আসানসোল, 7 ফেব্রুয়ারি: বাড়ির এক চিলতে উঠোন ৷ আর সেই উঠোন থেকেই যেন রূপকথার মতো গল্প লেখা হয় প্রতিবার ৷ সেখান থেকেই কঠিন অধ্যাবসায় ও অনুশীলনের মধ্যে দিয়ে জাতীয় স্তরে সোনা ও রুপোর জয়জয়কার ৷ সম্প্রতি ইন্ডিয়ান অলিম্পিক অ্যাসোসিয়েশন অনুমোদিত তাইকোন্ডো ফেডারেশন অফ ইন্ডিয়ার পরিচালনায় হায়দরাবাদে অনুষ্ঠিত হয় সপ্তম জাতীয় কিউরোগি ও পুমসে তাইকোন্ডো চ্যাম্পিয়নশিপ ৷
সেখানে বাংলার মুখ উজ্জ্বল করল পশ্চিম বর্ধমানের কুলটির সাত প্রতিযোগী ৷ সেখানে রয়েছে কুলটির ট্রিপলেট সিস্টার সুচেতা চট্টোপাধ্যায়, সুপ্রিতা চট্টোপাধ্যায় ও রঞ্জিতা চট্টোপাধ্যায় ৷ সোনা, রুপো ও ব্রোঞ্জ মিলিয়ে 10টি পদক জিতেছেন এই প্রতিযোগীরা ৷ যেখানে ট্রিপলেট সিস্টারের নামে চারটি সোনা ও একটি ব্রোঞ্জ পদক রয়েছে ৷
এছাড়া কুলটির ডিসেরগড় এলাকার বিদ্যুৎ বাউড়ি দু’টি বিভাগের একটিতে রুপো ও আরেকটিতে ব্রোঞ্চ জিতেছে ৷ প্রীতম জানা ও ইন্দ্রনীল রুজ একটি করে রুপো জিতেছেন এবং রূপম চক্রবর্তী একটি ব্রোঞ্জ পদক জিতেছেন জাতীয় তাইকোন্ডো চ্যাম্পিয়নশিপে ৷
স্বভাবতই রাজ্যের মধ্যে পশ্চিম বর্ধমান জেলার কুলটি অঞ্চল তাইকোন্ডো ন্যাশনালে এতগুলি পদক জিতে চমকে দিয়েছে রাজ্যবাসীকে ৷ কিন্তু প্রশ্ন উঠছে, এরপর কী ? আগামিদিনে আন্তর্জাতিক স্তরে খেলার সুযোগ আসবেই ৷ সেই স্তরে পারদর্শিতার জন্য যে উন্নতমানের ডায়েট ও ক্রীড়া সরঞ্জামের প্রয়োজন, তা কি পাচ্ছে এই প্রতিভাবান খেলোয়াড়রা ?
![National Taekwondo Championship](https://etvbharatimages.akamaized.net/etvbharat/prod-images/07-02-2025/wbasnsplticundochampions7203430_07022025100621_0702f_1738902981_440.jpg)
কুলটির ডিসেরগড়ের ট্রিপলেট মেয়ের বাবা বামাপ্রসাদ চট্টোপাধ্যায় সামান্য গৃহশিক্ষক ৷ এই পরিবারের কাহিনি আগেই ইটিভি ভারতের প্রকাশিত হয়েছে ৷ টিউশন পড়িয়ে সংসার চালান বামাপ্রসাদ ৷ তাঁর পক্ষে কীভাবে সম্ভব এই বিরাট ব্যয়ভার সামলানো ! সেই প্রশ্ন থেকেই যাচ্ছে ৷ অন্যদিকে আরেক রুপো ও ব্রোঞ্চ জয়ী বিদ্যুৎ বাউড়ির বাবা স্বল্প বেতনের নিরাপত্তারক্ষীর চাকরি করেন ৷ এককথায় প্রত্যেকেই মধ্যবিত্ত ও নিম্নবিত্ত পরিবারের ৷ তাই দুঃশ্চিন্তার কালো মেঘ ছেয়ে গিয়েছে এত আনন্দের মাঝেও ৷
![National Taekwondo Championship](https://etvbharatimages.akamaized.net/etvbharat/prod-images/07-02-2025/wbasnsplticundochampions7203430_07022025100621_0702f_1738902981_162.jpg)
সুচেতা-সুপ্রিতা-রঞ্জিতার মা সুনেত্রা চট্টোপাধ্যায় বললেন, "এত আনন্দের মাঝেও আমরা সারাদিন চিন্তা করছি, কীভাবে ওরা আগামিদিনে ইন্টারন্যাশনাল খেলতে যেতে পারবে ৷ কারণ, ফান্ডিং একটা বড় সমস্যা ৷ আমরা কোনও জায়গা থেকেই সহায়তা এতদিন পাইনি ৷ কিন্তু, এখন যখন ওরা ভালো রেজাল্ট করছে, তখন সরকারের উচিত বা স্থানীয় জনপ্রতিনিধিদের উচিত ওদের দিকে একটু তাকানো ৷ একটু সহায়তা পেলে ছেলে-মেয়েগুলো আরও ভালো ফল করতে পারে ৷"
প্রতিভাবান এই খেলোয়াড়দের কোচ সজল গড়াই বলেন, "খুব কঠিন প্র্যাকটিস এবং একাগ্রতার কারণে আমাদের ছাত্র-ছাত্রীরা এই দারুণ ফল করেছে ৷ কিন্তু, এরা প্রত্যেকেই নিম্নবিত্ত-মধ্যবিত্ত পরিবারের ৷ তাই আগামিদিনে খেলার খরচ চালিয়ে যাওয়া এদের পক্ষে কতটা সম্ভব হবে, সে বিষয়ে আমরাও আশঙ্কায় আছি ৷ আমরা আমাদের চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছি ৷ কিন্তু, আগামিদিনে সরকার কিংবা কোনও স্বেচ্ছাসেবী সংগঠন যদি এদের পাশে দাঁড়ায়, তাহলে ছেলে-মেয়েগুলোর অনেক সুবিধা হবে ৷"
![National Taekwondo Championship](https://etvbharatimages.akamaized.net/etvbharat/prod-images/07-02-2025/wbasnsplticundochampions7203430_07022025100621_0702f_1738902981_284.jpg)
আরেক কোচ শুভ গঙ্গোপাধ্যায় বলেন, "যে ধরনের ইকুইপমেন্টস প্রয়োজন এই খেলায়, তা আমরা কিনতে পারি না ৷ যেমন ভালো ম্যাট ৷ ফলে প্র্যাকটিসের সময় প্রায়শই চোট লাগে ওদের ৷ কিন্তু, উপায় থাকে না ৷ ম্যাটের বা অন্যান্য সরঞ্জামের অনেক দাম ৷ আর প্রত্যেকেই মধ্যবিত্ত, নিম্নবিত্ত পরিবার থেকে আসা ছেলে-মেয়ে ৷ আমরা যতটা সম্ভব পারি চেষ্টা করি ৷ ডায়েটেও অনেক খরচ ৷ তাই সহৃদয় মানুষজন যদি সাহচর্য নিয়ে এগিয়ে আসেন তাহলে অনেক উপকার হয় ৷"
![National Taekwondo Championship](https://etvbharatimages.akamaized.net/etvbharat/prod-images/07-02-2025/wbasnsplticundochampions7203430_07022025100621_0702f_1738902981_93.jpg)
আর যাদের নিয়ে এত কথা, সেই সোনাজয়ী মেয়ে সুচেতা চট্টোপাধ্যায় এবং রুপো জয়ী বিদ্যুৎ বাউড়ি বলেন, "আমরা আগামিদিনে আরও কঠিন পরিশ্রম করব ৷ লক্ষ্য আন্তর্জাতিক স্তরের প্রতিযোগিতায় নামার ও অলিম্পিকে খেলার ৷ তার জন্য আমরা সবরকমভাবে প্রস্তুতি নিতে চাই ৷"