কলকাতা, 17 অগস্ট: আরজি করে চিকিৎসক মৃত্যুর ঘটনায় কর্মবিরতি অব্যাহত ৷ এর ফলে চরম ভোগান্তির শিকার হতে হচ্ছে রোগী ও তাঁদের পরিজনদের । তবুও দাবি না মানা পর্যন্ত চিকিৎসকরা তাঁদের কাজ বন্ধের কর্মসূচি চালিয়ে যাওয়ার বিষয়ে অনড় । এদিকে সাপের কামড়ের চিকিৎসা করাতে আসা এক রোগী কর্মবিরতির জেরে অনেক দেরিতে চিকিৎসা পাওয়ায় তাঁর মৃত্যু হয় মুর্শিদাবাদ মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে । এরকম বেশ কয়েকটি ঘটনা সামনে এসেছে ৷
চিকিৎসকদের বক্তব্য (ইটিভি ভারত) এই বিষয়ে মিশ্র প্রতিক্রিয়া মিলেছে সিনিয়র চিকিৎসকদের থেকে । রাজ্যে স্বাস্থ্য বিভাগের প্রাক্তন ডিরেক্টর অফ হেলথ সার্ভিসেস (ডিএইচএস) চিকিৎসক সিদ্ধার্থ নিয়োগী বলেন, "মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় যেমনটা জানিয়েছেন যে এই বিষয় যা পদক্ষেপ করার সেটা রাজ্য সরকার নিচ্ছে রোগীরা যেন স্বাস্থ্য পরিষেবা থেকে বঞ্চিত না হন । তাই উনি যা বলেছেন সেটাই সবার মেনে চলা উচিত ।"
চিকিৎসক কুনাল সরকার তাঁর ছাত্রজীবনের কথা উল্লেখ করে জানান, তিনি যখন চিকিৎসা বিজ্ঞানের ছাত্র ছিলেন তখনও বহু আন্দোলন হয়েছিল । তবে তিনি কর্মবিরতির বিরোধিতা করেছিলেন । যদিও সেটা একটা অন্য পরিপ্রেক্ষিত ছিল । তাঁর কথায়, "সাধারণ নাগরিক হিসেবে আমাদের মন চুরমার হয়ে গেল যখন আমরা দেখলাম যে পুলিশ কোনও এক অদৃশ্য দড়ির টানে একটার পর ভুল কাজ করে চলেছে । তাই একের পর এক ঘটনা ঘটতে ঘটতে এমন একটা জায়গায় পৌঁছে গিয়েছে যখন চিকিৎসক পড়ুয়াদের কর্তব্য সচেতন করার জায়গা নেই । কারণ পুলিশ বা প্রশাসন তো কর্তব্য সচেতন নয় । সমাজের সব ক্ষেত্রের মানুষ কর্তব্যে পরায়ণতা ভুলে যাবে আর সেটা মনে রাখবে শুধু চিকিৎসকরা ? আমার মনে হয় এই সমস্ত ঠুনকো মূল্যবোধ থেকে সমাজকে বেরিয়ে আসতে হবে । হাসপাতালের মধ্যে একটা অরাজকতার সৃষ্টি করে একটা অস্বচ্ছ তদন্তের প্রভাব সুদূরপ্রসারী হতে পারে । এটা ভুললে চলবে না ।"
শিশু চিকিৎসক মলয় সরকার মনে করেন যে, সমস্ত সরকারি হাসপাতালে আউটডোর-ইনডোর এবং জরুরি বিভাগে পরিষেবা ব্যাহত হলে সেক্ষেত্রে বিপদে পড়বে সাধারণ মানুষ । অন্যদিকে আরজি করের ছাত্রছাত্রীরা যে ইস্যুতে আন্দোলন করছেন সেটাও খুবই যথার্থ । তবুও ছাত্রছাত্রীদের কাছে সমাজ আরেকটু মানবিকতা আশা করবে যাতে অন্তত জরুরি বিভাগ এবং খুব ক্রিটিক্যাল রোগীরা একটু স্বস্তি পায় । এর ফলে সাধারণ মানুষও এই জুনিয়র চিকিৎসকদের সঙ্গে সহায়তা করবেন ৷ কারণ কেউ চায় না যে সরকারি ব্যবস্থাপনার মধ্যে এত দুর্নীতি আর স্বজন-পোষণ হোক ।
তিনি বলেন, "আমাদের সময় এরকম ছাত্র আন্দোলন হয়েছিল যখন আমরা জুনিয়র চিকিৎসকরা হাসপাতালে মধ্যেই নিজেদের ব্যবস্থাপনায় আর একটি আউটডোর চালু করে ছিলাম যেখানে ক্রিটিক্যাল রোগীদের চিকিৎসা করা হয়েছিল । তবে এর থেকে আবার প্রশাসন যেন এমন বার্তা না পায় যে ছাত্রছাত্রীরা বিষয়টিকে তেমন গুরুত্ব সঙ্গে দেখছে না । সরকারি হাসপাতালের মধ্যে এইরকম নৈরাজ্যের সৃষ্টি হয়েছে তার পুরোপুরি দায় প্রশাসনের । কিছু লোক প্রশ্রয় দিয়েছে অন্যভাবে । তাই এই প্রশাসনকে ঢেলে না সাজাতে পারলে এই সমস্যা চলবেই আর সাধারণ মানুষেরও ভোগান্তি বাড়বে ।"