কলকাতা/হাওড়া, 24 ডিসেম্বর:বাবাসাহেব আম্বেদকরকে নিয়ে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহের করা মন্তব্যকে বিকৃত করে বিভ্রান্তি ছড়াবার চেষ্টা করছে কংগ্রেস ও তৃণমূল । মঙ্গলবার বিধানসভা থেকে এমনই অভিযোগ করলেন বিরোধী দলনেতা শুভেন্দু অধিকারী ।
এ দিন তিনি বলেন, "সর্বভারতীয় স্তরে কংগ্রেস এবং এখানে কংগ্রেসের ভাঙা অংশ তৃণমূল বাবাসাহেব আম্বেদকরকে অপমান করার কাজ করেছে । কারণ কংগ্রেস সংরক্ষণ বিরোধী, বাবাসাহেব আম্বেদকর বিরোধী ও সংবিধান বিরোধী দল । জরুরি অবস্থা প্রয়োগ করে সংবিধানকে ভুলুণ্ঠিত করার কাজ করেছিল কংগ্রেস । জওহরলাল নেহরু আর ইন্দিরা গান্ধি আগেই ভারতরত্ন পান ৷ তবে বিআর আম্বেদকরকে 1990 সাল পর্যন্ত অপেক্ষা করতে হয় ভারতরত্ন পাওয়ার জন্য । ওই সময় বিজেপি সমর্থিত কেন্দ্র সরকার বিআর আম্বেদকরকে ভারতরত্নে ভূষিত করেন ।"
তাঁর কথায়, "বিআর আম্বেদকরকে নিয়ে এই অপপ্রচার পশ্চিমবঙ্গের নিপীড়িত অবহেলিত জনজাতি সমাজ গ্রহণ করবে না । কারণ পশ্চিমবাংলায় বিশেষ সম্প্রদায়ের 77টি গোষ্ঠীকে ওবিসি তালিকায় ঢুকিয়ে প্রকৃত ওবিসিদের অধিকার কেড়ে নেওয়া হয়েছে এবং স্থায়ী নিয়োগ বন্ধ করে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের সরকার ক্যাজুয়াল ও কন্ট্রাকচুয়াল নিয়োগ করেছে, যেখানে এসটি এসসি সংরক্ষণ তুলে দিয়েছে । বাবাসাহেব আম্বেদকর যে সংরক্ষণ ভারতবাসীকে দিয়েছিলেন, সেই সংরক্ষণের অধিকার থেকে তফশিলি জাতি এবং উপজাতিদের পশ্চিমবাংলায় বঞ্চিত করা হচ্ছে ।"
বিরোধী দলনেতার আরও সংযোজন, "দলিত পরিবারের কন্যা সন্তানরা শারীরিকভাবে অত্যাচারিত হচ্ছে এবং তাঁদের খুন করা হচ্ছে । তাই এই নাটক সাধারণ মানুষ গ্রহণ করবে না এবং বিজেপিও লাগাতার প্রতিবাদের মধ্যে দিয়ে কংগ্রেস ও তৃণমূল কংগ্রেসের মিথ্যা প্রচার বন্ধ করবে ।"
কী মন্তব্য করেছিলেন অমিত শাহ ?
উল্লেখ্য, সংসদের উচ্চকক্ষে সংবিধানের 75 বছর পূর্তি বিতর্কে ভাষণ দিতে গিয়ে কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহ বলেছিলেন, "এখন এক ফ্যাশন হয়েছে - আম্বেদকর, আম্বেদকর, আম্বেদকর ৷ এত বার যদি ভগবানের নাম নিত, তবে সাত জন্ম স্বর্গবাস হত ৷ একশো বার আম্বেদকরের নাম নেওয়া হয়, কিন্তু আমি বলতে চাই তাঁর প্রতি আপনাদের (কংগ্রেস) অনুভূতি কী ? জওহরলাল নেহরুর সঙ্গে আম্বেদকরের অনেক মতপার্থক্য ছিল ৷ সেই কারণে নেহরুর মন্ত্রিসভা থেকে পদত্যাগ করেন তিনি ৷"
শুধু তাই নয়, অমিত শাহ মনে করিয়ে দেন বাবাসাহেবের বিরুদ্ধে নির্বাচনে প্রচার পর্যন্ত করেছিলেন জওহরলাল নেহরু । আর তাঁর এমন মন্তব্যের পরই হইচই পড়ে যায় রাজনৈতিক মহলে ৷ গর্জে ওঠে কংগ্রেস ও তৃণমূল ৷ সংসদ চত্বরে আম্বেদকরের ছবি হাতে বিক্ষোভ দেখান কংগ্রেস সাংসদরা ৷
এমনকি এই ইস্যুতে অমিত শাহের কড়া সমালোচনা করেন তৃণমূল সুপ্রিমো তথা বাংলার মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় ৷ তিনি লেখেন, "লক্ষ লক্ষ মানুষ আম্বেদকরকে অনুসরণ করেন ৷ তিনি অনেকের অনুপ্রেরণা ৷ সেইসব মানুষদের কাছে এমন মন্তব্য অপমানজনক ৷ কিন্তু যে দলের কাছে ঘৃণা ও ধর্মান্ধতাই অস্ত্র, তাদের থেকে আর কীই বা আশা করা যায় ?"