দুর্গাপুর, 29 জুলাই: বিগত বাম সরকারের আমলে কাঁকসা, বুদবুদ থানা এলাকার পানাগড়ে তৈরি হয়েছিল শিল্পতালুক। বর্তমান রাজ্য সরকারের সময়ে সেই শিল্পতালুকে একের পর এক কলকারখানা গড়ে উঠছে । পশ্চিম বর্ধমানের পানাগড় শিল্পতালুকের একটি স্পিরিট তৈরির কারখানার দুর্গন্ধে জেরবার এলাকার মানুষ ৷ এই অভিযোগে সোমবার, স্কুলের ক্ষুদে পড়ুয়াদের নিয়ে পানাগড়-মোড়গ্রাম রাজ্য সড়ক অবরোধ করে তুমুল বিক্ষোভ দেখান এলাকাবাসীরা ৷
পানাগড়ে রাজ্যসড়ক অবরোধ বিক্ষুব্ধ পড়ুয়াদের (ইটিভি ভারত) অভিযোগ, স্পিরিট তৈরির কারখানার দূষণে অসুস্থ হচ্ছে শিশুরা ৷ শ্বাসকষ্ট, চর্মরোগও বাড়ছে এলাকার মানুষের মধ্যে ৷ স্কুলে গিয়েও থাকতে পারছে না পড়ুয়ারা । এই অভিযোগ তুলে একাধিকবার অভিযোগ করেছেন কাঁকসার ডাকবাংলো, সুভাষপল্লী, মনোজপল্লী-সহ বেশ কিছু এলাকার কয়েক হাজার মানুষ ৷
অবিলম্বে ওই কারখানা বন্ধ করার দাবি জানিয়ে এদিনও রাজ্য সড়ক অবরোধ করে বিক্ষোভ দেখান এলাকার সাধারণ মানুষ । দীর্ঘ প্রায় ঘণ্টা তিনেক রাস্তা অবরোধের কারণে তীব্র যানজটের সৃষ্টি হয় ওই রাজ্য সড়কে । পরে পুলিশ প্রশাসনের আশ্বাসের পর অবরোধ ওঠে ৷ এই রাস্তা অবরোধকে কেন্দ্র করে কাঁকসা থানার বিশাল পুলিশ বাহিনী, কমব্যাট ফোর্স যায় ঘটনাস্থলে ৷
প্ল্যাকার্ড হাতে নিয়ে পড়ুয়াদের সঙ্গে নিয়ে রাজ্য সড়কে বসে পড়েন এলাকার মহিলারা । এই অবরোধের জেরে শুরু হয় ব্যাপক উত্তেজনা । পরিস্থিতি সামাল দিতে পৌঁছায় কাঁকসা থানার বিশাল পুলিশ বাহিনী । এই বিক্ষোভে সামিল হয়ে নিকিতা মণ্ডল নামের এক মহিলা অভিযোগ তোলেন, "আমরা এলাকায় থাকতে পারছি না । দুর্গন্ধে মাথা ঘুরছে । বাচ্চারা বমি করছে । অধিকাংশ মানুষের শরীর খারাপ হয়ে যাচ্ছে । তবুও কেউ কোনও ব্যবস্থা নিচ্ছে না । ওই কারখানা বন্ধের দাবি তুলে আজ আমরা রাস্তায় নেমেছি । যতক্ষণ না পর্যন্ত আমাদের দাবি মানা হচ্ছে, ততক্ষণ পর্যন্ত আমরা এভাবেই আন্দোলন চালিয়ে যাব।"
মাত্র কয়েকদিন আগেই অভিযোগ পেয়ে দূষণ নিয়ন্ত্রণ পর্ষদের কর্তারা ওই কারখানায় এসেছিলেন। দূষণ নিয়ন্ত্রণ পর্ষদের এক কর্তাকে ঘিরে বিক্ষোভ দেখিয়েছিলেন স্থানীয়রা । মহিলারাও বারবার ঘর ছেড়ে বাইরে বেরিয়ে এসে আন্দোলন করেছেন স্পিরিট তৈরির কারখানার দুর্গন্ধ বন্ধের দাবিতে । কিন্তু তারপরও কোনও কাজের কাজ হয়নি বলেই অভিযোগ স্থানীয়দের । দূষণ নিয়ন্ত্রণ পর্ষদের পক্ষ থেকে বলা হয়েছিল, কারখানা কর্তৃপক্ষ এক্সপার্টদের নিয়ে এসে দুর্গন্ধ বন্ধের জন্য কাজ করবেন । কিন্তু এখনও পর্যন্ত ওই কারখানা থেকে ছড়ানো দূষণ বন্ধ হয়নি ৷
দুর্গাপুরের মহকুমা শাসক সৌরভ চট্টোপাধ্যায় ইটিভি ভারতকে ফোনে বলেন, "পানাগড় শিল্পতালুক আসানসোল দুর্গাপুর পুলিশ কমিশনারেট এলাকায় পড়লেও প্রশাসনিকভাবে পূর্ব বর্ধমানের অংশ । তবুও আমরা এই সমস্যার সমাধানের জন্য যথাযোগ্য ব্যবস্থা গ্রহণ করব । সাধারণ মানুষের সমস্যা তৈরি হোক, আমরা কেউই তা চাই না । এই সমস্যা থেকে দ্রুত মুক্তি দিতে হবে আমজনতাকে ।"
সাধারণ মানুষের দাবি, রুটি রুজির জন্য কলকারখানার প্রয়োজন । কিন্তু মানুষের নাভিশ্বাস ওঠে কারখানার ছড়ানো দূষণের কারণে, এমন কারখানার প্রয়োজন কতখানি ? সব মিলিয়ে তাই পানাগড় শিল্পতালুকে এই একটি স্পিরিট তৈরির কারখানার ছড়ানো দুর্গন্ধকে কেন্দ্র করে বেশ কয়েক মাস ধরে উত্তাল গোটা এলাকা । প্রশাসনিকভাবে এই সমস্যার সমাধান চাইছেন এলাকার বাসিন্দারা ।