চন্দননগর, 25 ফ্রেব্রুরারি:দুটি গাড়ির রেষারেষির জেরেই মৃত্যু হয়েছে সুতন্দ্রা চট্টোপাধ্যায়ের ৷ এমনই দাবি করে পুলিশ জানিয়েছে, পানাগড়ের দুর্ঘটনায় নিহত যুবতীর সঙ্গে ইভটিজিংয়ের ঘটনার প্রমাণ মেলেনি ৷ সেই দাবি মানতে নারাজ মৃত সুতন্দ্রার মা তনুশ্রী চট্টোপাধ্যায় ৷
তিনি বলেন, "ইভটিজিং যদি না হয় তাহলে মেয়ের গাড়িতে ধাক্কা মারছিল কেন অন্য গাড়িটি । আমার মেয়েকে অপহরণ করার জন্যই ধাওয়া করা হয়েছিল । কেন অন্য গাড়ির আরোহীদের ধরা হচ্ছে না ?" তাঁর দাবি, লক্ষীর ভাণ্ডার, রূপশ্রীর দরকার নেই, চাই মেয়েদের নিরাপত্তা ৷
পুলিশের দাবি উড়িয়ে বিচার চাইছেন সুতন্দ্রার মা (নিজস্ব ভিডিয়ো) প্রসঙ্গত, রবিবার গভীর রাতে পশ্চিম বর্ধমানের কাঁকসার পানাগড়ের রাইস মিল মোড়ে গাড়ি উলটে মৃত্যু হয় ইভেন্ট ম্যানেজমেন্ট সংস্থার ম্যানেজার হুগলির চন্দননগরের বাসিন্দা সুতন্দ্রা চট্টোপাধ্যায়ের (26) । কিন্তু কীভাবে এই দুর্ঘটনা ঘটল, তা নিয়ে রয়েছে ধোঁয়াশা ৷
সুতন্দ্রা চট্টোপাধ্যায়ের মৃত্যুর খবর শুনে কান্নায় ভেঙে পড়ে পরিবার (নিজস্ব ছবি) সোমবার সন্ধ্যায় সাংবাদিক সম্মেলন করে আসানসোল-দুর্গাপুর কমিশনারেটের পুলিশ কমিশনার সুনীলকুমার চৌধুরী স্পষ্ট জানিয়ে দেন, "নিহত যুবতী যে গাড়িটিতে ছিলেন, সেই গাড়িটি এবং সাদা রংয়ের ক্রেটা গাড়িটির মধ্যে রেষারেষি চলছিল । কোনও ইভটিজিংয়ের ঘটনার কথা অভিযোগে উল্লেখ নেই । পুলিশ সমস্ত জায়গার সিসিটিভি ফুটেজ খতিয়ে দেখেছে ৷ তাতে একটি জায়গায় দেখা গিয়েছে, যুবতী যে গাড়িটিতে ছিলেন সেই গাড়িটি ডিভাইডারে ধাক্কা মারে । তারপরেও সাদা রংয়ের ক্রেটা গাড়িটির পিছনে ধাওয়া করে মৃতার গাড়ি ।" তবে এই তত্ত্ব মানতে চাননি মৃতার মা ৷
তনুশ্রী চট্টোপাধ্যায় বলেন, "পুলিশ বলছে রেষারেষি করতে গিয়ে মেয়ের গাড়ি উলটে গিয়েছে । কোনও গাড়ি কেন অকারণে রেষারেষি করবে । ওই গাড়ি থেকে মদের বোতল, মদের গ্লাস পাওয়া গিয়েছে । তারা বিভিন্নভাবে কটূক্তি করেছে আমার মেয়েকে । গাড়ি ধাক্কা দিয়ে রাস্তার ধারে নিয়ে চলে যাওয়া হচ্ছিল । এখানে তো গাড়ির রেষারেষি হবেই । নিজেদের বাঁচানোর জন্য এই গাড়ির রেষারেষি । আমার মেয়েকে আটকে গাড়ি থেকে নামিয়ে নেওয়ার চেষ্টা হচ্ছিল । অসৎ উদ্দেশ্য ছিল সাদা গাড়ির আরোহীদের । তারা প্রত্যেকেই মদ্যপ অবস্থায় ছিল । পুলিশ কাউকে ধরতে পারেনি ।"
সুতন্দ্রা চট্টোপাধ্যায়ের পরিবার (নিজস্ব ছবি) মেয়ের মৃত্যুর পরও চট্টোপাধ্যায় পরিবারের তরফে কোনও অভিযোগ দায়ের হয়নি ৷ এই নিয়ে সুতন্দ্রার মা বলেন, "আমার মেয়ের গাড়ির চালক মিন্টু মণ্ডল অভিযোগ করেছে । তার অভিযোগের পর আমরা কোনও অভিযোগ করিনি । অভিযোগ যদি মন মতো না হয় তাহলে আমরা আবার অভিযোগ করব ।"
এদিন চন্দননগর নাড়ুয়া রায় পাড়ায় মৃত সুতন্দ্রা চট্টোপাধ্যায়ের বাড়িতে আসে রাজ্যের তরফে মহিলা কমিশনের তিন সদস্যের প্রতিনিধি দল ৷ তাঁদের মধ্যে ছিলেন সুজাতা পাকরাশি লাহিড়ী । সুতন্দ্রার মা তনুশ্রী চট্টোপাধ্যায় বলেন, "মহিলা কমিশন মেয়র বা পুলিশ প্রশাসনকে একটাই কথা বলব মদ খাওয়া বন্ধ হোক । যত অত্যাচার অনাচার হচ্ছে শুধুমাত্র মদের জন্যই এই ঘটনা ঘটছে । আমার স্বামীর বাড়ি এবং দোকান নিয়ে 50 লক্ষ টাকা দেনা ছিল ৷ দোকানটা বিক্রি হওয়ার কথা ছিল । আমার মেয়ে এসে ব্যাংকের সঙ্গে কথা বলছিল । আমার মেয়ে যেহেতু একমাত্র রোজগেরে ৷ সেই কারণে তার ওপরই দায়িত্ব ছিল সব । বিষয়টার স্বচ্ছ বিচার চাই ৷ একের পর এক যে ঘটনাগুলো ঘটছে সেটার সঠিক বিচার হচ্ছে না ৷ আমরা বিচার চাই ।"
চন্দননগর পুরনিগমের মেয়র রাম চক্রবর্তীও এদিন সুতন্দ্রা চট্টোপাধ্যায়ের বাড়িতে আসেন । পরিবারের পাশে থাকার বার্তা দেন তিনি । মেয়র রাম চক্রবর্তী বলেন, "অত্যন্ত দুঃখজনক ঘটনা । চন্দননগর শহরকে আমরা শিক্ষা, সংস্কৃতির শহর বলে গর্ব করি । একজন সাংস্কৃতিক কর্মী ছিল সুতন্দ্রা ৷ শুধু পশ্চিমবঙ্গে নয়, সারা ভারতবর্ষে জুড়েই বিচরণ ছিল এই নৃত্যশিল্পীর । রাস্তায় পথ দুর্ঘটনায় তার মৃত্যু আমাদের কাছে অত্যন্ত বেদনার । কিছুদিন আগেই সুতন্দ্রার বাবা প্রয়াত হয়েছেন ৷ সেই শোক কাটাতে না কাটাতেই আবার একটা দুঃখজনক ঘটনা । তবে কীভাবে ঘটনা ঘটেছে তা নিয়ে অনেক মতপার্থক্য রয়েছে । তবে যাই ঘটনা ঘটুক না কেন পুলিশের কাছে একটা অভিযোগ দায়ের হয়েছে । আমরাও চাই সঠিক তদন্ত করে প্রকৃত সত্য উদঘাটন হোক । আমরা এই পরিবারের পাশে রয়েছি ।"