কামারহাটি, 15 জুলাই: আড়িয়াদহ-কাণ্ড থেকে শিক্ষা ! প্রোমোটার কিংবা সমাজবিরোধীর সঙ্গে এবার আর কোনও সম্পর্ক রাখবে না তৃণমূল দল । সোমবার কামারহাটি পুরসভার নজরুল মঞ্চে হওয়া দলের এক গুরুত্বপূর্ণ বৈঠকে এমনই সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে ।
'ভুল সংশোধন' করে কাউন্সিলরদের কড়া বার্তা সৌগতর (নিজস্ব ভিডিয়ো) বৈঠকে পৌরহিত্য করেন দমদমের প্রবীণ সাংসদ সৌগত রায় । ছিলেন কামারহাটির তৃণমূল বিধায়ক মদন মিত্রও । দলীয় কাউন্সিলরদের নিয়ে বৈঠক শেষে এনিয়ে সাংবাদিক সম্মেলনে সাংসদ সৌগত রায় স্পষ্ট বলেন, "অতীতে যদি কোনও ভুল হয়ে থাকে, আমরা সেটা সংশোধন করার সিদ্ধান্ত নিয়েছি । সেকারণে দলের কোনও নেতা, কর্মীই প্রোমোটার অথবা সমাজবিরোধীর সঙ্গে সম্পর্ক রাখতে পারবেন না । দলের সিদ্ধান্তের বিরুদ্ধে গিয়ে যদি কেউ প্রোমোটার এবং সমাজবিরোধীর সঙ্গে সম্পর্ক রাখেন, সেক্ষেত্রে দল কড়া ব্যবস্থা নেবে ।
কী ধরনের ব্যবস্থা তাও স্পষ্ট করে জানিয়ে দিয়েছেন তৃণমূলের বর্ষীয়ান সাংসদ সৌগত রায় । তাঁর কথায়, "প্রথমে শোকজ নোটিশ পাঠানো হবে । তার উত্তর যথাযথ না-হলে পার্টির উচ্চ নেতৃত্বকে জানিয়ে প্রয়োজনে বহিষ্কারও করা হবে ।"
আড়িয়াদহ-কাণ্ডের জেরে যথেষ্ট অস্বস্তিতে শাসকদল তৃণমূল কংগ্রেস । আড়িয়াদহের 'ত্রাস' জয়ন্ত সিং ও তাঁর দলবলের কর্মকাণ্ডে রীতিমতো অতিষ্ঠ এলাকাবাসী । ইতিমধ্যে জয়ন্ত এবং তাঁর গ্যাংয়ের বিরুদ্ধে একের পর এক মারাত্মক অভিযোগ উঠেছে । তাঁদের অত্যাচারের ভিডিয়োও ভাইরাল হয়েছে জনসমক্ষে । কোথাও মা-ছেলেকে রাস্তায় ফেলে পেটানো, কোথায়ও চুরির অপবাদ দিয়ে যুবক-যুবতীকে তালতলা স্পোটিং ক্লাবে তুলে এনে চ্যাংদোলা করে মারধর, আবার কোথাও নাবালকের যৌনাঙ্গে সাঁড়াশি দিয়ে চেপে ধরে নারকীয় অত্যাচার চালানোর অভিযোগ উঠেছে । আর এসব ক্ষেত্রে তৃণমূল দলের ভাবমূর্তিতে দাগ লেগেছে বলেই মনে করছে শীর্ষ নেতৃত্ব ।
সেই ঘটনা থেকে শিক্ষা নিয়ে এবার দলের ভাবমূর্তি ফেরাতে আসরে নেমেছে তৃণমূল কংগ্রেসের শীর্ষ নেতৃত্ব । দলীয় কাউন্সিলরদের সঙ্গে এদিনের এই বৈঠক তারই অঙ্গ । বৈঠক শেষে সৌগত রায় বলেন, "অতীতে কিছু ভুল-ত্রুটি হয়তো হয়ে থাকতে পারে । সব কিছুরই তো একটা লাইন টানার সময় থাকে । সেক্ষেত্রে উলটো রথের দিন আমরা সিদ্ধান্ত নিলাম, অতীতে যা ভুল হওয়ার হয়েছে, তার সংশোধন করা প্রয়োজন । এরপর থেকে আর কোনও দিন এই কাজ হবে না ।"
এদিকে, আড়িয়াদহের ঘটনার পর থেকেই দলের একাংশ লাগাতার সংবাদমাধ্যমে মুখ খুলছিলেন । এর ফলে দলের অস্বস্তিও বাড়ছিল । সেই সমস্ত নেতাদের কার্যত সতর্ক করে এবিষয়ে কড়া অবস্থান নিল দলের শীর্ষ নেতৃত্ব । এমনকি কামারহাটির বিধায়ক মদন মিত্রকেও সংবাদমাধ্যমের সামনে মুখ খুলতে নিষেধ করা হয়েছে ।
এ ব্যাপারে সৌগত রায় স্পষ্ট করে জানিয়ে দিলেন, "আমাদের কর্মীরা কোনও জায়গায় কোনও বিবৃতি দেবেন না । দলের কোনও কর্মীর বিরুদ্ধে প্রকাশ্যে যাওয়া উচিত নয় । কামারহাটির বিষয় নিয়ে সংবাদমাধ্যমের সামনে আর মুখ খোলা যাবে না । কেবলমাত্র কনফিউশন এড়াতে দলের এই সিদ্ধান্ত । কারণ যেভাবে দলের কাউন্সিলর এবং প্রাক্তন কাউন্সিলররা বিবৃতি দিচ্ছেন, তাতে দলের ভাবমূর্তি ক্ষুণ্ণ হয়েছে । এটা কাম্য নয় । যদি তাঁরা তৃণমূলের থাকতে চান, তাহলে আগামী দিনে আর কোনও মন্তব্য করতে পারবেন না দলের বিরুদ্ধে ।"
অন্যদিকে, এনিয়ে সৌগত রায়কে পাশে বসিয়ে তৃণমূল বিধায়ক মদন মিত্র বলেন, "দলের সুনাম ক্ষুণ্ণ হয় এমন কাজ করা যাবে না । দলে গুন্ডা, বদমাশ, প্রোমোটার থাকলে মানুষের সামনে দলের মুখ নষ্ট হয় । আর যেখানে সৌগতদা বলেই দিয়েছেন যে, তিনি ছাড়া আর কেউ কথা বলবেন না, সেখানে আমার বলাটা দল বিরোধী নীতি হিসেবে পরিগণিত হয় ।"