শিলিগুড়ি, 31 মে: তীব্র জল যন্ত্রণায় ভুগছে শহর শিলিগুড়ি ৷ তিস্তার বাঁধ মেরামতের কারণে বন্ধ রয়েছে পানীয় জলের পরিষেবা। অন্যদিকে, ফুলবাড়ি পানীয় জল উত্তোলন কেন্দ্রে পলি জমে যাওয়ায় সেখানেও চলছে পলি সরানোর কাজ। ফলে মে মাসের প্রথমের দিকে মহানন্দা নদীর জল পরিশ্রুত করে পানীয় জল সরবরাহের উদ্যোগ নিয়েছিল শিলিগুড়ি পৌরনিগম। কিন্তু প্রায় 20 দিন পর জলের নমুনা পরীক্ষা করার রিপোর্ট আসলে শুরু হয় মূল সমস্যা। মহানন্দা নদীর দলে দূষণের মাত্রা এতটাই বেশি যে সেই জল পানের অযোগ্য।
জল যন্ত্রণা শিলিগুড়িতে (নিজস্ব ভিডিয়ো) 29 মে শিলিগুড়ি পৌরনিগম ঘোষণা করে, পৌরনিগমের তরফে জল প্রতিদিনের মতো সরবরাহ করা হবে ঠিকই, কিন্তু সেই জল পানের যোগ্য নয়। আর পৌরনিগমের এই ঘোষণার পরই গোটা শহরে আতঙ্ক ও উদ্বেগ ছড়িয়ে পরে। শুরু হয় পানীয় জলের জন্য ছোটাছুটি। কিন্তু ততদিনে শহরবাসী ওই দূষিত পানীয় জলই পান করেছে বলে অভিযোগ। আর সেখানেই প্রশ্ন ওঠে পৌরনিগমের ভূমিকা নিয়ে। 29 মে জলের নমুনার রিপোর্ট আসলে পৌরনিগমের তরফে জানানো হয়, মহানন্দার জল পরিশ্রুত করে সরবরাহ করলেও তাতে বিওডি অর্থাৎ বায়োকেমিক্যাল অক্সিজেন ডিমান্ড পর্যাপ্ত নেই। যে কারণে ওই জল পানের অযোগ্য। ওই জল দিয়ে রান্না ও পানের পরিবর্তে বাকি কাজ করার আবেদন জানান মেয়র গৌতম দেব। জানা গিয়েছে, পানীয় জলের ক্ষেত্রে এক লিটার জলে এক থেকে দুই পার্টিক্যাল পার মিলিগ্রাম প্রয়োজন। এর থেকে বেশি হলে সেই জল পানের অযোগ্য। কিন্তু মহানন্দার জল পরিশ্রুত করার পরেও তাতে বিওডি ছয় পিপিএমের বেশি। ফলে সেই জল কোনওভাবেই পানের যোগ্য নয়। তবে, 2 জুন বিকেল থেকে ফের তিস্তার জল পরিশ্রুত করে সরবরাহ করা যাবে দাবি করেছে পৌর কর্তৃপক্ষ।
বিকল্প ব্যবস্থা হিসেবে পৌরনিগমের তরফে প্রথমে 26 টি ট্যাঙ্কারে শহরের 47টি ওয়ার্ডে দিনে দু'বার করে পানীয় জল সরবরাহ করা হচ্ছে। শুক্রবার থেকে আরও তিনটি ট্যাঙ্কার বাড়ানো হচ্ছে। পাশাপাশি প্রত্যেক বরো থেকে এক লক্ষ করে জলের পাউচ বিতরণ করা হচ্ছে। সেই সংখ্যাও এদিন থেকে দ্বিগুণ করা হচ্ছে বলে মেয়র জানান। তার জন্য কোচবিহার, আলিপুরদুয়ার ও জলপাইগুড়ি থেকে তিনটে ভ্রাম্যমাণ পানীয় জলের পাউচ তৈরির ইউনিট আনছে পৌরনিগম। কিন্তু শহরের প্রতিদিন গড়ে 50 থেকে 60 এমএলডি জলের প্রয়োজন হয়। বিকল্প পথে সেই পরিমাণ জল সরবরাহ করা কোনওভাবেই যে সম্ভব নয় তা মেনে নিয়েছে পৌরনিগম। আর এই কারণে একদিকে যেমন শুরু হয়েছে রাজনৈতিক তরজা। অন্যদিকে, হুহু করে শুরু হয়েছে পানীয় জলের কালোবাজারি। এসবের মাঝে পানীয় জল নিতে সাধারণ মানুষের লম্বা লাইন তো রয়েছে।
সত্যব্রত রায় বলেন, "আমাদের আগে জানালে ভালো হত। তাহলে সেইমতো প্রস্তুত থাকতে পারতাম। সকাল থেকে লাইনে দাঁড়িয়ে রয়েছি জল নেব বলে। এই সমস্যা কবে সমাধান হবে জানি না।" শিলিগুড়ির বিধায়ক শঙ্কর ঘোষ বলেন, "অদক্ষ পৌরপ্রশাসক থাকলে এমনই হয়। এই বোর্ডের কারণে সাধারণ মানুষ জল যন্ত্রণায় ভুগছে। কোনও পরিকল্পনা ছাড়াই আচমকা পানীয় জল পানের অযোগ্য বলে ঘোষণা করে দিল।" মেয়র গৌতম দেব বলেন, "ফুলবাড়ি জল উত্তলন কেন্দ্রের কাজ শেষ হতে জুন মাস লাগবে। আর তিস্তার জল আমরা 2 জুন বিকেল না হলে 3 জুন সকাল থেকে পাব। আমি নিজে, সহ বোর্ডের প্রত্যেক সদস্য ময়দানে রয়েছে। সমস্যা হচ্ছে না, আমি তা বলব না। তবে মানুষ আমাদের সহযোগিতা করছে তার জন্য আমরা কৃতজ্ঞ। এদিন থেকে ট্যাঙ্কার ও জলের পাউচের সংখ্যা বাড়ানো হচ্ছে।"