আলিপুরদুয়ার, 11 মার্চ: লোকসভা ভোটের আগে দুই বিরোধী শিবিরের জেলা সভাপতির লড়াইকে কেন্দ্র করে চড়ছে পারদ ৷ ভোটের ময়দানে অবতীর্ণ হয়েছেন তৃণমূল কংগ্রেসের রাজ্যসভার সাংসদ তথা তৃণমূল কংগ্রেসের আলিপুরদুয়ার জেলার সভাপতি প্রকাশ চিক বড়াইক ও বিজেপির জেলা সভাপতি তথা মাদারিহাট বীরপাড়ার বিধায়ক মনোজ টিজ্ঞা ।
বীরপাড়ার সিংহানীয়া চা বাগানের সন্তান মনোজ টিজ্ঞা বলেন, "2019 সালে আলিপুরদুয়ার লোকসভা কেন্দ্রের মানুষ বিজেপিকে যেভাবে আশীর্বাদ করেছেন, এবারও তাই করবেন। কেন্দ্রীয় সরকারের একাধিক প্রকল্প বাস্তবায়ন করতে দেয়নি রাজ্য ৷ মানুষের চিকিৎসার জন্য আয়ুষ্মান যোজনা চালু করেনি মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের সরকার। পানীয় জলের পরিষেবা ব্যাহত হচ্ছে ৷ কেন্দ্রের পাঠানো টাকা দুর্নীতি করে মানুষকে পরিষেবা থেকে বঞ্চিত করছেন। সাধারণ মানুষ জেনে গিয়েছেন রাজ্য সরকার কী কাজ করেছে।"
তৃণমূল কংগ্রেসের প্রার্থী প্রকাশ চিক বড়াইক বলেন, "2021 সালে আলিপুরদুয়ার লোকসভা কেন্দ্রে, সব বিধানসভা কেন্দ্রে তৃণমূল কংগ্রেসে হেরে গেলেও 2024 সালের পরিস্থিতি অনেক আলাদা। 2021 সালের পর রাজ্য সরকার লক্ষ্মীর ভাণ্ডার দিচ্ছে। প্রতিটি ঘরের মা বোনেরা রাজ্য সরকারের লক্ষ্মীর ভান্ডার, স্বাস্থ্য সাথী-সহ বিভিন্ন সুযোগ সুবিধা পাচ্ছেন। শুধু তাই নয়, চা বাগানে শ্রমিকদের পাট্টা দেওয়ার কাজ করছে রাজ্য সরকার।"
তিনি আরও বলেন, "রাজ্য সরকার 22 হাজার শ্রমিককে 1.20 লক্ষ টাকা দিয়েছে বাড়ি বানানোর জন্য। 100 দিনের কাজের টাকা দিয়েছে শ্রমিকদের। রাজ্য সরকারের উন্নয়নের ক্ষতিয়ান নিয়েই আমরা প্রচার করব। তাছাড়া বিজেপি প্রার্থীর বিরুদ্ধে তারই দলের সাংসদ তথা মন্ত্রী জন বারলা যেভাবে বিষোদগার করছেন ৷ তাও আমরা তুলে ধরব।"
উল্লেখ্য, 2019 সালে আলিপুরদুয়ার লোকসভা বিজেপির পকেটে ছিল। অন্যদিকে, 2021 সালের বিধানসভা নির্বাচনে আলিপুরদুয়ার লোকসভা কেন্দ্রের 7টি বিধানসভাতেই বিজেপি জেতে। কোচবিহারের তুফানগঞ্জ বিধানসভা, জলপাইগুড়ির জেলার নাগরকাটা বিধানসভা এবং আলিপুরদুয়ার জেলার 5টি বিধানসভা যথাক্রমে আলিপুরদুয়ার, কুমারগ্রাম, কালচিনি, মাদারীহাট, বীরপাড়া, ফালাকাটা, আলিপুরদুয়ার লোকসভার অন্তর্গত। ফলে এই সাতটি বিধানসভাতেই 2021 সালে তৃণমূল হেরেছে। ফলে প্রকাশ চিক বড়াইকের কাছে হেরে যাওয়া বিধানসভাগুলো থেকে তৃণমূল কংগ্রেসের ঝুলিতে ভোট নিয়ে আসা বড় চ্যালেঞ্জ।
শুধু তাই নয়, আলিপুরদুয়ার লোকসভা কেন্দ্রে তৃণমূল কংগ্রেসের ভরাডুবি হয়। জন বারলাকে বিজেপি প্রার্থী করে বাজিমাত করেছিল। বিরাট অঙ্কের ব্যবধানে বিজেপি প্রার্থী জন বারলা তৃণমূল কংগ্রেসের প্রার্থীকে হারিয়ে দেন। ভোটে ভরাডুবির পর আলিপুরদুয়ারের তৃণমূল কংগ্রেসের জেলা সভাপতি ছিলেন মোহন শর্মা। মোহন শর্মাকে সরিয়ে জেলা সভাপতি করা হয় মৃদুল গোস্বামীকে। 2021 সালে অগস্ট মাসে মৃদুল গোস্বামীকে সরিয়ে চা বাগানের হাল ধরেন প্রকাশ চিক বড়াইক ৷ তাঁকে জেলা সভাপতি করা হয়। 2021 সাল থেকে আলিপুরদুয়ারের জেলা সভাপতি প্রকাশ চিক বড়াইক। ফলে জেলাকে তিনি হাতের তালুর মত চেনেন। গত বছর তৃণমূল কংগ্রেসের প্রকাশ চিক বড়াইককে রাজ্য সভার সাংসদ করেছে তৃণমূল।
আর মনোজ টিজ্ঞা 2004 ও 2009 সালে দু'বার আলিপুরদুয়ার লোকসভা আসনে লড়াই করেছেন। ফলে লোকসভা নির্বাচনে লড়াই করার অভিজ্ঞতা তাঁর রয়েছে। 2016 সালে মাদারিহাট বীরপাড়া বিধানসভা থেকে বিজেপির টিকিটে বিধায়ক নির্বাচিত হয়েছিলেন তিনি। 2021 সালে বিধানসভা নির্বাচনেও জয়ী হন মনোজ টিজ্ঞা। বর্তমানে বিধানসভার বিজেপির 'চিফ হুইপ' মনোজ টিজ্ঞা জেলার ব্যপারে আত্মবিশ্বাসী। এখন দেখার এই দুই রাজনীতিক অভিজ্ঞ ব্যক্তিদের মধ্যে এই লোকসভা নির্বাচনে শেষ হাসি কে হাসেন ৷
আরও পড়ুন
1. তৃণমূলের সমস্ত পদ থেকে ইস্তফা সায়ন্তিকার, টিকিট না-পেয়েই সিদ্ধান্ত নায়িকার?
2.মুখ্যমন্ত্রীকে ধন্যবাদ, অর্জুনকে প্রার্থী না-করা প্রসঙ্গে প্রতিক্রিয়া শ্যামের
3.লোকসভার পর ছাত্রভোট দরকার, মত তৃণমূল ছাত্র পরিষদের