বোলপুর, 22 নভেম্বর: বিশ্বভারতীতে শ্যামাপ্রসাদ রিসার্চ ফাউন্ডেশনের অধিকর্তা তথা বিজেপি নেতা অনির্বাণ গঙ্গোপাধ্যায়কে ঘিরে বিক্ষোভ । আর সেই বিক্ষোভের জেরে উত্তাল বিশ্বভারতী বিশ্ববিদ্যালয় । শুক্রবার বিশ্বভারতীর লিপিকা প্রেক্ষাগৃহে বাংলা-সহ পাঁচটি ভাষাকে 'ধ্রুপদী' ভাষার স্বীকৃতি দেওয়াকে কেন্দ্র করে একটি আলোচনা সভা চলছিল ৷ প্রেক্ষাগৃহের ভেতরেই আলোচনা চলাকালীন স্লোগান দিয়ে বিক্ষোভ দেখাতে শুরু করেন এসএফআইয়ের পড়ুয়ারা ৷ তাঁদের রুখতে গেলে পড়ুয়াদের সঙ্গে রীতিমতো ধস্তাধস্তি বেঁধে যায় বিশ্বভারতীর নিরাপত্তারক্ষীদের ৷
2024 সালের 3 অক্টোবর বাংলা ভাষা-সহ মারাঠি, অসমিয়া, পালি ও প্রাকৃত ভাষাকে 'ধ্রুপদী' ভাষার স্বীকৃতি দিয়েছে কেন্দ্রীয় সরকার ৷ ফলে এই ভাষাগুলি কীভাবে সমৃদ্ধ হবে, তা নিয়ে এদিন বিশ্বভারতীর লিপিকা প্রেক্ষাগৃহে একটি আলোচনা সভার আয়োজন করা হয় ৷ এই আলোচনা সভার আয়োজন করে বিশ্বভারতীর ভাষা বিভাগ ও নয়াদিল্লির শ্যামাপ্রসাদ রিসার্চ ফাউন্ডেশন ।
এসএফআইয়ের বিক্ষোভে উত্তাল বিশ্বভারতী (নিজস্ব ভিডিয়ো) এই অনুষ্ঠানে অংশ নেন শ্যামাপ্রসাদ রিসার্চ ফাউন্ডেশনের অধিকর্তা তথা বিজেপি নেতা অনির্বাণ গঙ্গোপাধ্যায় । তিনি লিপিকা প্রেক্ষাগৃহে পৌঁছতেই তাঁকে 'গো ব্যাক' স্লোগান দিয়ে বিক্ষোভ দেখান এসএফআই সমর্থিত বিশ্বভারতীর পড়ুয়ারা ৷ তাঁদের বাধা দেন বিশ্বভারতীর নিরাপত্তারক্ষীরা ৷ আর এতেই রীতিমতো ধস্তাধস্তি হয় পড়ুয়া ও নিরাপত্তারক্ষীদের মধ্যে ৷ এই ঘটনায় উত্তাল হয়ে ওঠে বিশ্বভারতী ।
পরে লিপিকা প্রেক্ষাগৃহে শুরু হয় আলোচনা সভা ৷ সেই প্রেক্ষাগৃহেও স্লোগান দিয়ে বিক্ষোভ দেখান এসএফআইয়ের পড়ুয়ারা । হাতে ব্যানার-পোস্টার নিয়ে চলে বিক্ষোভ । একদিকে মঞ্চে বক্তব্য রাখছেন অনির্বাণ গঙ্গোপাধ্যায়, অন্যদিকে চলে স্লোগান দিয়ে বিক্ষোভ।
বিশ্বভারতীতে শ্যামাপ্রসাদ রিসার্চ ফাউন্ডেশনের অধিকর্তা অনির্বাণ গঙ্গোপাধ্যায় (নিজস্ব চিত্র) এসএফআইয়ের সমর্থক বিশ্বভারতীর ছাত্রী বান্ধুলী কারার বলেন, "বিশ্বভারতীতে বিজেপির রাজনৈতিক জমি তৈরি করা মানছি না ৷ 'ধ্রুপদী' ভাষা নিয়ে আলোচনা হোক, সেটা অধ্যাপক-অধ্যাপিকা, শিক্ষাবিদরা করুন ৷ বিজেপি নেতা কেন ?"
এসএফআইয়ের বিক্ষোভে উত্তাল বিশ্বভারতী (নিজস্ব চিত্র) ভারতের ছাত্র ফেডারেশন পশ্চিমবঙ্গ রাজ্য কমিটি সম্পাদক দেবঞ্জন দে এবিষয়ে বলেন, "রবীন্দ্রনাথের বিশ্বভারতীকে দীর্ঘদিন ধরেই আরএসএসয়ের সাম্প্রদায়িক রাজনীতির গবেষণাগার বানানোর জন্য পরিকল্পনা করছে কেন্দ্রের বিজেপি সরকার । আজ লিপিকা প্রেক্ষাগৃহে বিজেপি'র সঙ্গে সংযুক্ত একটি রিসার্চ ফাউন্ডেশনকে দিয়ে আলোচনা সভা করানোটা সেই পরিকল্পনারই অংশ । ছাত্রছাত্রীরা ঐক্যবদ্ধ হয়ে প্রতিবাদ জানিয়েছেন । বয়কট করেছেন প্রোগ্রাম, ঘেরাও করেছেন কর্তৃপক্ষকে । বিশ্বভারতীর মাথাদেরও বুঝতে হবে, এ মাটি রবি ঠাকুরের ঐক্য সম্প্রীতির মাটি, শ্যামাপ্রসাদের বিভাজনের মাটি নয় ! সমস্ত শক্তি দিয়ে আরএসএস'কে রুখতে হবে ক্যাম্পাসের বুকে ।"
প্রেক্ষাগৃহে এসএফআইয়ের বিক্ষোভ (নিজস্ব চিত্র) বিক্ষোভের মুখে পড়লেও একে গুরুত্ব দিতে চাননি অনির্বাণ গঙ্গোপাধ্যায় ৷ তিনি বলেন, "আমি বিন্দুমাত্র বিচলিত নই । আমার কোনও অভিযোগ নেই ৷ ছাত্ররাই তো বিক্ষোভ দেখাবে, ছাত্ররাই তো স্লোগান দেবে ৷ এটাই স্বাভাবিক । তবে আমার বক্তব্যে কোনও রাজনৈতিক কথাবার্তা ছিল না ৷ বাংলা-সহ পাঁচটি ভাষাকে 'ধ্রুপদী' ভাষার স্বীকৃতি দেওয়া হয়েছে । এতে ভাষার সমৃদ্ধি কীভাবে হবে তা নিয়েই আলোচনা । বিশ্বভারতীতে দাঁড়িয়ে আমি কোনও রাজনৈতিক কথা বলব না । আমার অভিজ্ঞতা সুন্দর, আমি সুন্দর আলোচনা করতে পেরেছি ।"