কলকাতা, 23 জুন: পশ্চিমবঙ্গকে অন্ধকারে রেখে ফরাক্কা চুক্তির নবীকরণে চরম ক্ষুব্ধ রাজ্যের শাসকদল তৃণমূল কংগ্রেস। তৃণমূলের স্পষ্ট দাবি, হাসিনা সরকারের সঙ্গে চুক্তি নবীকরণের বিষয়ে কথা বলার আগেই বাংলার সঙ্গে কথা বলা উচিত ছিল। রবিবার এই নিয়ে সরব হয়েছেন তৃণমূল কংগ্রেসের রাজ্যসভার সাংসদ ডেরেক ও'ব্রায়েন। তিনি হাসিনা সরকারের সঙ্গে চুক্তি নবীকরণের ক্ষেত্রে বাংলাকে অন্ধকারে রাখার অভিযোগ তুলেছেন। এক্ষেত্রে যুক্তরাষ্ট্রীয় কাঠামোকে উপেক্ষা করার অভিযোগ তুলছে তৃণমূল।
প্রসঙ্গত, বাম আমলে 1996 সালে হওয়া গঙ্গার জল বন্টন চুক্তি ভারত তথা পশ্চিমবঙ্গ এবং বাংলাদেশ উভয়ের জন্যই অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। বাম আমলে এই চুক্তি সম্পন্ন হয়েছিল। তবে পরিতাপের বিষয় হল এই এই জল বন্টনের কারণে রাজ্যের একটা বিস্তর অংশে সমস্যার মধ্যে পড়তে হয়েছে মানুষকে। গঙ্গা ভাঙ্গন এমনকী পর্যাপ্ত জল রাজ্যে না-পাওয়ার মতো ঘটনাও রয়েছে। 2026 সালে এই চুক্তির মেয়াদ শেষ হওয়ার কথা ৷ তার আগেই দু'দেশ বসে এই চুক্তির পুনর্নবীকরণ করল।
গতকালই দুই দেশের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি এবং শেখ হাসিনার উপস্থিতিতে গঙ্গা চুক্তির পুনর্নবীকরণে স্বাক্ষর করেছে দুই দেশ। কিন্তু রাজ্যকে এর মধ্যে না-আনায় এই নিয়ে সরব হয়েছে তৃণমূল কংগ্রেস। বন্যা, খরা, নদী ভাঙ্গনের মতো ঘটনায় রাজ্যকে ভুগতে হচ্ছে, এই অবস্থায় কেন রাজ্যকে অন্ধকারে রাখা হল সেই গুরুত্বপূর্ণ প্রশ্ন তুলেছে রাজ্যের শাসকদল তৃণমূল। জানা যাচ্ছে, এই বিষয়টি নিয়ে তৃণমূল কংগ্রেস সংসদের উভয়কক্ষে সরব হতে চলেছে।
কেন্দ্রীয় সরকারের এই সিদ্ধান্তের প্রতিবাদ করে রাজ্য সরকারের তরফ থেকে চিঠিও লেখা হবে। এদিন এই নিয়ে সরব হয়েছেন রাজ্যসভায় তৃণমূল কংগ্রেসের দলনেতা ডেরেক ও'ব্রায়েন। তিনি এই সিদ্ধান্তের পড়া সমালোচনা করেছেন। তাঁর মতে, এই সিদ্ধান্ত, বাংলাকে বিক্রি করে দেওয়ার প্ল্যান।
উল্লেখ্য অতীতেও একাধিকবার এই গঙ্গা চুক্তি নিয়ে সরব হয়েছে রাজ্য সরকার। রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের তরফ থেকে প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদিকে এর বিরোধিতা করে চিঠি লেখা হয়েছে। তারপরেও রাজ্যকে অন্ধকারে রেখে এই সিদ্ধান্তে রীতিমতো ক্ষুব্ধ তৃণমূল।
তৃণমূল কংগ্রেসের লোকসভার দলনেতা সুদীপ বন্দ্যোপাধ্যায় বলেন, "এনিয়ে তাঁরা সংসদে সরব হবেন। এই ঘটনা যুক্তরাষ্ট্রীয় কাঠামোর পরিপন্থী।
কিন্তু তৃণমূল কংগ্রেস কেন এর বিরোধিতা করছে সে বিষয়েও স্পষ্ট যুক্তি পাওয়া গিয়েছে রাজ্যের শাসকদলের তরফ থেকে। তৃণমূল কংগ্রেসের তরফ থেকে বলা হয়েছে, এই গঙ্গা চুক্তি একটি ত্রিপাক্ষিক চুক্তি। পশ্চিমবঙ্গ এই চুক্তির একটা অংশ। সেখানে পশ্চিমবঙ্গকে উপেক্ষা করে কীভাবে এই চুক্তি পুনর্নবীকরণ হতে পারে।
তৃণমূল কংগ্রেসের অভিযোগ, এই চুক্তি অনুসারে আগে রাজ্যের যা প্রাপ্য সেই অর্থই এখনও রাজ্য পায়নি। এমনকী রাজ্যে গঙ্গার ড্রেজিংও বন্ধ হয়ে গিয়েছে। এর ফলে প্রবল ভাঙনের মুখে পড়েছে রাজ্যের একাধিক অংশ। রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রী 2022 সালের ফেব্রুয়ারি মাসে এর বিরোধিতা করে প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদিকে চিঠি লিখেছিলেন ৷ যেখানে তিনি বলেছেন, কী ধরনের ভয়ানক গঙ্গা ভাঙনের শিকার হচ্ছে রাজ্য। মালদা, মুর্শিদাবাদ এবং নদিয়ার বিস্তীর্ণ এলাকায় ভয়ংকর নদী ভাঙন শুরু হয়েছে ৷ এই অবস্থায় কেন্দ্রের এই চুক্তি নিয়ে পুনর্বিবেচনা করা উচিত। কিন্তু বাস্তবে দেখা গেল সেসব বিষয়কে উপেক্ষা করেই নবীকরণের পথে এগোল কেন্দ্র। আর তারই বিরোধিতা করছে তৃণমূল কংগ্রেস।