কলকাতা, 5 অক্টোবর: আরজি কর মেডিক্যাল কলেজ ও হাসপাতালের চিকিৎসক পড়ুয়ার ধর্ষণ-খুনের ঘটনার প্রতিবাদের আঁচ এখনও নেভেনি ৷ তার মধ্যেই নতুন করে সামনে এল আরও একটি ধর্ষণ ও খুনের ঘটনা ৷ এবার পৈশাচিক এই ঘটনার শিকার বছর নয়েকের এক বালিকা ৷ ফলে এই নিয়ে প্রতিবাদের স্বর আরও জোরালো হয়েছে ৷ বিরোধী রাজনৈতিক দলগুলি সরব হয়েছেন রাজ্য সরকার ও মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের বিরুদ্ধে ৷
সিপিএম নেতা সুজন চক্রবর্তী প্রশ্ন তুলেছেন, ‘‘বাংলা কি ধর্ষণ এবং খুনিদের রাজ্য পরিণত হল ?’’ একই সুরে সরব হয়েছেন প্রদেশ কংগ্রেস সভাপতি শুভঙ্কর সরকারও ৷ তাঁর প্রশ্ন, ‘‘রাজ্য সরকার চলছে ? পুলিশ প্রশাসন আছে ?’’ অন্যদিকে এই ঘটনা নিয়ে সরাসরি মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়কে নিশানা করেছেন ৷ সোশাল মিডিয়ায় করা একটি পোস্টে তিনি লিখেছেন, ‘‘মহিলাদের সুরক্ষা দিতে ব্যর্থ বাংলার অপদার্থ মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় ৷’’
সিপিএম নেতা সুজন চক্রবর্তী (নিজস্ব চিত্র) উল্লেখ্য, শুক্রবার টিউশন পড়তে গিয়ে আর বাড়ি ফেরেনি দক্ষিণ 24 পরগনার জয়নগরের মহিষমারী এলাকার এক নাবালিকা ৷ শনিবার সকালে চতুর্থ শ্রেণির ওই ছাত্রীর ক্ষতবিক্ষত দেহ উদ্ধার হয় ৷ অভিযোগ, ধর্ষণ করে খুন করা হয়েছে ওই বালিকাকে ৷ পুলিশ ইতিমধ্যে একজনকে গ্রেফতার করেছে ৷
যদিও পুলিশের বিরুদ্ধেই নিষ্ক্রিয়তার অভিযোগ তুলেছেন স্থানীয় বাসিন্দারা ৷ তাঁদের দাবি, মহিষমারী ফাঁড়ির পুলিশ আধিকারিকরা এই নিয়ে যথাযথ ব্যবস্থা নিলে মেয়েটিকে হয়তো বাঁচানো যেত ৷ তাই দেহ উদ্ধারের পর পুলিশের বিরুদ্ধে যাবতীয় ক্ষোভ গিয়ে পড়ে ৷ ভাঙচুর হয় পুলিশ ফাঁড়ি ৷ পুলিশকে ঘিরেও বিক্ষোভ হয় ৷
প্রদেশ কংগ্রেস সভাপতি শুভঙ্কর সরকার (নিজস্ব চিত্র) এই নিয়ে সিপিএম নেতা সুজন চক্রবর্তী বলেন, "অত্যন্ত দুঃখজনক । বেদনাদায়ক । এ বিষয়ে কোনও মন্তব্য করা যায় না । বাংলায় যা ঘটে চলেছে তাতে কি বাংলা ধর্ষণ এবং খুনিদের রাজ্য পরিণত হল ? ক্লাস ফোরে পড়া মেয়ে টিউশন থেকে বাড়ি ফিরতে পারল না । রাজ্যের মহিলা মুখ্যমন্ত্রীর নেতৃত্বে বাংলাতে খুন-ধর্ষণের রাজত্বে পরিণত হল ?’’
তিনি আরও বলেন, ‘‘পুলিশ এত অপদার্থ যে অভিযোগ নিল না । সঙ্গত কারণে স্থানীয় মানুষ বিক্ষোভ দেখিয়েছেন ৷ তাঁদের রাগের বহিঃপ্রকাশ ঘটিয়েছেন । এর বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেবে প্রশাসন । কিন্তু এই ঘটনা কেন ঘটবে, জবাব দিতে হবে মুখ্যমন্ত্রী-পুলিশমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়কে ।"
প্রদেশ কংগ্রেস সভাপতি শুভঙ্কর সরকার বলেন, "রাজ্য সরকার চলছে ? পুলিশ-প্রশাসন আছে ? তারা এত অপদার্থ ! আমরা মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়কে বলতে চাই, আপনি রাজ্যের প্রথম মহিলা মুখ্যমন্ত্রী আপনার অধীনেই হোম ডিপার্টমেন্ট, আপনার অধীনে পুলিশ বিভাগ তার পরেও কেন এসব ঘটনা ?’’
তিনি আরও বলেন, ‘‘এই দুর্গোৎসবে আরও একটি বাচ্চা মেয়েকে বিসর্জন দিতে হল আমাদের । মুখ্যমন্ত্রীর কাছে আবেদন আপনি আরও বেশি সেনসিটিভ হন ৷ পুলিশ-প্রশাসনকে তাঁদের যথাযথ পদক্ষেপ করতে বলুন ।"
এই ঘটনার প্রতিবাদে সামিল হতে এ দিন দক্ষিণ 24 পরগনার পদ্মেরহাট হাসপাতালে যান ডিওয়াইএফআই-এর নেত্রী মীনাক্ষী মুখোপাধ্যায়, বিজেপি বিধায়ক অগ্নিমিত্রা পাল, সিপিএম নেতা কান্তি গঙ্গোপাধ্যায়৷ আগামিকাল কুলতলি থানা ঘেরাও কর্মসূচি করবে বিজেপি ৷ সেখানে উপস্থিত থাকতে শনিবারই বালুরঘাট থেকে রওনা দিয়েছেন বিজেপির রাজ্য সভাপতি সুকান্ত মজুমদার ৷
তার আগে এ দিন সোশাল মিডিয়ায় পোস্ট করে এই নিয়ে সরব হয়েছেন তিনি ৷ সুকান্ত লিখেছেন, ‘‘স্তম্ভিত ! শিহরিত ! কুলতলি থানা এলাকার কৃপাখালি এলাকায় টিউশন পড়ে ফেরার পথে বলপূর্বক তুলে নিয়ে গিয়ে ধর্ষণ করে নৃশংসভাবে খুন করা হল চতুর্থ শ্রেণীর একজন নাবালিকা ছাত্রীকে । পরে নদীর চর থেকে গ্রামবাসীরা উদ্ধার করলেন ছোট্ট মেয়েটির নিথর দেহ । মহিলাদের সুরক্ষা দিতে ব্যর্থ বাংলার অপদার্থ মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়কে আমার প্রশ্ন, দেবীপক্ষের সূচনাতেও নিস্তার নেই বাংলার মেয়েদের ! আপনার অপশাসনে আর কতগুলি বাংলার মেয়ের এই পরিণতি হবে !! ছিঃ ৷’’