পশ্চিমবঙ্গ

west bengal

ETV Bharat / state

কাজ নিয়ে প্রশ্ন তুলতেই ভাঙন-দুর্গতকে গ্রেফতারির নির্দেশ তৃণমূল বিধায়কের - TMC MLA Samar Mukherjee - TMC MLA SAMAR MUKHERJEE

Ganges Erosion in Malda: ভাঙন দুর্গত এলাকা পরিদর্শনে আসেন রতুয়ার তৃণমূল বিধায়ক ৷ ভাঙন রোধের কাজ নিয়ে প্রশ্ন তুলতেই মেজাজ হারিয়ে দুর্গতকেই গ্রেফতারির নির্দেশ দিয়ে বসলেন সমর মুখোপাধ্যায় ৷ ঘটনায় হতবাক চাঁচলের মহকুমাশাসক সৌভিক মুখোপাধ্যায় ৷

Ganges Erosion in Malda
ভাঙন দুর্গতদের ক্ষোভের মুখে মেজাজ হারালেন বিধায়ক (নিজস্ব ছবি)

By ETV Bharat Bangla Team

Published : Aug 11, 2024, 5:57 PM IST

মালদা, 11 অগস্ট: ক'দিন আগেই এএসআই সংরক্ষিত এলাকায় ঢুকে দাদাগিরি দেখান তৃণমূল পরিচালিত কালনা পৌরসভার চেয়ারম্যান আনন্দ দত্ত ৷ সেখানকার নিরাপত্তারক্ষীদের প্রাণে মেরে ফেলার অভিযোগও ওঠে তাঁর বিরুদ্ধে ৷ এবার এলাকায় গিয়ে সটাং গঙ্গা ভাঙনের দুর্গতকে গ্রেফতারির নির্দেশ দিয়ে বসলেন রতুয়ার শাসক শিবিরের বিধায়ক সমর মুখোপাধ্যায় ৷ এমনকী ক্ষোভের মুখে পড়ে মেজাজ হারিয়ে ওই দুর্গতকে ধাক্কা মেরে সরিয়ে দিতে দেখা যায়ও তাঁকে ৷

ভাঙন দুর্গতকে গ্রেফতারির নির্দেশ বিধায়কের (ইটিভি ভারত)

বিধায়ক যে ভাঙন দুর্গতকে গ্রেফতার করার নির্দেশ দিয়েছিলেন, সেই বিষ্ণুপ্রসাদ সরাফ বলছেন, "আমি শুধু জেলা সেচ দফতরের চিফ ইঞ্জিনিয়ারকে বলেছিলাম, এখানে ভাঙন রোধ করতে হলে শুধুমাত্র নদীতে বালির বস্তা ফেললে হবে না ৷ নদীতে কঞ্চি সহ বাঁশ ফেলতে হবে ৷ তাতে ভাঙন কিছুটা হলেও প্রতিহত হতে পারে ৷ একথা শুনেই বিধায়ক মেজাজ হারিয়ে বসেন ৷ আমাকে গ্রেফতার করার নির্দেশ দেন ৷ আজ তিনি আসবেন বলে তাঁরই লোকজন আমাদের ডেকে এনেছিল ৷ এভাবেই যদি তিনি অপমান করেন তবে আমাদের ডাকার প্রয়োজন কী ছিল?"

ভাঙন দুর্গত এলাকা পরিদর্শনে রতুয়ার বিধায়ক সমর মুখোপাধ্যায় (নিজস্ব ছবি)

চলতি মরশুমে গঙ্গা ভাঙনে সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত রতুয়া 1 নম্বর ব্লকের মহানন্দটোলা গ্রাম পঞ্চায়েতের কান্তটোলা গ্রাম ৷ প্রায় নিশ্চিহ্ন কান্তটোলার পাশাপাশি পাশের শ্রীকান্তটোলা গ্রামের অবস্থা একইরকম ৷ এবার তার নজরে পাশে থাকে মুলিরামটোলা ৷ এদিকে গত চারদিন ধরে জলস্তর বাড়ছে গঙ্গা ও ফুলহরের ৷ ভাঙনের সঙ্গে বন্যা শুরু হয়ে গেলে পরিস্থিতি আরও জটিল হয়ে উঠবে ৷ সম্ভবত সে কথা চিন্তা করেই রবিবার সেচ দফতরের ইঞ্জিনিয়ার ও ব্লক প্রশাসনের আধিকারিকদের নিয়ে এসব এলাকা পরিদর্শনে যান চাঁচলের মহকুমাশাসক সৌভিক মুখোপাধ্যায় ৷ সঙ্গে ছিলেন রতুয়ার বিধায়ক সমর মুখোপাধ্যায় ৷

দীর্ঘদিন ধরেই প্রশাসনিক বঞ্চনার অভিযোগ তুলে আসছেন এই এলাকার ভাঙন পীড়িতরা ৷ স্থানীয়দের রোষের মুখে জনপ্রতিনিধিরাও ৷ তাঁরা এখন আর তৃণমূল-বিজেপি কিংবা কোনও দল দেখেন না ৷ জনপ্রতিনিধিদের উদ্দেশ্যে প্রতিদিন গালমন্দ পাড়েন ৷ তাঁদের অভিযোগ, বারবার এই এলাকা গঙ্গা ভাঙনের কবলে পড়লেও নেতারা কিছু করেন না ৷ মানুষ খেয়েপরে বেঁচে রয়েছে কি না, সেটা জানারও অনুভব করেন না তাঁরা ৷ শুধু নির্বাচন এলেই ভাঙন রোধের কাজ নিয়ে প্রতিশ্রুতির বন্যা বইয়ে ভোট নিয়ে চলে যান ৷ একই অবস্থা প্রশাসনেরও ৷ এত ভাঙন হলেও ব্লক কিংবা মহকুমা প্রশাসনের তরফে কেউ এলাকা পরিদর্শন করেননি ৷ ভাঙন রোধের কাজও শুরু করা হয়নি বলে অভিযোগ ৷ শেষ পর্যন্ত এ দিন মহকুমাশাসক সহ সেচ দফতরের একটি দল এলাকা পরিদর্শন করে ৷

গঙ্গা ভাঙনে সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত কান্তটোলা গ্রাম (নিজস্ব ছবি)

প্রশাসনিক আধিকারিকরা লঞ্চ থেকে পাড়ে নামতেই নিজেদের ক্ষোভ উগড়ে দেন স্থানীয়রা ৷ রতুয়ার বিধায়ককে ঘিরেও বিক্ষোভের ঢেউ বয়ে যায় ৷ তখনই মেজাজ হারিয়ে ফেলেন সমর মুখোপাধ্যায় ৷ সেখানে উপস্থিত এক দুর্গতকে ধাক্কা দিতে শুরু করেন তিনি ৷ সঙ্গে চলছিল অশালীন গালিগালাজ ৷ তিনি ওই দুর্গত গ্রামবাসীকে গ্রেফতার করার নির্দেশ দেন সঙ্গে থাকা পুলিশকে ৷ শেষ পর্যন্ত খোদ মহকুমাশাসক তাঁকে নিরস্ত করেন ৷ এরপর সোজা লঞ্চে গিয়ে বসে যান বিধায়ক ৷ এই ঘটনা নিয়ে সংবাদমাধ্যমের সামনে কোনও রা কাটেননি তিনি ৷

বিধায়কের আচরণে ক্ষুব্ধ আরেক ভাঙন দুর্গত শচীন মণ্ডল ৷ তিনি বলেন, "গত বছর বিধায়ক তাঁর বাড়িতে বৈঠক ডেকেছিলেন ৷ আমাদের যেতে বলেছিলেন ৷ সেখানে তাঁর পা-হাত ধরে ভাঙন রোধের কাজ চালুর আবেদন করেছিলাম ৷ তিনি আমাদের এলাকার জনপ্রতিনিধি ৷ তিনিই তো আমাদের দুঃখ-কষ্টের কথা সরকারকে জানাবেন ৷ কিন্তু তিনি সেদিন তিনি আমাদের ঘরের মা-বউদের অশালীন ভাষায় কটুক্তি করেছিলেন ৷"

তাঁর কথায়,"এক বছর ধরে গঙ্গা এখানে পাড় কাটছে ৷ চেষ্টা করলে এই ভাঙন থামানো যেত ৷ এতদিন সেই কাজ সরকার কেন করেনি? আজ বিধায়ক সহ প্রশাসনিক কর্তারা এখানে এসেছিলেন ৷ আমরা তাঁদের কাছে বাঁচার আর্জি জানাচ্ছিলাম ৷ তখন বিধায়ক তাঁদের সঙ্গে থাকা পুলিশকে আমাদের গ্রেফতার করতে বলেন ৷ এখানে যদি মানুষই না থাকে, তবে তাঁরা আসছেন কেন? কেন ভোট নিতে আসছেন? আমরা তো মরেই গিয়েছি ৷ মরা মানুষের কাছে আসার কারণ কী? কাটাহা দিয়ারায় এখনও অনেক গ্রাম রয়েছে ৷ গ্রামগুলোকে বাঁচাতেই হবে ৷"

এ দিনের ঘটনা নিয়ে বিধায়ক সমর মুখোপাধ্যায় কোনও মন্তব্য করেননি ৷ এই ঘটনায় মহকুমাশাসক সৌভিক মুখোপাধ্যায়ও মুখ বন্ধ রেখেছেন ৷ তিনি শুধু বলেন, "আজ সেচ দফতরের চিফ ইঞ্জিনিয়ার নিজে এসে গঙ্গা ভাঙন দেখে গেলেন ৷ তাঁর সঙ্গে অন্যান্য প্রশাসনিক আধিকারিকরাও রয়েছেন ৷ আমি নিজেও আজ এলাকা পরিদর্শন করে গেলাম ৷ এখন গঙ্গা বিপদসীমার উপর দিয়ে বইছে ৷ তবু আজ থেকেই তাঁরা ভাঙন রোধের কাজ শুরু করবেন ৷ যতটা পারা যায় মানুষকে নিরাপত্তা দেওয়া হবে ৷ গঙ্গা ভাঙনে কান্তটোলা প্রায় পুরোটাই চলে গিয়েছে ৷ শ্রীকান্তটোলার যেটুকু অংশ বেঁচে রয়েছে সেটাও চলে যেতে বসেছে ৷ সবাইকে পর্যাপ্ত ত্রাণ দেওয়া হচ্ছে ৷ আমাদের সরকার মানুষের পাশে রয়েছে ৷ দুর্গতদের পুনর্বাসনের দাবি আমরা খতিয়ে দেখছি ৷"

ABOUT THE AUTHOR

...view details