কলকাতা, 21 নভেম্বর: আমাদের টাকা, আমাদের নাম । আবাস প্রকল্পের নাম নির্দিষ্ট করলেন বাংলার মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় । বাংলা আবাস যোজনা নয়, রাজ্য সরকারের তরফ থেকে টাকা দিয়ে যে 12 লক্ষ মানুষকে বাড়ি তৈরি করে দেওয়া হবে তার নাম হবে 'বাংলার বাড়ি'।
নবান্নে বৃহস্পতিবার মমতা অভিযোগ করেন, গত কয়েকবছর ধরে বাংলার গরিব সাধারণ নিম্নবিত্ত মানুষকে ন্যায্য প্রাপ্য থেকে বঞ্চিত করেছে কেন্দ্রীয় সরকার । কোথাও শর্ত দেখিয়ে আবার কোথাও সব শর্ত পূরণ করার পরও অর্থ না দিয়ে বাংলার মানুষকে আবাস যোজনা থেকে বঞ্চিত করা হয়েছে । কিন্তু বাংলার সরকার তেমন কিছু করবে না। মমতা জানান, বাংলার বাড়ি প্রকল্পে লক্ষ্য একটাই, গরিব মানুষকে বাড়ি দেওয়া ।
এদিন তিনি বলেন,"আমরা বলেছিলাম যদি কেন্দ্রীয় সরকার বাড়ির টাকা না দেয় আমরা মানুষের পাশে দাঁড়াব । দুটো কিস্তিতে টাকা দেওয়া হয় । প্রথমে 60 হাজার পরে আরও 60 হাজার । সেই মতো এবছর 11 লক্ষ মানুষকে টাকা দেওয়ার কথা ছিল । যেহেতু প্রাকৃতিক বিপর্যয় হয়েছে সেই জন্য আমরা সেই সংখ্যাটা বাড়িয়ে 12 লক্ষ করেছি ।"
এদিন মুখ্যমন্ত্রী আরও জানিয়েছেন যে, 15 থেকে 30 ডিসেম্বরের মধ্যে টাকা দিয়ে দেওয়া হবে । উপনির্বাচনের কারণে পাঁচটি জেলায় ঠিকমতো সার্ভে করা হয়নি । লিস্ট তৈরির পরও অনেক সময় দেখা যায় গরিব মানুষ বঞ্চিত হয় । যাতে তারা বঞ্চিত না হয় সেজন্য আরও একবার সার্ভে করা হচ্ছে । সার্ভে মানে কেউ বাদ যাবেন না । গরিব মানুষ নিশ্চিতভাবে বাড়ি পাবেন ৷ এখানে একটাই জিনিস দেখা হবে কে পাওয়ার যোগ্য কে নয় ৷ এরপর আরও কিছু মানুষের জন্য বাড়ি তৈরি বাকি থাকবে সেটাও ধাপে ধাপে করা হবে ।
পার্টির সদস্য হলেই আবাস যোজনা পাবে এমন প্রচারের কড়া সমালোচনা করে তিনি বলেন, "বলা হচ্ছে পার্টির লোক হলেই আবাস যোজনার বাড়ি পাওয়া যাবে ৷ সেটা কীভাবে সম্ভব ? আবাস যোজনায় 40 শতাংশ টাকা তো রাজ্য সরকার দেয়। তারা কীভাবে বাড়ি পাবেন ! যদি কেন্দ্রীয় সরকার 100 শতাংশ দিয়ে এমন প্রকল্প করতে চায় রাজ্যের কোনও আপত্তি নেই । তুমি আমার উপর চাপিয়ে দেবে। মানুষকে টাকাও দেবে না ! আমার তোমার দয়ার দরকার নেই । মানুষের আশীর্বাদে যখন 12 লক্ষ দিতে পারছি । বাকি 24 লক্ষ আগামিদিনে করে দেব । যা প্রতিশ্রুতি দিয়েছিলাম সবটা করেছি । এই সরকার দলের কাছে দায়বদ্ধ নয়, মানুষের কাছে দায়ব্ধ ।"
আবাস যোজনার নাম নিয়ে মুখ্যমন্ত্রী স্পষ্ট বক্তব্য,"আবাস প্রকল্পের নাম গ্রামীণ আবাস যোজনা হবে না । সবই বাংলার বাড়ি । টাকা যখন আমাদের নামও আমাদের । রাজ্যের নামে হবে সব ।"
কৃষক বন্ধুর টাকার বিষয়ে মুখ্যমন্ত্রী জানান, কৃষক বন্ধু যোজনায় এক কোটি 8 লক্ষ 95 হাজার কৃষককে 2943 কোটি টাকা দেবে রাজ্য সরকার । আগামিকাল 22 নভেম্বর থেকে এই টাকা ছাড়া হবে । দুই কিস্তি মিলিয়ে রাজ্যের কৃষকদের এক বছরে মোট 5859 কোটি টাকা দেওয়া হল ।
একই সঙ্গে তিনি জানান, প্রাকৃতিক বিপর্যয় কেন্দ্রীয় সরকারের সাহায্য আসে না । আর তাই বাংলা শস্য বীমা যোজনায় 1 কোটি 2 লক্ষ কৃষককে বাংলা শস্য বীমা যোজনা দেওয়া হয় । 3221 কোটি টাকা সহায়তা করা হয়েছে এই প্রকল্প । প্রাকৃতিক বিপর্যয়ের জন্য যে সহায়তা দেওয়া হবে তার জন্য ক্যাম্প চলছে । তাতে ইতিমধ্যেই 65 লক্ষ মানুষ নাম লিখেছেন । আগামী ডিসেম্বর মাস থেকে 5 লক্ষ 7 হাজার মহিলা নতুন করে লক্ষ্মীর ভাণ্ডার প্রকল্পের সুবিধা পেতে শুরু করবে । পয়লা ডিসেম্বর থেকেই তাদের এই টাকা ব্যাংক অ্যাকাউন্টে চলে যাবে । এছাড়া 43 হাজার 900 জনকে ডিসেম্বর মাস থেকে বিধবা ভাতা দেওয়া শুরু হবে ।