মৃতের আত্মীয় ও উত্তরপাড়া পৌরসভার বক্তব্য উত্তরপাড়া, 28 ফেব্রুয়ারি:ঘরের মধ্যে নিজেদের বন্দি করে স্বেচ্ছামৃত্যুর জন্য দিন গুনছিল মা ও ছেলেমেয়ে । এই ঘটনায় মা শ্যামলী মুখোপাধ্যায় ও মেয়ে চুমকি মুখোপাধ্যায় সুস্থ হলেও অসুস্থ ছেলে সৌরভ মুখোপাধ্যায়ের মৃত্যু হল বুধবার । তিনি একটি নির্মাণ সংস্থায় কাজ করতেন । অবসরপ্রাপ্ত সরকারি কর্মচারী বাবা গগনবরণ মুখোপাধ্যায়ের মৃত্যুর পর বাড়ি ফিরে এসেছিলেন সৌরভ । এরপরই মানসিক অবসাদে ভুগছিল উত্তরপাড়া পৌরসভার 17 নম্বর ওয়ার্ডের রাজেন্দ্র অ্যাভিনিউ থার্ডলেনের গোটা পরিবার ।
সেই কারণেই তাঁরা প্রায় খাওয়াদাওয়া বন্ধ করে দিয়েছিলেন ৷ সেই কারণে অসুস্থ হয়ে পড়ে । অসুস্থ বৃদ্ধ মাও সেভাবে যোগাযোগ করতে পারেনি প্রতিবেশী ও আত্মীয়স্বজনের সঙ্গে । তাই তাঁরা নিজেদের ঘরবন্দি করে ফেলেন । কারও সঙ্গে যোগ ছিল না তাঁদের । যদিও এই ঘটনা কথা জানার পরই তৎপরতার সঙ্গে আসেন কাউন্সিলর উৎপলাদিত্য চট্টোপাধ্যায় ও পৌরসভার চেয়ারম্যান দিলীপ যাদব । উত্তরপাড়া থানার পুলিশকে নিয়ে বাড়ির দরজা ভেঙে পরিবারের তিন সদস্যকে উদ্ধার করেন তাঁরা । বৃদ্ধা শ্যামলী, মেয়ে চুমকি ও ছেলে সৌরভকে উত্তরপাড়া স্টেট জেনারেল হাসপাতালে ভর্তি করা হয় । যদি গত একদিনে মা ও মেয়ের কিছুটা সুস্থ হলেও সৌরভের মৃত্যু হয় বুধবার । তাঁর শেষকৃত্যের দায়িত্ব নেয় উত্তরপাড়া পৌরসভা ।
এ বিষয়ে চেয়ারম্যান দিলীপ যাদব বলেন, "এই ধরনের মৃত্যুতে নিজেদের অপরাধী মনে হয় । আমাদের পাড়ার একজন মানুষ তারা কতদিন বাড়ি থেকে বের হননি, খাননি, অসুস্থ ছিলেন । কোনও প্রতিবেশীর সঙ্গেও কথা বলেননি ৷ তাই কেউ জানতেও পারেনি । সমাজে বা প্রশাসনের কারও কাছে কোনও সাহায্য চাননি এটা আমাদের কাছে খুব কষ্টের ৷ আমরা যখন জানতে পেরেছি তখনই ব্যবস্থা নিয়েছি । গগনবাবুর স্ত্রী এবং মেয়ের চিকিৎসা চলছে ৷ আশা করব তাঁরা সুস্থ হয়ে উঠবেন ।"
জানা গিয়েছে, আত্মীয় বৈষ্ণবদাস মুখোপাধ্যায় কিছু একটা হয়েছে আন্দাজ করে উত্তরপাড়ায় আসেন 4 ফেব্রুয়ারি । দরজা ভিতর থেকে বন্ধ ছিল ৷ তাঁর কথায়, "গৃহকর্তা গগন মুখোপাধ্যায়ের মৃত্যুর পর থেকে মানসিক অবসাদ তৈরি হয় পরিবারে । বাড়ি থেকে বেরোনো বন্ধ করে দেন তাঁরা । কারও সঙ্গে যোগাযোগও ছিল না । মাসখানেক না-খেয়ে এভাবেই হয়তো পড়েছিলেন । আমাকে ফোন করে সৌরভ একদিন বলে দাদা আমার শরীর খুব খারাপ । এক মাস আমরা কিছু খাইনি । একবার আসবে ? আমি আসতে চাইলে বলে আজ পূর্ণিমা কাল এসো । তা সত্ত্বেও আমি আসি । দরজা খোলে না । এক ঘণ্টা দাঁড়িয়ে থাকি তারপর কড়া নাড়ি । দরজা খুলেই বসে বলে আর দু'দিন বাঁচব । আমি বলেছিলাম তুই মারা গেলে মা বোনকে দেখবে কে । তারপর এই অবস্থা ।"
আরও পড়ুন :
- ছুটি মঞ্জুর হয়নি বলে মিলছে না বেতন, মমতার কাছে স্বেচ্ছামৃত্যুর আর্জি ক্যানসার আক্রান্ত শিক্ষকের
- 'বিচারে আশা নেই', স্বেচ্ছামৃত্যু চেয়ে রাষ্ট্রপতিকে চিঠি ধর্ষিতার
- 2 দিন ধরে স্বামীর মৃতদেহ আগলে স্ত্রী, দুর্গন্ধের চোটে পুলিশ ডাকলেন প্রতিবেশীরা