দার্জিলিং, 30 অক্টোবর: আলোর উৎসবে মেতে উঠেছে রাজ্য। রাজ্যের বিভিন্ন প্রান্তে ছড়িয়ে আছে অসংখ্য কালী মন্দির ৷ তার সঙ্গেই জড়িয়ে রয়েছে নানা অজানা ইতিহাস ৷ উত্তরবঙ্গের সেবক কালীবাড়িও তেমনই এক উল্লেখযোগ্য মন্দির ৷ এখানকার পুজো ঘিরে আজও স্থানীয়দের মধ্যে রয়েছে উৎসাহ। প্রতি বছর মায়ের টানে পাহাড়ের কোলে অবস্থিত সেবকেশ্বরী মা'কে পুজো দিতে দূর-দূরান্ত থেকে ছুটে আসেন ভক্তরা ৷
শিলিগুড়ি থেকে প্রায় 30 কিলোমিটার দূরে পাহাড়ি ঘন জঙ্গল আর তিস্তা নদীর কাছে অবস্থিত এই সেবকেশ্বরী কালীবাড়ি। উত্তরবঙ্গ তো বটেই, পুজোর সময় মা'কে পুজো দিতে এবং মায়ের দর্শনের জন্য দক্ষিণবঙ্গ এমনকী সিকিম, বিহার ছাড়াও ভুটান, নেপাল, বাংলাদেশ থেকে ভক্তরা ছুটে আসেন।
পাহাড়ের কোলে রয়েছেন সেবকেশ্বরী (ইটিভি ভারত) জানা গিয়েছে, 1952 সালে মায়ের সাধক তথা সরকারি কর্মচারী নীরেন্দ্রনাথ সান্যাল স্বপ্নাদেশে সেবকের গায়ে পঞ্চমুণ্ডির আসন বেদী এবং ত্রিশূল দেখতে পান। পরদিন সকালে সেই স্বপ্নে দেখা মায়ের পঞ্চমুণ্ডি আসন বেদী এবং ত্রিশূল উদ্ধার করেন। এরপর তিনি নিজেই স্থাপন করেন দেবীকে। সেই থেকেই শুরু হয় মায়ের পূজার্চনা। এখানকার দেবী দক্ষিণাকালী ৷
পরবর্তী কালে সময়ের সঙ্গে ধীরে ধীরে সেবকের পাহাড় কেটে নির্মাণ হয় মন্দির। গঠন হয় কমিটি। সেবক পাহাড়ের নামে মন্দিরের নামকরণ করা হয় সেবকেশ্বরী কালী মন্দির। সেই থেকেই রীতিনীতি মেনে মায়ের পুজো হয়ে আসছে মন্দিরে। প্রতি অমাবস্যায় এই দক্ষিণাকালী পুজো হয়ে থাকে। বাৎসরিক কালী পুজো হয় দীপাবলী অমাবস্যায়। একসময় মন্দিরে বলির প্রথা প্রচলিত ছিল।
প্রশাসন এবং মন্দির কমিটির সিদ্ধান্তে 2023 সাল থেকে বলির প্রথা সম্পূর্ণভাবে বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে। তার পরিবর্তে দেওয়া হয় পাঁচ ধরনের ফলের বলি। পুজো উপলক্ষে বিশেষ ভোগের আয়োজন করা হয়। পুজো শেষে হয় প্রসাদ বিতরণ। এই মন্দিরে পৌঁছতে গেলে মোট 107টি সিঁড়ি বেয়ে উপরে উঠতে হবে। তিনজন পুরোহিত মিলে মায়ের পুজো অর্চনা করে থাকেন।
মন্দিরের সেবায়েত নন্দকিশোর গোস্বামী বলেন, "আমরা তিনজন পুরোহিত মায়ের সেবা করি। এখানে পুজো দিতে নেপাল, ভুটান, বাংলাদেশ থেকে ভক্তরা আসেন। সারারাত পুজো হয় এবং সকালে সবাই প্রসাদ গ্রহণ করে বাড়ি ফিরে যান।" লোক কথায় প্রচলিত, এই জাগ্রত মন্দিরে কোনও মনস্কামনা করলে তা পূর্ণ হয়। হাওড়ার বাসিন্দা মৌমিতা বসু বলেন, "এর আগে এই মন্দিরের কথা অনেক শুনেছি। পাহাড়ে বেড়াতে এসেছিলাম তাই মায়ের দর্শন করে গেলাম। খুব ভালো লাগছে।"