বোলপুর, 22 ডিসেম্বর: 'ওয়ার্ল্ড হেরিটেজ' শান্তিনিকেতনে এই প্রথমবার হতে চলেছে ঐতিহ্যবাহী পৌষমেলা ৷ 23 ডিসেম্বর থেকে 28 ডিসেম্বর পর্যন্ত চলবে এই মেলা ৷ এবছর প্রায় 1700 দোকান বসছে এখানে ৷ এবারের পৌষমেলায় ভিড়ও অনেক বেশি হবে বলে মনে করছে প্রশাসন ও আয়োজক শান্তিনিকেতন ট্রাস্ট ও বিশ্বভারতী কর্তৃপক্ষ ৷ তাই নিরাপত্তায় কোনও খামতি রাখতে চাইছে না তারা ৷
কঠোর নিরাপত্তার ব্যবস্থা করা হয়েছে জেলা পুলিশ প্রশাসনের তরফে ৷ সিসিটিভি ও ড্রোন ক্যামেরার মাধ্যমে চলবে নজরদারি ৷ থাকছে ওয়াচ টাওয়ার, অ্যান্টি ক্রাইম টিম ৷ এবার ভিড় যে অতিরিক্ত হবে, এমনটাই মনে করছে প্রশাসন ৷ একটিও হোটেল, লজ, হোমস্টেতে তিল ধারণের জায়গা নেই ৷
প্রথমবার 'ওয়ার্ল্ড হেরিটেজ' শান্তিনিকেতনে পৌষমেলায় কঠোর নিরাপত্তা ব্যবস্থা ৷ (ইটিভি ভারত) 2019 সালে শেষবার মহর্ষি দেবেন্দ্রনাথ ঠাকুরের ট্রাস্ট ডিড অনুযায়ী শান্তিনিকেতন ট্রাস্ট ও বিশ্বভারতী কর্তৃপক্ষ পূর্বপল্লির মাঠে পৌষমেলার আয়োজন করেছিল ৷ 2020 সালে কোভিড পরিস্থিতির জন্য মেলা বন্ধ রাখা হয় ৷ পরবর্তীতে বিশ্বভারতীর তৎকালীন উপাচার্য বিদ্যুৎ চক্রবর্তীর সঙ্গে রাজ্য সরকারের সংঘাত চরমে পৌঁছয় ৷ ফলে 2021-23 সালে মেলার আয়োজন করেনি ট্রাস্ট ও বিশ্বভারতী কর্তৃপক্ষ ৷ এমনকি পূর্বপল্লির মাঠেও মেলার আয়োজন করতে দেওয়া হয়নি ৷
পৌষমেলার নিরাপত্তায় পুলিশের ওয়াচ টাওয়ার ৷ (নিজস্ব ছবি) চারবছর পর পূর্বপল্লির মাঠে ফিরছে ঐতিহ্যবাহী পৌষমেলা ৷ শান্তিনিকেতনকে 'ওয়ার্ল্ড হেরিটেজ' ঘোষণার পর প্রথমবার পৌষমেলা হচ্ছে পুরনো ঐতিহ্য মেনে ৷ তাই কড়া নিরাপত্তায় মুড়ে ফেলা হয়েছে মেলা প্রাঙ্গণ ও আশেপাশের এলাকা ৷ মেলার নিরাপত্তায় সিভিক ভলান্টিয়ার, পুরুষ, মহিলা-সহ প্রায় 2 হাজার পুলিশকর্মী থাকছেন ৷ প্রায় তিনশো সিসিটিভি ক্যামেরা দিয়ে মুড়ে ফেলা হয়েছে মেলা চত্ত্বর ও প্রতিটি প্রবেশদ্বার ৷
পৌষমেলা শুরুর একদিন আগে শেষ মুহূর্তের প্রস্তুতি তুঙ্গে ৷ (নিজস্ব ছবি) নজরদারির জন্য 10টি ওয়াচ টাওয়ার বসানো হয়েছে ৷ এছাড়া, পাঁচটি ড্রোন ক্যামেরা থাকছে নজরদারিতে ৷ মেলার নিরাপত্তার দায়িত্বে পুলিশ সুপার, অতিরিক্ত পুলিশ সুপার, এসডিপিও, ডিএসপি পদমর্যাদার 18 জন আধিকারিক রয়েছেন ৷ মেলায় কেপমারি, ইভটিজিং-সহ অন্যান্য অপরাধ রুখতে 12টি অ্যান্টি ক্রাইম দল ও সাদা পোশাকের পুলিশ থাকছে ৷ উইনার্স টিম ও বিশেষ পিঙ্ক মোবাইল ভ্যান মেলা ও তার আশেপাশের এলাকায় মোতায়েন থাকবে মহিলাদের নিরাপত্তায় ৷
পৌষমেলায় পসরা নিয়ে বসতে শেষ মুহূর্তের প্রস্তুতি দোকানিদের ৷ (নিজস্ব ছবি) মেলা চত্ত্বরে পুলিশ হেল্পলাইন, পুলিশ কন্ট্রোল রুম থাকছে ৷ যে কেউ সেখানে গিয়ে নিজেদের অভিযোগ জানাতে পারবেন ৷ তাছাড়াও, যানবাহন নিয়ন্ত্রণ করতে মেলায় ঢোকার প্রতিটি জায়গায় ড্রপ গেট থাকছে ৷ রাজ্য পুলিশের পাশাপাশি বিশ্বভারতীর নিজস্ব স্বেচ্ছাসেবক মোতায়েন করা হবে, যাঁরা মেলায় ঘুরে পরিবেশ বিষয়ক সচেতনতামূলক প্রচার চালাবেন ৷ কারণ, এবারের পৌষমেলা পরিবেশবান্ধব ৷ মেলার জন্য মাঠের চতুর্দিকে পর্যাপ্ত অস্থায়ী শৌচাগার ও বায়ো-টয়লেট তৈরি করা হয়েছে ৷
এবার মেলার অধিক ভিড় হওয়ার আশঙ্কা করছে প্রশাসন ৷ রাস্তাঘাটও ভিড়ে ঠাসা ৷ অন্যদিকে, মেলার ছ’দিন পর্যটকদের জন্য খোলা থাকছে সোনাঝুরির খোয়াই হাট ৷ সেদিকেও যান নিয়ন্ত্রণ করতে পুলিশ মোতায়েন করা হয়েছে ৷
বীরভূম জেলার অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (বোলপুর) রানা মুখোপাধ্যায় বলেন, "পৌষমেলা সুষ্ঠুভাবে পরিচালনা করতে যা-যা ব্যবস্থা নেওয়ার আমরা নিয়েছি ৷ নিরাপত্তার দিকে বাড়তি নজর রয়েছে ৷ কোনওরকম খামতি রাখা হবে না ৷ সব প্রস্তুতি প্রায় শেষ ৷"