ফুলিয়া, 14 জানুয়ারি: সমবায় সমিতির হিমঘরের ভগ্নপ্রায় দশা ! মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের নিষেধের পরও শাসকদলের বিরুদ্ধে ওই হিমঘরের জমি দখল করে বেআইনি নির্মাণ এবং দলীয় অফিস করার অভিযোগ । ঘটনাটি ঘটেছে নদিয়ার ফুলিয়ায় 12 নম্বর জাতীয় সড়কের পাশে প্রফুল্ল নগর এলাকায় ৷ হিমঘরের জমি দখলকে ঘিরে তৃণমূলকে তীব্র আক্রমণ শানিয়েছে বিজেপি ৷ যদিও ঘটনা নিয়ে মুখে কুলুপ এঁটেছেন বিডিও ।
স্থানীয় সূত্রে জানা গিয়েছে, সরকার পোষিত সমবায় সমিতি দ্বারা পরিচালিত ওই হিমঘর ৷ যার বর্তমানে ভগ্নপ্রায় অবস্থা । অভিযোগ, হিমঘর মেরামতি তো দূরে থাক, ঘরে রাখা বহুমূল্যের কাঠ চুরি হয়ে গিয়েছে ৷ হিমঘরের সামনের ফাঁকা জায়গায় সুবিশাল গাছ কাটা হয়েছে দিনের পর দিন ৷ বর্তমানে জমি দখল চলছে ৷ এমনকি অভিযোগ, সরকারি জায়গায় অবৈধভাবে গড়ে উঠেছে ব্যক্তিগত দোকান ও তৃণমূলের দলীয় অফিস ৷
হিমঘরের জমি দখল করে দলীয় অফিস করায় অভিযুক্ত তৃণমূল (ইটিভি ভারত) বহুদিন বেতন পাননি কেয়ারটেকার ৷ তাই তাঁর মৃত্যুর পর বাধ্য হয়ে ওই ভগ্নপ্রায় হিমঘরে বসবাস করছেন ছেলে লক্ষ্মণ দাস ৷ তাঁর দাবি, রাতের অন্ধকারে দুষ্কৃতীরা এসে লুট করে নিয়ে গিয়েছে কাঠ । প্রকাশ্যে কাটা হয় গাছ ৷ স্থানীয় তৃণমূলের নেতারাও যুক্ত এই দখলদারিতে । এর আগে প্রতিবাদ করতে গিয়ে হুমকির মুখে পড়ে প্রাণ গিয়েছিল বাবার ৷ তাই তাঁরা আর প্রতিবাদ করেন না ৷ তবে বিষয়টি সমিতির কর্মকর্তাদের জানানো হয়েছে ।
এই নিয়ে বিজেপির পঞ্চায়েত সমিতির সহ-সভাপতি চঞ্চল চক্রবর্তী তৃণমূলের স্থানীয় নেতৃত্ব এবং সরাসরি ব্লক প্রশাসনের দিকে আঙুল তুলেছেন । তাঁর কথায়, "সরকারি জায়গা দখল তৃণমূলের কালচার ৷ ফুলিয়াতে সবকটি তৃণমূলের দলীয় অফিস সরকারি জমি দখল করে তৈরি হয়েছে ৷ এরা হিমঘরের জমিও ছাড় দিচ্ছে না ৷ কোন জায়গায় পশ্চিমবঙ্গকে নিয়ে যাচ্ছে তৃণমূল ৷ আমি এর তীব্র নিন্দা জানাচ্ছি ৷ মুখ্যমন্ত্রীর নির্দেশকে অমান্য করে তাঁর দলের নেতারাই বেআইনি দখলদারি করছে ৷ বিডিও এর সঙ্গে যুক্ত রয়েছে ৷ প্রশাসনের কোনও ভূমিকা নেই এক্ষেত্রে ৷"
হিমঘরের কাঠ লুট করার অভিযোগ (নিজস্ব ছবি) যদিও স্থানীয় নবলা পঞ্চায়েতের তৃণমূলের প্রধান সুদীপ প্রামাণিক হলফ করে বলেন, "এটা সরকারি জায়গা নয়, অনেক মালিক ! তাই জমি জট রয়েছে । তবে ওই জায়গা কারা দখল করছে জানা নেই, তবে তৃণমূলের কেউ তার সঙ্গে যুক্ত নয় ।"
তবে প্রাক্তন পঞ্চায়েত সমিতির সভাপতি তথা তৃণমূল জেলা নেতৃত্ব তপন সরকার বলেন, "বিষয়টি অত্যন্ত লজ্জার ৷ এর আগেও আমি একবার এই দখলদারি রুখে দিয়েছিলাম ৷ এবারেও তৃণমূল জেলা সভাপতিকে বিষয়টি জানিয়েছি । তবে বিজেপির অভিযোগ ভিত্তিহীন ৷ তৃণমূলের কেউ এর সঙ্গে যুক্ত নেই ৷ বরং বিজেপির কয়েকজন কর্মকর্তা দখল পেয়েছে ওখানে ।"
সমবায় সমিতির হিমঘর (নিজস্ব ছবি) গোটা বিষয়টি সম্পর্কে প্রতিক্রিয়া জানতে চাইলে শান্তিপুর সমষ্টি উন্নয়ন আধিকারিক বলেন, এবিষয়ে তিনি কিছু বলবেন না ৷ এরপরেই প্রশ্ন উঠছে, সাধারণ মানুষের বেলায় সরকারি নির্দেশ অমান্য করলে কড়া শাস্তির খাঁড়া নেমে আসে ৷ এখন দখলদারির পিছনে শাসকদলের নেতৃত্বের নাম জড়িয়েছে বলেই কি মুখে কুলুপ এঁটেছেন বিডিও ?