মালদা, 8 জানুয়ারি: মালদার তৃণমূল নেতা দুলাল সরকার খুনে অভিযুক্ত হয়েছেন দলেরই আরেক নেতা নরেন্দ্রনাথ তিওয়ারি। তাঁকে গ্রেফতারও করা হয়েছে। এবার জেলা তৃণমূল সহ-সভাপতি দুলাল সরকার খুনের ঘটনায় ধৃত টাউন তৃণমূল সভাপতি নরেন্দ্রনাথ তিওয়ারি বিস্ফোরক দাবি করলেন। তাঁর দাবি, খুনের ঘটনার নেপথ্য আছে বড় মাথা।
বুধবার তাঁকে তিন দিনের পুলিশি হেফাজতের নির্দেশ দেয় জেলার একটি আদালত ৷ আদালত থেকে বেরনোর সময় এই বিস্ফোরক মন্তব্য করেছেন নরেন্দ্রনাথ তিওয়ারি ৷ জানা গিয়েছে, দুলাল সরকার খুনের ঘটনায় মোট পাঁচজনকে গ্রেফতার করা হয়েছে- শামি আখতার, টিঙ্কু ঘোষ, মহম্মদ আবদুল গনি, অভিজিৎ ঘোষ এবং অমিত রজক ৷
এদিকে এদিন কলকাতায় সাংবাদিক বৈঠক করে এডিজি (সাউথ, আইন ও শৃঙ্খলা) সুপ্রতিম সরকার বলেন, "তৃণমূল নেতা দুলাল সরকার খুনের ঘটনায় মূল চক্রী নরেন্দ্রনাথ তিওয়ারি ও স্বপন শর্মা ৷ পঞ্চাশ লক্ষ টাকার বিনিময়ে খুনের বরাত দেওয়া হয়েছিল ৷ যে চারজন দুষ্কৃতী গাড়িতে এসেছিলেন, তাদের মধ্যে দু'জন ধরা পড়েছেন ৷ ড্রাইভার ছিলেন আশরাফ খান নামে একজন ৷ তাকে এখনও পাওয়া যায়নি ৷ তিনি গাড়িটা চালিয়ে এসেছিলেন ৷ এছাড়া আরও দু'জন পলাতকের মধ্যে একজন কৃষ্ণ রজক ওরফে রোহন ৷ তিনিও গাড়িতে ছিলেন ৷ মোট চারজন গাড়িতে ছিলেন- আশরফ, শামি আখতার, টিঙ্কু ঘোষ এবং আরেকজন পলাতক কৃষ্ণ রজক ওরফে রোহন ৷ অমিত রজকের কথা আগে বলেছি ৷ তিনি কৃষ্ণ রজকের ভাই ৷ আরও একজন পলাতক । তাঁর নাম বাবলু যাদব ৷ তিনি গাড়িতে না থাকলেও সার্বিক পরিকল্পনার সঙ্গে যুক্ত ৷ এই দু'জন পলাতকে খুঁজতে বিশেষ টিম গঠন করা হয়েছে ৷ তাদের খোঁজ দিতে পারলে 2 লক্ষ টাকা পুরস্কার দেওয়া হবে, ঘোষণা করেছে মালদা জেলা পুলিশ ৷" |
দুপুর আড়াইটে নাগাদ মালদা জেলা আদালত চত্বরে ভিড় উপচে পড়ে ৷ দুলাল সরকার খুনের ঘটনায় আদালতে পেশ করা হয় এক সময়ের দাপুটে নেতা নরেন্দ্রনাথ তিওয়ারি এবং কুখ্যাত দুষ্কৃতী বলে পরিচিত স্বপন শর্মাকে ৷ আদালত চত্বরের আইনশৃঙ্খলা বজায় রাখতে মোতায়েন করা হয়েছিল অতিরিক্ত পুলিশ বাহিনীও ৷ ধৃতদের নিরাপত্তা সুনিশ্চিত করতে একদম জিআরও গেটের সামনে গাড়ি থেকে নামিয়ে আদালতে পেশ করা হয় দু’জনকে ৷ শুনানি শেষে আদালত থেকে বেরিয়ে পুলিশের গাড়িতে ওঠার সময় নরেন্দ্রনাথ তিওয়ারি ওরফে নন্দু সাংবাদিকদের বলেন, "বড়ো মাথা ! বাবলা শেষ, নন্দু হাফ শেষ ৷ বড় মাথা মালদাতেই রয়েছে ৷ এই এলাকারই বড়ো পদে রয়েছে ৷"
সহকারি পাবলিক প্রসিকিউটর দেবজ্যোতি পাল বলেন, "দুলাল সরকার খুনের ঘটনায় গতকাল নরেন্দ্রনাথ তিওয়ারি ও স্বপন শর্মা দু'জনকে থানায় জেরা করা হয়েছে ৷ এই ঘটনায় এর আগে যাদের ধরা হয়েছে, তাদের বয়ানের ভিত্তিতে এবং ফোনে যোগাযোগের সূত্র ধরে তাদের জিজ্ঞাসাবাদ চলেছে ৷ জেরায় তদন্তকারী অফিসারদের সন্দেহ আরও দৃঢ় হওয়ায় তাঁদের গ্রেফতার করা হয়েছে ৷ নরেন্দ্রনাথ তিওয়ারির তরফে আইনজীবী তাঁর স্বাস্থ্যের কথা বলে জামিনের আবেদন করেছিলেন ৷ আরেক ধৃতের আইনজীবীও সেই আবেদন করেছেন ৷ আদালত সমস্ত কিছু দেখে ধৃতদের তিনদিনের পুলিশি হেফাজতের আবেদন মঞ্জুর করেছে ৷"
আইনজীবী রাহুলরঞ্জন মিশ্র বলেন, "নরেন্দ্রনাথ তিওয়ারির হয়ে আমরা জামিনের আবেদন করেছিলাম ৷ আমরা আদলতে জানিয়েছি, তিনি ঘটনার সঙ্গে জড়িত নন ৷ ঘটনার তদন্তে তিনি এখনও পর্যন্ত সমস্তরকম সাহায্য করেছেন, আগামিদিনেও করবেন ৷ তাঁর বয়স ও শারীরিক অসুস্থতার দিকও আমরা তুলে ধরেছি ৷"
দু'দিন আগেই নিহত তৃণমূল নেতার স্ত্রী চৈতালি ঘোষ সরকার দাবি করেছিলেন, "দুলাল সরকারের চেয়ারম্যানের পদ পাওয়া নিয়ে আলোচনা চলছিল ৷ সেই কারণেই তাঁকে খুন করা হতে পারে ৷" এই ঘটনায় কৃষ্ণেন্দুনারায়ণ চৌধুরীও দাবি করেছেন, এর পিছনে আরও বড়ো মাথা থাকতে পারে ৷ আদালত থেকে ফেরার পথে নরেন্দ্রনাথ তিওয়ারির মুখেও সেই কথা ৷ তবে কলকাতায় পুলিশের তরফে যেভাবে দু'জনকে মূলচক্রী বলে সাফ জানিয়ে দেওয়া হয়েছে, তাতে জেলা জুড়ে প্রশ্ন উঠছে ৷