নৈহাটি, 31 জানুয়ারি: ভরদুপুরে প্রকাশ্য রাস্তায় তৃণমূল কর্মীকে গুলি করে খুন ! শুক্রবার দুপুরে ঘটনাটি ঘটেছে উত্তর 24 পরগনার নৈহাটির গৌরীপুরে, গোয়ালাপাড়া ঘাটের কাছে । পুলিশ জানিয়েছে, মৃত তৃণমূল কর্মীর নাম সন্তোষ যাদব । ঘটনায় অভিযোগের তির রাজেশ সাউ নামে এক দুষ্কৃতী ও তার দলবলের বিরুদ্ধে । নাম জড়িয়েছে অর্জুন সিংয়েরও ৷ তবে শাসকদলের বিরুদ্ধে পালটা অভিযোগে সরব হয়েছেন তিনি ৷
এদিকে, এই ঘটনার পর গৌরীপুরে বিজেপি কর্মী কানাই সাউয়ের বাড়ি ভাঙচুর করা হয় । গরিফাতে বিজেপি সমর্থক বিকাশ কুমার সিংয়ের বাড়ি এবং তাঁর একটি অনুষ্ঠান বাড়িতে আগুন লাগানো ও ভাঙচুর করা হয়েছে বলে অভিযোগ উঠেছে তৃণমূলের বিরুদ্ধে ।
পুলিশ ও স্থানীয় সূত্রে জানা গিয়েছে, এদিন দুপুরে সন্তোষ কাজ সেরে টোটো করে যাচ্ছিলেন । তখন রাজেশের নেতৃত্বে একদল দুষ্কৃতী মোটরবাইকে তাঁকে অনুসরণ করতে শুরু করে । পথে গৌরীপুর গোয়ালাপাড়া এলাকায় দুষ্কৃতীরা রাস্তার মাঝখানে টোটোটি থামিয়ে দেয় । তারপর তারা সন্তোষকে লক্ষ্য করে প্রথমে এক রাউন্ড গুলি চালায় । সেই গুলি লক্ষ্যভ্রষ্ট হয় ।
সন্তোষ টোটো থেকে নেমে দৌড়ে পালিয়ে যাওয়ার চেষ্টা করেন । দুষ্কৃতীরা তাঁর পিছু ধাওয়া করে । এরপর তাঁকে লক্ষ্য করে পিছন থেকে ইট ছোড়া হয় । সেই ইটের আঘাতে সন্তোষ রাস্তার উপরে পড়ে যান । দুষ্কৃতীয়া তখন তাঁকে পয়েন্ট ব্ল্যাঙ্ক রেঞ্জ থেকে নাকের উপরে, কপালে ও চোয়ালের নীচে আরও তিন রাউন্ড গুলি চালায় । ঘটনাস্থলেই সন্তোষ লুটিয়ে পড়েন । স্থানীয় বাসিন্দারা তাঁকে উদ্ধার করে নৈহাটি স্টেট জেনারেল হাসপাতালে নিয়ে যান । সেখানে চিকিৎসকেরা তাঁকে মৃত বলে ঘোষণা করেন ।
যদিও ব্যারাকপুরের পুলিশ কমিশনার অলোক রাজোরিয়া বলেন, "প্রাথমিক তদন্তের পর মনে হচ্ছে ব্যক্তিগত শত্রুতার কারণেই এই ঘটনা ৷" তাঁর দাবি, গুলি চলেনি ৷ ইট দিয়ে থেঁতলে খুন করা হয়েছে সন্তোষকে ৷
এদিকে, দলীয় কর্মী খুনের খবর পেয়ে হাসপাতালে পৌঁছন নৈহাটির পুরপ্রধান অশোক চট্টোপাধ্যায় ও বিধায়ক সনৎ দে-সহ অন্য তৃণমূল নেতা-কর্মীরা । পুরপ্রধান ঘটনায় সরাসরি বিজেপির দিকে অভিযোগের আঙুল তুলেছেন । তিনি বলেন, "বিধানসভা নির্বাচনে এগিয়ে আসছে । নৈহাটি এলাকায় বিজেপির পায়ের তলার মাটি সরে গিয়েছে । তাই, রাজনৈতিক জমি ফিরে পেতে দুষ্কৃতীদের ব্যবহার করে বিজেপি আমাদের দলের সক্রিয় কর্মী সন্তোষকে গুলি করে খুন করেছে । ঘটনায় অভিযুক্ত রাজেশ বিজেপির সক্রিয় কর্মী হিসেবেই এলাকায় পরিচিত । সে বিভিন্ন অপরাধমূলক কাজকর্মের সঙ্গে জড়িত ।"
বিধায়ক সনৎ দে সরাসরি বিজেপির প্রাক্তন সাংসদ অর্জুন সিংকে নিশানা করেছেন । তিনি বলেন, "লোকসভা নির্বাচনে অভিযুক্ত রাজেশ অর্জুন সিংয়ের হয়ে ভোট প্রচার করেছে । অর্জুন সিংয়ের নির্দেশেই আমাদের দলের সক্রিয় কর্মী সন্তোষকে গুলি করে খুন করা হয়েছে । পুলিশ ঘটনার তদন্ত করছে ।"
অন্যদিকে, দলীয় কর্মী খুনের ঘটনায় এদিন বারাসতে যাত্রা উৎসবের সূচনা অনুষ্ঠানে এসে ব্যারাকপুরের সাংসদ পার্থ ভৌমিকও প্রাক্তন সাংসদ অর্জুন সিংকে নিশানা করেছেন । যদিও তৃণমূলের গোষ্ঠীদ্বন্দ্বের কারণেই এই খুন বলে পালটা অভিযোগ তুলে অর্জুন সিং জানিয়েছেন, "গৌরীপুর জুট মিলের জমি দখল নিয়ে তৃণমূলের দুই গোষ্ঠীর মধ্যে দীর্ঘদিন ধরে গণ্ডগোল চলছে । এনিয়ে বছর দুই আগে সন্তোষ রাজেশকে লক্ষ্য করে গুলি চালিয়েছিল । দু'দিন আগেও জমি দখল নিয়ে এদের মধ্যে গণ্ডগোল হয়েছিল । নিজেদের মধ্যে ঝামেলার কারণে খুনের ঘটনা চাপা দিতেই তৃণমূল আমার ও বিজেপির বিরুদ্ধে বলছে ।"
