ভুবনেশ্বর, 18 ফেব্রুয়ারি: নেপালি ছাত্রীর রহস্যমৃত্যু ঘিরে শোরগোল ওড়িশায় ৷ ভুবনেশ্বরের কেআইআইটি বিশ্ববিদ্যালয়ের ক্যাম্পাসে রবিবার ওই ছাত্রীর ঝুলন্ত দেহ উদ্ধার হয় ৷ অভিযোগ, ঘটনার প্রতিবাদ করায় সোমবার বাকি নেপালি পড়য়াদের অবিলম্বে ক্যাম্পাস ছেড়ে চলে যাওয়ার নির্দেশ দেওয়া হয় বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষের তরফে ৷ আর তাতেই উত্তেজনা চরমে পৌঁছয় ৷ ছাত্রীর মৃত্যুর ঘটনায় মঙ্গলবার নেপাল দূতাবাসের দুই কর্মকর্তার ওই বিশ্ববিদ্যালয়ে আসার সম্ভাবনা রয়েছে ৷
ভুবনেশ্বরের ডিসিপি পিনাক মিশ্র বলেন, "পুলিশ মৃতের আত্মীয়র অভিযোগের ভিত্তিতে একটি মামলা দায়ের করেছে । তাঁর অভিযোগ, মেয়েটিকে তার প্রেমিক মানসিক নির্যাতন করেন, যা তাকে তার জীবন শেষ করতে বাধ্য করেছিল। অভিযুক্তকে জিজ্ঞাসাবাদের জন্য আটক করা হয়েছে ৷"
বিশ্ববিদ্যালয় সূত্রে খবর, মৃত ছাত্রী কলিঙ্গা ইনস্টিটিউট অফ ইন্ডাস্ট্রিয়াল টেকনোলজিতে (কেআইআইটি) তৃতীয় বর্ষের বিটেকের পড়ুয়া ছিলেন ৷ রবিবার বিকেলে বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসে মেয়েদের হস্টেলের ঘর থেকে ঝুলন্ত অবস্থায় পাওয়া যায় ওই ছাত্রীর দেহ ৷ ঘটনাটি প্রকাশ্যে আসে যখন নিহতের আত্মীয় বিষয়টি পুলিশকে জানান ৷ এরপরেই পুলিশ ঘটনাস্থলে পৌঁছে দেহ উদ্ধার করে এবং ঘরটি সিল করে দেয় । তদন্তের জন্য ওই ছাত্রীর ল্যাপটপ ও মোবাইল ফোনও বাজেয়াপ্ত করে পুলিশ ।
ছাত্রীর দেহ উদ্ধারের ঘটনা সামনে আসার পরই বিশ্ববিদ্যালয়ের অন্যান্য নেপালি ছাত্ররা ন্যায়বিচার এবং অভিযুক্তের বিরুদ্ধে অবিলম্বে ব্যবস্থা নেওয়ার দাবিতে ক্যাম্পাসে বিক্ষোভে ফেটে পড়েন । বিক্ষোভকারীরা অভিযোগ করেন, মৃত ছাত্রীকে তাঁর প্রাক্তন প্রেমিক মানসিকভাবে হয়রানি করতেন ৷ অভিযুক্ত একই বিশ্ববিদ্যালের ছাত্র ৷ তাই অভিযুক্ত ওই ছাত্রকে অবিলম্বে গ্রেফতার করে কঠোর শাস্তির দাবি জানান বিক্ষোভকারী পড়ুয়ারা।
পরদিন সোমবার বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ নেপালের সমস্ত ছাত্রদের অবিলম্বে ক্যাম্পাস খালি করার নির্দেশ জারি করে । এই বিষয়ে কেআইআইটি রেজিস্ট্রারের অফিস থেকে জারি করা হয় একটি বিজ্ঞপ্তিও ৷ তাতে বলা হয়, "নেপালের সমস্ত ছাত্রদের জন্য বিশ্ববিদ্যালয় বন্ধ। তাদের 17 ফেব্রুয়ারি 2025 তারিখে অবিলম্বে বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাস খালি করার নির্দেশ দেওয়া হচ্ছে ।"

অভিযোগ, নেপালের ছাত্ররা আগামিদিনে এই বিক্ষোভ না চালিয়ে যেতে পারে তাই এই পদক্ষেপ ৷ দেশে ফেরার বা থাকার ব্যবস্থা না করেই হস্টেল খালি করতে এবং তাঁদের বাড়ি ফিরে যেতে বাধ্য করা হয়েছিল । সমস্ত নেপালি ছাত্রদের বিশ্ববিদ্যালয়ের বাসে করে কেবল বিভিন্ন রেলস্টেশন ও বিমানবন্দরে নামিয়ে দেওয়া হয় বলে অভিযোগ ।
নেপালি ছাত্র হিমাংশু যাদব বলেন, "মৃত ছাত্রীকে হয়রানি করা হচ্ছিল ৷ তার জন্য সে বিশ্ববিদ্যালয়ের আন্তর্জাতিক সম্পর্ক অফিসে গিয়েছিল ৷ কিন্তু তাদের তরফে কোনও ব্যবস্থা নেওয়া হয়নি । নির্যাতন অব্যাহত থাকায় সে তার জীবন শেষ করতে বাধ্য হয় ৷ সে আমাদের বোনের মতো ছিল । আমরা ন্যায়বিচারের দাবিতে ধরনায় বসেছিলাম ৷ আমাদের ব্যাগ গুছিয়ে এক ঘণ্টার মধ্যে হস্টেল খালি করে চলে যেতে বলা হয় ৷"
নেপালের আরেক ছাত্র রাজন গুপ্তা বলেন, "আমরা মৃত মেয়েটির জন্য প্রতিবাদ করছিলাম । আমরা জানি না বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষের উদ্দেশ্য কী, তবে আমাদের জোরপূর্বক হস্টেল খালি করতে বাধ্য করা হয় । ট্রেনের কোন নির্দিষ্ট সময়সূচি নেই, আমার কাছে কোন টাকা নেই । আমাদের কাছে খাবারও নেই । আমরা অসহায় । আমরা একটি নোটিশ পেয়েছি, নেপাল থেকে আসা সমস্ত ছাত্রছাত্রীদের হস্টেল থেকে সাসপেন্ড করা হচ্ছে । এরপরেই কলেজের স্টাফরা হস্টেলে প্রবেশ করে আমাদের তা খালি করতে বাধ্য করে এবং এমনকি যারা দ্রুত ঘর খালি করেনি তাদের মারধর করা হয় ।"
Our Embassy in New Delhi has dispatched two officers to counsel Nepali students affected in Odisha.
— K P Sharma Oli (@kpsharmaoli) February 17, 2025
Additionally, arrangements have been made to ensure they have the option to either remain in their hostel or return home, based on their preference. #Nepal #Odisha
নেপালি ছাত্রদের প্রতি হয়রানির নিন্দা জানিয়ে ওড়িশার এবিভিপি ইউনিট সোশাল মিডিয়া হ্যান্ডেলে এক্সে লেখে, "ছাত্রদের প্রতি এই ধরনের অমানবিক আচরণ সহ্য করা হবে না । আমরা এর তীব্র নিন্দা জানাই এবং এই বিষয়ে বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষের অবিলম্বে প্রতিক্রিয়া দাবি করি ।"
খবরটি প্রকাশের পর নেপালের প্রধানমন্ত্রী কেপি শর্মা অলি সোশাল মিডিয়ায় পোস্ট করে বলেন, "মিডিয়া এবং সোশাল মিডিয়ার মাধ্যমে আমাদের নজরে এসেছে যে ওড়িশার কলিঙ্গা ইনস্টিটিউট অফ ইন্ডাস্ট্রিয়াল টেকনোলজি (কেআইআইটি) বিশ্ববিদ্যালয়ের হস্টেলে একজন নেপালি ছাত্রীর মৃত্যু হয়েছে এবং নেপালি ছাত্রদের জোরপূর্বক হস্টেল থেকে বের করে দেওয়া হয়েছে ৷ সরকার এই বিষয়ে কূটনৈতিক কর্তৃপক্ষের সঙ্গে যোগাযোগ করছে এবং বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষের সঙ্গেও যোগাযোগ করছে ৷"
ছাত্রীর মৃত্যুর ঘটনায় দিল্লিতে নেপাল দূতাবাসের দুই কর্মকর্তা ওড়িশার ভুবনেশ্বরের ওই বেসরকারি ইঞ্জিনিয়ারিং ইনস্টিটিউটে যাওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে ৷ কর্মকর্তারা নেপালের একদল ছাত্রের সঙ্গেও দেখা করবেন বলে আশা করা হচ্ছে ৷ যাদের ইনস্টিটিউট ক্যাম্পাসে উত্তেজনার মধ্যে হস্টেল থেকে বর করে দেওয়া হয়েছে বলে অভিযোগ ।
নেপালের প্রধানমন্ত্রী কেপি শর্মা অলি এদিন সোশাল মিডিয়া পোস্টে বলেন, "নয়াদিল্লিতে আমাদের দূতাবাস দু'জন অফিসারকে পাঠিয়েছে ওড়িশায়, যারা হস্টেল থেকে বিতারিত নেপালি ছাত্রদের সঙ্গে কথা বলবে। পাশাপাশি ওইসব ছাত্রদের ইচ্ছাকে মর্যাদা দিয়ে তাদের হস্টেলে থাকার বা বাড়ি ফিরে যাওয়ার ব্যবস্থা করা হয়েছে ।"