কলকাতা, 15 অগস্ট:চোখের জলে প্রতিবাদ ৷ আরজি করের ঘটনায় দোষীদের কঠোর শাস্তির দাবি জানালেন হুগলির সাংসদ তৃণমূলের রচনা বন্দ্যোপাধ্যায় । একজন মা ও মেয়ে হিসাবে তিনি চিকিৎসক ছাত্রীর ধর্ষণ ও খুনের ঘটনার তীব্র নিন্দা করেছেন ৷ 78তম স্বাধীনতা দিবসে প্রশ্ন তুললেন মেয়েদের প্রকৃত স্বাধীনতা নিয়ে ৷
প্রতিবাদ করতে গিয়ে কেঁদে ফেললেন রচনা (ইটিভি ভারত) হুগলি জুড়ে বুধবার রাতে রাস্তায় নেমে আরজি করের ঘটনার প্রতিবাদ জানিয়েছেন মহিলারা । কোথাও মোমবাতি, কোথাও মোবাইলের ফ্লাশ জ্বালিয়ে হেঁটেছেন, বিচার চেয়েছেন তাঁরা । সেই প্রতিবাদ মিছিলে পা না মেলালেও এর সমর্থন করেছেন অভিনেত্রী । তাঁর মতে, ভারতের সংবিধানে মহিলাদের জন্য কঠোর আইন প্রণয়ন করা উচিত । যাতে কোনও পুরুষ খারাপ নজরে মহিলাদের দিকে না তাকাতে পারে ।
তিনি নির্যাতিতা তরুণীর পরিবারের পাশে আছেন বলেও জানান এ দিন । যতক্ষণ না আরজি কর-কাণ্ডে মৃত সুবিচার হচ্ছে, ততক্ষণ তিনি প্রতিবাদ চালিয়ে যাওয়ার কথা বলেছেন । রচনা বন্দ্যোপাধ্যায় সোশাল মিডিয়ায় এক ভিডিয়ো বার্তায় এ দিন বলেন, "আজ স্বাধীনতা দিবসেও মনে হচ্ছে মেয়েরা কী সত্যি স্বাধীন ! সারা ভারতবর্ষের মহিলারা কী স্বাধীন ভাবে ঘুরতে পারছে । দিল্লি, মধ্যপ্রদেশ, উত্তরপ্রদেশ ও মণিপুরে একটার পর একটা ঘটনা ঘটে চলেছে । আমরা কেন স্বাধীনভাবে ঘুরতে পারছি না ।"
আরজি করের ঘটনা তাঁকে নাড়া দিয়েছে । তিনি প্রতিবাদ করে বলেন, "এটা অত্যন্ত নিন্দনীয় ঘটনা । ভাষায় প্রকাশ করা যায় না । যা ঘটেছে আমরা প্রতিবাদের সুর তুলেছি । আমরা রাস্তায় হাঁটছি । জনগণের সঙ্গে আছি । মহিলার যে প্রতিবাদের আওয়াজ আমার মনে হয় না এটা ভারতবর্ষের আর কোথাও উঠেছে । সমস্ত মহিলাদের আমি স্যালুট জানাচ্ছি । আমি বলছি আপনাদের সঙ্গে আমি আছি । যতক্ষণ না সুবিচার পায় ততক্ষণ এই আওয়াজ তুলে রাখবেন । নির্যাতিতার বাবা-মা যতক্ষণ না সুবিচার পাচ্ছেন আপনাদের পাশে আছি আমি ।"
এই বলতে বলতেই কেঁদে ফেললেন হুগলির সাংসদ । গলা ধরে এল তাঁর ৷ রচনার কথায়, "দিনের শেষে আমি যখন রাতে গাড়ি নিয়ে বাড়ি ফিরি, তখন বহু মেয়েরা বাড়ি ফেরেন । ট্রেনে, বাসে, অটো বা হেঁটে খুব কষ্ট করে ফেরেন তাঁরা । ওইসব মহিলাদের এখন মনে হচ্ছে, আমি ঠিকমতো বাড়িতে পৌঁছব তো? এটা কেন মনে হবে বলুন তো? আমি মাথা উঁচু করে বাঁচব । মাথা উঁচু করে চলব । আমি কারও মেয়ে, একজনের মা । পুরুষ মানুষের আমাকে দেখে সম্মান করবে । আমাকে বাঁচানোর চেষ্টা করবে । এটাই তো পুরুষ মানুষের জাত হওয়া উচিত । বিপদে পড়লে আমাকে নিরাপদে বাড়িতে পৌঁছে দেবে । আমাকে ছিঁড়ে খাবে, আমি কাঁদব, আমার আওয়াজ বাইরে পৌঁছবে না । এটা কোনোদিন তো হওয়া উচিত নয় । এটা কেন হবে?"
অভিনেত্রীর দাবি, "আমাদের একটা কঠিন পদক্ষেপ করতে হবে । বিচার ব্যবস্থা বদলাতে হবে । ভারতীয় সংবিধানে বিচার ব্যবস্থা এমন হতে হবে যেন কোনও পুরুষ মেয়ের দিকে কুনজর দিতে পারবে না । তাদের শাস্তি এমন হবে তারা ভাববে এটা করব কি না । এরকম শাস্তি হওয়া উচিত । না হলে কোনও পরিবর্তন হবে না । যত দ্রুত সম্ভব অপরাধী শাস্তি হওয়া উচিত । আমরা সবাই একজোট হয়ে থাকব । আপনাদের সঙ্গে আছি আমরা । আপনারা ভাববেন না আমরা শিল্পী, আমরা রাজনীতির মানুষ । আপনাদের জন্য আমাদের মন ভাবে না, কাঁদে না । আমরা চাইব ওই চিকিৎসক তরুণীর বাবা মা সুবিচার পাক ।"