বারুইপুর, 17 নভেম্বর: মনোজ মিত্র নেই, তাঁর স্মৃতি আগলে পড়ে রইল বারুইপুরে 'বাঞ্ছারামের বাগান' ৷ আটের দশকে এখানেই শুটিং হয়েছিল কালজয়ী বাংলা ছবিটির ৷
12 নভেম্বর সকাল 8টা 50 মিনিট ৷ তারাদের দেশে পাড়ি দিলেন কিংবদন্তি নাট্যব্যক্তিত্ব তথা অভিনেতা মনোজ মিত্র ৷ তপন সিনহা পরিচালিত 'বাঞ্ছারামের বাগান' ছবিতে মনোজ মিত্রের মন ছুঁয়ে যাওয়া অভিনয় আজও গেঁথে দর্শকের মনে ৷
স্মৃতি আগলে পড়ে বাঞ্ছারামের বাগান (ইটিভি ভারত) 1980 সালে মুক্তি পেয়েছিল কালজয়ী বাংলা ছবি 'বাঞ্ছারামের বাগান' । মনোজ মিত্রের নাটক 'সাজানো বাগান' অবলম্বনেই ছবিটি বানিয়েছিলেন পরিচালক তপন সিনহা । ছবিতে মুখ্য ভূমিকায় ছিলেন মনোজ । বৃদ্ধ বাঞ্ছারামের ভূমিকায় তাঁর অভিনয় প্রশংসিত হয়েছিল সর্বত্র। ছবির আউটডোর শুটিং হয়েছিল বারুইপুরের শিখরবালি 1 পঞ্চায়েত এলাকায় চক্রবর্তী পরিবারের আম বাগানে।
পরিবার সূত্রে জানা গিয়েছে, চক্রবর্তী পরিবারের এক আত্মীয়ের যোগাযোগ ছিল সিনেমা জগতে । তপন সিনহাকে চিনতেন তিনি । সিনেমার জন্য যখন বাগান খুঁজছেন পরিচালক, তখন সেই আত্মীয়ই তপন সিনহাকে বারুইপুরের এই আম বাগানে শুটিংয়ের প্রস্তাব দেন। সরেজমিনে দেখতে আসেন পরিচালক । বাগান পছন্দ হয় তাঁর। শুরু হয় ছবির শুটিং ।
বারুইপুরের এই বাগানে শুটিং হয়েছিল 'বাঞ্ছারামের বাগান' ছবির (নিজস্ব ছবি) সিনেমা মুক্তির পর থেকেই সেই বাগান বিখ্যাত হয়ে ওঠে 'বাঞ্ছারামের বাগান' নামেই । চুয়াল্লিশ বছর পরও 'বাঞ্ছারাম' মনোজ মিত্রের স্মৃতি বয়ে একইরকম রয়ে গিয়েছে এই বাগান । তাঁর স্মৃতিচারণার ভাসলেন চক্রবর্তী পরিবারের সদস্যরা ৷
চক্রবর্তী বাড়ির বর্তমান কর্তা দীপক চক্রবর্তী 'বাঞ্ছারামের বাগান' ছবির শুটিংয়ের সময় ছিলেন বছর বারোর কিশোর । তিনি জানান, টানা প্রায় এক মাস শুটিং চলেছিল এখানে । শুটিং চলাকালীন বারুইপুরেই একটি বাড়িতে থাকতেন মনোজ মিত্র-সহ ছবির অন্য কলাকুশলীরা ।
দীপক আরও জানান, বর্তমানে ওই বাগানে মাঝে মধ্যে সিনেমার শুটিং হয়। শীতকালে বনভোজনেও আসেন কেউ কেউ । কিন্তু এত বছরেও কয়েক বিঘা জুড়ে বিস্তৃত এই বাগানের তেমন পরিবর্তন হতে দেননি তাঁরা । একইরকম আছে প্রাচীন আমগাছগুলি । বাগানের গাছ-গাছালি, পাখি, প্রাণীজগতের সুরক্ষার দিকে আলাদা করে নজর রাখা হয় বলেই জানান তিনি ।
'বাঞ্ছারামের বাগান' ছবির দৃশ্য (নিজস্ব ছবি) বছর চারেক আগেও একবার এই বাগানে এসে ঘুরে যান মনোজ মিত্র । ফটোশুটের জন্য আবার এই বাগানে এসেছিলেন তিনি । সেসময় তাঁকে সামনে থেকে দেখার সুযোগ হয়েছিল চক্রবর্তী বাড়ির নবীন সদস্য দীপকের ছেলে দ্বৈপায়নের ৷
তাঁর কথায়, "আমাদের বাগানে এসে অতীতের স্মৃতিতে ডুব দেন মনোজ মিত্র । তিনি জানান, প্রথম দিন ভোর চারটেয় শুটিং করেছিলেন। প্রথম দিনেই বাগানের পাশে একটি পুকুর থেকে জল তোলার দৃশ্য ছিল তাঁর । শীতের ভোরে সেই দৃশ্য ক্যামেরাবন্দি করার বিবরণ এত দিন পরেও গড়গড় করে বলে যান। বাগানটি একই রকম আছে দেখে খুব খুশি হয়েছিলেন তিনি।