দুর্গাপুর, 12 জুন: ঠিক যেন কবিগুরু রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের লেখা 'যেতে নাহি দিব' কবিতার মতো ৷ শিক্ষকের বদলি আটকাতে বিদ্যালয়ের গেটে তালা ঝুলিয়ে দিল পড়ুয়া ও তাদের অভিভাবকরা ৷ সেইসঙ্গে চলল বিক্ষোভও ৷ ঘটনাটি ঘটেছে পশ্চিম বর্ধামান জেলার কাঁকসা প্রয়াগপুর প্রাথমিক বিদ্যালয়ে ৷
শিক্ষকের বদলি আটকাতে অভিনব প্রতিবাদ (ইটিভি ভারত) 2016 সালে প্রয়াগপুর প্রাথমিক বিদ্যালয়ে টিচার ইন-চার্জ হিসেবে দায়িত্ব গ্রহণ করেছিলেন রাজেশ কুমার অধিকারী ৷ সেই সময় বিদ্যালয়ে পড়ুয়ার সংখ্যা ছিল মাত্র 80 জন। বর্তমানে পড়ুয়ার সংখ্যা বেড়ে হয়েছে 142 জন । বিদ্যালয়ের দায়িত্ব পাওয়ার পর থেকেই পড়ুয়াদের পুঁথিগত শিক্ষার পাশাপাশি তাদের শারীরিক সক্ষমতার উপরও নজর দিয়েছেন রাজেশ কুমার অধিকারী ৷
অভিভাবকেরা জানিয়েছেন, এই এলাকার বেশিরভাগ মানুষই নিম্নবিত্ত পরিবারের । বেসরকারি বিদ্যালয়ে বিরাট অর্থ ব্যয় করে বাচ্চাদের পড়ানোর মতো সামর্থ্য তাদের নেই । কিন্তু রাজেশ কুমার অধিকারী বিদ্যালয়ের দায়িত্ব পাওয়ার পর বেসরকারি বিদ্যালয়ের থেকেও উচ্চমানের পঠনপাঠন এবং আরও বিভিন্ন বিষয়ে ছাত্রছাত্রীদের পারদর্শী করে তুলেছেন ৷ সেটাও নিজের প্রচেষ্টায়। কোনও পড়ুয়া বিদ্যালয়ে যেতে না-পারলে ছুটির পর তার বাড়িতে খোঁজ নিয়ে সেখানেই তার শিক্ষার ব্যবস্থা করেন এই শিক্ষক । এমনকী সরকারি কোনও সুযোগ-সুবিধা বিদ্যালয়ে আসলে সেই বিষয়ে অভিভাবকদের জানান রাজেশ বাবু নিজেই।
এবার সরকারি নিয়ম মেনে অন্য একটি বিদ্যালয়ের প্রধান হিসেবে বদলি হয়ে যাচ্ছেন রাজেশ বাবু ৷ বদলির নির্দেশ আসার খবর অভিভাবক ও পড়ুয়ারা জানা মাত্রই তারা বিক্ষোভ দেখাতে শুরু করেন । তাদের একটাই দাবি, এই শিক্ষক যদি বিদ্যালয় থেকে চলে যান তাহলে পড়ুয়াদের ভবিষ্যৎ বা বিদ্যালয়ের পরিকাঠামো সম্পূর্ণভাবে ভেঙে পড়বে । এদিকে, রাজেশ বাবু জানিয়েছেন, বদলির নির্দেশে তিনি কিছুই করতে পারবেন না । এই বিদ্যালয়ের প্রতি ভালোবাসা থাকলেও তাঁকে চলে যেতেই হবে ৷
ঘটনাপ্রসঙ্গে ত্রিলোকচন্দ্রপুর পঞ্চায়েতের উপপ্রধান প্রসেনজিৎ ঘোষ জানান, শিক্ষকের বিদ্যালয়ের প্রতি যে অবদান তা অস্বীকার করার নয় । কিন্তু অভিভাবকদের বা পড়ুয়াদের যে আবেদন সেটা সরকার কীভাবে দেখবে, তা শিক্ষা দফতরই বলতে পারে । পড়ুয়া এবং অভিভাবকেরা রাজেশবাবুকে এই বিদ্যালয়ে রাখার জন্য উচ্চতর দফতরে আবেদন রাখবেন বলে জানিয়েছে ।