাজ করি ৷ মাস গেলে কতই বা টাকা পাই ! গতকাল ত্রাণের জিনিস পেয়েছি ৷ একটা ত্রিপল, চিঁড়ে-মুড়ি, নুন-হলুদের প্যাকেট, এসব দিয়েছে ৷ একটা শাড়ি আর পাজামা-পাঞ্জাবিও দিয়ে গিয়েছে ৷ এসব পরে আমরা বুড়ো-বুড়ি না-হয় দুর্গাপুজো কাটিয়ে দেব ৷ কিন্তু বাচ্চাগুলোর কী হবে ? ওদের জন্য তো কিছু কেনা উচিত ৷ কিন্তু, পারছি না ৷ এই আচ্ছাদন বানাতে তিন হাজার টাকা খরচ হয়ে গিয়েছে ৷ হাতে আর টাকাপয়সা কিছু নেই ৷ এখন কেউ যদি জামা-কাপড় দান করে, তবে বাচ্চারা পুজোয় নতুন জামা পরতে পারবে ৷"
স্পিডবোটে চেপে দুর্গত ওয়ার্ডগুলি পরিদর্শন করেছেন জেলাশাসক নিতীন সিংহানিয়া ও ইংরেজবাজার পুরসভার চেয়ারম্যান কৃষ্ণেন্দুনারায়ণ চৌধুরী ৷ জেলাশাসক বলেছেন, "প্রশাসনের তরফে পরিস্থিতির উপর 24 ঘণ্টা নজর রাখা হচ্ছে ৷ বিপন্নদের ত্রাণ বিলি করা হয়েছে ৷ এখনও যাঁরা ঘর ছাড়েননি, নিরাপত্তার স্বার্থে তাঁদের পুরসভার ফ্লাড সেন্টারে আশ্রয় নেওয়ার আবেদন জানানো হচ্ছে ৷"