কলকাতা, 28 নভেম্বর: বাংলাদেশ নিয়ে বিধানসভায় মুখ খুললেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় ৷ বললেন, ‘‘কোনও ধর্মের ওপর আক্রমণ মেনে নিতে পারি না । ইসকনের সঙ্গে দু’বার কথা হয়েছে ৷ অন্য দেশের বিষয় আমরা হস্তক্ষেপ করতে পারি না । দেশের সরকারের যা সিদ্ধান্ত আমরা সমর্থন করব ।’’
গত সোমবার থেকে পশ্চিমবঙ্গ বিধানসভায় শুরু হয়েছে শীতকালীন অধিবেশন ৷ বৃহস্পতিবার ছিল অধিবেশনের চতুর্থদিন ৷ সেই দিনেই বাংলাদেশ নিয়ে মুখ খুললেন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় ৷ তিনি বলেন, ‘‘আমি মনে করি আশেপাশে আমাদের যে দেশ সবাই ভালো থাকুক । যে ধর্মের উপর অত্যাচার হোক না কেন, আমরা কখনও এটা মেনে নিতে পারি না । সে হিন্দু হোক, মুসলিম হোক, শিখ হোক, খ্রিস্টান হোক ৷ আমি রিলেটেড বলে বলছি ।’’
উল্লেখ্য, গত অগস্টে শেখ হাসিনা বাংলাদেশ থেকে চলে আসার পর থেকেই সেখানে সংখ্যালঘুরা আক্রান্ত হচ্ছেন বলে অভিযোগ উঠেছে বারবার ৷ সম্প্রতি সনাতনী নেতা চিন্ময়কৃষ্ণ দাসপ্রভুর গ্রেফতারের প্রতিবাদে ফের উত্তাল হয়ে উঠেছে ভারতের প্রতিবেশী দেশ ৷ সেই উত্তাপের আঁচ লেগেছে এপারেও ৷
মঙ্গলবারই বিধানসভা চত্বরে প্রতিবাদ মিছিল করে বিজেপি ৷ বিজেপির নেতারা ইতিমধ্যেই এই ঘটনার প্রতিবাদে সরব হয়েছেন ৷ দিল্লিতে সংসদের শীতকালীন অধিবেশনে অংশ নেওয়ার সময় এই নিয়ে প্রতিবাদ করেন তৃণমূলের সর্বভারতীয় সাধারণ সম্পাদক অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায় ৷ এদিন মমতার গলাতেই একই সুর শোনা গিয়েছে ৷
তিনি জানান, বাংলাদেশের পরিস্থিতি নিয়ে তিনি উদ্বিগ্ন । তবে বিদেশনীতির বিষয় জড়িয়ে আছে, তাই সেই বিষয়ে তিনি মন্তব্য করতে পারেন না । মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের কথায়, ‘‘এখানে যিনি ইসকনের প্রধান আছেন, তাঁর সঙ্গে দু’বার কথা বলেছি । কিন্তু বাংলাদেশ আলাদা রাষ্ট্র । এখানে ভারত সরকার সিদ্ধান্ত নেবে । কারণ, এটা আমাদের এক্তিয়ার নয় । এটা ভারত সরকারের বিদেশমন্ত্রক দেখবে, যদি তারা মনে করে । আমরা এই বিষয়ে বক্তব্য করতে পারি না । যদিও আমরা মনে মনে দুঃখিত ।’’
তিনি আরও বলেন, ‘‘আমি কতগুলো সিস্টেম মানি । আমার দলের পলিসি হল, সরকারেরও পলিসি অন্য দেশের ব্যাপার হলে কেন্দ্রীয় সরকার যা সিদ্ধান্ত নেবে, আমরা তার সঙ্গে একমত । এখানে কোনও ভিন্নমত গ্রহণযোগ্য নয় । কিন্তু যেকোনও ধরনের অত্যাচারের বিরুদ্ধে আমরা নিন্দা করি ।’’
এদিকে বাংলাদেশের পরিস্থিতি নিয়ে আরও কয়েকজন বিবৃতি দিয়েছেন ৷ সিপিএমের রাজ্য সম্পাদক মহম্মদ সেলিম বলেন, "রাজনীতি যদি ধর্মকেন্দ্রিক হয়, তখনই ধর্মকে এভাবে বিভাজনের হাতিয়ার হিসেবে ব্যবহার করা হয় । এরকম পরিস্থিতিতে যারা অপেক্ষাকৃত দুর্বল, তারাই আক্রান্ত হয় । স্বাভাবিকভাবেই বাংলাদেশের প্রতিদিন সংখ্যালঘুদের উপর অত্যাচার হচ্ছে । এখন যারা সরকার পরিচালনা করছে, তারা ভাবছে বা মনে করছে বাংলাদেশের এই সংখ্যালঘুরা আগের সরকারকে সমর্থন করতো ।"
আইএসএফ বিধায়ক নওশাদ সিদ্দিকী বলেন, "বিষয়টি বাংলাদেশের । মায়াপুরের কিছু ধর্মগুরুর সঙ্গে আমার আলাপ আছে । তারা আমার সঙ্গে বা আমাদের সঙ্গে যে সৌজন্যতা দেখিয়েছে, আমরাও সেই সৌজন্যতা দেখেছি । কিন্তু বাংলাদেশে কী হচ্ছে বা কেসটা কী সেটা আমার পক্ষে বলা সম্ভব নয় । তাছাড়া, ইসকন আন্তর্জাতিক সংস্থা । তাদের যুক্তি আছে । তাদের সঙ্গে অবিচার হলে ইন্টারন্যাশনাল কোর্ট অফ জাস্টিস আছে তার জন্য ।"
সিদ্দিকুল্লা চৌধুরী বলেন, "বাংলাদেশ গিয়েছি আমি । এগুলো বাড়াবাড়ি । বাংলাদেশের হিন্দুদের ভারতে নিয়ে আসছে বিজেপি । একযোগে একা থাকার জায়গা নেই । একসঙ্গেই থাকতে হবে । এটা বাংলাদেশের ইন্টারনাল ব্যাপার । বাবরি মসজিদ নিয়ে বাংলাদেশ যখন বলেছিল, তখন মোদি বলেছিলেন এটা ইন্টারনাল ব্যাপার । অপরাধ হল অপরাধ । হিন্দু মুড তৈরী করতে চাইছে । ইস্কনের নবদ্বীপের সেক্রেটারির সঙ্গে মিটিং করেছি ।’’
ত্বহা সিদ্দিকী বলেন, "যাঁকে গ্রেফতার করা হয়েছে, তিনি যদি দোষী হন, তাহলে আমার কিছু বলার নাই । আর যদি মিথ্যা মামলায় ফাঁসিয়ে তাঁকে গ্রেফতার করা হয়ে থাকে, তাহলে বাংলাদেশ সরকারের কাছে অনুরোধ করব তাঁকে অবিলম্বে মুক্তি দেওয়া হোক । একইভাবে আমাদের দেশের সংখ্যালঘু মুসলিমদের উপর যে অত্যাচার হচ্ছে, তার বিরুদ্ধেও জোরদার প্রতিবাদ হওয়া দরকার । কেন্দ্রীয় সরকারকে ব্যবস্থা নেওয়ার অনুরোধ করছি ৷ সাম্প্রদায়িক শান্তি সম্প্রীতি বজায় রাখার আহ্বান জানাচ্ছি ।"