পশ্চিমবঙ্গ

west bengal

ETV Bharat / state

মহাকুম্ভে পদপিষ্টের দেহ কোনও নথি ছাড়াই ফিরল জামুড়িয়ায়, যোগী সরকারকে তোপ স্থানীয়দের - MAHAKUMBHA STAMPEDE 2025

মহাকুম্ভে পদপিষ্ট হওয়ার ঘটনায় মৃতের দেহ কোনও নথি ছাড়াই উত্তরপ্রদেশ থেকে ফিরল আসানসোলে ৷ যোগী সরকারকে দুষে বিক্ষোভ স্থানীয়দের ৷

ETV BHARAT
দেহ কোনও নথি ছাড়াই ফিরল জামুড়িয়ায় (নিজস্ব চিত্র)

By ETV Bharat Bangla Team

Published : Jan 31, 2025, 3:21 PM IST

আসানসোল, 31 জানুয়ারি:মহাকুম্ভে পুণ্যস্নান করতে গিয়েছিলেন জামুড়িয়ার কেন্দা গ্রামের বাসিন্দা বিনোদ রুইদাস ৷ তবে ফিরল নিথর দেহ ৷ তাঁর সঙ্গে পুণ্যস্নানে যাওয়া তাঁর শ্যালকের দাবি, বুধবার ভোরে পদপিষ্ট হয়েই মৃত্যু হয়েছে বিনোদ রুইদাসের (47)। কিন্তু আশ্চর্যের বিষয়, উত্তরপ্রদেশ থেকে অ্যাম্বুলেন্সে মৃতদেহ এই রাজ্যে এল কোনও নথি ছাড়াই । মৃতদেহের সঙ্গে ছিল না মৃত্যুর কোনও শংসাপত্র, ছিল না ময়নাতদন্তের রিপোর্ট ।

শুধুমাত্র হাসপাতালের একটি মেমো নম্বর দেওয়া কাগজ ও উত্তরপ্রদেশ পুলিশের এক কনস্টেবলকে দিয়ে মৃতদেহ পাঠিয়ে দেওয়া হয়েছে বলে অভিযোগ । এই ঘটনায় ব্যাপক ক্ষোভের সৃষ্টি হয়েছে এলাকায় । জামুড়িয়া থানার কেন্দা ফাঁড়িতে মৃতদেহ আটকে বিক্ষোভ দেখাতে থাকেন মৃতের পরিবার ও এলাকাবাসীরা । ঘটনাস্থলে উপস্থিত স্থানীয় জনপ্রতিনিধিরাও ক্ষতিপূরণ ও সঠিক তদন্তের দাবি করেছেন ।

মহাকুম্ভে পদপিষ্টের দেহ কোনও নথি ছাড়াই ফিরল জামুড়িয়ায় (নিজস্ব ভিডিয়ো)

মৃতের স্ত্রী শর্মিলা রুইদাস জানান, "গত সোমবার আমার স্বামী কুম্ভমেলার উদ্দেশে রওনা দেন । মঙ্গলবার রাতেও আমার সঙ্গে ফোনে কথা হয় । আমার ভাই ছিল ওর সঙ্গে । বুধবার ভোরে তারা পুণ্যস্নানে যায় । তারপর থেকে আমার স্বামী নিখোঁজ । গতকাল আমার ভাই হাসপাতালে মৃতদেহ খুঁজে পায় । কিন্তু কোনও নথি ছাড়াই মৃতদেহটি পাঠিয়ে দেওয়া হয় । আমার তিন সন্তান । বাড়িতে বৃদ্ধ শ্বশুর ও শাশুড়ি । আমার স্বামী একমাত্র উপার্জনকারী ছিলেন । কী করে চলবে আমাদের আগামী দিন । তাই সরকার ক্ষতিপূরণ দিয়ে আমার পাশে দাঁড়াক ।"

যোগী সরকারকে দুষে বিক্ষোভ স্থানীয়দের (নিজস্ব চিত্র)

অন্যদিকে, প্রত্যক্ষদর্শী তথা মৃতের শ্যালক বিষ্ণু রুইদাস জানান, "বুধবার ভোরে আমি আর আমার জামাইবাবু কুম্ভস্নান করতে যাই । সেখানে কোনও সুব্যস্থাই ছিল না । হুড়োহুড়িতে আমার জামাইবাবু পড়ে যায় । তারপর জামাইবাবুর কোনও খোঁজ পাইনি । বৃহস্পতিবার হাসপাতালে গিয়ে খোঁজ পাই জামাইবাবু মারা গিয়েছে । সেখান থেকে একটি পুলিশ কনস্টেবল দিয়ে আমাকে অ্যাম্বুলেন্সে করে পাঠিয়ে দেওয়া হয় । কোনও কাগজপত্র আমাকে দেওয়া হয়নি । এত চূড়ান্ত অব্যবস্থা আমি কখনও দেখিনি ।"

শোকের ছায়া পরিবারে (নিজস্ব চিত্র)

কিন্তু কাগজপত্র ছাড়াই একটি মৃতদেহ তিনটি রাজ্য পার করে এল কী করে এমন প্রশ্ন উঠতে শুরু করেছে ৷ উত্তরপ্রদেশের যে পুলিশ কনস্টেবল মৃতদেহটি নিয়ে আসেন, সেই বদরুদ্দীন খান ইটিভি ভারতকে জানান, "আমি উচ্চ অধিকারিকের আদেশ পালন করেছি মাত্র । তিনটি রাজ্য কেন, আমাকে ভারতের যেখানে খুশি মৃতদেহ নিয়ে যেতে বলতে সেখানেই চলে যেতাম ৷ কাগজপত্র ছিল না কেন, সে বিষয়ে আমি বলতে পারব না । কোথায় মৃত্যু হয়েছে আমি সে বিষয়েও কিছু জানি না । আমি প্রয়াগের হাসপাতাল থেকে মৃতদেহ নিয়ে এসেছি ।"

কোনও নথি ছাড়াই ফিরল দেহ (নিজস্ব চিত্র)

এই ঘটনার পর স্থানীয় জনপ্রতিনিধিরাও চলে আসেন জামুড়িয়ার কেন্দা ফাঁড়িতে । তাঁরা এই ঘটনার বিচার চাইছেন এবং যথার্থ ক্ষতিপূরণ দাবি করেছেন । পাণ্ডবেশ্বরের বিধায়ক নরেন চক্রবর্তী জানান, "ধর্মকে নিয়ে ব্যবসা চালাচ্ছে উত্তরপ্রদেশ সরকার । তাই এই ধরনের ঘটনা ঘটছে । অযথা প্রচার তুলে কুম্ভমেলাকে নিয়ে একটা হাইপ দেওয়া হয়েছে । আসলে ব্যবস্থা কিছুই নেই । বহু মানুষের মৃত্যু হয়েছে । যা ঢেকে দেওয়ার চেষ্টা চলছে । আমরা আশ্চর্য, একটা মৃতদেহ চলে এল ডেথ সার্টিফিকেট বা ময়নাতদন্ত রিপোর্ট ছাড়াই । কীভাবে ক্ষতিপূরণ আদায় করা যায় সে বিষয়ে আমাদের সরকার উত্তরপ্রদেশ সরকারের সঙ্গে কথা বলবে । তবে আমরা পরিবারটির পাশে আছি ।"

বিক্ষোভ দেখালেন স্থানীয় বাসিন্দারা (নিজস্ব চিত্র)

অন্যদিকে জামুড়িয়ার প্রাক্তন বিধায়ক তথা সিপিএম নেত্রী জাহানারা খান জানান, "অত্যন্ত দুর্ভাগ্যজনক এই ঘটনা । আমরা পরিবারটির পাশে আছি । পরিবারের একমাত্র উপার্জনকারী ছিল এই বিনোদ রুইদাস । তাঁর মৃত্যুতে পরিবারটি ভেসে যাবে । আমরা দাবি করছি সঠিক ক্ষতিপূরণ দেওয়া হোক তাঁর পরিবারকে ।" এবিষয়ে স্থানীয় বিজেপি নেতৃত্বের সঙ্গে যোগাযোগ করা হলে তাঁরা জানান, উচ্চ নেতৃত্বের নির্দেশ না-আসা পর্যন্ত এই নিয়ে তাঁরা কোনও প্রতিক্রিয়া জানাবেন না ৷

দুপুরের পর জামুড়িয়া থানার পুলিশ ময়নাতদন্তের জন্য মৃতদেহটিকে আসানসোল জেলা হাসপাতালে পাঠায় । সঠিক ঘটনা জানার চেষ্টা করছে জামুড়িয়া থানার পুলিশ ।

ABOUT THE AUTHOR

...view details