ETV Bharat / state

উত্তরবঙ্গের সবচেয়ে বড় শৈব তীর্থ জল্পেশ, মহা শিবরাত্রিকে কেন্দ্র করে তোড়জোড় তুঙ্গে - JALPESH TEMPLE MAHA SHIVRATRI

গত বছরের হুড়োহুড়ি-ধাক্কাধাক্কির মতো পরিস্থিতি এড়াতে তৎপর পুলিশ প্রশাসন থেকে জল্পেশ মন্দির কমিটি ৷ সিসিটিভি থেকে পুলিশে মুড়ে ফেলা হচ্ছে মন্দিরের চারিদিক ৷

Jalpesh temple
মহা শিবরাত্রি উপলক্ষে জল্পেশ মন্দিরে সাজো সাজো রব (নিজস্ব ছবি)
author img

By ETV Bharat Bangla Team

Published : Feb 22, 2025, 1:52 PM IST

জলপাইগুড়ি, 22 ফেব্রুয়ারি: উত্তরবঙ্গের সর্ব বৃহৎ শৈব তীর্থ হল জল্পেশ । 26 ফেব্রুয়ারি অর্থাৎ আগামী বুধবার মহা শিবরাত্রি ৷ সেদিন মহাকুম্ভের মহাযোগ রয়েছে ৷ শিব চতুর্দশীর পুজোকে কেন্দ্র করে তাই এখন সাজো সাজো রব জল্পেশ মন্দির চত্বরে ।

মন্দিরের গায়ে পড়ছে নতুন রংয়ের প্রলেপ । বিভিন্ন সামগ্রী দিয়ে সাজিয়ে তোলা হচ্ছে সমগ্র মন্দির চত্বর । মেলায় যাতে কোনও রকম বিশৃঙ্খলার সৃষ্টি না হয় সেই বিষয়টি মাথায় রেখে প্রচুর পুলিশ মোতায়েন করা হচ্ছে । তাছাড়া মন্দির কমিটির ভলান্টিয়ার-সহ সাদা পোশাকের পুলিশও থাকছে । 50টি সিসিটিভি দিয়ে মুড়ে ফেলা হয়েছে মন্দির চত্বরকে ৷

50টি সিসিটিভি দিয়ে মন্দির চত্বরকে মুড়ে ফেলা হয়েছে (ইটিভি ভারত)

জলপাইগুড়ি জেলার পুলিশ সুপার উমেশ খান্ডবাহালে বলেন, "শিবরাত্রিকে কেন্দ্রে করে প্রচুর মানুষ আসেন জল্পেশ মন্দিরে মহাদেবের মাথায় জল ঢালতে । তাই জল্পেশ মেলার নিরাপত্তার জন্য বিরাট পুলিশ বাহিনী মোতায়েন করা হচ্ছে ৷ যাতে কোনও রকম অপ্রীতিকর ঘটনা না ঘটে সেই কারণে পুলিশ ক্যাম্প থাকবে । মন্দিরে কোন দিক থেকে ভক্তরা ঢুকবেন তা ঠিক করা হয়েছে ।"

প্রতি বছর ফাল্গুন মাসের শিব চতুর্দশীতে জল্পেশ মন্দিরে বিশেষ পুজো হয় । জল্পেশ মন্দির চত্বর এবং সংলগ্ন মাঠে মেলা বসে । ফি বছর প্রায় লক্ষাধিক পুণ্যার্থীরা এখানে আসেন শিবের মাথায় জল ঢালতে ও পুজো দিতে । এবছর এই সংখ্যা বাড়বে বলেই মনে করছে জল্পেশ মন্দির কমিটি ৷ এবার কুম্ভের শাহী স্নানের শেষদিন অর্থাৎ চলতি মাসের 26 তারিখ থেকে জল্পেশ মেলা শুরু হচ্ছে । ফলে যারা কুম্ভ যেতে পারেননি, সেই ভিড়টাও এখানে আছড়ে পড়বে বলে মন্দির কর্তৃপক্ষ মনে করছে ।

Jalpesh temple
নিরাপত্তা জোরদার করা হয়েছে জল্পেশ মন্দির চত্বরে (নিজস্ব ছবি)

জল্পেশ মন্দিরে কড়া নিরাপত্তা

জল্পেশ মন্দির কমিটি সম্পাদক গিরিন্দ্রনাথ দেব বলেন, "এবার শিবরাত্রিতে প্রচুর মানুষের ঢল নামবে । কারণ 26 তারিখে মহাযোগ মহাকুম্ভ ৷ এদিন শিব চতুর্দশী উৎসব জল্পেশ মন্দিরে শুরু হচ্ছে ৷ এর জন্য অনেক প্রস্তুতি নেওয়া হয়েছে ৷ পুলিশ মোতায়েন থাকছে ৷ ভলান্টিয়ার থাকছে মন্দির থেকে মেলা চত্বরে ৷ নিরাপত্তার কারণে 50টি সিসিটিভি দিয়ে মন্দির চত্বরকে মুড়ে ফেলা হয়েছে । ইতিমধ্যেই পুলিশের পক্ষ থেকে নিরাপত্তা খতিয়ে দেখা হয়েছে । ভিড় নিয়ন্ত্রণে সবরকম ব্যবস্থা আমাদের তরফে করা হচ্ছে ৷"

জলপাইগুড়ি জেলাপরিষদের তরফে আয়োজন করা হয় জল্পেশ মেলা ৷ সেই মেলাকে কেন্দ্র করে দশ দিন যাবৎ লক্ষ লক্ষ মানুষের সমাগম হবে বলে আশা প্রকাশ করেছেন জিলা পরিষদের সভাধিপতি কৃষ্ণা রায় বর্মন ।

অতীতে জল্পেশ মন্দিরে দুর্ঘটনার পরিস্থিতি

প্রসঙ্গত, গত বছর বড় কোনও অঘটন না-ঘটলেও প্রায় 2022 সালের পরিস্থিতি তৈরি হয় জল্পেশে ৷ মন্দিরে চত্বরে ভিড়ের চাপে ভেঙে যায় ব্যারিকেড ও সিকিউরিটি গেট । হুড়োহুড়ি-ধাক্কাধাক্কির মতো পরিস্থিতি তৈরি হয় সেখানে ৷ শেষে টিকিট কাউন্টার বন্ধ করতে বাধ্য হয় মন্দির কমিটি ।

উল্লেখ্য, 2022 সালের শ্রাবণ মাসের দ্বিতীয় সপ্তাহে লক্ষাধিক পুণ্যার্থীর ভিড় হয় এই জল্পেশ মন্দিরে । সেদিনও ভিড় সামলাতে দিশেহারা হতে হয় পুলিশ প্রশাসনকে । মন্দিরে প্রবেশের জন্য ব্যারিকেড ভেঙে ফেল হয় পুণ্যার্থীদের তরফে ৷ যার ফলে ভিড় সামাল দিতে হিমশিম খেতে হয় পুলিশ প্রশাসন ও মন্দির কমিটিকে । পুণ্যার্থীদের প্রবেশের সময় পদপিষ্ট হওয়ার মতো ঘটনা ঘটে ৷ এবার সেই ঘটনার পুনরাবৃত্তি চাইছে না পুলিশ প্রশাসন থেকে জল্পেশ মন্দির কমিটি ৷

জল্পেশ মন্দিরের ইতিহাস

গবেষকদের অনেকের ধারণা, তীর্থস্থান জল্পেশ দু’হাজারের বছরের পুরনো ৷ এক সময় ময়নাগুড়ি এলাকা দিয়েই গিয়েছিল প্রাচীন প্রাচ্য ও প্রতীচ্যের সংযোগকারী বাণিজ্য সড়ক সিল্ক রুট । তবে তখন ময়নাগুড়ি নাম ছিল না ।

উত্তরবঙ্গ বিশ্ববিদ্যালয়ের ইতিহাস বিভাগের প্রাক্তন শিক্ষক আনন্দগোপাল ঘোষ জানান, এই এলাকাটি করতোয়া নদীর ধারে কার্জি রাজাদের অধীনে চাপগড় পরগনা বলে পরিচিত ছিল । কার্জিদের শেষ রাজা ছিলেন বজ্রধর কার্জি । সিল্ক রুটের একটি রাস্তা গিয়েছিল নেপালের দিকে । অন্যটি চিলাপাতার জঙ্গল হয়ে উত্তর-পূর্ব দিকে । সেই চাপগড় পরগনার মধ্যেই ছিল গড়তলি নামে প্রাচীন একটি জনবসতি । সেখানেই ছিল একটি পুণ্যক্ষেত্রও । যে জায়গাতেই পরে জল্পেশ মন্দির গড়ে ওঠে বলে অনুমান করা হয় ।

তবে প্রাচীন মন্দিরটি ভূমিকম্পে ভেঙে যায় । 1632 সালে তার উপরেই নতুন শিব মন্দির তৈরি করতে শুরু করেন কোচবিহারের রাজা প্রাণ নারায়ণ । 1665 সালে সেই কাজ শেষ করেন তাঁর ছেলে মোদ নারায়ণ । এখন জল্পেশ উত্তর-পূর্ব ভারতের অন্যতম প্রধান শৈব তীর্থ । প্রায় এক একর জমির উপরে তৈরি মন্দিরটির উচ্চতা 127 ফুট । মন্দিরটি 124 ফুট দীর্ঘ এবং 120 ফুট চওড়া । মন্দির চত্বরে রয়েছে দুই একর আয়তনের 'সুবর্ণ কুণ্ড' নামে জলাশয় ।

জলপাইগুড়ি, 22 ফেব্রুয়ারি: উত্তরবঙ্গের সর্ব বৃহৎ শৈব তীর্থ হল জল্পেশ । 26 ফেব্রুয়ারি অর্থাৎ আগামী বুধবার মহা শিবরাত্রি ৷ সেদিন মহাকুম্ভের মহাযোগ রয়েছে ৷ শিব চতুর্দশীর পুজোকে কেন্দ্র করে তাই এখন সাজো সাজো রব জল্পেশ মন্দির চত্বরে ।

মন্দিরের গায়ে পড়ছে নতুন রংয়ের প্রলেপ । বিভিন্ন সামগ্রী দিয়ে সাজিয়ে তোলা হচ্ছে সমগ্র মন্দির চত্বর । মেলায় যাতে কোনও রকম বিশৃঙ্খলার সৃষ্টি না হয় সেই বিষয়টি মাথায় রেখে প্রচুর পুলিশ মোতায়েন করা হচ্ছে । তাছাড়া মন্দির কমিটির ভলান্টিয়ার-সহ সাদা পোশাকের পুলিশও থাকছে । 50টি সিসিটিভি দিয়ে মুড়ে ফেলা হয়েছে মন্দির চত্বরকে ৷

50টি সিসিটিভি দিয়ে মন্দির চত্বরকে মুড়ে ফেলা হয়েছে (ইটিভি ভারত)

জলপাইগুড়ি জেলার পুলিশ সুপার উমেশ খান্ডবাহালে বলেন, "শিবরাত্রিকে কেন্দ্রে করে প্রচুর মানুষ আসেন জল্পেশ মন্দিরে মহাদেবের মাথায় জল ঢালতে । তাই জল্পেশ মেলার নিরাপত্তার জন্য বিরাট পুলিশ বাহিনী মোতায়েন করা হচ্ছে ৷ যাতে কোনও রকম অপ্রীতিকর ঘটনা না ঘটে সেই কারণে পুলিশ ক্যাম্প থাকবে । মন্দিরে কোন দিক থেকে ভক্তরা ঢুকবেন তা ঠিক করা হয়েছে ।"

প্রতি বছর ফাল্গুন মাসের শিব চতুর্দশীতে জল্পেশ মন্দিরে বিশেষ পুজো হয় । জল্পেশ মন্দির চত্বর এবং সংলগ্ন মাঠে মেলা বসে । ফি বছর প্রায় লক্ষাধিক পুণ্যার্থীরা এখানে আসেন শিবের মাথায় জল ঢালতে ও পুজো দিতে । এবছর এই সংখ্যা বাড়বে বলেই মনে করছে জল্পেশ মন্দির কমিটি ৷ এবার কুম্ভের শাহী স্নানের শেষদিন অর্থাৎ চলতি মাসের 26 তারিখ থেকে জল্পেশ মেলা শুরু হচ্ছে । ফলে যারা কুম্ভ যেতে পারেননি, সেই ভিড়টাও এখানে আছড়ে পড়বে বলে মন্দির কর্তৃপক্ষ মনে করছে ।

Jalpesh temple
নিরাপত্তা জোরদার করা হয়েছে জল্পেশ মন্দির চত্বরে (নিজস্ব ছবি)

জল্পেশ মন্দিরে কড়া নিরাপত্তা

জল্পেশ মন্দির কমিটি সম্পাদক গিরিন্দ্রনাথ দেব বলেন, "এবার শিবরাত্রিতে প্রচুর মানুষের ঢল নামবে । কারণ 26 তারিখে মহাযোগ মহাকুম্ভ ৷ এদিন শিব চতুর্দশী উৎসব জল্পেশ মন্দিরে শুরু হচ্ছে ৷ এর জন্য অনেক প্রস্তুতি নেওয়া হয়েছে ৷ পুলিশ মোতায়েন থাকছে ৷ ভলান্টিয়ার থাকছে মন্দির থেকে মেলা চত্বরে ৷ নিরাপত্তার কারণে 50টি সিসিটিভি দিয়ে মন্দির চত্বরকে মুড়ে ফেলা হয়েছে । ইতিমধ্যেই পুলিশের পক্ষ থেকে নিরাপত্তা খতিয়ে দেখা হয়েছে । ভিড় নিয়ন্ত্রণে সবরকম ব্যবস্থা আমাদের তরফে করা হচ্ছে ৷"

জলপাইগুড়ি জেলাপরিষদের তরফে আয়োজন করা হয় জল্পেশ মেলা ৷ সেই মেলাকে কেন্দ্র করে দশ দিন যাবৎ লক্ষ লক্ষ মানুষের সমাগম হবে বলে আশা প্রকাশ করেছেন জিলা পরিষদের সভাধিপতি কৃষ্ণা রায় বর্মন ।

অতীতে জল্পেশ মন্দিরে দুর্ঘটনার পরিস্থিতি

প্রসঙ্গত, গত বছর বড় কোনও অঘটন না-ঘটলেও প্রায় 2022 সালের পরিস্থিতি তৈরি হয় জল্পেশে ৷ মন্দিরে চত্বরে ভিড়ের চাপে ভেঙে যায় ব্যারিকেড ও সিকিউরিটি গেট । হুড়োহুড়ি-ধাক্কাধাক্কির মতো পরিস্থিতি তৈরি হয় সেখানে ৷ শেষে টিকিট কাউন্টার বন্ধ করতে বাধ্য হয় মন্দির কমিটি ।

উল্লেখ্য, 2022 সালের শ্রাবণ মাসের দ্বিতীয় সপ্তাহে লক্ষাধিক পুণ্যার্থীর ভিড় হয় এই জল্পেশ মন্দিরে । সেদিনও ভিড় সামলাতে দিশেহারা হতে হয় পুলিশ প্রশাসনকে । মন্দিরে প্রবেশের জন্য ব্যারিকেড ভেঙে ফেল হয় পুণ্যার্থীদের তরফে ৷ যার ফলে ভিড় সামাল দিতে হিমশিম খেতে হয় পুলিশ প্রশাসন ও মন্দির কমিটিকে । পুণ্যার্থীদের প্রবেশের সময় পদপিষ্ট হওয়ার মতো ঘটনা ঘটে ৷ এবার সেই ঘটনার পুনরাবৃত্তি চাইছে না পুলিশ প্রশাসন থেকে জল্পেশ মন্দির কমিটি ৷

জল্পেশ মন্দিরের ইতিহাস

গবেষকদের অনেকের ধারণা, তীর্থস্থান জল্পেশ দু’হাজারের বছরের পুরনো ৷ এক সময় ময়নাগুড়ি এলাকা দিয়েই গিয়েছিল প্রাচীন প্রাচ্য ও প্রতীচ্যের সংযোগকারী বাণিজ্য সড়ক সিল্ক রুট । তবে তখন ময়নাগুড়ি নাম ছিল না ।

উত্তরবঙ্গ বিশ্ববিদ্যালয়ের ইতিহাস বিভাগের প্রাক্তন শিক্ষক আনন্দগোপাল ঘোষ জানান, এই এলাকাটি করতোয়া নদীর ধারে কার্জি রাজাদের অধীনে চাপগড় পরগনা বলে পরিচিত ছিল । কার্জিদের শেষ রাজা ছিলেন বজ্রধর কার্জি । সিল্ক রুটের একটি রাস্তা গিয়েছিল নেপালের দিকে । অন্যটি চিলাপাতার জঙ্গল হয়ে উত্তর-পূর্ব দিকে । সেই চাপগড় পরগনার মধ্যেই ছিল গড়তলি নামে প্রাচীন একটি জনবসতি । সেখানেই ছিল একটি পুণ্যক্ষেত্রও । যে জায়গাতেই পরে জল্পেশ মন্দির গড়ে ওঠে বলে অনুমান করা হয় ।

তবে প্রাচীন মন্দিরটি ভূমিকম্পে ভেঙে যায় । 1632 সালে তার উপরেই নতুন শিব মন্দির তৈরি করতে শুরু করেন কোচবিহারের রাজা প্রাণ নারায়ণ । 1665 সালে সেই কাজ শেষ করেন তাঁর ছেলে মোদ নারায়ণ । এখন জল্পেশ উত্তর-পূর্ব ভারতের অন্যতম প্রধান শৈব তীর্থ । প্রায় এক একর জমির উপরে তৈরি মন্দিরটির উচ্চতা 127 ফুট । মন্দিরটি 124 ফুট দীর্ঘ এবং 120 ফুট চওড়া । মন্দির চত্বরে রয়েছে দুই একর আয়তনের 'সুবর্ণ কুণ্ড' নামে জলাশয় ।

ETV Bharat Logo

Copyright © 2025 Ushodaya Enterprises Pvt. Ltd., All Rights Reserved.