মালদা, 16 নভেম্বর: এবার সীমান্তরক্ষী বাহিনীতেও ভুয়ো নিয়োগ ধরা পড়ল মালদায় ৷ এই ঘটনায় কর্মরত এক কনস্টেবলকে পুলিশের হাতে তুলে দেওয়া হয়েছে ৷ ঘটনাটি ঘটেছে বিএসএফ-এর 159 নম্বর ব্যাটালিয়নে ৷
গোটা ঘটনা নিয়ে তদন্ত শুরু করেছে মালদা থানার পুলিশ ৷ ভুয়ো ওই কন্সটেবলের নাম যোগেশ যাদব ৷ বয়স 23 বছর ৷ বাড়ি উত্তর প্রদেশের ফিরোজাবাদ জেলার আলাহাদাদপুর গ্রামে ৷
বিএসএফের তরফে দেওয়া অভিযোগপত্র (নিজস্ব চিত্র) শুক্রবার রাতে মালদা থানায় দায়ের করা লিখিত অভিযোগপত্রে বিএসএফ-এর 88 নম্বর ব্যাটালিয়নের ডেপুটি কম্যান্ডান্ট কৃষ্ণচন্দ্র নিয়াল জানিয়েছেন, 2024 সালের মার্চে দিল্লি থেকে যোগেশ যাদবের নামে কনস্টেবলের নিয়োগপত্র ছাড়া হয় এবং তাঁকে 13 মার্চ কলকাতার বিএসএফ-এর সাউথ বেঙ্গল ফ্রন্টিয়ার দফতরে রিপোর্ট করতে বলা হয় ৷ তিনি নির্দিষ্ট দিনে সেখানে রিপোর্ট করেন ৷ ফ্রন্টিয়ারের তরফে তাঁকে মালদার আরাধপুরে 159 ব্যাটালিয়নের দফতরে 19 মার্চ নিয়োগ সংক্রান্ত যাবতীয় কাজকর্ম মিটিয়ে নিতে বলা হয় ৷ সেই অনুযায়ী তিনি ওই দিন সেসব কাজ শেষ করেন ৷
বিএসএফের তরফে দেওয়া অভিযোগপত্র (নিজস্ব চিত্র) এরই মধ্যে 159 নম্বর ব্যাটালিয়নের আরাধপুর দফতরে জনৈক রাম কুমার লিখিত অভিযোগপত্র দায়ের করে জানান, যোগেশ যাদবের নিয়োগ ভুয়ো ৷ তিনি দালালকে আট লাখ টাকা দিয়ে এই চাকরি হস্তগত করেছেন ৷ সেই দালালই যোগেশের হয়ে সমস্ত পরীক্ষা দিয়েছে ৷ এমনকি মেডিক্যাল টেস্টেও অংশ নিয়েছে ৷ যোগেশ কোথাও নিজে পরীক্ষার মুখোমুখি হননি ৷ এই অভিযোগ পাওয়ার পরেই বিএসএফ কর্তৃপক্ষ নিয়োগ প্রক্রিয়া চলাকালীন যোগেশের বায়োমেট্রিকের সঙ্গে নিয়োগ পরবর্তী বায়োমেট্রিক মিলিয়ে দেখা হয় ৷ তখনই যোগেশের সমস্ত কারচুপি ধরা পড়ে যায় ৷
অভিযোগপত্রে বিএসএফ-এর 88 নম্বর ব্যাটালিয়নের ডেপুটি কম্যান্ডান্ট কৃষ্ণচন্দ্র নিয়াল মালদা থানার পুলিশকে জানিয়েছেন, যোগেশকে জিজ্ঞাসাবাদ করে তাঁরা জানতে পেরেছেন, চাকরি পেতে যোগেশ তাঁর পূর্ব পরিচিত টিংকু যাদব নামে এক ব্যক্তির সঙ্গে যোগাযোগ করেন ৷ টিংকুই তাঁকে জানান, টাকার বিনিময়ে তিনি এই চাকরি যোগেশকে পাইয়ে দিতে পারেন ৷ যোগেশকে কিছুই করতে হবে না ৷ সব করবে দালাল৷ দু’জনের মধ্যে আট লাখ টাকায় চাকরির রফা হয় ৷
প্রাথমিকভাবে যোগেশ এই টাকার একাংশ টিংকুকে দিলেও বাকি টাকা দিচ্ছিলেন না ৷ এই নিয়ে টিংকু তাঁর বিরুদ্ধে পুলিশে অভিযোগ জানানোর হুঁশিয়ারি দেন ৷ তারপরেই যোগেশ বাকি টাকা টিংকুকে দিয়ে দেন ৷ সমস্ত ঘটনা জানার পর বিএসএফ কর্তৃপক্ষ যোগেশকে মালদা থানার পুলিশের হাতে তুলে দেওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছে ৷ পুলিশের কাছে বিএসএফ-এর আবেদন, এই ঘটনায় পুলিশের তরফে যোগেশের বিরুদ্ধে এফআইআর দায়ের করে ঘটনার তদন্ত করা হোক ৷
সীমান্তরক্ষী বাহিনীর তরফে লিখিত অভিযোগ দায়ের হতেই মালদা থানার পুলিশ যোগেশকে গ্রেফতার করেছে ৷ পাঁচদিনের পুলিশি হেফাজতের আবেদন জানিয়ে শনিবার তাঁকে মালদা জেলা আদালতে পেশ করা হয়েছে ৷ পুলিশ সুপার প্রদীপকুমার যাদব বলেন, “বিএসএফ কর্তৃপক্ষের অভিযোগের ভিত্তিতে ওই ব্যক্তিকে গ্রেফতার করা হয়েছে ৷ তাঁর বিরুদ্ধে ভারতীয় ন্যায় সংহিতার একাধিক ধারায় মামলা রুজু করা হয়েছে ৷ পুলিশি হেফাজতের আবেদন জানিয়ে ধৃতকে আজ আদালতে পেশ করা হয়েছে ৷ ধৃতকে জেরা করে এই ঘটনার গভীরে পৌঁছোনোর চেষ্টা করা হবে ৷ যোগাযোগ করা হবে উত্তর প্রদেশ পুলিশের সঙ্গেও ৷ গোটা ঘটনা নিয়ে পুলিশি তদন্ত শুরু হয়েছে ৷”
এদিকে আদালতে যাওয়ার পথে যোগেশ দাবি করেন, “আমার নিয়োগ সম্পূর্ণ বৈধ ৷ কোনও জালিয়াতি করে আমি চাকরি পাইনি৷ শুধুমাত্র আমার বায়োমেট্রিক সংক্রান্ত কিছু সমস্যা হয়েছে ৷ যথাযথ তদন্ত হলেই সত্যি ঘটনা সামনে আসবে ৷”