আসানসোল, 22 জানুয়ারি: ডালমিয়া খনি এলাকায় জনস্বাস্থ্য কারিগরি দফতরের পাইপলাইন পাতার সময় ভয়ঙ্কর দুর্ঘটনা ঘটে গতকাল, মঙ্গলবার । কাজ করার সময় ওভারবার্ডেন মাটিতে চাপা পড়েন চারজন শ্রমিক । এরমধ্যে তিনজনের মৃত্যু হয়েছে । মঙ্গলবার ঘটনাস্থল পরিদর্শনে যান জনস্বাস্থ্য কারিগরী দফতরের উচ্চ আধিকারিকরা ।
তাঁরা জানিয়েছেন, বিভাগীয় তদন্ত শুরু হয়েছে । কেন এই দুর্ঘটনা ঘটল, সমস্ত বিষয়টি খোঁজ নিয়ে দেখা হচ্ছে । অন্যদিকে এই দুর্ঘটনা নিয়ে আন্দোলনে নেমেছে বামেরা । তারা কারণ জানতে চেয়ে জেলা প্রশাসনকে চিঠি দিয়েছে ৷ পাশাপাশি মৃতদের পরিবারকে 20 লক্ষ টাকা করে আর্থিক সাহায্যের দাবি তুলেছে ।
মাটি চাপা পড়ে তিন শ্রমিকের মৃত্যুর তদন্তে প্রশাসন, আর্থিক সাহায্য়ের দাবিতে বিক্ষোভ বামেদের (নিজস্ব ছবি) মঙ্গলবার জনস্বাস্থ্য কারিগরি দফতরের পাইপলাইন পাতার কাজ করার সময় আচমকা, মাটি ধসে বড়সড় দুর্ঘটনা ঘটে । আসানসোলের সালানপুরের ডালমিয়া খনি এলাকায় পাইপলাইনের কাজ করার সময় হঠাৎই ওভারবার্ডেন মাটি ধসে যায় । আর তাতেই চাপা পড়েন চারজন ঠিকা শ্রমিক । পুলিশ সূত্রে জানা গিয়েছে, মৃতদের নাম রেজ্জাক শেখ (22), রোহিত শেখ (21), নীতীশ পাসওয়ান (22) । আসানসোল জেলা হাসপাতাল সূত্রে জানা গিয়েছে, মৃতদের প্রথম দু’জন ঝাড়খণ্ডের বাসিন্দা। নীতীশ কুলটি থানা এলাকার বাসিন্দা ।
বুধবার কলকাতা থেকে জনস্বাস্থ্য কারিগরি দফতরের উচ্চ আধিকারিকদের একটি দল যায় ঘটনাস্থলে । জনস্বাস্থ্য কারিগরি দফতরের ইঞ্জিনিয়ার ইন চিফ অনিমেষ ভট্টাচার্য বলেন, "আমাদের একটি বিভাগীয় তদন্ত রিপোর্ট করতে হবে । সেই কারণে আমরা পুরো বিষয়টা দেখতে এসেছিলাম, কী কারণে এই ঘটনা ঘটেছে । এরপর আইনানুগ যা ব্যবস্থা নেওয়ার, সেগুলো নিতে হবে ।’’
তিনি আরও বলেন, ‘‘দেখতে এসে শুনলাম ধারে যে মাটি ছিল, সেই মাটি পড়ে গিয়ে চাপা পড়েছে । কিন্তু এত বেশিও মাটি পড়েনি । সেই নিয়ে তদন্ত হচ্ছে । সবকিছু নিয়েই রিপোর্ট জমা দেব আমরা । সরকারি নিয়মে যা ক্ষতিপূরণ হয়, মৃতদের পরিবারকে সেই ক্ষতিপূরণ দেওয়া হবে । আমরা পরিবারগুলোর পাশে আছি ।"
মাটি চাপা পড়ে তিন শ্রমিকের মৃত্যুর তদন্তে প্রশাসন (নিজস্ব ছবি) যদিও জনস্বাস্থ্য কারিগরি দফতরের এই উচ্চ আধিকারিকের সান্ত্বনায় চিঁড়ে ভিজছে না বলে তীব্র প্রতিবাদ জানিয়েছেন বাম শ্রমিক নেতা তথা রাজ্যের প্রাক্তন মন্ত্রী ও প্রাক্তন সাংসদ বংশগোপাল চৌধুরী । বুধবার দলীয় ঝাণ্ডা নিয়ে সেখানে যান তিনি ৷ সঙ্গে ছিলেন মৃত নীতীশ পাসওয়ানের বাবা ও পরিবারের লোকজন ৷ এছাড়াও স্থানীয় বাম-কর্মী সমর্থকদের নিয়ে এলাকায় যান তিনি ।
বংশগোপাল চৌধুরী বলেন, "ওঁরা দুর্ঘটনার পর এরকম রেকর্ড বাজান । আমি জেলা প্রশাসনকে, পিএইচইকে চিঠি দিয়ে স্পষ্ট জানিয়েছি 20 লক্ষ টাকা করে ক্ষতিপূরণ দিতে হবে মৃতদের পরিবারগুলোকে । সালানপুর এলাকায় বেআইনি কাজকম্মে ভরে গিয়েছে । তাই এই দুর্ঘটনা । যেখানে পুরনো ডালমিয়া খনি ছিল, সেখানে পিএইচই পাইপ বসাতে গর্ত খুঁড়তে গেল কেন ?"
যদিও শুধু আর্থিক সাহায্য নয়, পরিবারের একজনের চাকরির দাবি করেছেন মৃত নীতীশ চৌধুরীর পরিবার । মৃত নীতীশের নিকট আত্মীয় দামোদর পাসওয়ান বলেন, "নীতীশের ছ’মাসের শিশু সন্তান রয়েছে । মাত্র দেড়বছর তাঁর বিয়ে হয়েছিল । বাড়িতে বৃদ্ধ পিতা । আগামিদিনে সংসার চলবে কী করে ? সেই কারণে ওঁর স্ত্রীকে চাকরি দেওয়া হোক ।" ঘটনাস্থলে এলেও মৃত নীতীশের বাবা রামচন্দ্র পাসওয়ান পুত্র শোকে পাথর । তিনি কোনও কথা বলতে পারেননি ।