কলকাতা, 11 ডিসেম্বর: মন্দির ও তার নির্মাণ ঘিরে তরজা এ দেশে নতুন কিছু নয়। কিন্তু এবার মন্দির-বিতর্কে অন্য একটি দিক উন্মোচন করলেন বিরোধী দলনেতা শুভেন্দু অধিকারী। দিঘায় নির্মীয়মাণ জগন্নাথ মন্দিরের সামনে দাঁড়িয়ে উদ্বোধনের দিন ঘোষণা করেছেন মুখ্য়মন্ত্রী। আর তার থেকে কয়েকশো কিলোমিটার দূরে রাজ্য বিধানসভার বাইরে দাঁড়িয়ে শুভেন্দু বললেন, মন্দির নয় তৈরি হচ্ছে জগন্নাথ ধাম কালচারাল সেন্টার। দেখালেন সরকারি নথিও।
পাশাপাশি বিরোধী দলনেতার আরও দাবি, মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় 2026 সালে হিন্দু ভোট পাবেন না। তিনি একজন ভেজাল হিন্দু । তাঁর বিরুদ্ধে হিন্দুরা ঐক্যবদ্ধ হচ্ছেন। আর সেই আতঙ্কেই মন্দির তৈরি করা হয়েছে। সংবিধান সরকারকে মন্দির তৈরির অনুমতি দেয়নি দাবি করে তিনি বলেন, "সংবিধান কোনও সরকারকে মন্দির তৈরির অনুমতি দেয় না। সরকারি খরচে কোনও ধর্মীয় প্রতিষ্ঠান তৈরি করা যায় না। অতএব মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় যা করছেন সেটি মিথ্যাচার ।"
শুধু আইন বা সংবিধানের প্রশ্নে নয়, মমতা যা করেছেন তার ধর্মীয় মান্যতা নেই বলেও দাবি করেন শুভেন্দু। তাঁর কথায়, "চারধামের একটি পুরী। তাকে নকল করবেন না। এই অধিকার কোনও হিন্দু আপনাকে (মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়) দেয়নি। কেদারনাথ,বদ্রীনাথের নকল হয় না। শংকরাচার্যদের বিকল্প হয় না । গীতাকে বদলে দেওয়া যায় না। আপনি অভিনন্দকে শুভনন্দন করতে পারেন। কিন্তু পুরীধামকে বদল আপনি করতে পারেন না। আপনার এই সাহস হয় কোথা থেকে!"
একই সঙ্গে ইসকনের রাধারমণ দাসকেও আক্রমণ করেছেন বিরোধী দলনেতা । জগন্নাথ ধাম নিয়ে সাংবাদিক সম্মেলনে মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের সঙ্গেই ছিলেন তিনি। তাঁর সম্পর্কে তিনি বলেন, "আমার লজ্জা লেগেছে মাননীয় রাধারমণ দাসজিকে দেখে ।"
এরপরই ইসকন তৈরির ইতিহাস সাংবাদিকদের সামনে তুলে ধরে শুভেন্দু বলেন, "শ্রীল প্রভুপাদ ইসকন তৈরি করেছেন চৈতন্যদেবের ভাবধারায় । শ্রীচৈতন্যদেব পুরীধামে তিনবার গিয়েছেন। তমলুকের মহাপ্রভু মন্দিরে কখনও 10 দিন, আবার কখনও 15 দিন থেকেছেন। প্রত্যেক বছর চৈতন্যদেবের শুভাগমন হিসাবে সেখানে শোভাযাত্রা হয়। চৈতন্যদেবের পুরীধাম নিয়ে যে কথা আছে তার শ্রীল প্রভুপাদ গোটা পৃথিবীতে ছড়িয়ে দিয়েছেন । আর আপনি ( রাধারমণ দাস) মুখ্যমন্ত্রীর পাশে দাঁড়িয়ে কেন আপত্তি করলেন না ? আপনার আপত্তি করা উচিত ছিল। কারণ আপনি কলকাতার ইসকনের একজন কার্যকর্তা । বাংলাদেশ নিয়ে রোজ আপনার বক্তব্য শোনা যায়। আজ পুরীধাম, শ্রীল প্রভুপাদ ও শ্রীচৈতন্যদেবকে অপমান করা হল। আপনি সেটা দেখলেন । এই দুর্ভাগ্য রাখার জায়গা নেই ।"
বিরোধী দলনেতা অন্য একটি প্রসঙ্গে দাবি করেন, এদিনের ঘটনা থেকে প্রমাণিত হয়েছে সরকারে থাকলে আর টাকা থাকলে এবং পুলিশ হাতে থাকলে পশ্চিমবঙ্গে যা ইচ্ছা তাই করা সম্ভব। এ কথা বলেই শুভেন্দুর চ্যালেঞ্জ, "মুখ্যমন্ত্রী যা যা বলছেন তা করে দেখান । শুধু ওড়িশা নয়, এ রাজ্য থেকেও প্রতিবাদ উঠবে। পুরীধামে নকল মানব না আমরা। সরকারি টাকায় কোনও ধর্মীয় কাজকর্ম করতে আপনি পারেন না ।" সবমিলিয়ে মন্দিরের উদ্বোধনের দিন ঘোষণা থেকেই বেজে গেল রাজনীতির দামামা। আগামিদিনে এই মন্দির ঘিরে রাজনীতির পারদ আরও কতটা চড়ে সেটাই দেখার।