পশ্চিমবঙ্গ

west bengal

ETV Bharat / state

ছেড়েছেন 50 লক্ষের চাকরি, থুতনি দিয়ে ল্যাপটপ চালিয়ে এমটেক করাই লক্ষ্য তুহিনের - TUHIN DEY

রাজস্থানের কোটা থেকে উচ্চ মাধ্যমিক । শিবপুর ইঞ্জিনিয়ারিং কলেজ থেকে কম্পিউটার সায়েন্সে বিটেক সেরেছেন । আইআইটি থেকে এমটেক ও পিএইচডি করতে চান তুহিন দে ৷

Specially challenged Tuhin Dey
মুখ দিয়ে লিখে এমটেক করতে চান তুহিন দে (নিজস্ব ছবি)

By ETV Bharat Bangla Team

Published : Dec 10, 2024, 2:49 PM IST

খড়গপুর, 10 ডিসেম্বর:বিশিষ্ট পদার্থবিজ্ঞানী স্টিফেন হকিং বললেই মাথায় আসে হুইল চেয়ার ৷ তাতে বসেই গোটা বিশ্বে নিজের নাম উজ্জ্বল করেছিলেন তিনি ৷ বিস্ফোরণের তত্ত্ব, ব্ল্যাক হোল আপেক্ষিকতা তত্ত্ব এবং কোয়ান্টাম মেকানিক্স-সহ স্থান-কালের এককতা আবিষ্কার করে বিশ্ববাসীকে তাক লাগিয়ে দিয়েছিলেন ওই বিজ্ঞানী ৷ ঠিক তেমনই এক বিস্ময় বালকের খোঁজ মিলল পশ্চিম মেদিনীপুর জেলার খড়গপুরে ৷

তাঁর নাম তুহিন দে ৷ বয়স 25 বছর ৷ বিশেষভাবে সক্ষম তুহিনের কাছে সম্প্রতি একটি বেসরকারি সংস্থা থেকে এসেছিল 50 লক্ষ টাকার চাকরির প্রস্তাব । তবে তুহিন সেই প্রস্তাবে সাড়া দেননি । কারণ তাঁর লক্ষ্য যে আরও বড় ৷ তিনি আইআইটি খড়গপুর থেকে এমটেক এবং পিএইচডি করতে চান । সেই দিকেই বর্তমানে ধ্যান-জ্ঞান তুহিনের ৷

হুইল চেয়ারে বসে বিশ্বজয়ের স্বপ্ন

তবে তুহিন দে'র পড়াশোনা থেকে 25 বছরের জীবনের সফরটা মোটেও সহজ ছিল না ৷ খড়গপুরের মালঞ্চের বাসিন্দা এই বিশেষভাবে সক্ষম যুবক ৷ পরিবার সূত্রে জানা গিয়েছে, তুহিনের হাতে-পায়ে তেমন জোর নেই ৷ জন্মের মাত্র চার দিনের মধ্যেই তাঁর ধরা পড়ে বিরল মাংসপেশির রোগ । তিনি আর্থ্রোগ্রিপোসিস মাল্টিপ্লেক্স কনজেনিটাল নামক রোগে আক্রান্ত ৷ আর তাতে দু'পায়ে উঠে দাঁড়ানোর মতো সামর্থ্য হারান তুহিন । শুধু তাই নয়, প্রায় অবশ হতে বসা শরীরে হাত দিয়েও কোনও কিছু করার মতো শক্তি নেই তাঁর ৷ তাই বড় হওয়ার পর হুইল চেয়ারই একমাত্র সম্বল হয়ে ওঠে তুহিনের ।

ছোটবেলায় একাধিক জায়গায় চিকিৎসা হয় তুহিন দে'র ৷ তবে কোনও চিকিৎসকই তাঁকে স্বাভাবিক জীবন ফিরিয়ে দিতে পারেননি । কিন্তু মনের জোর প্রবল তুহিনের ৷ সেই মনের জোরেই তো 'বিশ্বজয়' করার তাগিদ অনুভব করেন তিনি । ছেলের একাগ্রতা এবং ইচ্ছেকে প্রাধান্য দেন বাবা সমীরণ দে ও মা সুজাতা দে ৷ হাল ছাড়েননি মেদিনীপুরের পেশায় ব্যবসায়ী সমীরণ ও তাঁর গৃহবধূ স্ত্রীও । তাঁরা একমাত্র ছেলে তুহিনের এই 'অসম' লড়াইয়ে 'মেরুদণ্ড' হয়ে দাঁড়ান ৷

অক্ষমতাকে শক্তি করেন যুবক

আর তাই নিজের শারীরিক প্রতিবন্ধকতাকে পিছনে ফেলেই প্রতিষ্ঠিত হওয়ার দৌড়ে এগিয়ে চলেন তুহিন দে । নিজের অক্ষমতাকে শক্তি করেন তিনি ৷ হাত-পা চলে না তো কী হয়েছে, থুতনি দিয়েই অনায়াসে ল্যাপটপ ও মোবাইল চালাতে পারদর্শী করে তোলেন নিজেকে । এমনকি পেন মুখে ঢুকিয়ে সকাল থেকে রাত পর্যন্ত চলে তাঁর পড়াশোনা ও লেখালেখি । ছোট থেকে নিজেকে বিশেষভাবে সক্ষম না ভেবে আর পাঁচজন সাধারণ ছেলে-মেয়েদের মতোই নিজেকে প্রতিষ্ঠিত করার লড়াই শুরু তাঁর । সেই যাত্রা এখনও জারি রয়েছে ৷ বিটেক করার পর সম্প্রতি আইআইটি থেকে এমটেক করার প্রস্তুতি নিচ্ছেন তুহিন ।

তুহিনের পড়াশোনা

আইআইটি খড়গপুর ক্যাম্পাসের কেন্দ্রীয় বিদ্যালয় থেকে 2017 সালে মাধ্যমিক পাশ করেন তুহিন দে । উচ্চ মাধ্যমিক পাশ করেছেন রাজস্থানের কোটা থেকে । তারপর শিবপুর ইঞ্জিনিয়ারিং কলেজ থেকে কম্পিউটার সায়েন্সে বিটেক করেছেন তিনি । পরীক্ষার সময় তুহিন কখনও কারও সাহায্য নেননি । মুখে কলম এবং পেন্সিল নিয়ে লেখালিখি করতে কোনও সমস্যা হয় না তাঁর ।

এই বিষয়ে তুহিন বলেন, "আমি মুখে পেন বা পেনসিল নিয়ে লিখতে পারি । কোনও সমস্যা হয় না আমার । আর পরীক্ষার সময় অতিরিক্ত সময়ও নিই না । তবে পরীক্ষার সময় কাগজ নেমে গেলে বা পাতা ওলটানোর সময় শিক্ষকেরা সাহায্য করে থাকেন । তবে আমার ছবি আঁকা হোক বা কম্পিউটার চালানো, কোনও কিছুতেই অসুবিধা হয় না ।"

একাধিক পুরস্কার তুহিনের ঝুলিতে

গত 3 ডিসেম্বর 'বিশ্ব প্রতিবন্ধী দিবস' উপলক্ষে পশ্চিম মেদিনীপুর জেলা প্রশাসনের তরফে তুহিন দে'কে 'অ্যাকাডেমিক এক্সেলেন্সি অ্যান্ড ক্রিয়েটিভ ওয়ার্কস' সম্মানে ভূষিত করা হয় । 2011 সালে বেস্ট ক্রিয়েটিভিটির জন্য রাজ্য স্তরে সম্মান পান তিনি । 2012-13 সালে তৎকালীন রাষ্ট্রপতি প্রণব মুখোপাধ্যায়ের হাত থেকে সম্মানিত হন এই যুবক । 2019 সালে রাজস্থানের কোটা থেকে বিশেষ পুরস্কারেও ভূষিত হয়েছেন 'মেদিনীপুরের গর্ব' তুহিন দে ।

ABOUT THE AUTHOR

...view details