চন্দননগর, 23 জুলাই:মঙ্গলবার দ্বিতীয়দিনে পড়ল প্রগতিশীল আলু ব্যবসায়ী সমিতির ডাকা কর্মবিরতি । আর তাতেই কলকাতা-সহ গোটা রাজ্যে লাফিয়ে লাফিয়ে বাড়ছে আলুর দাম । আলু ব্যবসায়ীদের ধর্মঘট নিয়ে মন্ত্রিসভার বৈঠকে ক্ষোভ প্রকাশ করলেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় ৷ আলুর দাম কমাতে প্রয়োজনে কড়া ব্যবস্থা নেওযার পরামর্শ দিয়েছেন তিনি ৷
কয়েকদিন আগেই দ্রব্যমূল্য বৃদ্ধি নিয়ে টাস্ক ফোর্স ও রাজ্যের বিভিন্ন দফতরের সঙ্গে বৈঠক করেছিলেন মুখ্যমন্ত্রী ৷ এরপর টাস্ক ফোর্স ও পুলিশের তরফে বিভিন্ন বাজারে অভিযান চালানো হয় ৷ এই অভিযানের পর অন্য জিনিসপত্র ও শাক সবজির দাম কমলেও আশানুরূপভাবে কমেনি আলুর দাম ৷ এই অবস্থায় মমতা আলু নিয়ে কড়া অবস্থান নেওয়ার নির্দেশ দিলেন আধিকারিকদের ৷ মঙ্গলবার মন্ত্রীসভার বৈঠকে তিনি জানিয়েছেন, সাধারণ মানুষকে অসুবিধায় মধ্যে ফেলে এমন কোনও ধরনের ধর্মঘটকে সমর্থন করা যাবে না ৷ প্রযোজনে ব্যবসায়ীদের বিরুদ্ধে কড়া ব্যবস্থা নিতে হবে।
টানা দ্বিতীয়দিনে আলু ব্যবসায়ীদের কর্মবিরতি (ইটিভি ভারত) এদিকে আলু নিয়ে এবার কড়া পদক্ষেপ নিতে চলেছে রাজ্য় সরকার ৷ ইতিমধ্যে বাজারে আলুর চাহিদা মেটাতে বিকল্প ব্যবস্থা গ্রহণের ব্লু প্রিন্ট তৈরি করা হয়েছে । আলু বিক্রি করতে ইচ্ছুক চাষিদের কাছ থেকে আলু কিনে খুচরো বাজারে তা সরবরাহ করবে খোদ প্রশাসন । তাতে যেমন আলুর সরবরাহ ঠিক থাকবে তেমনই দামও নিয়ন্ত্রণের মধ্যেই থাকবে । আলু ব্যবসায়ীদের উপর আর নির্ভর করতে হবে না । শুধু তাই নয়, ইচ্ছুক আলু চাষিদের তালিকাও তৈরি করতে শুরু করেছে জলপাইগুড়ি জেলা প্রশাসন ।
ব্যবসায়ীদের হাত ধরেই হিমঘর থেকে আলু বাজারে আসে । কিন্তু কর্মবিরতির জেরে দু'দিন তা বন্ধ রয়েছে গোটা রাজ্যে । আর যার ফলে চাহিদার তুলনায় আলুর যোগান কমে গিয়েছে ৷ তাতেই তড়তড়িয়ে বাড়ছে আলুর দাম ।
প্রগতিশীল আলু ব্যবসায়ী সমিতির সম্পাদক লালু মুখোপাধ্যায় বলেন, "সরকারের তরফে কোন আলোচনার প্রস্তাব আসেনি । যদি সরকার আলোচনা করে অবশ্যই আমরা বসব । আমরাও চাই আলোচনার মাধ্যমে সমাধান হোক । যদি না হয় তাহলে এভাবেই কর্মবিরতি চলবে ।"
বাঙালি আলুর উপর অনেকটাই নির্ভরশীল । ক্রেতাদের দাবি, এভাবে ব্যবসায়ীদের কর্মবিরতি চলতে থাকলে বাজারে আলু বিক্রি বন্ধ হয়ে যাবে । সেক্ষেত্রে যেমন খুচরা ব্যবসায়ীরা সমস্যায় পড়বেন । তার চেয়েও বিপদে পড়বে আমজনতা । সেই সঙ্গে পাল্লা দিয়ে বাড়বে সবজির দামও । রাজ্য জুড়ে আলু ব্যবসায়ীদের কর্মবিরতির ডাকে প্রভাব পড়তে শুরু করেছে খুচরো বাজারে ।
চন্দননগর লক্ষ্মীগঞ্জের খুচরো আলু ব্যবসায়ী শঙ্কর মাহাতো বলেন, "যেভাবে কর্মবিরতি চলছে তাতে আমাদের কিছু করার নেই । বাজারে আলুর দাম বাড়তে শুরু করেছে । এরপর এভাবে চলতে থাকলে আলু বাজার বন্ধ হয়ে যাবে । তবে আমার মতে একজনকে বড়লোক করে লাভ নেই । সরকারি তরফে আলুর দাম বেঁধে দিক । ব্যবসায়ী থেকে গরিব মানুষ সকলেই বাঁচুক ।"
বর্তমানে খুচরা বাজারে জ্যোতি আলুর দাম যাচ্ছে 35 টাকার মধ্যে। চন্দ্রমুখী আলু কেজি প্রতি 38 থেকে 40 টাকা দরে বিকচ্ছে । পাইকারি বাজারেও 50 কিলো আলুর বস্তায় 100 থেকে 150 টাকা দাম বেড়েছে । এমনকী সুফল বাংলায় কেজি প্রতি 32 টাকা দরে আলু বিক্রি হচ্ছে ।
ক্রেতা রবীন্দ্রনাথ ঘোষ ও সুবীরকুমার ঘোষের কথায়, "সাধারণ ক্রেতা খুব খারাপ অবস্থার মধ্যে দিয়ে যাচ্ছে । সরকার ব্যবসায়ী সকলকেই সকলের কথা চিন্তা করে কাজ করতে হবে । বাজারে সব কিছুর দাম বাড়ছে । আখেরে আমাদের সমস্যার মুখে পড়তে হচ্ছে । সরকারি তরফে আরও উদ্যোগ গ্রহণ করা উচিত । সুফল বাংলা আছে কিন্তু খুবই সীমিত । যদি সর্ব ক্ষেত্রে আনা যায় তাহলে সকলেই স্বস্তির নিঃশ্বাস পাবে ।"
কর্মবিরতির জেরে আলুর দাম বৃদ্ধি রাজ্যে (নিজস্ব ছবি)
বাংলা ছাড়াও প্রগতিশীল আলু সমিতির ব্যবসায়ীরা ভিন্ন রাজ্য যেমন বিহার, ওড়িশা ,ছত্রিশগড় থেকে অসমে আলু রফতানি করেন । কর্মবিরতির জেরে এখন সব কিছুই বন্ধ রয়েছে । যদিও এই আলু ব্যবসায়ীদের কর্মবিরতির কোন সমাধান সূত্র এখনও মেলেনি । রাজ্য সরকারও সেভাবে এর সমাধানে এগিয়ে আসেনি । কৃষি বিপণন দফতর সূত্রে খবর, সরকারি তরফে এখনও আলোচনা চলছে । রাজ্যে আলুর জন্য 475টি হিমঘর রয়েছে । এখনও পর্যন্ত হিমঘরে আলু মজুত রয়েছে 40 লক্ষ টন ।
হিমঘর মালিকদের সংগঠনের পক্ষ থেকে প্রাক্তন সভাপতি ও হিমঘর মালিক প্রতিত পাবন দে বলেন, "হিসাবে অনুযায়ী ডিসেম্বর পর্যন্ত এই পাঁচ মাস আলুর খরচ হতে পারে 31টন পর্যন্ত । এছাড়াও 5 টন বীজ আলু হিসাবে থাকার কথা । এবারে এপ্রিল মাস থেকে আলু বাজারে বেরিয়েছে । সেই হিসাবে আলু ভিন্ন রাজ্যে গেলে খুব একটা ক্ষতি হবে না । আলু ব্যবসায়ী সমিতির কর্মবিরতি উঠে যাওয়া অবশ্যই উচিত । তবে যে দাবি নিয়ে ব্যবসায়ীরা লড়াই করছে এটারও যুক্তি আছে ।"
প্রগতিশীল আলু ব্যবসায়ী সমিতির অভিযোগ, ভিন্ন রাজ্যে আলু রফতানির ক্ষেত্রে পুলিশি হেনস্থার স্বীকার হচ্ছেন ব্যবসায়ীরা । আটকে দেওয়া হচ্ছে আলুর লরি । এতে আলু নষ্ট হচ্ছে ৷ ক্ষতি হচ্ছে ব্যবসায়ীদের ৷ তার প্রতিবাদে এই অনিদৃষ্টকালের কর্মবিরতির ডাক দেওয়া হয়েছে । মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যের হস্তক্ষেপের দাবি করেছেন ব্যবসায়ীরা । যতদিন না এর সুরাহা হচ্ছে, ততদিন অনির্দিষ্টকালের জন্য আলুর ব্যবসা বন্ধ রাখবে প্রগতিশীল আলু ব্যবসায়ী সমিতি ।