কলকাতা, 1 নভেম্বর:আলোর উৎসবের দখল নিল শব্দদানব । কালীপুজোর সন্ধ্যা গড়াতেই শব্দ তাণ্ডবে কান পাতা দায় হয়ে পড়ে । বস্তি থেকে বহুতল আবাসন - বেলাগাম নাগরিকদের একাংশ । পরিবেশ কর্মীদের আবেদনের পর কিছু জায়গায় পুলিশি তৎপরতা দেখা গেলেও, অধিকাংশ জায়গায়ই টানা চলে শব্দদানবের তাণ্ডব ৷ পরিবেশ সংগঠনের খোলা কন্ট্রোল রুমেই 70-এরও বেশি অভিযোগ জমা পড়ল বৃহস্পতিবার সন্ধ্যা ও রাতে । এরপর কালীপুজোর ভাসানে কী হতে চলেছে, তাই ভেবেই আতঙ্কিত পরিবেশ কর্মীরা ।
কালীপুজোর রাতে বিসি রায় হাসপাতালের কাছেই বাজছিল বিরাট লাউড স্পিকার ৷ পরিবেশ কর্মীদের যেতে দেখেই তা বন্ধ করা হয় । ওদিকে শিশুমঙ্গল হাসপাতালের পিছনে দুই পাড়ায় রীতিমতো চকোলেট বোমা ফাটানোর প্রতিযোগিতা চলেছে । লেকটাউনের বহুতল আবাসনের অবস্থা ছিল ভয়ংকর । সেখানে পরিবেশ কর্মীদের সঙ্গে যান রাজ্যের দূষণ নিয়ন্ত্রণ পর্ষদের কর্তারা । তাঁরাই পুলিশে খবর দেন । তবে পুলিশ ঢুকতে পারেনি কোনও আবাসনে । গেটে ছিল তালা । এমনই বিভিন্ন খণ্ডচিত্র শহরজুড়ে ফুটে উঠেছে । এই ঘটনায় পরিবেশ কর্মীরা প্রশ্ন তুলছেন পুলিশের আগাম তৎপরতা নিয়ে ।
কালীপুজোয় নাকা তল্লাশি পুলিশের (নিজস্ব চিত্র) পরিবেশ আন্দোলনের কর্মী নব দত্ত বলছেন, 15 বছর ধরে দীপাবলির রাতে তাঁরা চারিদিকে ঘুরে ঘুরে নজর রাখেন পরিস্থিতির পর ৷ তবে এবার যে বেলাগাম ছবি তাঁরা দেখেছেন, বিগত কয়েক বছরে তা দেখা যায়নি ৷ তাঁর মতে, "বছর 10 আগেও এ ক্ষেত্রে বেশকিছুটা নিয়ন্ত্রণ ছিল ৷ এখন অনেকে আদালতের নির্দেশ পর্যন্ত মানছে না । পুলিশের উচিত ছিল, বাজি তৈরির জায়গা থেকেই তা বন্ধ করে দেওয়া । বাজি উৎপাদন করতে দিয়েছে, হোলসেলে বিক্রি করতে দিয়েছে, ফলে লোকজন তা ফাটাবেই । আদালতের নিষেধ থাকলেও এবছর বিত্তবান লোকজন দেদার অনলাইনে বাজি অর্ডার করেছেন ।" কালীপুজোর ভাসানে আরও বেশি শব্দবাজি ফাটার আশঙ্কাও করছেন পরিবেশ কর্মীরা ৷
উল্লেখ্য, পরিবেশ কর্মীরা কলকাতা, হাওড়া-সহ একাধিক জেলায় কন্ট্রোল রুম খুলেছেন । যেখানে বাজি সংক্রান্ত অভিযোগ জানান মানুষজন । কলকাতার থেকেও বেশি অভিযোগ এসেছে হাওড়ায় । কিছু জায়গায় পরিবেশ কর্মীদের অভিযোগ পেয়ে পুলিশকে পদক্ষেপ করতে দেখা গেলেও অধিকাংশ জায়গায় তা সেই অর্থে হয়নি বলে অভিযোগ ।
এদিকে, কালীপুজোয় শব্দবাজি ফাটানো, মহানগরের রাস্তায় বিনা হেলমেটে বাইক সাওয়ারি এবং একই বাইকে কোথাও তিনজন ও কোথাও আবার চারজন সাওয়ারি হওয়ার জন্য একাধিক থানা এলাকায় উঠে এল একাধিক অভিযোগ । এই বিষয়ে নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক কলকাতা পুলিশের ট্রাফিক বিভাগের এক পদস্থ আধিকারিক বলেন, "কালিপুজোর রাতে আমাদের নাকা তল্লাশির উপর বিশেষ ভাবে নজর দেওয়া হয় । আর তাতেই রাস্তায় দেদার আইন লঙ্ঘনের ছবি ধরা পড়ে ।"
কলকাতা ট্রাফিক বিভাগ সূত্রের খবর, গতকাল রাত থেকে আজ ভোর পর্যন্ত বিনা হেলমেটে মোট 296 জনের বিরুদ্ধে মামলা করা হয়েছে । মদ্যপান করে গাড়ি চালানোর অভিযোগে মোট মামলা হয়েছে 90 টি । বেপরোয়া গাড়ি চালানোর অভিযোগে 93টি মামলা হয়েছে । বাইকের পিছনে বসে থাকা সাওয়ারির মাথায় হেলমেট না থাকায় মোট 193টি মামলা রুজু হয়েছে । এছাড়াও একাধিক জায়গায় তল্লাশি চালিয়ে রাস্তায় গন্ডগোল পাকানোর অভিযোগ-সহ সব মিলিয়ে একাধিক অভিযোগে মোট 841টি অভিযোগ দায়ের করা হয়েছে লালবাজারের তরফে ।
লালবাজার সূত্রের খবর, শহরের একাধিক জায়গায় পুলিশ ধরপাকড় চালিয়ে মোট 328 জনকে গ্রেফতার করেছে । শব্দবাজি ফাটানোর অভিযোগে মোট 256 জনকে গ্রেফতার করা হয়েছে । একাধিক জায়গায় তল্লাশি চালিয়ে জুয়ার ঠেক থেকে 9 জনকে গ্রেফতার করা হয়েছে । গতকাল থেকে আজ ভোর পর্যন্ত মোট 601 জনকে গ্রেফতার করা হয়েছে বলে জানা গিয়েছে লালবাজার সূত্রে । 717.8 কেজি নিষিদ্ধ বাজি বাজেয়াপ্ত করা হয়েছে । পাশাপাশি 79.4 লিটার মদ বাজেয়াপ্ত করা হয়েছে ।